আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘তোরা কিভাবে নারায়ণগঞ্জে থাকিস্‌, দেখে নিবো’ (Copy - Paste)

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে: তোরা কিভাবে নারায়ণগঞ্জে থাকিস, দেখে নিবো। তোরা কয়জন? বেশি হলে ৩০ থেকে ৩৫ জন। তোদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা শেষে নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদকে হুমকি দিয়ে এসব কথা বলেন। আপত্তিকর গালাগাল করে মারমুখো ভঙ্গিতে হালিম আজাদের দিকে একাধিকবার তেড়ে যান তিনি।

এ সময় তাকে জেলা প্রশাসক নিবৃত্ত না করলে হালিম আজাদের ওপর শারীরিক হামলা হতো। প্রেস ক্লাব সভাপতির উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের হঠাৎ রূঢ় আচরণ আর হুমকি-ধমকিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত কমিটির সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ঘটনার সময় সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান এবং প্রেস ক্লাব সভাপতি হালিম আজাদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল, বিকেএমইএ’র পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল হক এবং সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস পরিস্থিতি সামাল দেন। কবি হালিম আজাদ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং মেধাবী স্কুলছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর গড়ে তোলা ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’র সদস্য সচিব। ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা আহবান করা হয়েছে। ওই সভাতেই এ ঘটনার প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণের কথা রয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা প্রেস ক্লাবে ছুটে আসেন এবং ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিকাল সাড়ে ৪টায় ঘটনার শিকার প্রেস ক্লাব সভাপতি কবি হালিম আজাদ প্রেস ব্রিফিং করে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা তুলে ধরেন।

এদিকে জেলার ৬২ বিশিষ্ট নাগরিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নাসিম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে বিকালে ব্রিফিংকালে হালিম আজাদ বলেন, বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় ধরে চলে। ওই সভাতে কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম। সভা শেষে সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় পেছন থেকে সাংসদ নাসিম ওসমান আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিবিদদের জ্ঞান দেয়ার তুই কে, তোদের বিরুদ্ধে আমাদের পরিকল্পনা আছে।

’ একথা শুনে আমি এগিয়ে যাই এবং বলি, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। ওই সময় নাসিম ওসমান আরও বলেন, তোরা নারায়ণগঞ্জে ৩০-৩৫ জন আছিস্‌। তোরা কিভাবে নারায়ণগঞ্জ থাকিস্‌ তা দেখে নেবো। এরপরই তিনি আমার দিকে তেড়ে আসার চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে হালিম আজাদ বলেন, জেলা প্রশাসক নাসিম ওসমানকে না থামালে আমার ওপর শারীরিক হামলা হতো।

কোন সভ্য মানুষ এ ধরনের আচরণ করতে পারে না। ৩ বার নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য এ ধরনের আচরণ করতে পারেন কিনা এ নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে । প্রেস ক্লাবের সভাপতিকে হুমকি দেয়া মানে নারায়ণগঞ্জের সব সাংবাদিককেই হুমকি দেয়া। হালিম আজাদ আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের মেধাবী স্কুলছাত্র ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর নাসিম ওসমানের ছোট ভাই সাবেক এমপি শামীম ওসমান জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রকাশে হুমকি দিয়েছিলেন। আর আজকের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে তারা (ওসমান পরিবার) এভাবেই নারায়ণগঞ্জ শাসন করতে চায়।

ত্বকী হত্যার পর আমরা নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তারা ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম। কার্যকরী কমিটির সদস্য রুমন রেজা বলেছেন, সময় এসেছে পেশাগত সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৭ই আগস্ট জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ব্যবসায়ী আশিক হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি সারাহ বেগম কবরীকেও একই ভাবে নাসিম ওসমান প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, জেলায় ৪-৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। বাক্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে নাসিম ওসমান সভায় উপস্থিত সকলের সামনেই দুই মাসের মধ্যে কবরীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর ২০১১ সালের সালের ১৮ই জুন অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় সাবেক এমপি শামীম ওসমান বাস মালিকদের পক্ষ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে মারমুখো হয়ে একাধিকবার সরকার দলীয় এমপি সারাহ বেগম কবীর দিকে তেড়ে যান। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শামীম ওসমানের হাতে লাঞ্ছিত হন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। নাসিম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি ৬২ বিশিষ্ট নাগরিকের এদিকে নারায়ণগঞ্জের ৬২ বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসক্লাব সভাপতি কবি হালিম আজাদকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তারা এক প্রতিবাদলিপিতে বলেন, নাসিম ওসমান কবি হালিম আজাদকে জেলা প্রশাসকের সামনে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ত্বকী হত্যার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকেও হত্যার হুমকি দেন। তাই এ ঘটনার তীব্র নিন্দার পাশাপাশি অবিলম্বে নাসিম ওসমানকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। নাসিম ওসমানের বিবৃতি ওদিকে ঘটনার পর নাসিম ওসমানের পক্ষে মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভা শেষে হালিম আজাদ নাসিম ওসমানকে বার বার উত্তেজিত করার চেষ্টা করে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলতে থাকেন। ওই সময় নাসিম ওসমান বলেন, আপনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।

বার বার আমাকে রাজনীতি কিভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমি তো আপনার অনেক আগেই সাংবাদিকতা করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলাম আমি। উল্লেখ্য, পত্রিকাটির নাম বলতে পারেননি তিনি। Ref: Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.