আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যকে জানুন,বুঝুন এবং সত্যের সাথে থাকুন।কেন কর্মী অষন্তোষ গ্রামীনফোনে?

গ্রামীনফোন কর্মীদের অধিকার আদায়ের লড়াই অব্যাহত। গ্রামীণফোনে গনছাটাই ও কর্মীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)গত ৩০ জুলাই ১২, চিঠি দিয়েছে গ্রামীনফোনের প্রধান নির্বাহী টরে জনসেন ও টেলিনরের প্রেসিডেন্ট ফ্রেডরিক বাকসাসকে। চিঠিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্হান মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়া আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন (আইএলও)- বাংলাদেশের পরিচালক এন্ড্রি বাগুইকে। এম্প্লয়ী এসোসিয়েসন গঠন হওয়ার পরও থেমে থাকেনি গ্রামীনফোনের কর্মী ছাটাই প্রক্রীয়া যা কিনা বাংলাদেশ লেবর এক্ট পরিপন্থী। অধ্যায় ১৮৬, শ্রম আইন, ২০০৬ এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে- "কোন কোম্পানী কোনভাবেই কোন ইউনিয়ন সদস্য এমনকি যদি ইউনিয়ন গঠনের আবেদন মুলতুবি আছে, কোন কর্মীকে চাকরীচ্যুত্ত করতে পারবে না।

"। এম্প্লয়ী এসোসিয়েসনের এক দলনেতা এই প্রসঙ্গে বলেন- "আমরা নিবন্ধনের জন্য গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ শ্রম মন্ত্রনালয়ে আবেদন করি এবং গ্রামীনফোন তারপর দিন২৪ জুলাই কর্মী ছাটাইয়ের চিঠি প্রণয়ন করেছে। যা পুনরায় আইনের লঙ্ঘন। তারা কোনো আইন অনুসরণ না করেই এটা করেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

গ্রামীণফোন কর্মীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। কর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্যাতন, অন্যায় আচরণ, জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্ট পুঞ্জিভুত ক্ষোভ এখন বিক্ষোভে রুপান্তরিত হয়েছে। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত দেশের প্রচলিত আইন, শ্রম আইন ও সামাজিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ কাজ করায়, দেশের সবচাইতে মেধাবী ও দক্ষ কর্মীরা বাধ্য হয়েছে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে পথে নামতে। গ্রামীণফোন কর্মীদের চাওয়া, গ্রামীণফোনে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন, আইনের শাসন মেনে গ্রামীণফোনের কর্ম প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। আইনগত ভাবে কর্মীদের প্রাপ্য, ভাতা, নিরাপত্তা, সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করাই জন্যই গঠন করা হয়েছে এম্প্লয়ী এসোসিয়েসন।

মাএ ছয় (৬) দফা দাবী নিয়েই এই এসোসিয়েসন শুরু করেছে তাদের আন্দোলন। এ পরিস্থিতিতে গ্রামীণফোনের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এই অবৈধ ও অস্বচ্ছ ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের গ্রামীণফোন ভবনের সামনে বিগত কয়েকদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দাবিগুলো নিয়ে। ছয় দফা দাবিগুলো হচ্ছে- ১। অবিলম্বে অবৈধ ও অস্বচ্ছ ছাঁটাই প্রক্রিয়া বন্ধ করা, ২। ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অবসর পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, ৩।

প্রধান জনশক্তি কর্মকর্তাসহ সব ষড়যন্ত্রকারীকে বিচারের আওতায় আনা, ৪। বর্তমান ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিক হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করতে হবে। ৫। কম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে। এবং ৬।

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণকারী কর্মীদের উপযুক্ত পারিতোষিক প্রদান করা। কেন এই কর্মী অষন্তোষ গ্রামীনফোনে? গ্রামীণফোন দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রচলিত আইন যে ভাবে অমান্য করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে তা আপনার সদয় অবগতির জন্য তুলে ধরা হলঃ ১। শ্রম আইন অনুযায়ী কোনও পার্ট টাইমার/কন্ট্রাকচুয়াল ৬ মাসের বেশী কাজ করলে রেগুলার এমপ্লয়ি হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু ২-৫ বছর পর্যন্ত কর্মরত পার্ট টাইমার/কন্ট্রাকচুয়ালদের রেগুলার এমপ্লয়ি করা দূরে থাক উলটো বিনা নোটিশে প্রায় এমন ৫০০ জন কর্মরত পার্ট টাইমার/ কন্ট্রাকচুয়ালদের টারমিনেট করে। সব রকম আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে।

এই পার্ট টাইমার/কন্ট্রাকচুয়ালরা এর প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে লাঠি পেটা করে বের করে দেয়। ঘটনাটি ২০০৭ সালের। ২। শুন্য থেকে গ্রামীণফোনকে সাফল্ল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া নিবেদিত কর্মীদের চাকরি থেকে বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু করে নরওয়ের টেলিনর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, এই কর্মীরা ৫ থেকে ১০ বছর ধরে গ্রামীণফোনে কাজ করছে, এদের থেকে এখন পাওয়ার আর কিছু নেই।

বিভিন্ন পন্থায় টেলিনর কর্তৃপক্ষ গ্রামীণফোনের এই সব নিবেদিত প্রাণ, অভিজ্ঞ, গ্রামীণফোনের সাফল্ল্যের প্রত্যক্ষ অংশীদার কর্মীদের ২০০৫ থেকে এখন পর্যন্ত বিতাড়ন করেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে, নরওয়ের টেলিনর কর্তৃপক্ষের হীন চক্রান্তে চাকরি হারান মেহবুব চৌধুরী, নায়লা হসেইন চৌধুরী, এম কে মবিন, বিদ্যুৎ কুমার বসু, কফিল মুয়ীদ, মাহবুব হসেইন, খালিদ হাসান, শফিকুল ইসলাম, আরিফ আল ইসলাম, রুবাবা দউলা সহ প্রায় ১০০০ কর্মী । ৫ থেকে ১০ বছর ধরে গ্রামীণফোনে কাজ করা কর্মীদের বিতাড়ন করেছে নরওয়ের টেলিনর কিন্তু ওদিকে আমদানি করেছে নরওয়ের টেলিনরের বৃদ্ধ কর্মীদের যাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মানসিক ভারসাম্য প্রশ্নবিদ্ধ। নিশ্চিত ভাবে নরওয়ের টেলিনরের এই সব কর্মীরা বাংলাদেশী কর্মীদের চাইতে চরম নিম্নস্তরের। ৩।

নরওয়ের টেলিনরের নিম্ন মানের কর্মীরা এসেই গ্রামীণফোনের দেশীয় কোম্পানির ভাবমূর্তি উড়িয়ে দিয়ে এটিকে নরওয়ের টেলিনরের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যান্ডিং করে ফলে গ্রামীণফোনের প্রতি দেশের সাধারনের যে সহমরমিতা ছিল তা হারায় গ্রামীণফোন। বিদেশে টাকা পাচারের অংশীদার হিসেবে ক্ষুণ্ণ হয় শুরু থেকে কাজ করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের শ্রমে গড়ে তোলা গ্রামীণফোনের সুস্থ ভাবমূর্তি। শুরু হয় নরওয়ের টেলিনরের নিম্ন মানের উচ্চপদস্থ কর্মীদের দাপট। নরওয়ের টেলিনর থেকে আসা উচ্চ পদ দখল করা কর্মীরা যে কতটা অযোগ্য ও মান হীন তার প্রমান মিলতে শুরু করে এর পর থেকেই ৪। বাঙালীর সংস্কৃতির পরম দিন ১লা বৈশাখে নরওয়ের টেলিনর থেকে আসা উচ্চ পদ দখল করা কর্মীরা বাজারে ছাড়ে আমাদের সমাজের মূল্যবোধের পরিপন্থী “ডিজুস”।

রক্তে অর্জিত বাংলা ভাষাকে অপমান করে প্রচার করতে থাকে “Slang” যা সামাজিক ভাবে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পরবর্তীতে সুশীল সমাজের চাপে “Slang” প্রচার বন্ধ করতে বাধ্য হয় গ্রামীণফোনে কর্মরত নরওয়ের টেলিনর কর্মীরা। ৫। নরওয়ের টেলিনর থেকে আসা উচ্চ পদ দখল করা কর্মীরা “Slang” প্রচার করতে না পেরে অন্য ভাবে তরুণদের অবক্ষয়ের পথে ঠেলে দেয়। সারা রাত ফ্রি কথা বলতে দিয়ে তরুণদের নিয়ে যায় বিপথে।

আমাদের তরুণদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত করে তোলে এরা। সমাজের সর্বস্তরের প্রতিবাদের মুখে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে, আমাদের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করে তোলার, এই হীন প্রচেষ্টার ওপর। ৬। গ্রামীণফোনে কর্মরত নরওয়ের টেলিনর কর্মীরা এর পর শুরু করে বাংলাদেশী কর্মীদের কর্ম যোগ্যতা পঙ্গু করে দেবার প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠান/কাজ পুনর্বিন্যাস (Organization Restructuring) এর নামে শুরু করে কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যহীন পদে পদায়ন।

কর্মীদের ক্যারিয়ার প্যাথ (Career Path) নষ্ট করার মধ্য দিয়ে পঙ্গু করে দেয় কর্মীদের কর্ম যোগ্যতা। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মের সুযোগ পাবার পথ এভাবেই হয় রুদ্ধ। ৭। উচ্চ পদ দখল করা টেলিনরের কর্মীরা কিছুদিন পর পরই প্রতিষ্ঠান/কাজ পুনর্বিন্যাস (Organization Restructuring) করতে শুরু করে। কিন্তু কি কারণে এই Restructuring, কেন তা প্রয়োজন, এই পরিবর্তন আদৌ প্রতিষ্ঠানের জন্য সুফল বয়ে আনবে কিনা এই সব মৌলিক বিষয় না ভেবেই ডাল ঘুঁটা দেবার মতো যে ভাবে খুশি কর্মীদের দায়িত্ব ও পদ পরিবর্তন করে তাঁরা ।

ফলে গ্রামীণফোন আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মার্কেট শেয়ার হারায় প্রতিযোগী টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছে। সেই সাথে গ্রামীণফোনের কর্মীদের মাঝে হতাশা, আতঙ্ক, মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিবার Organization Restructuring-এর নামে কর্মীদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে। যোগ্য কর্মীকে উপযোগী দায়িত্ব না দিয়ে করে তোলা হয় অথর্ব। মানসিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মীদের বাধ্য করে চাকরি ছেড়ে দিতে।

৮। প্রতিষ্ঠান/কাজ পুনর্বিন্যাস (Organization Restructuring) এর দোহাই দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ নিবেদিত প্রাণ সিনিয়র কর্মীদের বাধ্য করা হয় তাঁর চাইতে পদ মর্যাদায় নিচের জুনিয়র অধস্তনকে রিপোর্ট করার জন্য যা শ্রম আইন ও আমাদের সামাজিক নীতির পরিপন্থী। অধস্তনকে রিপোর্ট করতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ নিবেদিত প্রাণ সিনিয়র কর্মীদের ওপর চালানো হয় মানসিক ও সামাজিক নির্যাতন। এইভাবে সহকর্মীদের কাছে অবমাননা ও অবদমিত করা হয়, করা হয় সামাজিক ভাবে হেয়। বাজারে সম মানের চাকরির অভাব বাধ্য করে কর্মীদের অবমাননা, অবদমন, সামাজিক ভাবে হেয় হওয়া সত্ত্বেও, এই অপমান সহ্য করে চাকরি করে যাওয়া।

৯। কাস্টমার কেয়ার ও কল সেন্টারে কর্মরতদের বেলায় মানা হয় নি শ্রম আইনের বিধান। শারিরিক ও মানসিক ভাবে ঝুকিপূর্ণ কাজ করানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও বিরতি দেবার কথা থাকলেও তা মানে নি গ্রামীণফোন। প্রতিদিন ৯ ঘন্টা হেডফোন ব্যাবহার করে এক টানা গ্রাহক সেবা দেবার ফলে কর্মীদের শ্রবণ ও কণ্ঠস্বর স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ২০০০ কর্মী শারীরিক ভাবে আংশিক অক্ষম হয়ে পড়েছে।

এদের প্রত্যেকে ব্যক্তিগত খরচে এই শারীরিক অক্ষমতার ব্যয় ভার বহন করছে যদিও এর দায়ভার সম্পূর্ণ গ্রামীণফোনেরই। ১০। কাস্টমার কেয়ার ও কল সেন্টারে ঝুকিপূর্ণ কাজ করার ফলে শারীরিক ভাবে আংশিক অক্ষম হয়ে পড়া কর্মীরা তাঁদের দায়িত্ব পরিবর্তনের অনুরোধ করলে বা ছুটির আবেদন করলে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ সেই কর্মীদের চাকরীচ্যুত করে এবং অন্যান্যদের চাকরীচ্যুত করার হুমকি দেয় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। ১১। কাস্টমার কেয়ার ও কল সেন্টার সহ গ্রামীণফোনের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ পায় বাংলাদেশের মেধাবী ছেলে মেয়েরা কিন্তু এই সব মেধাবীদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না দিয়ে একই ধরনের একঘেয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

সেই সাথে একই পদে দীর্ঘ দিন সাফল্যের সাথে কাজ করার পরও কর্মীদের পদোন্নতি না দেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। এমন অনেক কর্মী রয়েছেন যারা ১০ বছর একই পদ মর্যাদায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ১২। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের নাম আসার পর টেলিনর কর্তৃপক্ষ গ্রামীণফোনে কল্পিত দুর্নীতি নির্মূল করার পদক্ষেপ নেয়। দুর্নীতি নির্মূল করার নামে গঠিত কমপ্লায়েন্স টীম নিরীহ কর্মীদের হয়রানী শুরু করে।

কমপ্লায়েন্স টীম নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে নিরীহ কর্মীদের ওপর কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ আরোপ করে ৫০০ কর্মীকে চাকরীচ্যুত করে এবং অন্যান্যদের চাকরীচ্যুত করার হুমকি দেয়। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার পরও অপবাদ মাথায় নিয়ে, আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে কর্মীদের চলে যেতে হয়। এই সব কর্মীদের বেশীরভাগ এখনো বেকার এবং প্রায় সকলেই মানসিক হতাশাজনক অসুস্থতায় ভুগছে। ১৩। দুর্নীতি নির্মূল করার নামে গঠিত কমপ্লায়েন্স টীম নিরীহ ও নিরাপরাধ কর্মীদের চাকরীচ্যুত করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজে লাগায় কমপ্লায়েন্স টীম।

৫০০ কর্মীকে চাকরীচ্যুত করে কমপ্লায়েন্স টীমের সদস্যরা হাতিয়ে নেয় অস্বাভাবিক পদোন্নতি। মানব সম্পদ বিভাগের অধীনে কমপ্লায়েন্স টীমে এমন সব কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয় যারা টেলিনর কর্মী কর্তৃক নির্বাচিত এবং যারা শুধুমাত্র টেলিনরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। ১৪। ২০১০ সালে হে ব্যান্ডিং-এর নামে গ্রামীণফোনের সকল কর্মীদের পদ পুনঃ নির্ধারণ করা হয় কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি অনুযায়ী। ভয়াবহ দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয়, কাছের ও পছন্দের কতিপয় কর্মীকে ৩ থেকে ৪ ধাপ অস্বাভাবিক পদোন্নতি দেয়া হয়।

অন্য দিকে দেশের সকল প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ না দর্শীয়ে ৩৫০ জন কর্মীকে নিম্ন পদে পদায়ন (Degrade/Demotion) করে। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের এই বেআইনি, শ্রম আইন বিরোধী জঘন্য কর্মকাণ্ডের শিকার হন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ নিবেদিত প্রাণ সিনিয়র কর্মীরা। নিম্ন পদে পদায়ন (Degrade/Demotion) করার ফলে এই সব কর্মীরা সহকর্মীদের কাছে ও সামাজিক ভাবে হেয় হন। ক্ষুণ্ণ হয় তাঁদের সামাজিক মর্যাদা। লজ্জায়, ক্ষোভে, অপমানে এই কর্মীদের অনেকেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

১৫। হে ব্যান্ডিং-এর নামে কর্মীদের কয়েক ধাপ নিম্ন পদে পদায়ন (Degrade/Demotion) করে গ্রামীণফোন। এমন কি কোন কোন কর্মীকে ৪ বার কর্মীর অজ্ঞাতসারে Degrade/Demotion দেয়া হয় আবার পুরনো পদে পদায়ন করা হয়। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের এহেন বেআইনি, শ্রম আইন বিরোধী জঘন্য কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে কর্মীরা আদালতের দারস্থ হলে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তাঁদেরকে চাকরীচ্যুত করে। ১৬।

হে ব্যান্ডিং-এর নামে গ্রামীণফোনের এই বেআইনি, শ্রম আইন বিরোধী নিম্ন পদে পদায়ন (Degrade/Demotion) –এর প্রতিবাদে কয়েকজন কর্মী আইনের আশ্রয় নিলে, গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ সেই কর্মীদের আইনের আশ্রয় নেবার বিনা নোটিশে চাকরীচ্যুত করে যদিও শ্রম আইন অনুযায়ী মামলা চলাকালীন সময়ে আদালতে বিচার প্রার্থী কর্মীকে বদলি, হয়রানী বা চাকরীচ্যুত করা যায় না। ১৭। হে ব্যান্ডিং-এর নামে শ্রম আইন লঙ্ঘনের পর গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ শুরু করে আরেক শ্রম আইন বিরোধী কর্ম কাণ্ড। কর্মী সংখ্যা হ্রাস করার উদ্যোগ নেয় যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ খেয়াল খুশিমত নির্ধারণ করে কোন বিভাগ থেকে কত কর্মী কমানো হবে।

কর্মী নির্ধারণের নামে লোক দেখানো পরীক্ষা নেয়া শুরু করে যদিও আগে থেকেই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা নিজের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব ও কাছের মানুষদের সে সব পদে পূর্বেই নির্বাচিত করে রাখা হয়। লোক দেখানো পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা যায়, নিরীহ সাধারন কর্মীরা পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ আর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পূর্ব নির্ধারিত নিজের লোকেরা উত্তীর্ণ। ১৮। দেশের প্রচলিত আইন কিংবা শ্রম আইনে বা গ্রামীণফোনের শ্রমনীতির কোথাও বলা নেই স্বপদে কাজ করার জন্য কর্মীকে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হবে। এক জন কর্মী সব ধরনের পরীক্ষা দিয়েই একটি পদে নিয়োগ লাভ করেন অতএব সম পদে নিয়োজিত থাকবার জন্য যে কোন রকম পরীক্ষা দেবার জন্য নির্দেশ দেয়া শুধুমাত্র আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনই নয় সেই সাথে কর্মীর জন্য অবমাননাকর।

১৯। সম পদে নিয়োজিত থাকবার জন্য বেআইনি এই পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হয় কর্মীরা। পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। প্রশ্ন বিদ্ধ ছিল সমগ্র প্রক্রিয়া। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তথাকথিত অনুত্তীর্ণদের স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতির জন্য কোঠর চাপ প্রয়োগ করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ।

যারা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে অস্বীকার করে তাঁদের চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। সেই সাথে সামাজিক ও মানসিক নিগ্রহের হুমকি দেয়া হয়। কর্মীদের অনেকে ভবিষ্যতের কথা ভেবে নীরবে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। আর যারা প্রতিবাদ করেন তাঁদের সকলকে চাকুরিচ্যুত করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। ২০।

সম পদে নিয়োজিত থাকবার জন্য বেআইনি এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া থেকে রেহাই পাননি মাতৃত্ব জনিত ছুটিতে থাকা মহিলা কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সন্তান জন্ম দেবার আগের দিনটিতেও পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের টার্গেটে পরিণত হওয়া এই সব মহিলা কর্মীরা মাতৃত্ব জনিত ছুটিতে থাকার অপরাধে চাকুরিচ্যুত হন। ২১। দুঃখ জনক হলেও সত্য প্রতি বছর বার্ষিক মূল্যায়নের সময় গ্রামীণফোনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ৫ থেকে ১০ বছর ধরে গ্রামীণফোনে কর্মরতদের বেলায় খড়গহস্ত হন।

বার্ষিক মূল্যায়নের সময় কর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক ব্যাবহার করেন আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে যোগ্যতার চাইতে কম নম্বর দেন। শুন্য থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলা গ্রামীণফোনের সেই সব কর্মীদের সামান্য অজুহাতে চাকুরিচ্যুত করতে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন। ২২। মুদ্রাস্ফীতি জনিত বেতন বৃদ্ধি আগে নিয়মিত থাকলেও ইদানীং গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ মুদ্রাস্ফীতি জনিত বেতন বৃদ্ধি করতে অস্বীকৃতি জানায়। অজুহাত, কর্মীদের বেতন বেশী।

অথচ কর্মীদের একান্ত প্রয়াসে এবারও গ্রামীণফোন অর্জন করে ২০০% মুনাফা। ২৩। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী মুনাফার ১% সরকারী লেবার ওয়েল ফেয়ার ফান্ডে এবং ৪% সকল কর্মীদের মধ্যে সমহারে বণ্টনের সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ কর্মীদের এই আইন স্বীকৃত পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। ২৪। কর্মীদের আইনগত পাওনা পরিশোধ না করলেও উচ্চ পদস্থ কর্মীদের বোনাস, বিদেশ ভ্রমণ, বাড়িভাড়া, আমোদ প্রমোদ, বিলাস বহুল গাড়ি সহ সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে সামান্য দ্বিধা করে না গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ।

২৫। প্রয়োজন অতিরিক্ত সাধারন কর্মী রয়েছে দাবী করে যখন তখন কর্মীদের চাকুরিচ্যুত করলেও বাস্তবে মাত্রা অতিরিক্ত মাথাভারী উচ্চপদস্থ প্রশাসন থাকা সত্ত্বেও কখনো তাঁদের চাকুরিচ্যুত করা হয় না। খরচ কমানোর কথা বলে সাধারণ কর্মীদের গণছাঁটাই করা হচ্ছে অথচ মাত্রা অতিরিক্ত ব্যায়বহুল মাথাভারী উচ্চপদস্থ প্রশাসন গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে না। ২০ জন সাধারণ কর্মীর বেতন ভাতার সম পরিমাণ ব্যয় হয় ১ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পেছনে বেতন ভাতা সহ আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে। ২৬।

প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও নরওয়ে টেলিনর থেকে মান হীন কর্মকর্তা ও পরামর্শক নিয়োগ দেয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায় দেশের বাইরে। ১ জন বিদেশী কর্মকর্তা বা পরামর্শকের পেছনে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তা দিয়ে অনায়েসে ২০০ কর্মীর কর্ম সংস্থান করা যায়। দেশেই মান সম্পন্ন দক্ষ কর্মী থাকা সত্ত্বেও অযথা বিদেশী কর্মকর্তা বা পরামর্শক আনছে গ্রামীণফোন। ২৭। আইন অনুযায়ী কোনও বিদেশী বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বাংলাদেশে কাজ করতে পারেন না, অথচ গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এই আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে বিদেশীদের নিয়োগ করে যাচ্ছে।

২৮। মানব সম্পদ প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি। বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীরা গ্রামীণফোনের সাফল্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে। দেশি বিদেশী যে কোন মোবাইল প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ খাতে যা ব্যয় হয় তার তুলনায় গ্রামীণফোনে ব্যায়র হার অনেক কম এবং মুনাফার হার অনেক বেশী ২০০%। কর্মীদের এমন সাফল্যের পরও এভাবে গণ কর্মী ছাঁটাই –এর যৌক্তিকতা কি? ২৯।

বিশ্ব জুড়ে নারী জাগরণ হচ্ছে, নারীরা সর্ব ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। গ্রামীণফোন এর অন্যতম উদাহরণ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। নারীর প্রতি অসৌজনুলমূলক আচরণ এবং অসুস্থ হওয়া মাত্র সেই নারী কর্মীদের চাকরীচ্যুত করে গ্রামীণফোনের বর্তমান ব্যাবস্থাপনা পরিষদ বর্বরতার নৃশংস উদাহরণ সৃষ্টি করছে। ৩০।

সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানের প্রতিষ্ঠানেও একজন অন্তঃসত্ত্বা মাকে চাকরীচ্যুত করা হয় না অথচ সব চাইতে নৈতিক মান সম্পন্ন দেশ নরওয়ের ব্যাবস্থপনায় গ্রামীণফোনে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের চাকরীচ্যুত করা হয়। লেখাটা সংগৃহীত: ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.