আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন হত্যা মামলার আসামি শাওন-মাজহার.......অবশেষে শাওনের আসল রুপ দেশবাসির সামনে প্রকাশ হবে ।

পৃথিবীটা যদি একটা বিশাল নদী হয় , তবে আমি ভাববো পৃথিবীর উপর আমি একটি ভাসমান নৌকা । যার ধর্মই হচ্ছে বয়ে চলা । স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে: জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও নগদ টাকা আত্মসাৎ করার জন্য তারা হুমায়ূন আহমেদকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। আইনজীবী ও লেখক নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গতকাল এ মামলাটি দায়ের করেন।

মহানগর হাকিম এবিএম নিজামুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগ তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে। গত ১৯শে জুলাই নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লেখক হুমায়ূন আহমেদ। ২৩শে জুলাই তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। অনেক নাটকীয়তা শেষে পরদিন গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে তাকে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যু নিয়ে গত কয়েক দিনে সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল মামলা দায়েরের পর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি এই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পেছনে কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করেননি। হুমায়ূন আহমেদ অসুস্থ থাকা অবস্থায় নানা অনিয়ম, অবহেলা আর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

এই বিষয়টি তাকে ভীষণভাবে পীড়া দিয়েছে। তাই তিনি বিবেকের তাড়নায় দেশবরেণ্য এমন একজন ব্যক্তির মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারছেন না। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে জাতীয় দৈনিক আমার দেশের বার্তা সম্পাদক, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজাদীর বার্তা সম্পাদক ও লেখক আবদুল হাই শিকদারকে। ৫ পৃষ্ঠার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক আজাদী পত্রিকায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদ ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনুসন্ধান করেছেন।

এর বেশির ভাগই তার কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বেশ কিছু অসঙ্গতির ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, ১২ই জুলাই খানিক সুস্থ হয়ে বেলভ্যু হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন হুমায়ূন আহমেদ। ওইদিন সন্ধ্যায় শাওন ও মাজহার আমেরিকার ভাড়া বাসায় এই উপলক্ষে একটি পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে অসুস্থ ক্যান্সার আক্রান্ত হুমায়ূনকে মাংস ও পানীয় খেতে দেন তারা দু’জন। লেখক হুমায়ূন আহমেদের অপারেশনের পর চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্ত্রী শাওন কেন চিকিৎসকের কাছে আড়াল করলেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

১৭ই জুলাই হুমায়ূন আহমেদ আমেরিকার ভাড়া বাসায় চেয়ার থেকে পড়ে গেলে তার সেলাই খুলে যায়। এরপর তিনি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদকে অখ্যাত জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে যান শাওন। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিলারের কাছে হুমায়ূন আহমেদের ব্যথা পাওয়ার পুরো ঘটনা চেপে যান। যা পরে জানাজানি হয়।

বাদী এই ঘটনায় প্রশ্ন তোলেন, যে হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদের অপারেশন করা হয়েছিল সেই হাসপাতালে না নিয়ে পরদিন কেন তাকে অন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলো। আর কেনই বা শাওন ও মাজহার ঘটনাটি চেপে গেলেন? হুমায়ূন আহমেদের অপারেশনের সময় শাওন ও মাজহারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাদী নজরুল ইসলাম। এই বিষয়ে তিনি মামলার এজাহারে জানান, লেখকের অপারেশনের সময় মাজহার ও শাওন দুই ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন না। তারা কোথায় ছিলেন এই বিষয়ে তাদের কাছের কোন লোকজনও জানেন না। কাউকে তারা বলেও যাননি।

ছিলেন অজ্ঞাতস্থানে। একটি সিরিয়াস মুহূর্তে তাদের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার টাকা নিয়ে শাওন দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তাকে দেখতে যান তখন তিনি লেখককে আর্থিকভাবে সহায়তা করার কথা জানান। জোর করে ১০ হাজার ডলারের চেকও তুলে দেন।

কিন্তু সেই সময় লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন চেকটি গ্রহণ করেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন। অথচ পরে শাওন বলেছেন, অর্থের অভাবে হুমায়ূন আহমেদকে বিশ্ববিখ্যাত স্লোয়ান মেমোরিয়াল ক্যাটারিং ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। হুমায়ূন আহমেদের শারীরিক অবস্থার খবর নিয়েও লুকোচুরি করেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও অন্যপ্রকাশ স্বত্বাধিকারী মাজহার। এই বিষয়ে বাদী উল্লেখ করেন, চলতি মাসের গত ১৭ই জুলাই ও ১৮ই জুলাই গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের ফোন করা হয়।

এই সময় হুমায়ূন আহমেদের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের লেখককে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখার কথা গোপন করেন। বলেন, ‘তার অবস্থা স্থিতিশীল। ’ মামলার এজাহারের পৃষ্ঠা ৪-এর শেষ প্যারায় বাদী এডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামি শাওন ও মাজহারের আচরণে আমার এই ধারণা হয়েছে যে, তারা হুমায়ূন আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও নগদ টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ও একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লোক দেখানো যেনতেন তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে তার চিকিৎসা করে পারস্পরিক যোগসাজশে ড. হুমায়ুন আহমেদকে হত্যা করেছে। ’ দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ নিয়ে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে কথা বলেন বাদীর আইনজীবী এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ। এই সময় তিনি বলেন, ‘৩০২/১২০ বি, ৩০৪ (ক), ৪০৬, ৪২০ ও ৩৪ ধারায় আমার বাদী নজরুল সাহেব মামলাটি দায়ের করেছেন।

আমরা মনে করছি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পেছনে পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিষয়টি সবার জানা প্রয়োজন। ’ তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর ধনসম্পত্তি রেখে গেছেন। তার কোটি টাকার দখিনা হাওয়া বাড়ি, গাজীপুরের নুহাশপল্লী, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্বপ্ন বিলাসসহ কয়েক শ’ বইয়ের রয়ালিটি দখলের ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই জন্য প্রিয় লেখককে হয়তো অবহেলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।

এই ঘটনার পেছনে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের ভূমিকা আদালতে প্রমাণ হবে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউকে হেয় করার জন্য বাদী মামলাটি দায়ের করেননি। দেশবরেণ্য একজন কথাসাহিত্যিককে চরম কষ্ট আর অবহেলা পেয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। সচেতন নাগরিক হয়ে তাই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ’ এদিকে মামলার অন্যতম আসামি অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম গতকাল বিবিসি’কে বলেছেন, এ মামলার বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর।

মামলার নথিপত্র হাতে না পেয়ে তিনি এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.