আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি ক্যামেরার আত্মকাহিনী

আমার নাম নাইকন, ডি ৩১০০। লেন্স ১৮-৫৫ এমএম। ডি-এসএলআর এর বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী একচেটিয়া মার্কেট দখল করে আছে ক্যানন আর নাইকন। কোন কোম্পানি ভাল মানের ছবি তুলে এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপি বিস্তর বির্তক চলছে। ফটোগ্রাফি একটা বহুল খরুচে ব্যাপার।

প্রচুর খরচ করতে হবে আপনাকে পুরোদস্তুর একজন ক্যামেরাম্যান হওয়ার জন্য । আমাকে ব্যবহার করেন রাজীব নূর । বলতে দ্বিধা নেই সে আমাকে যত্নের সাথে ব্যবহার করেন না । তিন মাসে একবারও আমাকে পরিস্কার করেন না । কিন্তু আমার প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা আছে বুঝতে পারি ।

সে আমার উপরে কখনও অত্যাচার করেন না । ক্লিক করার সময়ও আমাকে এমন ভাবে ক্লিক করেন যেন আমাকে আদর করছেন । ইদানিং আমার মনে হচ্ছে- আমি হয়তো অন্য কারো হাতে গেলে আর বাঁচব না । একদিন মধ্যরাত্রে সে আমাকে বের করে খাটের উপর রেখে চারপাশ থেকে দেখতে লাগল। তার চোখ মুখ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি- সে আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত।

আমি মনে মনে বললাম- এখন অনেক রাত- ঘুমাতে যান। ফাজলামোর একটা সীমা আছে । এক মাস পার হয়ে যায়- আমাকে ছুঁয়েও দেখেন না আর এখন মাঝ রাত্রে....!! তারপর সে আমার পাশেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো। বেচারা কে দেখে আমার মায়া'ই লাগল । একদিন সে আমাকে নিয়ে বাসে উঠেছিল।

বাসে ছিল প্রচন্ড ভিড়। একেবারে যাতাযাতি অবস্থা । সে অনেক কষ্টে সেই ভীড় থেকে আমাকে রক্ষা করে। তারপর থেকে সে আমাকে নিয়ে আর বাসে উঠে না । আমি তার হাতে আনন্দের সাথেই লালন পালন হচ্ছি- কিন্তু যখন আমাকে অন্য কেউ ধরে আমার জীবন যায় যায় অবস্থা হয় ।

একবার তো একটা পাক্কা ছেলে আমাকে টিপে টুপে আমার জীবন প্রায় শেষ করে ফেলেছিল । তারপর রাজীব নূরকে আমি একটা শিক্ষা দিয়েছিলাম । একদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে সে আমাকে দিয়ে ছবি তুলছিল। হঠাৎ আমি বিগড়ে গেলাম । ইচ্ছা করেই বিগড়ে গেলাম ।

সে কেন আমাকে অন্যের হাতে দিয়েছিল, যার হাতে দিয়েছিল- সে আমার অপশন টিপে টুপে তছনছ করে দিয়েছিল । তখন স্টেজে পনের জন মানুষ । এর মধ্যে দুইন ক্ষুন ক্ষুনে বুড়ো ছবি তোলার জন্য তাদের কোলে করে স্টেজে তোলা হয়েছে । এদিকে রাজীব নূর ছবি তুলতে পারছে না । স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে ।

রাজীব নূর তাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিতে চেষ্টা করল । জামাই টা তো প্রায় রেগেই গিয়েছিল । যাই হোক, পরে রাজীব নূর পুরো ব্যাপারটা কন্টোলে আনেন । কিন্তু অবশ্যই একটা লজ্জাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । আমি ইচ্ছা করেই রাজীব নূরকে এই শিক্ষাটা দেই ।

এমন ভাব যেন তার কিছু গায়ে'ই লাগে না । না, না এমন করলে তো হবে না । ক্যামেরায় ক্লিক করলে ছবি উঠবে। ক্যামেরার সামনে যা আছে সেটাই পাবেন। তাকে কি ভাল ফটোগ্রাফ বলা যায়! আমার সবচেয়ে ভালো লাগে রাজীব নূর সব সময় আনন্দের সময় আমাকে সাথে রাখেন।

তাদের বাসায় নতুন একটা পিচ্চি এসেছে- প্রতিদিন এই পিচ্চিটার নানান রকম ছবি তোলেন । তার বিরুদ্ধে আমার সব চেয়ে বড় অভিযোগ হলো- ছবি তোলার পর সে ছবি গুলো কম্পিউটারে নামিয়ে রাখে না । এক মাস দুই মাস হয়ে যায় । যখন মেমোরি ভরে যায়- তখন বাধ্য হোন ছবি নামাতে । আমার ভাগ্যে পরেছে অদ্ভুত এক মানূষ- মানুষটা যতক্ষন বাসায় থাকে সারাক্ষন কম্পিটারে কি যেন লেখালেখি করেন ।

দুপুরে খাওয়ার সময় পার হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল থাকে না । রাতেও সময় মত খাওয়া দাওয়া করেন না । আমি খুব বুঝতে পারি হিমি নামে কারো সাথে তার তীব্র প্রেম ভালোবাসা আ্ছে । দুঃখের ব্যাপার হলো- সে আজ পর্যন্ত হিমির একটা ছবি তুলেন নি । সবাইকে দেখি- প্রিয় মানুষের নানান ভঙ্গিমায় নানান রকম ছবি তোলেন ।

আর এই গাধা...উফফ...!!! একবার রাজীব নূর আমাকে একমাস পর ব্যাগ থেকে বের করলো। তখন শীতকাল ছিল। আমার খুব রাগ হলো- ঠান্ডায় আমি প্রায় জমে গিয়েছিলাম । তারপর সে আমাকে দিয়ে একটা আর্টস্টিক ছবি তোলার খুব চেষ্টা করল । ঠান্ডায় আমার জীবন যায় যায় অবস্থা- আমি তাকে কিভাবে ছবি দেই? রাজীব নূর বুদ্ধিমান- সে অস্থির না হয়ে আমাকে লাইটের তাপ খাওয়ালো।

আমি তাপ পেয়ে আবার বোধ করলাম- তারপর তাকে সুন্দর একটা ছবি উপহার দিলাম । আমি তার সাথে অনেক জায়গা ভ্রমন করার সুযোগ পেয়েছি- এই জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সবচেয়ে রাগ হয়- যখন রাজীব নূর ঘন্টার পর ঘন্টা চায়ের দোকানে বাজে লোকদের সাথে বসে থাকে । একটু পরপর চা খায় সিগারেট খায় আর বাজে লোকদের নোংরা কথা খুব মন দিয়ে শোনে । আশা করি তার বাজে অভ্যাস দ্রুত বদলে যাবে ।

আমি তো আমার আত্মকাহিনী বলতে গিয়ে রাজীব নূরের গুনগান শুরু করেছি । উফফ...আসলে এই মানূষটা আমার আস্টেপৃষ্টে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে !যাই হোক এখন নিজের কথা বলি- নাইকন বা নিকন কর্পোরেশন একটি বৃহৎ জাপানি অপটিকস ও ইমেজিং কোম্পানি। ক্যামেরা, বাইনোকুলার, মাইক্রোস্কোপ, পরিমাপের যন্ত্রপাতি, স্টিপারস ইত্যাদি এর উৎপাদিত পন্য। ১৯১৭ সনে স্থাপিত এই কোম্পানি মিটসুবিশির একটি অংগপ্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের মুল কারন আপনি উচু মানের ছবি চান।

ক্যামেরা তাক করবেন আর ক্লিক করে ছবি উঠাবেন এতে সন্তুষ্ট নন। ভাল ছবির জন্য আপনাকে দৃষ্টি রাখতে হয় ছবির জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দিকেই। ফটোগ্রাফির মুল শব্দ হচ্ছে ফটো বা লাইট। একে একেবারে নিখুতভাবে ব্যবহার করার ওপর নির্ভর করে ছবি ভালমন্দ। শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানে ভাল ছবি পাওয়া যায় না।

ভাল ছবির পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ছবি উঠানোর পর সেখানে কোন ত্রুটি আছে কিনা বের করা এবং কি করলে আরো ভাল ছবি পাওয়া যেত সেটা বের করা। কাজেই যত বেশি ছবি উঠাবেন তত ভাল ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা। হুমায়ুন আহমেদকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল- ঈশ্বর নিয়ে আপনার ভাবনা কি? উত্তরে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন- আমি মনে করি, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। আমি স্টিফেন হকিংয়ের একটা লেখা পড়লাম। প্রকৃতির মধ্যে কিছু নিদর্শন তো আছেই।

তোমাকে একটা যুক্তি দিই, শোনো। এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় যুক্তি। তুমি মঙ্গল গ্রহে গিয়েছ। সেখানে গিয়ে তুমি দেখলে পাহাড়, পর্বত, পাথর। পাথর দেখে তুমি বলবে, বহুকাল থেকে, সেই আদ্যিকাল থেকে পাথরগুলো এভাবেই আছে।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তুমি দেখতে পেলে একটা নাইকন ক্যামেরা। তুমি সেটা হাতে নেবে। তখন তোমাকে বলতেই হবে, এর একজন স্রষ্টা আছে। ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে তুমি এ কথা ভাবতে পারবে না যে শূন্য থেকে এটা আপনা-আপনি এসে হাজির হয়েছে। কারণ, এটা একটা জটিল যন্ত্র।

এবার, আরেকটু এগিয়ে গেলে। কোত্থেকে একটা খরগোশ বেরিয়ে এসে তোমার দিকে তাকাল। নাইকন ক্যামেরা কী করে? ছবি তোলে। খরগোশ কী করে? অনেক কাজই করে। খরগোশের একটা কাজ হলো দেখা।

এই খরগোশের চোখ নাইকন ক্যামেরার চেয়ে হাজার গুণ বেশি জটিল। নাইকন ক্যামেরাটা দেখে তোমার যদি মনে হয় যে এর একটা নির্মাতা থাকা দরকার, তাহলে খরগোশের বেলায় এটা তোমার মনে হবে না কেন? আমার প্রথম যুক্তি যদি গ্রহণ করো, আমার দ্বিতীয় যুক্তিটাও তোমাকে গ্রহণ করতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.