আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -২

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -২ -------------------------------------ডঃ রমিত আজাদ অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা - 'মানুষ'। এই দু'য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন অবিরাম ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত।

এইসব চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসার যতটুকু উত্তর এ যাবতকাল আমাদের জানা হয়েছে দর্শন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। সেইসব উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব আমার এই সিরিজে। গত পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আলোচনা করব গতি নিয়ে। প্রথম পর্বের আলোচনা নিম্নের লিংকে পাবেন Click This Link গতি গতি কথাটিকে আপাতভাবে সরল মনে হলেও এর দার্শনিক ব্যাখ্যা কিন্তু অত সহজ নয় আর দৈনন্দিন ধারণা থেকে একেবারেই ভিন্ন।

আমরা সাধারনতঃ বলে থাকি যে, একটি অবজেক্ট অন্য একটি অবজেক্টের সাপেক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করলেই তাকে গতি বলা হয়। বলবিজ্ঞান-এর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সত্য, কিন্তু দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপর্যাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দিষ্ট অবজেক্ট-এর বাইরে অন্যান্য অবজেক্ট-এর অস্তিত্ব আছে, কিন্তু বস্তুর বাইরে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। গতির দার্শনিক ব্যখ্যার আলঙ্কারিক উপমা নিম্নের ঘটনায় দেখা যেতে পারে - গ্যাস আয়তনের বৃদ্ধি দেখা যায় যখন একটি শিশু বায়বীয় বা তরল মাধ্যমে একটি রবার বেলুন ফোলায়। একটি হ্রদে পানির স্রোত মিশ্রিত হওয়া যদি আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে আমরা স্পস্টভাবে দেখতে পাবো যে, হ্রদের পানির গতি কোন শূণ্যতা (vacuum) সৃস্টি করেনা।

ইতিপূর্বে দখলকৃত পানির স্রোতকে তাৎক্ষণিকভাবেই নতুন পানির স্রোত দখল করে নেবে। বস্তুর গতি বলতে বিচ্ছিন্ন (isolated) কোন কিছু বোঝানো যাবেনা; কোন একটি পরমাণু, গ্রহ অথবা গ্যালাক্সির অবস্থানের পরিবর্তন সবসময়ই প্রতিবেশী কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত/সহগামী। এটা উল্লেখযোগ্য যে, পরম শূণ্যতা (absolute vacuum) বলে কিছুই নেই। পুরো মহাবিশ্বই (Universe) পদার্থ (substance), কণিকা (particle) অথবা ক্ষেত্র (field) দ্বারা পরিপূর্ণ। পাশাপাশি একথা বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দুতেই সদাবিরাজমান মহাকর্ষ ক্ষেত্র (gravitational field)।

বস্তুর ঘনতম মিশ্রণ হলো একটি বহুল পরিচিত জ্যোতিস্ক (astronomical object) যার নাম ব্ল্যাক হোল। বস্তুর গতি মানে তার ঘনত্ব (density), গঠন (composition), সম্পৃক্তি (saturation) এবং ঘনীভবন (concentration)-এর নিম্নসীমা থেকে ঊর্ধ্ব সীমা এবং তদ্বিপরীত ঊর্ধ্ব সীমা থেকে নিম্নসীমা পর্যন্ত অবিরাম পরিবর্তন । এই পথ স্বাভাবিকভাবেই সরলরৈখিক নয়, বরং নানা প্রকৃতির কখনো বৃত্তাকার, কখনো বিপরীতমুখী, পাশাপাশি ত্বরান্বিত (accelerated) অথবা মন্দিত (retarded) পরিবর্তন । দর্শন শাস্ত্রে গতির কতগুলো ধর্ম রয়েছে। এগুলো হলো বস্তুগততা (materiality), পরমতা (absoluteness) এবং সুনির্দিস্টতা (concreteness)।

গতির বস্তুগততা মানে আমরা বুঝব যেখানে বস্তু নাই, সেখানে গতিও নাই। গতি কেবলমাত্র বস্তুরই ধর্ম। উধাহরণস্বরূপ, পথচারী, ইলেকট্রন, পিস্টন, ধুমকেতু এরা সকলেই গতিশীল এবং সকলেই বস্তু । গতির পরমতা বলতে আমরা এই বুঝব যে, গতিহীন কোন বস্তু হয়না। বস্তু মাত্রই গতিশীল।

সকল বস্তু সকল অবস্থাতেই সর্বদাই গতিশীল। স্থিতি একটি আপেক্ষিকতা মাত্র, পরম স্থিতি বলে কিছু নেই। গতির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হলো সুনির্দিস্টতা। বিষয়টি হলো এমন যে, যে কোন বস্তুর গতির প্রকৃতি ও রূপ নির্ভর করে বস্তুটির গঠনের উপর। গতি চিরন্তন বটে তবে তা কখনো সুনির্দিস্ট কখনো আপেক্ষিক রূপে দেখা দেয়।

গতির বাহক (carrier) এবং মৌলিক আইনের (fundamental laws) উপর নির্ভর করে গতির বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। যেমন, যান্ত্রিক (mechanical) (বাহক - মনুষের দ্বারা পরিমাপযোগ্য, অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র নয় আবার অতি বৃহৎ নয় এমন কায়া; আইন - নিউটনীয় (চিরায়ত) বলবিদ্যার আইন)। ভৌত (physical) অর্থাৎ তাপীয় (thermal), বৈদ্যুতিক (electrical), আলো ইত্যাদি ( বাহক - অণু, পরমাণু, ইলেকট্রন ইত্যাদি ক্ষুদ্র কণিকা, আইন - আনবিক পদার্থবিদ্যা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ইত্যাদি ক্ষুদ্র কণিকার বিজ্ঞানের আইন), জৈবিক (biological) (বাহক - জীব, আইন - প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection) অর্থাৎ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াবার আইন)। মনস্তাত্ত্বিক (psychological) (বাহক - মস্তিস্ক এবং স্নায়ু), সামাজিক (social) ( বাহক - মানুষ এবং মানব সমাজ, আইন - সমাজবিদ্যার আইন) এদিকে ৯০-এর দশকের ধারণাগুলো অনুযায়ী আমরা জানি যে, বিজ্ঞান যে সকল গতির প্রকারভেদের কথা বলে তার সাথে উপরের ৬টি প্রকারের পুরোপুরি মিল খুঁজে পাওয়া যায়না, বরং তা একটি বহুবিধ শাখা-প্রশাখা সম্বলিত বৃক্ষের সাথে তুলনীয়। পদার্থবিজ্ঞানীরা ভূবিজ্ঞান (geology), সাইবারনেটিক্স (cybernetics), গতির ইনফর্মেশন রূপ এবং মৌলিক কণিকা গুলোর গতি অধ্যয়ন করছে।

বর্তমানে এমন সব বস্তুরও সন্ধান পাওয়া গি্যেছে যার উৎস ও গতির প্রকৃতি অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর উজ্জ্বল উদাহরণ কোয়াজার (quasar)। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।