আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত মুসা (আঃ)ও হযরত খিজির (আঃ)

সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই।

হাফেজ মাওঃ মুহাম্মদ আইয়ুব ইমাম বোখারী ও মুসলিম ওবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন একদিন মুসা (আঃ) বনী ইসরাইলের এক সভায় ভাষন দিচ্ছিলেন এমতাঅবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল বর্তমান দুনিয়ায় সর্বাধিক জ্ঞানী কে ? মুসা (আঃ) এর জানা মতে তার চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিলেন না । তাই বললেন আমিই সবার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তালার নিকট তার এই জবাব পছন্দ হয় নাই। এখানে বিষয়টি আল্লার ঊপর ছেড়ে দেয়াই ছিল আদব।

অর্থাৎ একথা বলে দেয়া ঊচিত ছিল আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন কে অধিক জ্ঞানী, এ জওয়াবের কারনে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসা (আঃ)কে শিক্ষা দেয়ার জন্য ওহী নাজিল হল যে দুটি নদীর সংগম স্থলে আমার এক বান্দা তোমার চাইতে অধিক জ্ঞানী । একথা শুনে মুসা (আঃ)আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন যে তিনি অধিক জ্ঞানী হলে তার কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য আমার সফর করা উচিত। তাই বললেন ইয়া আল্লাহ আমাকে তার ঠিকানা বলে দিন। আল্লাহ তায়ালা বললেন থলের মধ্যে একটা মাছ নিয়ে নাও অতঃপর সে নদীর সংগম স্থলের দিকে সফর কর। যেখানে পৌছার পর মাছটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে সেখানেই আমার এই বান্দার সাক্ষাত পাইবে।

মুসা (আঃ)আল্লাহর নির্দেশ মত থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তার সাথে খাদেম ইউসা ইবনে নুনও ছিলেন। রওয়ানা হওয়ার সময় মুসা (আঃ) খাদেমকে বলে দিলেন আমরা একাধারে দুই নদীর সংগমস্থল পর্যন্ত চলতেই থাকব। পথি মধ্যে একটি প্রস্তর খন্ডের উপর মাথা রেখে তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। এখানে হঠাৎ মাছটি নড়াচড়া করতে লাগলো এবং থলে থেকে বের হয়ে মাছাটি জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে গেল।

সমুদ্রে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আরও একটি মুজেজা প্রকাশ পেল যে মাছটি সমুদ্রের যে পথ দিয়ে চলে গেল আল্লাহতায়ালা সেই পথে পানির স্রোত বন্ধ করে দিলেন, ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ংগের মত হয়ে গেল। ইঊশা ইবনে নুন এই ঘটনা নিরীক্ষন করছিলেন। মুসা (আঃ) জাগ্রত হলেন তখন ইউশা ইবনে নুন মাছের এই আশ্চর্য্য জনক ঘটনা তার কাছে বলতে ভুলে গেলেন এবং সেখান থেকে সামনে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পুর্ন এক দিন এক রাত সফর করার পর সকাল বেলায় মুসা (আঃ) খাদেমকে বললেন আমাদের নাস্তা আন। এই সফরে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

নাস্তা চাওয়ার পর ইউশা ইবনে নুনের মাছের ঘটনা মনে পড়ল, তিনি ভুলে যাওয়ার ওযর পেশ করে বললেন শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল যে যখন আমরা প্রস্তর খন্ডের নিকট পৌঁছে ছিলাম তখন মৃত মাছটি জীবিত হয়ে আশ্চর্য জনক ভাবে সমুদ্রে চলে গেছে। আমি আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছি। তখন মুসা (আঃ) বললেন সে স্থানটিই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল। অর্থাৎ মাছের জীবিত হয়ে নিরু্েদ্দশ হওয়ার স্থানটি ছিল গন্তব্যস্থল। সেমতে তৎক্ষনাৎ তারা ফিরে চললেন এবং স্থান পাওয়ার জন্য পুর্বের পথ ধরে চললেন।

প্রস্তরখন্ডের নিকট পৌছে দেখলেন এক ব্যক্তি আপাদমস্তক চাদরে আবৃত হয়ে শুয়ে আছেন। মুসা (আঃ) তদঅবস্থায় সালাম পেশ করলে শায়িত ব্যক্তি বললেন, এই জনমানবহীন প্রান্তরে সালাম কোথা থেকে এলো, মুসা (আঃ) বললেন আমি বনি ইসরাইলের মুসা। আমি আপনার কাছ থেকে ঐ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি যা আল্লাহতায়ালা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন । এই ব্যক্তিই ছিলেন হযরত খিজির (আঃ)। খিজির (আঃ)বললেন আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না।

আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই তখন ধৈর্য ধরবেনই বা কেমন করে? হে মুসা আল্লাহতায়ালা আমাকে এমন জ্ঞান দান করেছেন যা আপনার কাছে নেই পক্ষান্তরে আপনাকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন যা আমি জানি না। মুসা (আঃ) বললেন ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। আমি কোন কাজে আপনার বিরুধিতা করব না। হযরত খিজির (আঃ) বললেন যদি আপনি আমার সাথে থাকতেই চান তাহলে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরুপ বলে দেই। এ কথা বলার পর উভয়ে সমুদ্রের পার ধরে চলতে লাগলেন।

ঘটনাক্রমে একটি নৌকা এসে গেল তারা নৌকায় আরোহনের ব্যপারে কথাবার্তা বললেন মাঝিরা হযরত খিজির (আঃ) কে চিনে ফেলল এবং কোন রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদেরকে নৌকায় তুলে নিল। নৌকায় চড়ে খিজির (আঃ) কুড়ালের সাহায্যে নৌকাটা ছিদ্র করে দিলেন এতে হযরত মুসা (আঃ) স্থির থাকতে পারলেন না বললেন তারা কোন রকম পারিশ্রামিক ছাড়াই আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিয়েছে, আপনি কি এরই প্রতিদানে তাদের নৌকাটা ভেংগে দিলেন যাতে করে সবাই ডুবে যায় ? এতে আপনি মন্দ কাজ করলেন। খিজির (আঃ) বললেন আমি পুর্বেই বলেছিলাম আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। তখন মুসা (আঃ)ওজর পেশ করে বললেন আমি আমার ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না।

ইতিমধ্যে একটি পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চঞ্চু পানি তুলে নিল। খিজির (আঃ) মুসা (আঃ) কে বললেন আমার জ্ঞান ও আপনার জ্ঞান উভয়ে মিলে আল্লাহতায়ালর জ্ঞানের সামনে এমন তুলনাও হয় না যেমনটি এ পাখির চঞ্চুর সাথে রয়েছে সমুদ্রের পানি। অতঃপর তারা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের কুল ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ খিঝির (আঃ) একটি বালককে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করতে দেখলেন। খিজির (আঃ) স্বহস্তে বালকটির মাথা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন (বালকটিকে হত্যা করে ফেললেন) বালকটি মরে গেল।

মুসা (আঃ) বললেন আপনি একটি নিস্পাপ প্রানকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এটি বিরাট গুনাহর কাজ করলেন। খিজির (আঃ) বললেন আমি তো পুর্বেই বলেছিলাম আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না। মুসা (আঃ) বললেন এ ব্যপারটি পুর্বাপেক্ষা গুরুতর। তাই বললেন এর পর যদি কোন প্রশ্ন করি তবে আমাকে পৃথক করে দিবেন।

আমার ওজর আপত্তি চুড়ান্ত হয়ে গেছে। অতঃপর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। ওরা সোজা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করে দিলেন। হযরত খিজির (আঃ) এই গ্রামে একটি প্রাচীরকে পতনোম্মুক দেখতে পেলে তিনি নিজ হাতে প্রাচীরটি সোজা করে দিলেন মুসা (আঃ) বিস্মিত হয়ে বললেন আমরা তাদের কাছে খাবার চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকার করল অথচ আপনি তাদেরকে এত বড় কাজ করে দিলেন ইচ্ছা করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন।

খিজির (আঃ) বললেন এখন শর্ত পুরন হয়ে গেছে এটাই আপনি ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়। এরপর খিজির (আঃ) মুসা (আঃ) এর কাছে উপরোক্ত ঘটনাসমুহের স্বরুপ বর্ণনা করে বললেন ঃ এই নৌকাটি যে দরিদ্রের ছিল তারা ছিল দশ ভাই তার মধ্যে পাঁচজন বিকলাংগ অবশিষ্ট পাঁচ ভাই মেহনত মজুরী করে সবার জীবিকার ব্যবস্থা করত। নদীতে নৌকা চালিয়ে টাকাপয়সা উপার্জন করাই ছিল একমাত্র পেশা। নৌকাটি যে দিকে যাচ্ছিল সেখানে একজন জালেম বাদশাহ এই পথে চলাচলকারী সব নৌকা ছিনিয়ে নিত। হযরত খিজির (আঃ) এ কারনে নৌকার একটি তক্তা উপড়ে দেন যাতে জালেম বাদশার লোকেরা ভাংগা দেখে নৌকাটি ছেড়ে দেয় এবং দরিদ্ররা বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায়।

হযরত খিজির (আঃ) যে বালকটিকে হত্যা করেন তার পিতামাতা ছিল সৎ কর্ম পরায়ন লোক, খিজির (আঃ) বলেন আমার আশংকা ছিল যে ছেলেটি বড় হয়ে সৎকর্মশীল পিতামাতাকে বিব্রত করবে এবং কষ্ট দেবে, সে কুফরে লিপ্ত হয়ে পিতা মাতার জন্য ফেতনা হয়ে দাড়াবে এবং তার ভালবাসায় পিতামাতারও ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়বে। এজন্য আমি ইচ্ছা করলাম য়ে আল্লাহ তায়ালা এই সৎ কর্মপরায়ন পিতামাতাকে এই ছেলের চাইতে উত্তম সন্তান দান করুন। যার কাজ কর্মও চরিত্র হবে পবিত্র এবং সে পিতামাতার হকও পুর্ণ করবে। নিহত ছেলের পিতামাতাকে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে একটি কন্যা সন্তান দান করলেন পরবর্তী কালে যার গর্ভে দুইজন নবী জন্ম গ্রহন করেন। কোন কোন রেওয়াতে রয়েছে যে তার গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহনকারী নবীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা একটি বিরাট উম্মতকে হেদায়েত দান করেন (ইবনে আবী শায়বা) ।

হযরত খিজির (আঃ) বিনা পারিশ্রামিক যে পতনোম্মুক প্রাচীরকে সোজা করে দিলেন সে প্রাচীর ছিল নগরের দুই জন বালকের এর নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ন। এতে ইংগিত রয়েছে যে হযরত খিজির (আঃ) এর মাধ্যমে এতীম বালকদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধনের হেফাজত এজন্য করানো হয় যে তাদের পিতা একজন সৎকর্মপরায়ন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন, তাই আল্লাহ তায়ালা তার সন্তানসন্ততির উপকারার্থে এ ব্যবস্থা করেন। মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির বলেন আল্লাহ তায়ালা এক বান্দার সৎকর্মপরায়নতার কারনে তার পরবর্তী সন্তান সন্তুতি বংশধরও প্রতিবেশীদের হেফাজত করেন। ( মাযহারী) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন সে প্রাচীরের নীচে রক্ষিত এতীম বালকদের গুপ্তধন ছিল স্বর্নের একটি ফলক তাতে এতীম ছেলেদের জন্য নিন্মলিখিত উপদেশ বাক্যসমুহ লিখিত ছিল। ওসমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ)ও এই রেওয়াতটি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন।

(কুরতুবী) ১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ২) আমার আশ্চর্য্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে উহা জানে যে সব কিছু আল্লাহর তরফ থেকে নির্দিষ্ট হয়ে আছে (অর্থাৎ তকদীরকে বিশ্বাস করে ) তবুও ত ার কোন জিনিষ হাছেল না হলে কেন আফসোস করে। ৩) আমার আশ্চর্য্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে আল্লাহ তায়ালাকে রিজিকদাতারুপে বিশ্বাস করে এরপরও প্রয়োজনাতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনর্থক চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে। ৪) আমার আশ্চর্য্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে মৃত্যুকে বিশ্বাস করে অথচ আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকে। ৫) আমার আশ্চর্য্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে পরকালের হিসাব নিকাশে বিশ্বাস রাখে অথচ সৎ কাজে গাফেল হয়। ৬) আমি আশ্চর্য্য বোধ করি ঐ ব্যক্তির উপর যে এই দুনিয়ার নিত্যনৈমিত্তিক পরিবর্তন এবং এই দুনিয়া একদিন খতম হয়ে যাবে সেটা জেনেও নিশ্চিত হয়ে বসে থাকে এবং দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয়।

৭) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (কোন রেওয়ায়েতে আছে আমি আশ্চর্য্য বোধ করি ঐব্যক্তির উপর যে শয়তানকে শত্র“ জানা সত্ত্বেও কি করে তার অনুসরন করে )।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.