আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রস কানেক্টেড ভালোবাসা

অনেকটা পথ ধরে ছুটছি। গন্তব্যের নাম জানিনা ... এতটা জানি তাকে আমার খুঁজে পেতে হবে। টিনের ক্যানটাকে নিপুণ একটি কিকের সাহায্যে উড়িয়ে নিয়ে ফেললো রিসাদ। দূরে গিয়ে পড়ল শব্দ করে। থার্মোমিটার দিয়ে রাগের টেম্পার মাপলে কাঁচ ফুড়ে পারদ বেরিয়ে আসতে পারে।

আরমান অলওয়েজ লেট। তার উপর ফোন ধরছেনা। তখনি আরমান বাইকের ব্রেক ধরে সামনে দাঁড়ালো। গালি দেবার তীব্র ইচ্ছা দমন করে রিসাদ প্রশ্ন করে, "দেখা করেছিস?" উদাস ভঙ্গিতে আরমান, -করেছি। -দ্যান ... ? -দ্যান কি? আরমান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।

দাঁতে দাঁত চেপে রিসাদ জিজ্ঞেস করে, -কথা বলিস নি? -বলেছি। -কি বললো? -তোকে পাঁচটায় সরোবরে থাকতে বলেছে। শুনে ফোন বের করে চট করে ঘড়ি দেখলো রিসাদ। ৪টা বাজে। মোহাম্মাদপুর থেকে ধানমণ্ডি ১০ মিনিটের পথ।

আরমানকে জিজ্ঞেস করল, -শায়ন্তি ছিলো? -হুম। দেরি হবার কারণ জানা গেলো। শায়ন্তি আরমানের ফিঁয়াসে। নিশ্চয়ই অদিতি একলা দেখা করতে রাজি হয়নি। অদিতি, আরমান আর রিসাদের ফ্রেন্ড।

যদিও বাল্যবন্ধু, তবু অদিতি এখন আরমানকে এড়িয়ে চলে। দোষটা অবশ্য আরমানের। কি দরকার ছিলো তোর শায়ন্তির সাথে এতো খাতিরের! বুঝো এখন। শায়ন্তিকে আরমান একটু বেশিই প্রায়োরিটি দিয়ে ফেলেছিল। অবশ্য এটা বোঝার মতো অবস্থা তখন ছিলোনা।

আরমানের বাবার বন্ধুর মেয়ে সে। কানাডা থেকে দেশে এসেছে মেডিকেলে পড়ার জন্য। সেই সুত্রে আরমানের উপর গুরু দায়িত্ব এসে পড়ল শায়ন্তিকে বাংলাদেশে বসবাসের নিত্য প্রয়োজনীয় জ্ঞ্যান প্রদানের। একটা মেয়ের কাছ থেকেই সব চেয়ে ভালো আইডিয়া পাবার ধারণা থেকে শায়ন্তিকে অদিতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আরমান। তাছাড়া, অদিতি আর আরমান ভালো বন্ধু।

অদিতি বেশ লক্ষ্মী মেয়ে। ঢাকায় জন্ম, এখানেই বেড়ে উঠা। ছোট বেলা থেকেই আরমানের প্রতি একটা টান কাজ করে অদিতির। আরমান ক্লাসে না আসলে কেন যেন আর মন বসতো না। আবার কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে খুব মজা লাগতো।

টিফিন বক্সটা আরমানের সাথে শেয়ার করার জন্য আগলে রাখা, এক্সট্রা কলম নিয়ে আসা বা পরীক্ষায় টুকলিফাইং এর সুযোগ করে দেয়া; সব আরমানকে ঘিরে। কিন্তু তখন আরমানকে জিজ্ঞেস করলে বলতো,"দেখ আমরা খুব ভালো বন্ধু। আর কিছু না। " সময় গড়িয়ে এখন স্টুডেন্ট লাইফের দ্বার প্রান্তে। কিছুদিন পর রেজাল্ট।

অতঃপর যে যার মতো কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আংটি পড়িয়ে দেবার পর শায়ন্তি যখন "আই এম সো হ্যাপি ফর আস" বলে আরমানের গলা জড়িয়ে ধরে, দূরে দাঁড়িয়েও অদিতির কালো চোখে চিক চিক করতে থাকা পানি রিসাদের চোখ এড়ায় নি। শায়ন্তিকে ছেলের বউ বানানোর আনন্দে তখন আরমান-শায়ন্তির বাবা খুশীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ফ্যামিলি ফটো তুলতে ব্যস্ত। আর দুদিন বাদে আরমান শায়ন্তি জুটি জোড় বাঁধবে। সকাল বেলা পাংশু মুখে অফিসে আরমানের আগমন।

চেহারা দেখে রিসাদ ভুত দেখার মতো চমকে উঠে। তারপর সামলে নিয়ে চায়ের অর্ডার দেয়। বেশ কিছুক্ষন পর আরমান বলে,"আমি শায়ন্তিকে বিয়ে করবো না। " -কেন? আরমান জিজ্ঞেস করে। -আমি অদিতিকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

-এটা তোর আগে মনে হয় নি? -হয়েছিলো। পাত্তা দেই নি। মনে করেছিলাম ছোট বেলা থেকে আমরা একে অপরের সাথে আছি দেখে হয়তো ভালো লাগে। প্রেম টেম না। আর তাছাড়া তুই জানিস আমার সম্পর্কে।

অদিতি অন্য ধাতুতে গড়া। আমারা একেবারেই বিপরীত। -এখন ধারণা বদলাবার কারণ? -জানি না। এতটুকু বুঝি শায়ন্তির মাঝে আমি অদিতিকে খুঁজি। আরমান অদিতিকে ফোন করে।

দেখা করার কথা বললে অদিতি হেসে জিজ্ঞেস করে,"কি ব্যাপার আজ হটাত আমার সাথে দেখা করার জন্য উতলা! আগে তো সময় দিয়ে আসার সুযোগ পেতি না। " আরমান বলে, -আগে সময় তোর জন্য আলাদা করার কথা ভাবি নি। আজকে সময় আলাদা করে রেখেছি। দেখা করবি? অদিতি থতমত খেয়ে যায়। -কি বলতে চাস ঝেড়ে কাশ।

-দেখা হলে বলব। করতে পারবি প্লিজ? লাঞ্চ করবো এক সাথে। কি যেন চিন্তা করে অদিতি। তারপর বলে, -এট কর্নার? -হুম। -শায়ন্তিকে নিয়ে আসিস।

-শায়ন্তিকে নিয়ে আসা যাবেনা। ও বিজি। -আমি জিজ্ঞেস করে দেখি? -তোর ইচ্ছা। বলে ফোনটা রেখে দেয় আরমান। এরপর বেরিয়ে যায়।

যেহেতু শায়ন্তি ছিলো, তার মানে অদিতি কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে। এখন প্ল্যান হল রিসাদ, অদিতি আর শায়ন্তিকে নিয়ে শপিং এ যাবে। শায়ন্তির বিয়ের শপিং এর জন্য অনেক আগে থেকেই অদিতি আর রিসাদকে বলে রেখেছে। এর মাঝে রিসাদ অদিতির সাথে কথা বলবে। দেখা যাক শেষ মেশ।

বাসর ঘর। আরমানের রুমটা সুন্দর করে সাজানো। রুম আলো করে অদিতি বসে আছে। আরমানের মনে একটাই প্রশ্ন। হাউ! আজ রিসাদের মন বেশ ভালো।

সেদিন মায়াবি চোখের অদিতির চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা পানি যদিও তার দৃষ্টি এড়ায় নি, এড়িয়ে গিয়েছে তাকে প্রচণ্ড ভাবে ভালোবাসা মেয়েটির তাকে 'ভালোবাসি' বোঝাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা। চোরা চোখে শায়ন্তির দিকে তাকিয়ে থাকাটা যে ঠিক চোরা ছিলোনা তা বুঝতে পেরেছিল সেদিন রাতে, যখন দুদিন পর অন্যের বউ হয়ে যাবার হৃদয় ভাঙ্গা যন্ত্রণায় আর থাকতে না পেরে শায়ন্তি কেঁদে স্বীকার করল ভালোবাসি। বড় অদ্ভুত ভালোবাসা! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.