আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যরকম ...

খুজে বেরাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছিনা

কী লিখব ? আমি যে লিখতে পারি না । তারপরেও তো লিখতে ইচ্ছা করে। তবে তাই হোক । আজকে আমি লিখব । লিখব আমার কথা ......... ছোটবেলায় আব্বু গল্পের বই কিনে দিত অনেএএএএএএক ।

গোগ্রাসে গিলতাম । বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তাম । বাইরে অন্ধকার হয়ে গেলে জানালায় হেলান দিয়ে পড়তাম । চোখে যখন সব ঝাপসা দেখতাম তখন রুমের লাইট জ্বেলে আবার পড়তে শুরু করতাম । থামতাম তখন যখন আম্মু বার বার ওয়ারনিং (ওয়ারনিং বেল নামে তিন গোয়েন্দা'র একটা বই ছিল না ) দিয়ে শেষে বিরক্ত হয়ে মারতে আসতো ।

পড়ালেখার পর খাওয়া । ওইটাও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে বই রেখে । কত যে বকা দিত আম্মু । খাওয়া শেষ করে তারপরে চিত হয়ে শুয়ে আবার পড়া শুরু । সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার একটু পড়তাম ।

বইএর গল্প শেষ করতে না পারলে যে শান্তি নাই । স্কুলের ক্লাসে বসে বসেও গল্পের কাহিনী মাথায় ঘুরতে থাকতো । বাসায় এসেই আবার বই নিয়ে বিছানার উপরে ধুপ্পুস । কখনো কখনো অপেক্ষা সহ্য হবে না দেখে ব্যাগে ভরে বইটা নিয়ে যেতাম স্কুলে । ফাকে ফুকে পরে নিতাম একটু আধটু ।

সব বই পড়া শেষ হয়ে গেলে কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগত সব কিছু । আবার অপেক্ষা এক গাদা নতুন বইয়ের । খুব ছোটবেলায়, যখন স্কুলে ভর্তি হইনি, তখন বড় মামা নিয়ে আসত কমিক বুক লরেল হার্ডি , সুপারম্যান , ব্যাটম্যান, র‌্যাম্বো, নন্টে-ফন্টে , হাদা-ভোদা । আরেকটু বড় হয়ে বড় চাচার বাসায় গিয়ে পড়েছি চাচা চৌধুরী , সাবু , বিল্লু , পিংকি । ছোট বোন স্কুলের বান্ধবীদের কাছ থেকে নিয়ে আসত রূপকথার গল্পের বই ।

ক্লাস সিক্স থেকে পড়তে শুরু করলাম তিন গোয়েন্দা । ক্লাস শেষ করে আমি আর আবীর চলে যেতাম শীলা বই বিতানে । ও ওখানকার সদস্য ছিল । তিন চারটা বই তুলতো একসাথে । আমি দুইটা আর ও দুইটা বই নিয়ে চলে যেতাম বাসায় ।

দুই এক দিন পর আবার পালটাপালটি করে পড়ে ফেলতাম বাকী দুইটা । এক সপ্তাহ পর বই জমা দিয়ে আবার নতুন বই তুলতো ও । (আমি কি কিপটা , তাই না ) । ক্লাস এইটে উঠে ধরলাম মাসুদ রানা । এর মধ্যে একদিন চাচার বাসায় পড়লাম জাফর ইকবালের কপোট্রনিক সুখ দুঃখ ।

এমন মজা পেলাম যে এখনো জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন পেলে শেষ না করে ছাড়িনা । মনে হয় কোনোটা পড়া বাকী নাই আর । মাঝে মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়তাম, ইমদাদুল হকের বইও পড়েছি কিছু । কোলকাতার লেখকদের বইও পড়েছি , কিন্তু ফেলুদা , প্রফেসর শংকু আর কিরীটি রায় ছাড়া আর কিছু ভাল লাগেনি । হিমু পড়েছি প্রায় সবগুলো, মিসির আলীও ।

ওহহো , ওয়েস্টার্নের কথা তো বলাই হয়নি । ধুমসে পড়েছি কলেজে উঠে বই কিনে পড়তে শুরু করলাম । কিন্তু বেশী কিনতে পারতাম না। আব্বু রাগ করতো । ভার্সিটি লাইফেও প্রচুর বই পড়েছি ।

আব্বু ধমক দেয়ার চান্স পায় নাই তখন ভাবতাম, যেদিন চাকরী করে বেতন পাবো সেদিনই সেগুনবাগিচায় গিয়ে সেবা প্রকাশনীর সব বই কিনে নিয়ে আসবো । তারপরে বিছানায় শুয়ে পা দুলাবো আর বই পড়বো । ভাবতে খুবই এক্সাইটিং লাগতো । কিন্তু হায় এখন বেতন পাই ঠিকই, সেগুনবাগিচার পাশ দিয়ে যাই প্রতিদিনই, প্রেসক্লাবের এটিএম থেকে টাকাও তুলি, কিন্তু একটু হেঁটে সেবা প্রকাশনীতে যাওয়ার ইচ্ছে এখন আর জাগেইনা মনে । আজকে দুপুরে বাসে করে বাসায় আসার পথে ধুমসে নামলো বৃষ্টি ।

বাস থেকে নেমে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে এক দৌড়ে উঠে গেলাম কেয়ারী প্লাজার দোতলায় । ওখানে দেখি শীলা বই বিতান । পরে বুঝলাম, শীলা বই বিতান না , ওই দোকানের একজন এখানে নিজেই একটা দোকান খুলে বসেছে । বৃষ্টি তো আর থামে না । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই দেখতে লাগলাম ।

যেটা যেটা কিনতে ইচ্ছা করলো সেগুলো বের করে রাখলাম সামনে । পৃষ্ঠা উল্টে দেখি বইএর দাম আগের তুলনায় দ্বিগুন । ভাবলাম, সবকিছুর দাম বাড়লে বইয়ের দাম বাড়বে না কেন ? পকেটে তো এখন অনেক টাকা । মাসও শেষ । খরচ করা উচিত ।

আটশো টাকার বই কিনে ফেললাম । দোকানদারকে বললাম, বইয়ের দাম তো অনেক বেড়ে গেছে । দোকানদার বলে, হ্যা বইয়ের বিক্রী কমে গেছে , ওরাও দাম বাড়ায় দিছে । আমি অবাক হয়ে বললাম, সেবার বই কেউ কিনে না এখন ? উনি বললো, নাহ , খুব কম কিনে। ভাবলাম , আমরা কি তাহলে এখন বুড়া হয়ে গেছি , ব্যাকডেটেড হয়ে গেছি নাকি ? নেক্সট জেনারেশন এখন আর সেবার বই কিনে না , তারা এখন নেট আর মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ।

আমিও কি তাই নিয়েই ব্যস্ত না ? বৃষ্টিতে আটকে না পড়লে কি আমার এই বইগুলা কেনা হতো ? যাই হোক , প্যাকেটটা বগলদাবা করে নিচে নেমে আসলাম । বৃষ্টি থেমে গ্যাছে । রিকশায় উঠলাম বাসার উদ্দেশ্যে । কিন্তু সবচেয়ে বড় কথাটা কি জানেন , আমি কিন্তু প্যাকেটটা এখনো ছিড়ি নাই, টেবিলের উপরে পড়ে আছে । আমি কিন্তু সেই নেট নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি , হাহ হা হা হা হাহ হা হা ......... আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম , আমরা , আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ...... আজকে রাত্রেও সুন্দর রাত কাটাব আমি, চিত হয়ে শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে বই পড়বো , হুমায়ুন আহমেদের সাইন্স ফিকশন সমগ্র ... নাহ থাক, আজকে না, পরে কোন একদিন পড়বো , খুব ঘুম আসছে, কালকে আবার সকালে উঠে দৌড়াতে হবে , ডিজিটাল লাইফ তো , সবকিছু মেপে টেপে হিসাব করে চলতে হয় .........


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।