আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী ও বিড়ি

পোলাপান ঠিক কখন থেকে বড় হয়ে উঠে তা নির্ণয় করা একটু কঠিনই। কেননা ’বড়’ কথাটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ডানো আর হরলিক্স ওয়ালাদের কাছে বড় হওয়া এক জিনিস, ক্লাসমেট-এর সাথে প্রেম করে বিয়ের উপযোগী বড় হওয়া কিংবা স্বচ্ছল পরিবার আর টানাটানির পরিবারে বড় হওয়া ভিন্ন ভিন্ন জিনিস। তবে ঠিক কবে থেকে বড় হয়ে উঠে তা বয়স দিয়ে নির্ণয় করা না গেলেও ব্যাবহার দিয়ে কিছুটা নির্ণয় করা যায়। বড় হওয়ার জন্য পোলাপানের যে অদম্য স্পৃহা তাই শেষ পর্যন্ত তাদের বড় করে তোলে।

সেই সব চেষ্টার একটা হল প্রথম গোফ কামানো। এটা হল প্রকাশ্যে বড় হওয়া। অনেক পোলাপান আবার লুকিয়ে লুকিয়ে বড় হবার চেষ্টা করে। লুকিয়ে বড় হবার প্রধান চেষ্টা হল সিগারেট ধরা। যে একবার ধরল তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না।

এটা এমনই এক বিদ্যা যা দিয়ে সারা জীবন করে খাওয়া যায়। এবং এটা এমন এক বিদ্যা, যে শেখে সে সাধারণত ঐ বয়সেই শেখে। এই যে বড় হয়ে যাবার একটা সন্ধিক্ষণ, জ্ঞানী-গুণীরা থিওরী দেন, এখানে পোলাপানের সামনে দুটি পথ থাকে। হয় নারী, অথবা বিড়ি। অর্থাৎ, এই স্টেজে এসে কেউ ঝুকে পড়ে প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার দিকে।

নারী কর্ম, নারী ধর্ম, নারী পরম তপঃ। লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট-এর মত ঘটনার ঘনঘটা শুরু হয়ে যায়। আর আরেক দল আছে যারা নারী প্রীতির পরিবর্তে নারী ভীতি বা অন্য কোন কারনে নারী থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করে লুকিয়ে চাপিয়ে বিড়িতে টান দেয়াতেই জীবনের স্বার্থকতা খোঁজে। অন্য সকল থিওরীর মতন এই থিওরীরও অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে। অনেকেই আছেন যাদের কোনটাই টানেনি।

নিউটনের থিওরী ব্যর্থ করে তারা সকল রকম টান থেকে মুক্ত। তবে Law of Average অনুযায়ী একটা স্বাভাবিক গড় করতেই যেন দুটোই টেনেছে এমন লোকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। নারী ওয়ালারা ঘুরে ফিরে নারীতেই থাকে। হয় এই নারী নয় সেই নারী। তবে বিড়িওয়ালারা আরও প্রতিভাবান।

জ্ঞানী-গুণীদের বাণী যে শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। নারী এবং বিড়ি নিয়েও তাদের তাদের তত্ত্বের নানান শাখা-প্রশাখা আছে। বিড়িওয়ালা সম্পর্কে প্রশাখা-তত্ত হলো ”যে বিড়ি খায় সে অন্য কিছুও খায়। ” এটা ”যে রাধে সে চুলও বাধে”র মতো কোন ব্যাপার নয়। রাধা এবং চুল বাধা হলো কমপ্লিমেন্টারি বিষয়।

আর ’বিড়ি এবং অন্য কিছু’ হলো পরষ্পরের সাপ্লিমেন্টারি। যেহেতু যেখানেই থিওরী আছে সেখানেই একসেপশন আছে, কাজেই স্বাভাবিকভাবেই এখনেও আছে ব্যতিক্রম। কেবল বিড়ি খায় কিন্তু অন্য কিছু খায় না এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি আছে। আবার অন্য কিছু খায়, কিন্তু বিড়ি খায়না এমন উদাহরণও আছে। অন্তত একটা আছে।

তবে এই সেকেন্ড স্পেসিসটা আসলেই বিরল। আর মূল প্রজাতিটার মেইন কোর্স বিড়ির সাথে সময়ে সময়ে এ্যাপেটাইজার, ডেজার্ট বা ড্রিঙ্কস থাকছেই। তাত্তিকেরা বেশ খানিকটা ভূমিকা দেবার পর মওকা মত বলেই ফেলে, মিথ্যা যেমন সকল পাপের জননী, এই বিড়িও তেমনি সকল নেশার আপন মাতা। যারা থিওরী দেন তারা অনেক কথাই বলেন। তাই তাদের কথা নিয়ে মাথা খুব একটা না ঘামালেও চলবে।

আর প্রতিভাবানরা সাধারণত অন্যের কথা শুনেই বিশ্বাস করে ফেলেন না। তারা সারা জীবন ধরে টেস্ট করে যায় এবং মৃত্যুর আগ দিয়ে আগ দিয়ে তাদের সারা জীবনের গবেষণালব্ধ রায় দিয়ে যান। সিগারেট সম্পর্কেও তারা সারা জীবন গবেষণা করে যান এবং শেষ বয়সে সময় পেলে তা ছাড়ার ব্যপারে মত দিয়ে যান। যেমন সূনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর সরল স্বীকারোক্তি--”...এর পরেও আমি আরও অনেক রকম নেশার দ্রব্য পরীক্ষা করে দেখেছি, কিন্তু একমাত্র সিগারেট ছাড়া আর কোনও নেশার দাসত্ব করিনি। এতগুলি বছর পরেও বুঝতে পারি, এই নিরীহ সিগারেটের মতন হারামজাদা নেশা আর হয় না।

অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছি না। ” তবে বিড়িটা সবাই এক সময় না একসময় ছাড়তে চায়। এবং একসময় উপলদ্ধি করে এর চেয়ে পৃথিবীর যে কোন কাজ সহজ। তবে মার্ক টোয়েন কিন্তু দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন সিগারেট ছেড়ে দেওয়া মোটেই কঠিন কাজ নয়। কারণ তিনি ২৫২ বার ছেড়েছেন! সিগারেটটা ধরার পর থেকেই সবাই ছাড়তে চায়।

অনেকে সরাসারি ছাড়তে না পেরে অন্তত সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায়। এজন্য কিছু কনডিশন সেট করে দেয়। কেউ খাওয়ালে খাবে, কিনে খাবে না; এলাকার বাইরে গেলে খাবে, বাসায় বা এলাকায় থাকলে খাবে না; নরমালি ধরাবে না, কোন স্পেশাল অকেশন থাকলে ধরাবে... এভাবেই কন্ডিশন বাড়তে থাকে। এবং স্পেশাল অকেশনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত যোগ হতে থাকে ঈদ, থার্টি ফার্স্ট, পহেলা বৈশাখতো বটেই, অমুকের জন্মদিন, তমুকের বিয়ে ছাড়াও আকাশটা মেঘলা, শীতটা একটু বেশী, মনটা একটু খারাপ খারাপ কিংবা একটু বেশীই ভাল... কিছুই বাদ যায়না। এভাবে ছাড়ি ছাড়ি করতে করতেই এক সময় ভালোবাসাটা অনেক গভীর হয়ে যায়।

এবং এতটাই গভীর হয়ে যায় যে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করে প্রয়োজনে নারী ছাড়তে পারে কিন্তু বিড়ি ছাড়তে পারে না। অন্তত তুলনামূলকভাবে বিড়ি ছাড়ার হার নারী ছাড়ার হারের চেয়ে কমই হবে। আর আমাদের নারী জাতিরও প্রথম ও প্রধান মহৎ কাজ যেটা সেটা হলো বন্ধু হোক, প্রেমিক হোক আর স্বামীই হোক সিগারেট ছাড়ানো। আর পোলাপানও, যে মায়ের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনা সে বন্ধু, প্রেয়শী বা স্ত্রীর কাছে করা প্রতিজ্ঞার প্রতি আর কতটুকুই বা শ্রদ্ধাশীল হতে পারে? আমি একজনকে জানি যে প্রেয়শীর কাছে প্রতিজ্ঞা করে তিন মাস বিড়ি ধরায়নি, কেবল গাজার উপর ছিল! আহা, ভালবাসার দিব্যি। নারী ও বিড়ি কে শেষ সত্য কে জানে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.