আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন ক্যালেন্ডার...

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ছিল অনেকটা সার্বজনীন। দিনটা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এদিন তিনি পাঠক, ভক্ত, প্রকাশক সবাইকে বরণ করে নিতেন। তার বেশিরভাগ জন্মদিনের কথাই আমার মনে আছে। তারপরও একবারের কথা বিশেষভাবে আমার কাছে স্মরণীয়।

সেটা ছিল ২০০৭ সালে, হুমায়ূন আহমেদের ঊনষাটতম জন্মদিনে।

হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি জন্মদিনে চিন্তা করতাম তাকে কীভাবে চমকে দেওয়া যায়। তিনি আশ্চর্য সব উপহার দিয়ে মানুষকে চমকে দিতে পারতেন। একবার আমার পরীক্ষার সময় উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন এক কৌটা অ্যারোসল! সারারাত জেগে পড়ার সময় মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য! এরকম মজার মজার কর্মকাণ্ড করে সবাইকে চমকে দিতেন। আমি ভাবতাম জন্মদিনে যেভাবেই হোক হুমায়ূন আহমেদকে চমকে দিতে হবে।

তার জন্মদিনে কেউ পাঞ্জাবি দেয়, কেউ কলম, কেউ বই। তিনি লেখালেখি করতেন অল্প দামের বলপয়েন্ট কলম দিয়ে। তাই অনেক দামি কলম দিয়ে তাকে মুগ্ধ করা যাবে না। বই দিয়েও তাকে চমকানো যাবে না।

২০০৭ সালের জন্মদিনের প্রায় তিন মাস আগে থেকেই চিন্তা করতে লাগলাম বিশেষ কি দেওয়া যায় তাকে।

হঠাৎ মনে হলো, একটা হুমায়ূন ক্যালেন্ডার বানালে কেমন হয়? হুমায়ূন ক্যালেন্ডারের তারিখ শুরু হবে ১৩ নভেম্বর, ২০০৭। শেষ হবে ১৩ নভেম্বর, ২০০৮। সেই বছরটার নাম দেব হুমায়ূন বছর। কিন্তু ক্যালেন্ডারের ছবিগুলো কি হবে এটা নিয়ে ভাবতে থাকলাম। ছবিগুলো হতে হবে হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় ও পছন্দের।

নিজের বাচ্চাদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন হুমায়ূন আহমেদ। ভাবলাম সন্তানদের ছবি যোগ করে কিছু দেওয়া যায় কিনা। আচ্ছা নিষাদকে হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলোর সাজে সাজালে কেমন হয়? হিমু, শুভ্র, মিসির আলী। নিষাদের বয়স তখন মাত্র ৭ মাস। দাঁড়াতেও পারে না।

সবে হামাগুড়ি দেওয়া শিখেছে। ঠিক করলাম সেই ক্যালেন্ডারে নিষাদের ছবি দেব। নিষাদের জন্য হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি বানালাম, শুভ্র চরিত্রের জন্য কেনা হলো ছোট্ট চশমা। আর তৈরি করলাম মিসির আলীর শার্ট-প্যান্ট। ক্যালেন্ডারের ছবি তোলার দায়িত্ব নিলেন অন্যদিন পত্রিকার বিশ্বজিত সরকার।

ছবি তুলতে যাব। ব্যাগে নিষাদের কস্টিউম(!) নিয়ে প্রস্তুত আমি। কিন্তু ফটোসেশন করার জন্য বাসা থেকে যে বের হব, হুমায়ূন আহমেদ কোথায় যাচ্ছি জানতে চাইলে উত্তরে কি বলব? যা ভাবলাম তাই হলো। আমাকে ব্যাগ হাতে নিষাদকে নিয়ে বের হতে দেখে অবাক হুমায়ূন জিজ্ঞেস করলেন

কোথায় যাচ্ছো?

তাড়াহুড়া করে বললাম

মা'র বাড়িতে যাচ্ছি।

হাতে স্যুটকেস কেন? রাতে ওইখানে থাকবে নাকি?

বিয়ের পর মায়ের বাড়িতে খুব একটা থাকা হয়নি।

তাই বললাম

হ্যাঁ। কতদিন মা'র বাড়িতে সারারাত জেগে গল্প করি না।

তাহলে দুটা মিনিট দাঁড়াও।

বেডরুম থেকে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে এসে বললেন

চল। তুমি রাত জেগে তোমার মা'র সঙ্গে গল্প করবে।

আর আমি আমার পুত্রকে নিয়ে ঘুমাব।

আমার সঙ্গে যাওয়ার কথা শুনে আমি করুণ মুখ করে তাকিয়ে থাকলাম। আমার মনে হয় কোনো মেয়েই আমার মতো শুকনো মুখে কখনো মায়ের বাড়ি যায়নি যেমন মুখের ভাব আমার সেদিন হয়েছিল।

দুই-তিন দিন পর আবার ছবি তোলার প্রস্তুতি নিলাম। এইবার আমি অনেক লম্বা কাহিনী তৈরি করলাম।

স্বর্ণা ভাবীর সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় কোথায় যাচ্ছি যেখানে হুমায়ূন আহমেদ গেলে বোর হবেন এ রকম কিছু গল্প শোনালাম। নিষাদের ব্যাগ আগেই স্বর্ণা ভাবীর গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার আর সমস্যা হলো না।

অতঃপর সাত মাসের বাচ্চা নিয়ে ছবি তুলতে গেলাম। এটুকু বাচ্চা নিয়ে ছবি তুলতে সে কি যুদ্ধ।

দাঁড়াতেই পারে না। হাত থেকে দুধের বোতল নামানো যায় না। শুভ্রর মতো চশমা পরিয়ে দিলে টেনে খুলে ফেলে। শেষমেশ আমাকেও নিষাদের সঙ্গে থাকতে হলো। ছোট্ট হিমু নিষাদের ছবি তুললাম।

চশমা পরা 'কানাবাবা' শুভ্র'র ছবিও তোলা হলো। সমস্যা হলো মিসির আলী চরিত্রে ছবি তোলার সময়। কারণ নিষাদকে দাড়ি লাগানো গেল না। তাই ধুতি দিয়ে দেবদাস সাজালাম। আরেকটিতে গোঁফ লাগালাম কালি কলম দিয়ে।

পড়ালাম হ্যাট। অনেকটা ওয়েস্টার্ন হিরোর মতো। ছবি তোলার পর মাসুম রহমানের ডিজাইনে অন্যদিনের সহযোগিতায় ১০০ ক্যালেন্ডারও ছাপিয়ে ফেললাম। এর মধ্যে একটি করলাম এঙ্ক্লুসিভ যা শুধু হুমায়ূনের জন্য। প্রতি জন্মদিনের মতো সেবারও আমার শাশুড়ি ছিলেন, হুমায়ূনের বড় পুত্র নুহাশ ছিল।

উপস্থিত ছিল হুমায়ূনের অনেক কাছের বন্ধু-বান্ধবরা। ক্যালেন্ডারটি যখন হুমায়ূনের হাতে দেয়া হলো তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তার চোখে মুগ্ধতার সেই ঝিলিক আমার হুমায়ূন ক্যালেন্ডারের আয়োজনকে স্বার্থক করে দিল।

(বাংলাদেশ প্রতিদিন- এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। )

 

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.