আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যরকম রাত

দুঃস্বপ্নের কথা নাকি কাউকে বলা ঠিক না। সুখ স্বপ্নের কথা বলা যায়। কিন্তু দিন দশেক আগে আমার জীবনে যা ঘটে গেলো তা তো দুঃস্বপ্ন নয় তার চেয়ে ও ভয়াবহ। আমার কী তাহলে বলা ঠিক হবে? চিন্তা করেছিলাম বলবো না আবার না বলেও পারছি না। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

মনে পড়লে শরীরের রোম এখনো অটোম্যাটিক দাঁড়িয়ে যায়। বিদেশের মাটিতে অমাবস্যা পূর্ণিমা নিয়ে কখনই মাথা ঘামানো হয় নি। আসলে দরকার পড়ে নি কখনো। আর আমি কবি মানুষও না অমাবস্যা পূর্ণিমা আমাকে প্রভাবিত করবে। তারপরেও খেয়াল আছে সেদিন রাতে ছিল জমাট অমাবস্যা।

যাই হোক সেই ঘটনায় পরে আসছি। আমার গন্তব্যস্থল ছিল মুরমানস্কের এক পাড়া গাঁ। নাম পেচেঙ্গা। মুরমানস্ক সম্পর্কে একটু বলে নেই। মুরমানস্ক রাশিয়ার একটি বিভাগীয় শহর।

এ অংশটা আগে ফিনল্যান্ডের ছিল। পরে রাশানরা দখল করে নেয়। অবস্থান বলতে গেলে একদম নরওয়ের গা ঘেঁষা একটি শহর। সামার টাইম। ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছি।

এমন সময় আমার মুরমানস্কের ফ্রেন্ড আমাকে ফোন করে বলল ওর ওখান থেকে ঘুরে আসার জন্য। দিনক্ষণ ঠিক করলাম। টিকেট কেটে ফেললাম ট্রেনের। এরপর টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে উঠে ও পড়লাম ট্রেনে। কথা হল ও আমাকে ট্রেন স্টেশনে রিসিভ করবে।

ট্রেন জার্নি আমার কাছে সব সময়ই আকর্ষণীয়। এবারের টা আরও হবে ধরে নেয়া যায়। এর কারণ ও আছে। চমৎকার একটা বই জোগাড় করেছি। নাম The universe in a nutshell. হকিং সাহেবের লেখা বই।

প্ল্যান হল ট্রেনে বসে এই বই পড়বো। মেডিসিনের স্টুডেন্ট হলে ও এস্ট্রোফিজিক্স বরাবরই আমাকে আকর্ষণ করে। তাই সাথে করে এই বই নেয়া। ট্রেনে আমার সিট ছিল জানালার পাশে। সহযাত্রী এক ভদ্র মহিলা।

খাজুরে আলাপ করার মতো আমার যোগ্যতা তেমন একটা নেই। অহেতুক কথা বলতে পারি না। তাই হাই, হ্যালো পর্ব শেষ করে বই খুলে মনোযোগ দিয়ে ফেললাম পড়ায়। একটানা অনেকক্ষণ পড়লাম। দেখি কেমন জানি টায়ার্ড টায়ার্ড লাগে।

বই হাতেই উঠে পড়লাম একটু সেলুন বার থেকে ঘুরে আসা দরকার। ট্রেনের বারগুলো মন্দ না। দাম যা একটু বেশী পড়ে। সেই সাথে দু একটা সিগারেট ও পোড়ানো যেতে পারে। বারে ঢুকেই প্রথমে একটা সিগারেট ধরালাম।

এরপর পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখে নিলাম। সময় ও তেমন বেশী নেই। আর ঘণ্টা তিনেক বাকি। এসময়টুকু বারেই কাটানো যাক। “একটা ঠাণ্ডা বিয়ার প্লিজ।

” বিয়ারের অর্ডার দিলাম। ঐ তো জানালার পাশের সিট টা খালি দেখা যাচ্ছে। বসে পরা দরকার। কখন আবার কে বসে পরে। আমি বিয়ারের গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঐ সিটটায় গিয়ে বসলাম।

বাইরে ভালো অন্ধকার হয়ে গেছে তেমন কিছু দেখা যায় না। ট্রেনের স্পীড ও এখন ভালো। সাই সাই করে ছুটে চলছে। জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় খালি মাঠ আর মাঠ। আবছা ভাবে বোঝা যায়।

মাঝে দিগন্ত রেখায় দু একটা বাড়ি ঘর থেকে আলো চোখে আসছে। রাশিয়াতে ট্রেনে উঠলে এই এক অনুভূতি হয়- মনে হয় কোন এক অজানা অচেনা দুনিয়াতে চলে আসলাম। জন মানুষের গুষ্ঠি ও নেই কোথাও। যাক বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বইটা আবার খুলে বসলাম। আমার এ অংশে আলো কম।

সাধারণত জানালা বরাবর উপরে একটা লাইট থাকে। কোন কারণে এ পাশের লাইট টা জ্বলছে না। বইটা খুলে বেশ আয়েশ করে বসলাম। তাড়াহুড়ো নেই আস্তে আস্তে পড়লেও মোটামুটি ভালোই এগিয়েছি। এখন তিন নাম্বার চ্যাপ্টারে।

নাম The universe in a nutshell. এই চ্যাপ্টারের নাম অনুসারেই বইয়ের নাম। প্রথম পাতাতে একটা নাট এর ছবি। ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম। দেখতে ভালো লাগছে মানব মস্তিষ্কের সাথে মিল আছে নাটের, খালি রঙে মিল নেই। গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়ে বুঝলাম গ্লাস শেষ করে ফেলেছি।

এতো দ্রুত বিয়ার টানা ঠিক না। বিয়ারের মজা পাওয়া যায় না। বুঝলাম তৃষ্ণা ছিল ভালোই নাইলে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ার শেষ হয় না। নাহ আর বিয়ার খাওয়ার মানে হয় না। আরেকটু হার্ড কিছুতে যাওয়া যাক।

ভদকা নেয়া যেতে পারে। ওখানে বসেই কিছুটা চেচিয়ে ভদকার অর্ডার করলাম। ভদকা আমার কখনই পছন্দ না। তবে আজ কেন জানি খেতে ইচ্ছে করছে। খুব সূক্ষ্মভাবে একটা এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছে।

রেজোন্যান্স তৈরি হলে দেখেছি বিরাট বিরাট ব্যাপার হয় ওরকম কিছু করবো। তবে এক্ষেত্রে শব্দ নিয়ে নয় ঝাকি নিয়ে। বোঝা যায় নি, না? একটু ব্যাখ্যা করি। ভদকায় প্রথম চুমুক দিলে আমার শরীর প্রচণ্ড একটা ঝাকি দেয় দেখতে চাচ্ছি ট্রেনের ঝাকুনি আর শরীরের ঝাকুনি মিলে কি হয়। আপাতত দৃষ্টিতে অর্থহীন কাজ।

কথায় আছে না, নেই কাজ তো খই ভাজ। অসুবিধে কি। আমার ও দুই ঝাকি একীভূত হল। ফলাফল কিছুই না। মজা পেলাম যা।

এক পেগ নিয়েছিলাম ভদকা। শেষ। আরও নিতে হবে। বইয়ে ও একটু মনোযোগ দেয়া দরকার। “আচ্ছা টমেটোর জুস কি হবে?’’ আবার চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম।

“আছে। ” “গুড। ” মনে মনে ভাবলাম তাহলে আর টেনশন নেই যত ইচ্ছে ভদকা নেয়া যায়। ভদকার সাথে টমেটোর জুস অসাধারণ। ভদকার বিশ্রী স্বাদটা কেটে যায়।

পেগের পর পেগ চালানো যায়। কিছুটা বিরতি দিয়ে দিয়ে পাঁচ পেগ শেষ করে ফেললাম। শরীরে ততক্ষণে একটা হালকা ভাব চলে এসেছে। চোখ ও জানান দিচ্ছে শরীরে ভদকার উপস্থিতি। হঠাৎ করে বইয়ে চোখ আটকে গেলো।

আরে এতো দেখি সেক্সপিয়ারের লাইন। বাহ, বিজ্ঞানের বইয়ে সেক্সপিয়ার। মজার তো। হকিং এর সাহিত্যজ্ঞান তো ভালো দেখা যায়। I could be bounded in a nutshell and count myself a king of infinite space ... - Shakespear, Hamlet, Act 2, Scene 2 হুম।

লাইনদুটো গেছে ভালো বইয়ের সাথে। I could be bounded in a nutshell and count myself a king of infinite space ... . হ্যামলেট পড়া হয় নি। সময় করে পড়ে নিতে হবে। কি মনে করে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখলাম। ওরে বাবা এতো দ্রুত সময় কেটে গেলো।

জয় বাবা আইনস্টাইন। জয় তোমার আপেক্ষিকতা। মাত্র নেশাটা জমা শুরু করেছিল। ধুর, আর মিনিট পনেরো বাকি। গন্তব্যে চলে এসেছি।

আর এখানে বসে থাকার মানে নেই। বিল মিটিয়ে নিজের সিটে চলে আসলাম। নামার প্রিপারেশন নেয়া দরকার। আমার জিনিস পত্র বলতে তেমন কিছু নেই। একটা কাধ ব্যাগ শুধু।

তাতে টুকটাক জিনিস পত্র। বইটা ব্যাগে ভরলাম। ট্রেনে স্টেশনে পৌঁছে গেছে। নামতে হবে। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নেমে পড়লাম।

গ্রামের ষ্টেশন ট্রেন বেশিক্ষণ থাকে না। মিনিট খানেক এরপর চলতে শুরু করে। ঘড়িতে তখন রাত একটা বেজে পনেরো মিনিট। স্টেশনে নেমে প্রথমে যে জিনিসটা হল প্রচণ্ড ধাক্কার মতো খেলাম। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

এমন হওয়ার তো কথা না। একটা রেলওয়ে ষ্টেশন যতই গ্রামের দিকের হোক আলো থাকবে না এটা কেমন কথা। আমার ফ্রেন্ডের ও তো আসার কথা। অথচ স্টেশনে জনমানুষের চিহ্নও নেই। কই চলে আসলাম।

ভুল স্টেশনে নেমেছি। না তাতো হওয়ার কথা না। ঠিক সময়ে নেমেছি ঠিক স্টেশনই হওয়ার কথা। অথচ মনে হচ্ছে একশ বছর আগের অজপাড়া গায়ের কোন সোভিয়েত স্টেশনে চলে এসেছি। সব কিছু অতিরিক্ত ধরণের পুরনো।

ভাঙ্গাচোরা। আসে পাশে যেদিকে তাকাই সেদিকেই অন্ধকার। কোন সল্যুশন খুঁজে পেলাম না। আমার এখন কি করা উচিত। পকেটে মোবাইল ছিল বের করলাম।

বন্ধু কে ফোন করবো। বিস্ময়ের শেষ ধাক্কা খেলাম। আসলে শেষ না মাত্র শুরু। কোন নেটওয়ার্ক নেই। জিদ লাগতে শুরু করলো।

কেন এমন কুক্ষণে জায়গায় আসলাম। যাই হোক। কিছু করার নেই এখন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সকালে একটা কিছু বের করা যাবে। আপাতত রাত টা কাটানোর মতো জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।

এলোমেলো ভাবে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হেঁটে কেমন জানি ক্লান্তি বোধ করতে লাগলাম। নাহ একমনে সমস্ত জিনিসটা একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নেয়া যাক। একটু বসার জায়গা দরকার। স্টেশনের ভেতরেই একটু দূরে আবছা মতন একটা বেঞ্চ দেখা যাচ্ছে।

এগিয়ে গেলাম ঐদিকে। বসে প্রথমেই মোবাইল ফোনটা বের করলাম। চার্জ কেমন আছে দেখে নেয়া যাক। না আছে ভালোই। কাজে দিবে।

আমার নকিয়া ফোন। টর্চ ও আছে ফোনে। টর্চটা জ্বালালাম। ঠিক আছে। সন্তুষ্ট হয়ে নিভিয়ে পকেটে ভরলাম।

ঠিক তখনই ঘটে গেলো ব্যাপারটা। কেউ একজন আমার খোলা কাঁধে হাত রাখল। সে কি স্পর্শ! বরফের মতো ঠাণ্ডা। আমার সমস্ত শরীর ভয়ে জমে গেলো। মনের ভেতর সাহস সঞ্চয় করতে চেষ্টা করলাম।

হবে হয়তো কেউ স্টেশনের। দেখা দরকার। যেই পেছনে তাকাবো এমন সময় শুনতে পেলাম গগন বিদারি এক চিৎকার। কিসের চিৎকার, কোথা থেকে চিৎকার এগুলো নিয়ে চিন্তা করার মতো তখন অবস্থা নেই। আর বসে থাকা যায় না।

দিক বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম। অনেক দূর ছোটার পর পেছনে তাকিয়ে দেখি কালো রঙের একটা আলখাল্লা আমার পেছন পেছন ছুটে আসছে। না আছে চেহারা না আছে কোন গঠন। শুধুই একটা আলখাল্লা। এটা দেখে আমার স্পীড গেলো আরও বেড়ে।

উসাইন বোল্ট আর কি দৌড়ায়। সেদিন আমার দৌড় দেখলে বোল্ট লজ্জায় মুখ লুকাতো। এভাবে অনেকক্ষণ দৌড়লাম। হাঁপিয়ে উঠেছি ইতিমধ্যে। আর দৌড়ানো সম্ভব না।

আবার একটু সাহস করে একবার পেছনে তাকালাম। না কেউ নেই। শিওর হওয়ার জন্য আবার তাকালাম। নাহ আসলেই কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এবার তাহলে থামা যায়।

থামলাম। বেশ বুঝতে পারছি মাথা যে কাজ করছে না, তবে এটুকু বুঝতে পারলাম আমি স্টেশন ছেড়ে অনেক দূর চলে এসেছি। মনে মনে একটু খুশি হলাম। এই অভিশপ্ত স্টেশনে থাকার কোন মানে নেই। এর থেকে পথে ঘাটে রাত কাটানো অনেক ভালো।

বুঝেন তাহলে আমার অবস্থা। সে এক রাত বটে। পরিশ্রান্ত আমি ততক্ষণে মাটিতে বসে পড়েছি। এটা একটা সড়ক বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মাটির সড়ক।

অবাক হলাম। এরকম তো হওয়ার কথা না। স্টেশনের দিকের একটা সড়ক মাটির হবে। পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে। হঠাৎ করে আবিস্কার করলাম অদূরে একটা বাড়ি থেকে আলো আসছে।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে আমি ঐদিকে হাটতে লাগলাম। হাতে আমার সব সময়ের সঙ্গী নকিয়া টর্চ। হাটতে হাটতে চলে এলাম বাড়িটার কাছে। পথে আর উল্টা পাল্টা কিছু ঘটলো না। আমি মোটামুটি খুশি।

এ মুহূর্তে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। আমার এখন দরকার ঘুম। একটা নির্ভেজাল ঘুম দিয়ে উঠতে পারলে পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে। বাড়ির সামনে এসে আবার খেলাম ধাক্কা। আরে বাব্বা কোন আমলের বাড়ি।

এমন বাড়ি এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। আকারে ছোট খাটো। গির্জা স্টাইলের। বাহিরে লেখা ক্যাফে বার। তারমানে ঘুমানোর চিন্তা বাদ।

বসে সময় কাটাতে হবে। দরজায় ঝুলানো 'ওপেন' আমি দরজা মৃদু ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। বাতাসে বোটকা গন্ধ, ইলেকট্রিক বাতির নাম গন্ধ ও নেই। দুটো কাঠের টেবিল তাতে দুটো করে চেয়ার। টেবিলের উপর বিশাল মোমদানি তার উপর পাল্লা দিয়ে বিশাল মোটা মোটা মোমবাতি।

কিন্তু সেই তুলনায় আলো নেই। আমাকে ঢুকতে দেখে একটা মেয়ে এগিয়ে এলো। আর কোন মানুষের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যাই হোক একজন তো পাওয়া গেছে। এরসাথেই গল্প টল্প করে রাতটা কাটিয়ে দেয়া যাবে।

আমি একটা চেয়ার ধরে টান দিলাম বসার জন্য। চেয়ার জুড়ে ধুলোর পুরু আস্তরণ। আমি হাত দিয়ে যতটা সম্ভব মোছা যায় মুছে নিলাম। পরিস্কার করার জন্য না। আমি আগেই মাটিতে বসে এসেছি।

এটা করেছি অভ্যাস বশত। মেয়েটি কোন কথা না বলে আমার দিকে মেনু এগিয়ে দিল। আমি হাত বাড়িয়ে নিলাম মেনুটা। ও মেয়েটির কথা বলা হয় নি। মেয়েটি দেখতে অসম্ভব রূপবতী।

টানা টানা চোখ। ব্লন্ড চুল। লম্বায় প্রায় আমার সমান। অন্য সময় হলে রাতের বেলা একা এই মেয়ের সাথে... আজে বাজে চিন্তা মাথায় ঘুরত। এখন সেই পরিস্থিতি না।

আমি মেনু খুলে কিছু না পড়েই প্রথম প্যাকেজটা অর্ডার করলাম। দাম অচিন্তনীয় কম। এখানেও অবাক হলাম। এতো সস্তায় রাশিয়ার কোন ক্যাফেতে কিছু পাওয়া যায় না। অজপাড়া গা কাস্টমাড় কম এজন্য সস্তা মনে হয়।

তাই আর মাথা ঘামালাম না। আর খাবার নিয়ে আমার চিন্তা ও নেই আমার চিন্তা রাতটা পাড় করা নিয়ে। মেয়েটি অর্ডার নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। কোন দিক দিয়ে গেলো কোথায় গেলো দেখার সুযোগ ও পেলাম না। আমি বসে আছি।

পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। দেখি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় কিনা। নাহ সেই আগের অবস্থা। সাপ গেমটা বের করলাম সময় কাটাবার জন্য। অনেকক্ষণ খেললাম।

এমন সময় মেয়েটা হাজির হল। এক হাতে একটা বড় বাসন উপরে ঢাকনা দেয়া আরেক হাতে একটা পিতলের গ্লাস। টেবিলের উপর আস্তে করে রাখল। ভালো তেষ্টা পেয়েছে আমার। গ্লাসটা নেব নেব করে কি মনে করে ঢাকনাটা ওঠালাম।

ভেতরে সুন্দর করে সাজানো। প্রচুর লেটুস পাতা দেখা যাচ্ছে সাথে চাক চাক করে পেঁয়াজ কাঁটা মাঝে মেল্টেড চীজ। আমি কাঁটা চামচ দিয়ে লেটুস উঠিয়ে মুখে দিলাম। যাক অনেকক্ষণ পর পেটে কিছু পড়েছে। কথায় আছে না, পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি।

আমি আরও কিছু লেটুস মুখে দিলাম। বেশ তাজা পাতা গুলো। এভাবে একপাশের লেটুস গুলো শেষ করে ফেললাম। আর তখনই বেরিয়ে পড়লো এমন জিনিস যা দেখে হর হর করে বমি করা ছাড়া আমার আর উপায় রইল না। ছোট বাচ্চার একটা সিদ্ধ করা রান তার উপর মেল্টেড চীজ।

আপনারা ভাবছেন আমি ভুল দেখেছি; তা না আমি এনাটমি জানা মানুষ। মানব দেহের অংশ চিন্তে আমার ভুল হওয়ার কথা না। আমার বমি করা দেখে উচ্চ কণ্ঠে হেসে উঠলো দূরে দাঁড়ানো মেয়েটি। ততক্ষণে আমার মেয়েটির উপর প্রচণ্ড আক্রোশ ঘৃণা একসাথে জমে উঠেছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম মেয়েটির দিকে।

তাকিয়ে যা দেখলাম ক্রোধ ঘৃণা থাকবে কী উল্টো আমার পিলে চমকে উঠলো। কই সে সৌন্দর্য একটু আগে যা দেখেছি। তার পরিবর্তে আগুনে পোড়া বীভৎস এক মুখ, টকটকে লাল দুটো চোখ সাথে কালো কুচকুচে একটা জিহ্বা সাপের জিবের মতো নাড়াচাড়া করছে। যা বুঝার বুঝে নিলাম। ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, দৌড়া, বিপদ, ভয়াবহ বিপদ।

এক মুহূর্ত ও দেরী করলাম না। ব্যাগটা টান দিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে লাগলাম। আমার কপাল ভালো ছিল দরজাটা ছিল আমার দিকেই। কোন মতে টান দিয়ে খুলে দিলাম এক ছুট। এরপর কোথায় গিয়েছি, কীভাবে গিয়েছি কিচ্ছু মনে নেই।

শুধু মনে আছে যখন আমার জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিস্কার করি একটা ঝোপের ভেতর, দিনের আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।