আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভন্ডামি, কপটতার ভীড়ে বাস্তব জীবনের নায়কদের জীবনের কোন মূল্য নেই!

কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম সাম্প্রতিক দুটি সংবাদ যা হয়ত আমাদের অনেকের চোখে পড়েনি- ...................................................................................................... তারিখঃ ২৭ মার্চ ২০১২ যশোর ছিনতাইকারীর গুলিতে ব্যবসায়ী, গণপিটুনিতে ২ ছিনতাইকারী নিহত যশোর-নড়াইল সড়কের হামকুড়া ব্রিজের কাছে গণপিটুনিতে দুই ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। এ সময় ছিনতাইকারীদের গুলিতে শাহিন রেজা নামে এক ব্যবসায়ী নিহত ও আহত হয়েছেন আরো তিনজন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যবসায়ীর বাড়ি সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামে। তিনি একটি ইট কারখানার ব্যবস্থাপক।

আর নিহত দুই ছিনতাইকারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতরা হলো, ছিনতাইকারীর কবলে পড়া সদর উপজেলার নিমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ, একই উপজেলার বাউলিয়া গ্রামের মশিয়ার রহমান, কান্তা নামে এক মহিলা। তাদের দুইজনকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আব্দুর রউফ তার নতুন কেনা মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে হামকুড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছলে একজন ছিনতাইকারী তার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান।

এ সময় তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে ছিনতাইকারী একজন তাদের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। আর অপর দুইজনকে উত্তেজিত জনতা পিটুনী দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অন্য দুই ছিনতাইকারী রাস্তার উপর দাড়িয়ে থাকা একটি বাসে উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মশিয়ার রহমান ছিনতাইকারীদের পিছু নিয়ে বাসের মধ্যে একজনকে জাপটে ধরে। পেছনে ব্যবসায়ী শাহিন রেজা ছুটে এলে বাসের উপরে থাকা আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে।

এতে তিনি গুরুতর জখম হন। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। তারিখঃ ৬ এপ্রিল ২০১২ ছিনতাইকারীদের গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কসংলগ্ন রাইনখোলায় আজ শুক্রবার সকালে ছিনতাইকারীদের গুলিতে হজরত আলী (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, আজ সকাল সাতটার দিকে তিন ছিনতাইকারী তিনজন নারীর পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে টাকা-পয়সা ছিনতাই করছিল।

এ সময় ঘটনাস্থলের কাছে থাকা হজরত আলী ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য করে একটি ইট ছুড়ে মারতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বুকের বাঁ-পাশে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ঘটনার পরপরই ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। ওসি জানান, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত হজরত আলী রাইনখোলায় থাকতেন। ...................................................................................................... আবার নিচের সংবাদ দুটি পড়ুন- তারিখঃ ৫ জানুয়ারি ২০১২ নিখিল ভদ্রের চিকিৎসা : ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে ৫ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের স্ত্রী মিসেস শাকিলা পারভীন রুমার হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গতকাল বুধবার অনুদানের চেক তুলে দেন।

এসময় মন্ত্রী বলেন, এমুহূর্তে নিখিল ভদ্রের উন্নত চিকিৎসা অতি জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে নিখিল ভদ্রের চিকিৎসা এবং তাঁর পরিবারের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রয়োজনে আরো আর্থিক সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে এবং তা প্রকাশ করেছে। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

চেক গ্রহণকালে নিখিল ভদ্রের পরিবারের পক্ষ হতে আরো উপস্থিত ছিলেন মানিক ভদ্র এবং সাকিরা পারভীন। এছাড়া চেক প্রদানকালে সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এমএম ইকবাল, দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান এবং সড়ক বিভাগের যুগ্মসচিব মোঃ মঈন উদ্দীন, কমিটির সদস্য এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন। তারিখঃ ১০ জানুয়ারি ২০১২ দীনেশ দাসের পরিবারের পাশে দাঁড়ালো সরকার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারের পাশে দাঁড়ালো সরকার। গতকাল দীনেশ নিহতের প্রতিবাদে আন্দোলনরত সাংবাদিকদের ৪ দফা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। সকাল ১০টার দিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে তথ্য এবং সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- নিহত সাংবাদিক দীনেশের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার অনুদান, নিহতের স্ত্রীর চাকরির ব্যবস্থা ও একমাত্র কন্যার ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ। এছাড়া দুই মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলেও সাংবাদিক নেতারা জানান। .... তারিখঃ ২৫ জানুয়ারি ২০১২ সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারকে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারের হাতে দশ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দীনেশ দাসের পরিবারের হাতে এ চেক তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ডেইলি সান সম্পাদক প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কালের কণ্ঠ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি খায়রুল আলম সবুজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের এক বৈঠকে সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারকে দশ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। ...................................................................................................... সাংবাদিকতা এমন কোন মহৎ পেশা নয়। এমনকি উক্ত নিখিল ভদ্র বা দীনেশ দাশ পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অর্থাৎ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হননি। তারপরও তারা দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পান, থাইল্যান্ডে চিকিৎসা হয় - কারণ তাদের পিছনে আছে সাংবাদিক সমাজ যারা রাস্তা অবরোধ করতে পারে, পত্রপত্রিকায় প্রতিরোধের ঝড় তুলতে পারে- সরকারকে বাধ্য করতে পারে ক্ষতিপূরণ আদায়ে- এমনকি বসুন্ধরার মত কর্পোরেট ফড়িয়ারাও সাংবাদিককে সহায়তার করে নাম কামাতে পারে। কিন্তু প্রথম দুটি ঘটনায় দেখুন- ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন দুজন সাধারণ মানুষ- শাহিন রেজা ও হযরত আলী।

দুটি পরিবার অভিভাবক হারা হল। এই পরিবার দুটোকে সাহায্য করার কেউ নেই- কোনদিন থাকেও না। কারণ এঁরা হলেন- আমজনতা। এদের জীবনের কোন মূল্য নেই। বরং 'কি দরকার ছিল সাহস দেখানোর!' বলে আমরা ঐ মৃত ব্যক্তি দুজনের বোকামির জন্য ধিক্কারও জানাতে পারি।

মিডিয়া শুধু কয়েকলাইনে সংবাদ প্রকাশ করেই খালাস- কারণ এরা মিডিয়ার কেউ নয়। আমজনতা কেন ছিনতাই ঠেকাবে? এরকম তো হরহামেশাই হচ্ছে। কি দরকার ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর? দেশের আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি এখন সর্বকালের মধ্য সবচেয়ে ভাল অবস্থায় আছে- ঐ মানুষ দুটি কি সেটা জানতেন না? শাহিন রেজা ও হযরত আলী- আপনাদের বোকামির জন্য আমরা লজ্জিত। আমাদের ক্ষমা করুন। আপনাদের সন্তানেরা যেন কোনদিন চোখের সামনে অন্যায় প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রাণ না হারায় সেই কামনা করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।