আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিদায় হজ্বের বানী (২য় ও শেষ পর্ব)

১ম পর্ব এখানে সাবধান, তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেওনা, খোদাদ্রোহী হয়ে পরস্পরে রক্তপাত লিপ্ত হয়ো না। স্মরণ রেখো, আজকের এই দিন এই মাস যেমন মহিমান্বিত, মক্কায় হেরেম পবিত্র, প্রতিটি মুসলমানের ধনসম্পদ, সবার ইজ্জত-সম্ভ্রম এবং প্রতিটি মুসলমানের রক্তবিন্দু তোমাদের কাছে সে রকমই পবিত্র। আগের বিষয়গুলোর পবিত্রতা নষ্ট করা যেমন তোমরা পরিত্যাজ্য ও হারাম বলে জানো। তেমনি কোন মুসলমানের সম্পদ সম্ভ্রম ও জীবনের ক্ষতি সাধন, তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, মহাপাপ। অনারবদের উপর আরবদের প্রধান্যের কোন কারন নেই।

মানুষ সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। জেনে রেখো নিশ্চয়ই এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। আর জগতের সব মুসলমান মিলে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসংঘ। হে লোকেরা, জেনে রেখো, আমার পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না। তোমাদের পরে আর কোন উম্মাহ নেই।

আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো। এ বছরের পর হয়তো তোমরার আমার আর সাক্ষাত পাবে না। জ্ঞান উঠে যাওয়ার আগেই আমার কাছ থেকে শিখে নাও। চারটি বিষয় বিশেষ করে স্মরণ রাখো। ১।

কখনো শিরক করো না ২। অন্যায় ভাবে নর হত্যা করোনা। ৩। অন্যের সম্পদ আত্নসাৎ করো না। ৪।

কখনো ব্যাভিচারে লিপ্ত হইয়ো না। সাবধান, কারো অসম্মতিতে তার সামান্য সম্পদও গ্রহণ করো না। জুলুম করো না। কোন মানুষের উপর জলুম করো না। আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখবে, পথভ্রষ্ট হবে না।

আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাত। হে লোকেরা। শয়তান এ ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে, সে তোমাদের দেশে আর উপসনা পাবে না। কিন্তু সাবধান! অনেক এমন বিষয়ে তুমি ক্ষুদ্র বলে জ্ঞান করো, অথচ শয়তান তারই মাধ্যমে তার সর্বনাশ করে ছাড়ে। সে বিষয়গুলো সম্পর্কে খুবই সাবধান থাকবে।

অতঃপর হে লোকেরা! নারীদের বিষয় আমি তোমাদের সতর্ক করছি, তাদের প্রতি নির্দয় ব্যবহার করার সময় আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে যেও না। নিশ্চয় তোমরা তাদের আল্লাহর জমিনে গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই কালাম দ্বারা তাদের সঙ্গে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মনে রেখো, তোমাদের সহধর্মিনীদের উপর তোমাদের যেমন দাবিদাওয়া ও অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও তাদের দাবিদাওয়া ও স্বত্বাধিকার রয়েছে। পরস্পর পরস্পরকে নারীদের সঙ্গে স্বদ্যব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ করবে। স্মরণ রাখবে এ অসহায়দের এক মাত্র সহায় তোমরাই।

স্মরণ রেখো, তোমাদের অধীনস্ত দাস-দাসীরা অসহায়-নিরাশ্রয়। সাবধান, তাদের উপর কখনো জুলুম করবে না, তাদের অন্তরে আঘাত দেবে না। তোমার মতো তাদেরও একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দিলে কষ্ট পায় এবং আনন্দে আপ্লুত হয়। শুনে রেখো! ইসলামের নির্দেশ হলো তোমরা যা খাবে দাস-দাসীদের তা খাওয়াবে।

তোমরা যা পরবে, তাদেরও তাই পরাবে। কোন ধরনের তারতম্য করা চলবে না। যে নিজের বংশের পরিবর্তে নিজেকে অন্যের বংশের বলে প্রচার করে, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশকুলের ও সমগ্র মানবজাতির অন্তত অভিশাপ। আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা সে কিতাব অবলম্বন করে চলবে, তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।

আজ যারা এখানে উপস্থিত আছ, তাঁরা আমার এসব পয়গাম অনুপস্থিতির কাছে পৌছে দেবে। হতে পারে উপস্থিত কারো কারো থেকে অনুপস্থিত কেউ কেউ এর দ্বারা বেশি উপকৃত হবে’’। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুই লাখ জনতার বিশাল এই সমাবেশের মধ্যে দ্বাড়িয়ে তার নাবিকরা সম্মিলিত কণ্ঠে তার প্রতিধ্বনি করে বিশাল সমাবেশের সব রাসূল সঃ এর বানী পৌঁছে দিচ্ছিলেন। স্বর্গীয় নুরের ঝলক যেন রাসূল সঃ এর দেহ মোবারক থেকে ঠিকরে পরছিল, আর তাঁরই কণ্ঠস্বর ক্রমেই দীপ্ত হয়ে উঠেছিল। বিশাল জনসমুদ্র যেন রাসূল সাঃ এর বানী শুনতে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিল।

অতঃপর রাসূল (সাঃ) আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমি কি তোমার বাণী পৌছে দিয়েছি-আমি কি আমার দ্বায়িত্ব পালন করেছি?’ তখন লাখো লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হলো, নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই। তখন রাসূলে আকরাম ভাবাবেগপূর্ণ স্বরে বলতেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি শোন, সাক্ষী থাকো, তোমার বান্দারা স্বীকার করেছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। ‘হে আল্লাহ, তুমি স্বাক্ষী থাকো” বিদায় হজ্বে রাসূল সাঃ এর দেওয়া ভাষণ আপ্লুত করেছিল সব হৃদয়।

তার সাক্ষী মক্কার পাহাড়-পর্বত আর সমগ্র প্রকৃতি। কিন্তু বড়ই অনুতাপের বিষয়, যাদের জন্য সেদিন তিনি আন্তরিক পথ নিদের্শনা দিয়ে গেলেন, সেই মুসলিম জাতি তার সে বাণী ভুলে গেছে আজ। তাই শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.