আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের প্রথম স্যার এর হাতে পিটুনি

মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর ! সালটা ১৯৯৬ প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছি। বাবা নিয়ে গিয়ে বাড়ির পাশের প্রাইমেরি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দেন।

নতুন নতুন পরিবেশ, তবে মানিয়ে নিতে বেশী সময় লাগে নি। খুব অল্প দিনেই আমার কয়েকজন ভাল বন্ধু হয়ে যায়। স্কুল ছুটির আগে, টিফিনের ছুটির সময়, ছুটির পরে সব সময় দুষ্টুমিতেই লেগে থাকতাম। এক মুহূর্ত শান্তি নেই। পড়ার থেকে দুষ্টুমিতেই মনোযোগ খুব বেশী।

টিফিনের ছুটিতে স্কুলের দেয়াল টপকে পুকুর পাড় দিয়ে পালিয়ে বন্ধুর বাড়িতে বা বাড়ির পেছনে আড্ডা দেওয়া ছিল রোজকার নৈমিত্তিক ব্যাপার। তো এভাবেই বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করেই দিন চলে যাচ্ছিল। একদিন এক বন্ধুর সাথে টিফিন পিরিয়ডে স্কুল থেকে বেরিয়ে গেলাম ঘুরতে। ঘোরা শেষে ওই বন্ধুর বাসায় গেলাম। আন্টি আমাদের নাস্তা খেতে দিল।

তো আমরা নাস্তা খেয়ে খুশী মনে আবার স্কুলের আসতে থাকলাম। রাস্তা পার হয়ে পুকুর পাড়ের দিকে কেবল এসেছি, এমন সময় দেখি আমার বড় মামা মোটর-সাইকেলে করে যাচ্ছে। তো আমি খুশী মনেই ডাক দিলাম "মামা"। মামা মোটর-সাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞেস করল কেমন আছি, বাসার সবাই কেমন আছে, এইখানে কি করছি। তো সব বললাম যে বন্ধুর বাসায় আসছিলাম, এখন ক্লাসে যাচ্ছি।

তো মামা বলে ঠিক আছে যাও। এই বলে উনি সেখান থেকে চলে যায়। আমরা দুই বন্ধু মিলে ক্লাসে যাই। ক্লাস শুরু হয়। আমি বসেছিলাম প্রথম সারির বাম পাশে দরজার একদম কাছে।

তো হঠাৎ দেখি আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহেব এসে হাজির। আমাদের স্যারও উঠে দাঁড়ালেন, আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। স্যারকে খুব রাগান্বিত দেখাচ্ছিল। বুঝতে পারলাম না এতো রাগ করে আছেন কেন উনি। হাতে জোড়া বেত।

কাকে যে মারতে এসেছেন আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন আর স্যার ভাল জানেন। তো হঠাৎ স্যার গর্জে উঠে বলে আরমান কে? আমি তো যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমি দাঁড়িয়ে বললাম "স্যার আমিই আরমান"। স্যার বলেন "পিচ্চি একটা মানুষ এর মধ্যেই এতো বাঁদর হয়েছিস?" আমি তো পুরাই টাসকিত। স্যার বলে টা কি? মাথা ঠিক আছে তো ওনার? আজ তো কোন ফাজলামোই করলাম না, তাহলে স্যারের হল টা কি? এতো কিছু যখন ভাবছি ঠিক এমন সময় স্যার বলে উঠলেন "হাত পাত"।

ডান হাত পেতে দিলাম, স্যার কষে একটা পিটান দিলেন, এবার বলেন " বাম হাত পাত", দিলাম বাম হাত পেতে। দিলেন আর একটা। উফফ সে যে কি ভয়ানক পরিস্থিতি। আমি হাত কচলাচ্ছি, চোখ তখন টলটল করছে। এবার স্যার বললেন "আর কখনো স্কুল ছুটি না হলে স্কুলের বাহিরে যাবি?" আমি কোন কথা না বললে আরও চেঁচিয়ে উঠে বলে "কি রে কথা বলিস না কেন? আর কখনো হবে এমনটা?" আমি বলি "না স্যার" বলেই জোরে কেঁদে ফেলি।

তখন শ্রেণী শিক্ষক এসে আমাকে আদর করে, আর প্রধান শিক্ষক চলে যায়। আমার কান্নাটা যতটা না কষ্টের ছিল তার থেকে ছিল বেশী মেজাজ খারাপের। আমার তখন বুঝতে আর দেরি হয় নি যে কেন মাইরটা খেলাম। ওই দিনের পর আমি এক মাস মামা বাড়ি যাই নি। আম্মা গেলেও আমি বাড়িতেই ছিলাম।

নৈতিক শিক্ষাঃ অতিরঞ্জিত কোন কিছু ভাল না। আমার মোটেও মামাকে ডাক দেওয়া উচিৎ হয় নি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.