আমার জন্য বেদনারা দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকে; আমি ভেতরে ধুকতেই ওরা আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমাকে নিয়ে খেলা করে,আদর করে,চুমু খায়, আর আমি নীরবে কেঁদে উঠি; আজ কোথায় তুমি,ও আমার সুখ গৃহিণী।
সুচন্দা’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি অবিস্মরণীয় নাম। পারিবারিক নাম ‘কোহিনুর আখতার চাঁটনী’ আর চলচ্চিত্রে ‘সুচন্দা’ নামে পরিচিত। চাকরিজীবী পিতা সাতক্ষীরাতে অবস্থানকালে ১৯৪৭ সালে তাঁর জন্ম হয়। তবে বাল্যকাল থেকে কৈশরের শেষসীমা পর্যন্ত কেটেছে যশোরেই।
সুচন্দার বাবা এ.এস.এম নিজাম উদ্দীন আতাইয়ুব, মা ডাঃ বেগম জাহান আরা। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সুচন্দা সবার বড়। ছোট দুই বোন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতা ও চম্পা এদেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। বড় ভাই শহীদুল ইসলাম একজন ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম একজন বৈমানিক এবং সবার ছোট ভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। দাদা বাড়ী যশোরের বিজয় নগর গ্রামে এবং নানা বাড়ী নড়াইলের চরবালী গ্রামে।
পৈত্রিক বাড়ী যশোর শহরে সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। এই পরিবারের তিন কন্যা যুক্ত হলেন সাংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম চলচ্চিত্রের সঙ্গে।
চলচ্চিত্রে পদার্পণ করার পরই তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় পরিণত হয় প্রণয়ে, আর প্রণয় থেকে শেষ পর্যন্ত ১৯৬৮ সালে শুভ বিবাহে রুপ নেয়।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সুচন্দাকে নিয়ে স্বামী জহির রায়হানকে আশ্রায় নিতে হয় ভারতে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর প্রার্থীত বিজয় এলো। দেশে ফিরলেন সুচন্দা-স্বামী জহির রায়হানকে নিয়ে। তারপরই হঠাৎ একদিন এলো তাঁর জীবনের সবচেয়ে দূভার্গ্যের দিন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী।
বড়ভাই উপন্যাসিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ্ কায়সারকে খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হলেন এদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব জহির রায়হান, উপন্যাসিক জহির রায়হান, গল্পকার জহির রায়হান, সচেতন রাজনীতিক জহির রায়হান, প্রকৃত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান - সুচন্দার স্বামী জহির রায়হান।
জহির রায়হান সম্পর্কে সুন্দার মূল্যায়ণ এমনই- “জহির রায়হান ছিলেন কাজ পাগল মানুষ। একজন গুণী ও প্রতিভাবান, এককথায় অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি স্বামী বা বাবা হিসেবে ততটা ভাল ছিলেন না। তাঁর কর্মগুণ, প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সুচন্দা তাঁর প্রতি দূর্বল হন।
জহির তাঁর সন্তানদের জন্য অর্থ কড়ি রেখে যাননি। যা আয় করতেন তাই দান করতেন”। তিনি সুচন্দাকে বলতেন “হাজার লক্ষ্য নারীদের মধ্যে তুমি অসাধারণ, তুমি একেবারে আলাদা। সেজন্যই তুমি আমার স্ত্রী। তুমি অন্য সাধারণ মেয়েদের মত নও।
তোমার কোন চাওয়া-পাওয়া থাকবে না। তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আমাকে ভালোবাসা মানে সারা দেশের মানুষের ভালবাসা পাওয়া”।
সুচন্দার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে আরাফাত রায়হান (অপু) মায়ের অনুপ্রেণায় ও পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘প্রেম প্রীতি’ ছায়াছবির নায়ক হিসাবে চলচ্চিত্র জগতে প্রথম আত্নপ্রকাশ করেন।
বর্তমানে তিনি একজন ব্যবসায়ী। ছোট ছেলে অপু রায়হান পেশায় একজন ব্যাংকার। বড় মেয়ে রাফাইয়াৎ মালিক (মোনা) এবং ছোট মেয়ে রাফাইয়া মালিক (লিসা)। ছেলে মেয়ে সকলেই বিবাহিত।
শিক্ষাজীবন :
সুচন্দার শিক্ষার হাতে খড়ি হয় সাতক্ষীরায়।
চাকরিজীবী পিতা বদলী হয়ে যশোরে চলে আসলে তাঁকে ভর্তি করা হয় যশোর মোমেন গার্লস স্কুলে (যশোর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। মায়ের কাছে বাংলা আর বাবার কাছে ইংরেজী পড়তেন তিনি। স্কুলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং কৃত্বিতের সাক্ষর রাখতেন। এখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হন যশোর মাইকেল মদুসূদন কলেজে।
ইতোমধ্যে তিনি কিশোরী নৃত্যশিল্পী হিসাবে যশোরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর নৃত্য প্রদর্শন এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে তত দিনে।
বাবা চাকরির সুবাদে আবার বদলী হন বরিশাল এবং পরে ঢাকায় বসবাস করেন। সেজন্য সুচন্দাকেও বরিশাল মহিলা কলেজে কিছুদিন এবং পরে ঢাকা সিটি নাইট কলেজ (ঢাকা সিটি কলেজ) পড়াশোনা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকা সিটি কলেজ হতে এবং এখানেই স্নাতক বর্ষে ভর্তি হন।
এরপরই তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ব্যস্ততার কারণে স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
পরিবারের সাংস্কৃতিমষ্কতা এবং নিজের নৃত্য প্রতিভায় সম্ভবতঃ তাঁর মধ্যে সহজাত অভিনয় শিল্পীকে জাগ্রত করেছিলো।
চলচ্চিত্রে আত্নপ্রকাশ :
১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে যুক্ত হল একটি নতুন নাম, ‘সুচন্দা’। প্রথম ছবি ‘কাগজের নৌকা’ পরিচালক সুভাষ দত্ত। প্রথমেই নায়িকা হিসাবে আত্নপ্রকাশ এবং প্রথম ছবিতেই বিরাট সাফল্য।
ডাগর চোখের এক সুন্দরী কিশোরী কোহিনুর আখতার ‘সুচন্দা’ নাম নিয়ে এলেন এবং জয় করলেন চিত্রজগৎ ও অসংখ্য চিত্রামোদীদের হৃদয়।
এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি; পিছনে তাঁকাতে হয় নি এক মুহূর্তের জন্যেও। জহির রায়হানের পরিচালনায় সুচন্দার প্রথম ছবি ‘বেহুলা‘। বিপরীতে নবাগত নায়ক ‘রাজ্জাক’। এই ছবি থেকেই রাজ্জাক - সুচন্দা রোমান্টিক জুটির জন্ম।
একের পর এক এই জুটির বহু ছবি নির্মিত হয়েছে- এবং প্রতিটি ছবিই সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। উজ্জ্বল করেছে সুচন্দা রাজ্জাক জুটির জয়যাত্রা। সেই সময়ের চলচ্চিত্র দর্শকদের কেউই সম্ভবতঃ সহিত্যনির্ভর ছবি ‘আনোয়ারা’ তো সুচন্দা-রাজ্জাকের মর্মস্পর্শী অভিনয়ের কথা ভূলতে পারেননি আজও। রাজ্জাক ছাড়াও সুচন্দা যে সকল নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আজিম। কাজী জহির পরিচালিত ‘নয়নতারা’ ছবির অবিষ্মরণীয় ব্যবসায়িক সাফল্য আজিম-সুচন্দাকেও নির্ভরযোগ্য জুটি হিসাবে পরিচিতি দেয়।
তখন প্রথম দিকে ভারতীয় হিন্দী ও বাংলা ছবি এবং পকিস্তানের উর্দ্দু ছবির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করে টিকে থাকতে হত এদেশের চলচ্চিত্রকে। তাই এমনকি নন্দিত পরিচালক জহির রায়হানকেও ‘কখনো আসেনি’, ‘কাঁচের দেওয়াল’ প্রভৃতি নিরীক্ষাধর্মী ছবি নির্মাণ ছেড়ে বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণে হাত দিতে হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানী উদ্ভট নাচগান-মারপিট কন্টকিত উর্দ্দু ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়োজন হয়। বাণিজ্যিক ছবি হলেও রুচি রক্ষাই ছিল তখন এদেশের একজন ভাল পরিচালকের প্রধান কাজ। সেভাবেই নির্মিত হয়েছে এবং সফল হয়েছে ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘দুই ভাই’ প্রভৃতি অনেক ছবি- যার অধিকাংশের নায়িকা ছিলেন সুচন্দা।
১৯৬৯ এর গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জহির রায়হান নির্মাণ করলেন তাঁর জীবনের সমাপ্ত করে যাওয়া সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’। শিল্প মানের দিক থেকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি দিতে না পারলেও প্রতিবাদের ভাষা এ ছবিতে যে প্রখর প্রচন্ডতা পেয়েছিলো - তা প্রভাবিত করেছিলো এদেশের আপামর জনসাধারণকে। সে ছবিরও প্রধান নায়িকা ছিলেন সুচন্দা।
এদেশের চলচ্চিত্রে - যশোরের বিশিষ্ট শিল্পী সুচন্দাকেই পথিকৃৎ হিসাবে উল্লেখ করা যায়।
সুচন্দা যশোরে ’’শকুন্তলা’’ নামে নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এরপর রাস্তায় বের হলে অনেকে তাঁকে শকুন্তলা বলে ডাকতো।
চলচ্চিত্র প্রযোজনাঃ
জহির রায়হান ছিলেন সুচন্দার শিক্ষাগুরু। তিনি জহির রায়হানের কাছে ছবি পরিচালনা শিখেছেন। প্রযোজক হিসেবে সুচন্দা সফল। স্বাধীনতার আগে তিনি টাকা আনা পাই ও প্রতিশোধ এই ২টি ছবি প্রযোজনা করেন।
২টি ছবিই ব্যবসায়িক সফলতা পায়। স্বাধীনতার পর তিন কন্যা, বেহুলা, প্রেম প্রীতি, বাসনা, হাজার বছর ধরে প্রভৃতি ছবিতে প্রযোজনা করেন।
সুচন্দা প্রযোজিত ৩ কন্যা ছবিটি জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেন। ৩ কন্যা মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে। তার প্রযোজিত ছবি “হাজার বছর ধরে’’ ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি জাতীয় পুরষ্কার পায়।
প্রযোজক হিসেবে তিনি মনে করেন প্রযোজনা শুধু অর্থ লগ্নি নয় বরং সার্বিক জ্ঞান থাকা উচিত।
সম্মাননাঃ
এ পর্যন্ত তিনি মোট ৩/৪ টি ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়াও “হাজার বছর ধরে” ছবির প্রযোজক হিসেবে জানলিস্ট এ্যাসোসিয়েশন পুরষ্কার, প্রথম আলো পুরষ্কার এবং অন্যান্য বড় বড় সংগঠন থেকে পুরষ্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর যশোর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রক্তন ছাত্রী সংঘের গুণীজন সম্মাননা পান।
হাজার বছর ধরে
হাজার বছর ধরে এটি ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হান এর কালজয়ী উপন্যাস হাজার বছর ধরে অবলম্বনে একই শিরোনাম নির্মিত হয় এটি। সরকারি অনুদানের এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন জহির রায়হানের সহধর্মিনী এক সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্র মন্ত ও টুনির ভুমিকায় অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও নবাগত শশী। এছাড়াও শাহনুর, সুচন্দা, এটিএম শামুজ্জামান সহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন।
ছবিটি দক্ষ নির্মাণ শৈলী দিয়ে নির্মাণ করে সুচন্দা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে দারুন ভাবে আলোচিত হন।
এবং জিতে নেন মেরিল-প্রথম আলো পূরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পূরস্কার এর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পূরস্কার। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পূরস্কার সহ মেরিল প্রথম আলো পূরস্কার-এর একটি বিশেষ পুরস্কারসহ মোট চারটি বিভাগে ও পরে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পূরস্কার ২০০৫ এর মোট ছয়টি বিভাগে পূরস্কার লাভ করে।
কাহিনী সংক্ষেপ
নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুল ফোটে। আকাশে পাখি উড়ে- আপন মনে গান গায়।
হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে, তাতে আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়া-পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না, অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক, নারীর কোন অধিকার নাই। নারী হাতের পুতুল মাত্র। পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে। নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ, গুরুতর অপরাধ।
অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন। পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় “কাষেম শিকদার” আর তার বউ বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাই নিয়েছিল এই জায়গায়। সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছিল শিকদার বাড়ির।
শিকদার বাড়ীতে বাস করে বৃদ্ধ “মকবুল” (এটিএম শামসুজ্জামান) ও তার তিন স্ত্রী সহ “আবুল” (সিরাজ হায়দার), “রশিদ”, “ফকিরের মা” (নাজমা আনয়ার) ও “মন্ত” (রিয়াজ) এবং আরো অনেকে। বৃদ্ধ মকবুলের অষ্টাদশি বউ টুনির (শশী) মনটা মকবুলের শাসন মানতে চায় না। সে চায় খোলা আকাশের নিচে বেড়াতে, হাসতে, খেলতে। তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সঠামদেহী মন্তকে। মন্ত বাবা-মা হারা অনাত।
বিভিন্ন কাজ করে বেড়ায়। টুনি আর মন্ত সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে। এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায়। অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দু’জন।
কিন্ত কেউ মুখ ফুঁটে বলতে পারেনা মনের কথা, লোক লজ্জার ভয়ে। সমাজের রক্ত চক্ষু ওদের দুরে রাখে।
গাঁও গেরামে যা হয়, কলেরা বসন্তের মড়ক লাগলে উজাড় হয়ে যায় কয়েক ঘর মানুষ। ডাক্তার না দেখিয়ে টুকটাক তাবিজ করে, এভাবেই দিন চলে। মকবুলের আকস্মিক মৃত্যর পর মন্ত যখন মনের কথা টুনিকে খুলে বলে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।
গুন মোল্লা, আবলি, রশদ, ফকিরের মা, সালেহা কেই নেই। টুনির সঙ্গে মন্তর অনেক দিন দেখা হয়নি। টুনি হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে। তবুও টুনিকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মন্তর। এমনি করে অনেকটা সময় পার হয়েছে।
রাতের বেলা সুরত আলীর ছেলে ওর বাপের মতোই পুঁথি করে- “শোন শোন বন্ধুগনে শোন দিয়া মন, ভেলুয়ার কথা কিছু শান সর্বজন। ” ভেলুয়া সুন্দরীর কথা সবাই শানে। একই তালে, একই সুরে হাজার বছরের অন্ধকার এক ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলে সবাই। হাজার বছরের পুরনো জোত্স্না ভরা রাতে একই পুঁথির সুর ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
---কালের আবর্তে সময় গড়ায়।
প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে। শুধু পরিবর্তন আসেনা অন্ধকার, কুসংস্কারাছন্ন গ্রাম বাংলার আচলায়াতন সমাজে।
শ্রেষ্ঠাংশে
• রিয়াজ - মন্ত
• শশী - টুনি
• এটিএম শামসুজ্জামান - মকবুল
• কোহিনুর আক্তার সুচন্দা - টুনির মা
• নাজমা আনয়ার - ফকিরের মা
• সিরাজ হায়দার - আবুল
• আমীর সিরাজী - গুন মোল্লা
• শহিদুল আলম সাচ্চু
নির্মান ইতিহাস
হাজার বছর ধরে জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী উপন্যাস। যেই উপন্যাস প্রচলিত বাংলাদেশের ১৯৬০ সালের জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। বিখ্যাত অভিনেত্রী সুচন্দার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল এই উপন্যাস অবলম্বনে এবং একই শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মান করবেন।
এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ সরকার-এর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সমর্থন পেয়েছিলেন। এবং ছবিটি রসাস্বাদন প্রকল্পে কর্তৃপক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার একটি অনুদান পেয়েছিলেন। 'যদিও ছবি নির্মান ব্যয়ের তুলনায় অনুদানের পরিমান ছিল অপর্যাপ্ত' সুচন্দা মনে করেন এটা অসম্ভব যে ছোট বাজেটের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য চলচ্চিত্র নির্মান করা, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন যে 'ভালো কিছু করতে হলেত একটু বেগ পেতেই হয়'। সুচন্দা ছবির শুটিং স্পট বেছে নেন গাজীপুর মধ্যে হোতাপারা স্পট এ করা হয়েছে।
হাজার বছর ধরে সুচন্দার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র সবুজ কোট কালো চশমা, তিনি একটি দীর্ঘ বিরতি পর এই ছবিটি নির্মাণ শুরু করেন।
তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য যথাক্রমে প্রায় ছয় বছর অপেক্ষা করেছেন। যখন হোতাপারা থেকে তিনি গাজীপুর গেলেন তখন শুটিং স্পট এবং প্রধান স্থান হিসেবে নির্বাচিত করলেন। মূল উপন্যাসের সাথে দৃশ্যের মিল রাখতে জায়গায় ঋতু পরিবর্তন মানা হয়। প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তন স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল।
হাজার বছর ধরে ছবিতে টুনি চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে সুচন্দা ১৪ বছর বয়সী মেয়ে শশীকে নির্বাচিত করেন।
সুচন্দার এই ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে অভিনেতা রিয়াজ ছিলেন অন্য রকম, তিনি এই ছবিটির মন্টু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র ১০১ টাকা। রিয়াজের ইচ্ছে উচ্চমানের চলচ্চিত্র নির্মানে ভবিষ্যতেও তিনি এরকম সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত রাখবেন।
সম্মাননা
আন্তর্জাতিক সম্মাননা
• ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি (প্রশংসাসূচক শুভেচ্ছাসনদ) ২০১১
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র - সুচন্দা চলচ্চিত্র
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ পরিচালক - কোহিনূর আক্তার সূচন্দা
• বিজয়ী সঙ্গীত পরিচালক - আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
• বিজয়ী কাহিনীকার - জহির রায়হান (মরণোত্তর)
• বিজয়ী চিত্রগ্রাহক - (রঙ্গিন), মাহফুজুর রহমান খান
• বিজয়ী শিল্প নির্দেশক - মোহাম্মদ কলন্তর
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র - সুচন্দা চলচ্চিত্র
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেতা - রিয়াজ
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - শশী
• বিজয়ী বিশেষ পুরস্কার - মাহফুজুর রহমান খান (চিত্রগ্রাহক)
সংগীত
হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের প্রক্ষেত সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। কিন্ত আশা ছিল মনে মনে গানটি প্রথম অংশ জহির রায়হান এর লেখা।
সাউন্ড ট্র্যাক
আশা ছিল মনে মনে - সুবির নন্দী
তুমি সুতোয় বেঁধেছো শাপলার ফুল - সাবিনা ইয়াসমিন ও সুবির নন্দী
এই দুনিয়া দুই দিনেরই মুসাফির খানা - অ্যান্ড্রু কিশোর
সুচন্দা অভিনীত কিছু গানের ভিডিওঃ
(তথ্য সংগ্রহ ইন্টারনেট হতে করা হয়েছে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।