আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথশিশু এবং আমরা

সুখের কথা বোল না আর,বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি,দুঃখে আছি,আছি ভালো,দুঃখে আমি ভালো থাকি। কোতোয়ালী থানার অদূরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিডিএ কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে ৪/৫ জন পথশিশুকে প্রায়ই দেখা যায়। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউবা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। কিন্তু সবার হাতে পলিথিন। ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে নাক মুখ তাতে ঢুকিয়ে কয়েক মিনিট চেপে ধরছে।

ভেতরে হলুদ কিছু পদার্থ। কিছুক্ষণ গন্ধ শুঁকার পর একজন ফুটপাতেই চোখ বুঁজে শুইয়ে আছে। প্রায় প্রতিদিনই বেলা তিনটা চারটার দিকে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। একই দৃশ্য দেখা যায় পুরাতন রেল স্টেশন, নিউমার্কেট থেকে বিআরটিসি যাওয়ার পথে মধ্যবর্তী আইল্যান্ড ও লালদীঘি মাঠেও। কৌতুহল মিটাতে গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে যাওয়া।

শুয়ে থাকা শিশুটি চোখ বুঁজে উত্তর দেয় “ড্যান্ডি খাই ড্যান্ডি। এইডা লইলে নিশা অয়, ঘুম আইয়ে। খিদা লাগে না। দুনিয়াদারির কোন হুঁশ থাহে না। ” নেশার জগতে বিশেষ করে নিম্নবিত্তের কাছে প্রচলিত এ মাদকটির নাম ডেনড্রাইট।

অনেকে বুস্টিক হিসেবে চিনে। তবে মাদকসেবীদের কাছে এটি পরিচিত ‘ড্যান্ডি’ নামেই। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। সেই সাথে বাড়ছে মূল্যও। এক সময় টোকাই শ্রেণীর শিশু-কিশোরদের মধ্যে এর ব্যবহার প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে অনেক ধনীর দুলালও এটি গ্রহণ করায় ক্রমশ: মাদকসেবীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে এটি।

জানা গেছে,ডেনড্রাইট বা বুস্টিক একধরনের আঠালো পদার্থ। কাঁচ, রাবার, চামড়া কিংবা রেক্সিন জাতীয় বস্তু জোড়া লাগাতে এটি আইকা বা গাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্যালন, কৌটা বা টিউবে পাওয়া যায় এটি। যেকোন হার্ডওয়ারের দোকান থেকে এটি খুব সহজেই যে কেউ কিনতে পারে। প্রধানত: ভারত ও নেপাল থেকে এটি এদেশে আসছে।

ড্যান্ডি নামে পরিচিত এ মাদকটি পলিথিনের ভেতর খানিকটা ঢুকিয়ে অত:পর বেলুনের মতো ফুলানো হয়। ডেনড্রাইটে যে আঠালো পদার্থ থাকে তা পলিথিনে ঢুকানোর পর অন্যরকম স্বাদ ও গন্ধের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকদের মতে,ডেনড্রাইট স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ড্যান্ডি অর্থাৎ জুতা তৈরির আঠায় টলুইন নামক এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে যা বাষ্পীভূত হয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে সেবনকারী শিশুদের দেহে প্রবেশ করে। টলুইন ক্ষণস্থায়ীভাবে ঝিমুনি, মাথাব্যথা, ক্ষুধা না লাগা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার উদ্রেক করে।

বিশিষ্ট রসায়নবিদ কামনাশীষ রাজু এসব ড্যান্ডিসেবীদের ভবিষ্যতের আরও ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আজাদীকে বলেন, লিভার, কিডনিসহ ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে ড্যান্ডি অর্থাৎ টলুইন। এ ছাড়া নিয়মিত ড্যান্ডি সেবনে বেনজিন মিথাইলের প্রভাবে পথশিশুদের মস্তিষ্ক বিকৃতির আশংকা রয়েছে শতভাগ। এটি সেবনে মানসিক সমস্যা, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, কিডনি জটিলতা ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। নতুন স্টেশনের অনতিদূরে আইল্যান্ডের উপর কয়েকজন বসে ড্যান্ডি সেবন করছিলো গতকাল সন্ধ্যায়। লাকি নামে আনুমানিক দশ বারো বছরের একটি মেয়ে ড্যান্ডি তৈরির পদ্ধতি দেখিয়ে দিল বলার সাথে সাথেই।

পলিথিনে একটা টিউব থেকে কিছুটা আঠালো পদার্থ নিয়ে মুখ বন্ধ করে পলিথিনটি ভালোভাবে মুচরাতে থাকে। তারপর বেলুনের মতো ফুলিয়ে ঝাঁকাতে থাকে কিছুক্ষণ। অত:পর মুখ ঢুকিয়ে জোরে জোরে নি:শ্বাস নিতে থাকে। একসময় সেটি পাশে অপেক্ষায় থাকা আলীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে উপর দিকে শ্বাস টেনে ঝিম ধরে থাকে। চোখ মেলে আলী বলে,‘ক্ষুদা তৃষ্ণা লাগে না ড্যান্ডি খাইলে।

এডি খাইলে টেহা বাঁচে। দুনিয়াদারি রঙিন রঙিন লাগে। ’ এ প্রসঙ্গে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা অপরাজেয় বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল শিকদার ভয়ংকর একটি তথ্য দেন আজাদীকে। তিনি জানান, ড্যান্ডি সেবনকারী পথশিশুদের অনেকে দাঁতের ফাঁকে ব্লেডের টুকরো ঢুকিয়ে রাখে। মাঝে মধ্যে ব্লেডে চাপ দেয়।

এতে মাড়ি কেটে রক্ত বের হয়। ড্যান্ডির গন্ধ শুঁকার পর নোনতা রক্তের স্বাদে নাকি নেশা গাঢ় হয়। এধরনের বেশ ক’জন শিশুকে তিনি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, অন্য শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের এখানে রাখা যায় না। তবে এদেরকে মরণ নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারি ভূমিকার বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। (সংগৃহীত) সমাজের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের এদের এই অবস্থায় দেখতে দেখতে গা শয়ে গেছে।

আমরা ধরেই নিয়েছি এটা ওদের ভাগ্য,আমাদের করার কিছুই নেই,আমরা কয়জনকে সাহায্য করতে পারবো????পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ ওদের মত সুবিধা বঞ্চিত। বড় হয়ে ওরা এক একজন চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই করবে, মানুষ ও খুন করতে পারে,স্বার্থপর আর লোভী মানুষ নিজেদের স্বার্থের জন্য এদের কাজে লাগাবে। লেখা কপি পেস্ট আমার পছন্দ না হলেও এটা করলাম ,কারণ সামনে ঈদ,আমার অনেক বান্ধবীদের দেখেছি অবশ্য এ কথা আমার নিজের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য রমজান মাসে হাজার হাজার টাকার শপিং করে ঈদের দিন বলে,এবারের ঈদ একদম ফালতু গেছে। তখন মনে হয়,আমাদের ভাগ্য অনেক ভালো,এদের জায়গায় আমরাও থাকতে পারতাম এবং বুঝতে পারি সমাজ অনেক নিষ্ঠুর। আসলে সমাজের দেশের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই এদের প্রতি???? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.