আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃতীয় সহস্রাব্দে তাসাউউফের স্বরূপ : অমাবস্যা-পূর্ণিমা

আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী! বলল, তারা তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না! বুদ্ধপূর্ণিমার ডেটটা জানার সাথে সাথে তড়পে উঠল ভিতরে। নিঝুম গ্রামে চলে গেলাম, সাথে ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট মৌনমগ্ন। তারপর, সন্ধ্যারাতেই উঠল ঝড় সেইসাথে তুমুল বৃষ্টি। আর টিনের চালে ঝমঝমাঝম বিষ্টির শব্দের সাথে গাছপালায় বাতাসের খেলা নিয়ে টানা সত্তর মিনিটের গভীর ধ্যান।

মহাযোগ। না। চান্দ্রসময় দেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া মোটেও চন্দ্রপূজা নয়। মেডিটেশন বা ধ্যানমগ্নতার পুরো বিষয়টাই জৈবিকতায় ভিতগাড়া। মেডিটেশন করাই হয় ব্রেন সিগন্যালিঙ সিস্টেমকে ওঠানোর জন্য।

কখনো এই ব্যবস্থাকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে করা হয় মস্তিষ্কের সমন্য়, কখনো স্মৃতি/গণিত/যুক্তি/সৃষ্টিশীলতার বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষায়িত ধ্যানমগ্নতা প্রয়োজন পড়ে, কখনোবা নিজদেহের বা অন্যদেহের হিলিঙ কাজে ব্যবহার করা হয় মেডিটেশনকে। সেও ওই ব্রেন সিগন্যালকে কাজে লাগিয়েই। এমনকি স্রষ্টাসাধনায় রত হওয়াতেও ব্রেন সিগন্যালই মুখ্য। আর প্রশান্তি/ রিল্যাক্সেশন? পুরোটাই সিগন্যালিঙে অণ্বয়ের বিষয়। মজার ব্যাপার হল, ব্রেনের পুরো সিগন্যালিঙ চলে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পাথওয়ে ধরে।

বিলের তলার উটকো গাছের মত একটা নউরন। সেই নউরনের ভিতর দিয়ে সিগন্যালটা যায় ইলেক্ট্রিক্যালি। ইলেক্ট্রিসিটির পালস। কিন্তু প্রবাহ বলে কথা। সেটা তো এক নউরনে আবদ্ধ থাকার বান্দা নয়।

যখনি নউরনের শেষমাথায় চলে যাচ্ছে সিগন্যালটা, তখন এই ইলেক্ট্রিক সিগন্যালকে রূপান্তর করা হচ্ছে কেমিক্যাল সিগন্যাল্ এ। কারণ, নউরন শেষ এবার, এই নউরনটা যে দু-চার-দশ মায় পাঁচ লক্ষ নউরনের সাথে যুক্ত, সেখানে এই নিউরন নিজের ভিতর থেকে পাঠাবে একটা কেমিক্যাল তরল। ওটা আবার ওসব নউরনে ডিকোডিত হবে ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল হিসাবে। এভাবে শুধু যে ব্রেনের ভিতর চলাচল তা নয়, চলাচল সারাদেহে। একারণেই, এভাবেইতো আমরা শরীরের প্রতিটা বিন্দুতে অনুভূতিকে পাঠাই ব্রেনে, নার্ভাল নউরন দিয়ে।

আর, নার্ভাস সিস্টেমের এই নউরাল কানেক্টভিটি যত দুদ্দাড় হবে, আমাদের সচেতনভাবে দেয়া আদেশ শরীরে ও মস্তিষ্কে ফলত মনে কার্যকর হবে তত বেশি। এখানেই চলে আসছে, সময় গেলে সাধন হবে না। হ্যা, যে চাঁদ পৃথিবীর বুকে ছয় থেকে পনের ফুট ফাঁপিয়ে তোলে পানিকে (আসলে সে যেদিকে যায়, সাথে করে নিয়ে যায় ছ থেকে আটফুটের এই জলরাশিকে আপন টানে। ), সেই চাঁদের সাথে অ্যালাইন্ড অবস্থায় আমাদের শরীরেও ফ্লুয়িডের ফ্লাড আসে। এই ফ্ল্যাডের উপকার কী? প্রতিটা তরলকণাকে পৃথিবী নিজের মত করে টানছে।

এতে করে তার গতি হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। মাথার উপর যদি চাঁদ থাকে, তাহলে এই টান বেশ খানিকটা কাটা যাচ্ছে। ফলে, ফ্লুয়িডের যেখানে যাবার কথা, সেখানে আরো সুন্দরভাবে এবং বেশি পরিমাণে যেতে পারছে। সেই সময় আমরা কী করছি এটা খুব গুরুত্ববহ। যা করছি, যার প্রতি আমাদের টান, সেটাই কিন্তু সুন্দরভাবে করা যাবে।

আমি অ্যালকোহলিক হলে, অ্যালকোহল ব্রেন ও বডিতে খুব ভালভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নেশা হবে চুড়চুড়। একারণে সুরারসিকরা পূর্ণিমা মিস করেন না। ঠিক তেমনি, যদি ধ্যানে বসতে পারি, আমার মস্তিষ্কের সংযোগায়ন হচ্ছে অনেকগুণ। বহুগুণ ভালভাবে।

কারণ, সামান্য একটু পরিবর্তন যদি হয় মাধ্যাকর্ষে, তার ফল হবে ভয়াবহ। মাধ্যাকর্ষণ কিন্তু শুধু একটা বা দুটা কণাতে কমছে না। কমছে আমার শরীরের তেষট্টিটা হরমোনের উপর। আর একটা হরমোনের একটা কণা যদি একটু বেশি গতি পায়, তার ফল দেহে কী হতে পারে? প্রতিটা হরমোনের প্রতিটা কণাই পাচ্ছে অসাধারণ গতি। নিরাময় প্রক্রিয়া অনন্যসাধারণ হচ্ছে।

এক হরমোনের ধাক্কায় আরেকটা তৈরি হবার কথা, সেটা আরো বেশি তৈরি হচ্ছে। সেটার প্রতিক্রিয়ায় আরেকটা আরো বেশি। অসাধারণ চেইন রিঅ্যাকশন। আর রক্ত তখন তরতাজা গতিময়। ফলে কোষে কোষে ফুলেফেঁপে ওঠা।

তখন যদি একটু প্রাণায়াম (শ্বাসচর্চা) করা যায়, দেখা যায়, বছরজুড়ে যে কোষটা অক্সিজেনের অভাবে শ্বসনকাজ চালাতে পারেনি ঠিকমত, ফলে তার প্রভাব ঠিকমত পড়েনি, মাইটোকন্ড্রিয়াগুলোতে জমেছে ক্লেদ- তার সব যাচ্ছে উল্টে। মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ চালানোর জন্য পাচ্ছে অযুত অক্সিজেন, সেইসাথে কোষঝিল্লি তেড়েফুড়ে আসা বডিফ্লুইড সক্রিয় করে তুলছে রাইবোজোমকে। আপাত নিরীহ রাইবোজোম যখন জাগবে, অসাধ্য হবে সাধিত। রাইবোজোম শুরু করবে এমন সব অঙ্গে এমন সব জিনের কোডিঙ, যেসব অঙ্গ ছাড়া ওই জিন কোডিঙ হয় না, আবার ওই জিন কোডিঙ না হলে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন উৎপন্ন হয় না, আর নির্দিষ্ট ওই প্রোটিন হয়ত, উদাহরণের জন্যই বলি, চুলের গোড়ার মেলানিন তৈরির নিয়ামক। এখন, সময়মত মহাযোগে ধ্যানমগ্ন যখন পাকাচুল থেকে আবার কাঁচাচুলে ফিরে আসবেন ম্যালা মেলানিন পেয়ে, আমরা খুশিতে বলে উঠব, ক্যাবাত হ্যায়! কামাল হো গায়া।

এতো বেশ ধীর প্রক্রিয়া। যারা মহাযোগে নিয়মিত ধ্যানমগ্ন হন, তাদের এই হাল হবে। তাদের মৃত্যুর হিসাব শুরু হবে একশো বিশ এর পর (মানুষের স্বাভাবিক জীবনকাল একশো বিশ বছর)। অবশ্য আরো হাজারটা নিয়ম মানতে হবে... আর মনের উপর প্রভাব? তাৎক্ষণিক। এম্নিতেই তো দেখা যায়, মনে মাস কয়েক প্রভাব পড়ার পর সেটা শরীরে প্রকট হয়।

তাই আমরা দেখতে পাই, ওই সময়টাকে ব্যবহার করতে পারলে সৃষ্টিশীলতায় আসে মহাস্রোত। পূর্ণিমার চাঁদের সাথে ঝলসানো রুটির অণ্বয় করেন সুকান্ত, হুমায়ূন দেখতে পান গৃহত্যাগী জোছনা আর গৌতমা ছেড়ে যান সবকিছু, বোধিপানে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা হয়, মহাযোগ সে দিনে উদয়, লালন বলে, তাহার সময়... চন্দ্র রহে না- সময় গেলে সাধন হবে না- তুমি, দিন থাকিতে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।