আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ‍মুক্তমনা ।

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা কোন সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরাগ থাকলে বলা হয় সাম্প্রদায়িক । পৃথিবীতে মানুষ তো দুরে থাক এমন কোন প্রাণী খুজে পাওয়া যাবে না যে তারা সম্প্রদায়ভূক্ত নয় । এই দৃষ্টিকোন থেকে বলা যায় আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক। একটা জিনিস আমরা ভূলে যাই মানব সভ্যতা শুরু হয় এই সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করেই । কারণ মানুষ আদিকাল থেকেই দলবদ্ধভাবে বসবাস করত।

ধর্মনিরপেক্ষতা হল-কোন ধর্মের প্রতি অনুরাগ ও বিরাগ নেই । বাস্তবে এরকম কোন মানুষ খুজে পাওয়া দুস্কর। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ দু’টো ব্যাক্তিগত পর্যায়ে এর কতটুকু প্রয়োগ তা আলোচনার দাবি রাখে। কারন প্রত্যেক মানুষের একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাস আছে হোক সে আস্তিক অথবা নাস্তিক এবং ব্যক্তিগতভাবে তার সেই বিশ্বাস পালন ও লালন করে যা করতে দোষের কিছু নেই । নিজ ধর্ম ও বিশ্বাস পালন করে যদি অন্যের ধর্ম বিশ্বাসকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয় তাহলে নি:সন্দেহে সেটা এক ধরণের অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা ।

আর এই ধরণের অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাই আজ বিশেষভাবে প্রয়োজন। তবে রাস্ট্রীয় পর্যায়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ দু’টোর প্রযোগে যথার্থতা আছে । কারণ কোন রাস্ট্রে একক কোন জাতি বসবাস করে না । বহু জাতির বসবাস । রাস্ট্রের কাছে সব নাগরিকের অধিকার সমান যেমন একজন মায়ের কাছে তার সব সন্তানের মূল্য একই ।

রাস্ট্রে ন্যায় বিচার ও শান্তি-শৃঙ্খলা, উন্নতির স্বার্থে রাস্ট্রকে অবশ্যই অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে আর এটাই আধুনিক রাস্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । তবে কোন দল বা গোষ্ঠী যদি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা দাবী করে কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন না ঘটায় তাহলে সেই দল বা গোষ্ঠী কিভাবে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ হয় ? উদাহরণ- ভারতের পশ্চিম বঙ্গ দীর্ঘ তিন দশক ধরে ধর্মনিরপেক্ষ বাম দল শাসন করার পরও সেই পশ্চিম বঙ্গে সরকারী চাকুরীজীবির ১% মুসলমান যেখানে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমের হার ৩০% ! ( সূত্র সাচার প্রতিবেদন)। এর বিপরীতে যদি কোন ডানপন্থী দল ক্ষমতাসীন হয়ে দেশের সব নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা, সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য ন্যায় বিচার করতে পারেন তাহল নি:সন্দেহে সেই দল অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ । মেকি ধর্ম নিরপেক্ষতার চেয়ে এ ধর্মনিরপেক্ষতা হাজারগুণে ভাল । মুক্তমনা ।

এই শব্দটা পুরোপুরি বোগাস । এর কোন কানাকড়িও মুল্য নেই । এর প্রয়োগ নয় অপপ্রয়োগ আছে । সাধাণত যারা নাস্তিক ও ধর্ম (ইসলাম) বিদ্বেষী তারা মুলত নিজেকে মুক্তমনা দাবি করেন যদিও বাস্তবে তারা মোটেই মুক্তমনা নয় । কারণ তারাও একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাস লালন করেন ও প্রচার করেন।

মুক্তমনা-শব্দগত অর্থের দিকে গেলে দাড়ায় মুক্ত চিন্তা করেন যারা । যার মানে দাড়ায় আপনি কোন আইনের মধ্যে আবদ্ধ নন। যখন কেউ একাকী অবস্থান করে তখন সেই মুক্তভাবে থা্কতে পারে বা মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে কিন্তু সমাজে বসবাস করতে হলে সেই সমাজের নিয়ম কানুন, কৃষ্টি-কালচার মেনে চলতে হয় । যে দেশে বসবাস করি সে দেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হয় তাহলে সে মুক্তমনা হল কিভাবে ? আসলে এই শব্দটা মুলত ব্যবহার হয় নাস্তিকতা ও ধর্ম -বিদ্বেষীতার ক্ষেত্রে । সেই সংজ্ঞানুসারে ধর্মকে আকড়ে থাকলে আপনি মুক্তমনা নন কিন্তু ধর্মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই আপনি মুক্তমনা আবার ধর্মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসলেও হবে না ।

মুক্তমনার সার্টিফিকেট পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধর্মের বিরুদ্ধে যত পারেন কুৎসা, স্যাটায়ার, গীবত, সমালোচনা করতে হবে। ধর্মের প্রসিদ্ধ পুরুষদের বাপ-দাদা চৌদ্ধ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে হবে । তবেই না হবেন মুক্তমনা ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.