আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুক্তি ছিলো দইজ্জার পাড়ে পুল বানানোর জন্য। সে মোতাবেক বিশু বেপারীর লোকের সাথে কথা বলার দায়িত্ব পরে হাবলুর উপর। কথা বলতে গিয়ে সে জানতে পারে পুল বানাতে ম্যালা টেঁকা লাগব। টেঁকার পরিমাণ শুনে সে চমকে যায়। তখনই চিন্তাটা তার মাথায় আসে।

তুমি মুক্ত মানুষ, তুমি ওখানে বসে আছ কি করতে- চলে এসো আমার দিকে। জনৈক হাবলুর নির্ঘুম রাত। স্যার মাল বাবু এসেছেন। আপনার সাথে দেখা করতে চান। উনাকে কি ভেতরে বসতে বলব? একসঙ্গে এতো গুলো প্রশ্ন শুনে হাবলু মিয়া দারোয়ানের দিকে তাকান।

বিদেয় করে দে.. হাবলু মিয়া চিৎকার করে উঠলেন। হয়তোবা দারোয়ানের একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্নের কারনেই। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, দাঁড়া, ভেতরে বসিয়ে চা খাইয়ে বলে দে স্যার ঘুমিয়ে আছেন। দারোয়ান মাল বাবুকে ড্রইং রুমে বসাল। এক গ্লাস পানি দিয়ে বিনীতভাবে বলল স্যার সাহেব কাল রাত্রে একফোঁটাও ঘুমাননি।

একটু আগে মাত্র বিছানায় শুলেন। তাই উনাকে বিরক্ত করতে বারন করেছিলেন। আপনি যদি বলেন তবে ডেকে দেব? মাল বাবু বুঝলেন, হাবলু তার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে না, তাই ঘুমের ভান করছে। দারোয়ানকে বললেন না থাক। ঘুমুচ্ছে যখন ঘুমাক।

আমি না হয় এখন আসি। তোমার সাহেবকে বলো মাল বাবু এসেছিলেন। হাবলু মিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছিলেন। বালিশটা একটু কাছে টেনে নিয়ে কোলের উপরে রাখলেন। মনে মনে বললেন মাফ করে দিও মাল ভাই, তোমাকে কষ্ট দিলাম দেখা করলাম না, কিন্তু আমার মনের অবস্থাটা একবার চিন্তা করো।

আমার নামটি এমনিতেই একটা হাস্যকর নাম ছিলো। আজ যেন সেটা সারা পাড়ায় হাস্যরস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার মনের ভেতর যে কি কষ্ট তাতো তুমি বুঝবে না মাল ভাই। তোমরা আমাকে বলের পাঁঠা বানিয়ে দিলে? হাবলু মিয়া স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলেন, অতীতের সেই সুখের স্মৃতিগুলি, তখনো উনি রং নম্বর ওয়ার্ড এর মেম্বর হননি, উনি, রনু মিয়া, মাল বাবু, সনু মিয়া, হাসু আপা সবাই মিলে সেন্ট মারটিন গিয়েছিলেন পিকনিক করতে। সবাই মিলে চাঁদা তুলে।

বরাবরের মতো হাসু আপা ছিলেন তাদের লিডার। সেই পিকনিকে হাসু আপার নেতৃতে সবাই খুব মজার মজার খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, দৌড় খেলার সময় হাসু আপা বলেছিলেন, এই দৌড়ে যে ফাস্ট হইব আমি চেয়ারম্যান হলে পরে তারে রং নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর বানামু। হাবলু মিয়া সে দিন জীবন বাজী রেখে প্রাণপণ দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে ফাস্ট হয়েছিলেন, শুধুমাত্র রং নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর হওয়ার জন্য। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো, রং নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর হওয়ার।

সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হয়ে হাসু আপার বদৌলতে তিনি তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু. . . . . স্যার রাতের খাবার দিব? বেরসিক আয়ার ডাক। এইসব বেজন্মারা চিন্তার পালস নষ্ট করে দেয়। হাবলু মিয়া মনে মনে বললেন। মুখ ঘুরিয়ে বললেন, না থাক আজ রাতে খাব না, তুই বরং যা শুয়ে পড়।

আয়া চলে গেল। হাবলু মিয়া বালিশ নিয়ে আবার তার সেগুন কাঠের খাটে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলেন। কখনও চিন্তাও করতে পারেননি তার জীবনের স্বপ্নিল অধ্যায়ের এরকম নিষ্ঠুর সমাপ্তি হবে। এইতো সেদিনও তিনি বলেছেন আমি দইজ্জার নালার পুলের টেঁকা মারি নাই। যারা আইসব বলতেছে তারা হিংসুটে, ষড়যন্ত্রকারী।

তারসাথে তখন মাল বাবুও বলেছেন, আমাদের হাবলা সে একেবারেই হাবলা, সে কোনরকম ঘাপলা করতে পারে না। হাব্লু মিয়ার খুব খারাপ লাগলো, মাল বাবুর সাথে এভাবে দেখা না করে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। বাড়ী বয়ে আসা মেহমান। হাজার হোক তার পক্ষ নিয়ে কতশত মিথ্যাই না বলেছেন। আমাদের হাবলা, করে নাক ঘাপলা।

আরো কত কি! আর তাকেই কিনা, না থাক এসব ভেবে আর মনঃকষ্ট বাড়িয়ে লাভ নেই। তা ছাড়া মাল বাবুর মাথার মতোই তার বুদ্ধিটাও একটু মোটাসোটা। বোঙ্গা-বাজারের বোয়ালরা তাকে কি রকম বোকা বানিয়ে সব বোঙ্গা করে ফেলল। হাবলু মিয়াদের এলাকায় চোরাকারবারি, ভাঁওতাবাজি, ফটকাবাজিকে বোঙ্গা বলে। এতো কষ্টের মধ্যেও “মাল বাবুর বোঙ্গাবাজার” কথাটা চিন্তা করে হাবলু মিয়ার হাসি পেল।

বেচারা। হাসু আপাও বলেছিলেন, আমার হাবলু বেগুনাহ, মাসুম বিশু বেপারি তারে কোন টেঁকা দেয় নাই, না দিয়াই কইতাছে হে টেঁকা মারছে। বিশু বেপারী-শালা হারামজাদা! হাব্লু মিয়া মনে মনে গালি দিলেন। মনে মনে বললেন শালার ব্যাটারা তোরা ক্যাব্লা-ছ্যাব্লারে নিয়া কতো খাইলি। আমি শুধু একটু ........ ।

তোরা শুধু আমারেই পাইলি? তার বুকটা কান্নায় ভরে উঠল। ঘটনা হইলো বিশু বেপারীর সাথে হাসু আপার চুক্তি হইছিলো রং নম্বর ওয়ার্ডের দইজ্জার পাড়ে পুল বানানোর জন্য। সে মোতাবেক বিশু বেপারীর লোকের সাথে কথা বলার দায়িত্ব পরে তার উপর। কথা বলতে গিয়ে সে জানতে পারে পুল বানাইতে ম্যালা টেঁকা লাগব। টেঁকার পরিমাণ শুনে সে চমকে যায়।

তখনই চিন্তাটা তার মাথায় আসে। “বিশাল সমুদ্র থেকে যদি কেউ দশ বালতি পানি সরিয়ে নেয় তাতে কার কি এমন ক্ষতি হবে? দশ বালতি পানিই তো মোটে, তাতে সমুদ্রের কি যায় আসে? কথাটা ভেবেই সে প্রস্তাবখানা রেখেছিলো। তবে কিনা বিশু বেপারীর লোকটা যে মহা হারামজাদা হবে, সে কি সেটা জানত? সে সটাং করে বিশু বেপারীকে বিষয়টা জানিয়ে দিলো। বিশু বেপারী হারামজাদা আমার রসিকতাটাও বুঝল না? বিশু বেপারী তালটাকে তেতাল বাজীয়ে পুরো পাড়াশুদ্দ লোককে জানিয়ে দিলো আমি টেঁকা মারছি। তার সাথে যোগ দিল হাসু আপার জানি দুশমন খাদিবু আর তার সাঙ্গপাঙ্গ।

কপালটাই খারাপ হাব্লুর । দৌড়ে ফাস্ট হয়ে মেম্বর হওয়ার পরও তার দৌড় থামেনি। বিশু বেপারীর দৌড়ানী খাইয়া গেলেন আলু নং ওয়ার্ডের মেম্বর হতে। কিন্তু সেখানেও সবার একই সমালোচনা টেঁকা চোর টেঁকা চোর। বিশু বেপারী, খাদিবু আর তার সাঙ্গপাঙ্গ তার সাথে নিজের লোক যুক্ত হয়ে গেল।

বিশু মিয়া নাকি বলছে সে যে অভিযোগ করছে তার বিচার না করলে বিশু মিয়াই সব প্রমান সবার কাছে দিয়ে দিব। নিজেদের বাঁচাতে দলের সবাই হাব্লু মিয়াকেই বলির পাঁঠা বানিয়ে দিল । হাব্লু মিয়া খুবই বিচলিত। তার ঘুম আসতেছেনা যদিও এপর্যন্ত চার চারটি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলা হয়েছে। তার বারবার মনে হচ্ছে আজ তার জীবনের একটি স্বপ্নিল অধ্যায়ের নিষ্ঠুর সমাপ্তি তিনি নিজের হাতেই করে দিয়ে আসলেন।

তার গ্রামের সেই প্রবাদটার কথা মনে পড়ল “ সকল মাছে গু খায় উপলের(গাউরা মাছ) উপর দোষ যায়”। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.