আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"ম্যাজিক রিয়েলিজম" এবং হুমায়ুন আহমেদ

জানার চেষ্টা করছি......... লেখাটি আমার এক বন্ধু-র......পড়ে ভালো লাগলো.....তাই শেয়ার করলাম। বাঙ্গালির প্রিয়তর হুমায়ুন আহমেদ আজ ভারাক্রান্ত করে রেখেছিলেন শহীদ সৌধ, নেই- তিনি নেই, আক্রান্ত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ও আকাশ। আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলো শোক প্রচার করেছে, এবং তাদের শোক কমানোর জন্যই কিনা জানিনা ,গত কয়েকদিন, প্রায়ই দেখলাম ভাঁড়ামির চুড়ান্ত করল তারা। যে রাতে আমরা এই তীব্র খবরটি পেলাম, সেই রাতেই তাৎক্ষনিক একটি শোক আলোচনা সভায় এক পাঞ্জাবী পরিহিত সরু গোঁফধারী , যাকে প্রায়ই দেখি, রাজনীতিবিদদের সাথে "টক শো" করতে, তিনি কয়েকটি মতামত দিলেন, তার একটি হল "হুমায়ুন আহমেদ মানে বাংলাদেশ" , এবং হুমায়ুন আহমেদকে নানান বিশেষনে বিশেষিত করলেন, যার একটি হল "মুক্তিযোদ্ধা"। প্রথমটি শুনে আমি শিউরে উঠলাম, একক কোন ব্যক্তিই বাংলাদেশ হতে পারেন না, রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ মানেও বাংলাদেশ নয়।

এমনকি শেখ মুজিব মানেও বাংলাদেশ নয়, যেমন গান্ধী মানেই ভারত নয়, লেনিন মানেই নয় রাশিয়া! আর "মুক্তিযোদ্ধা" বিশেষনটি নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। হুমায়ুনের পাঠকমাত্রই জানেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলে না। নানান স্মৃতিকথায় ও বইতে এটি নিয়ে তার বিষাদ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন খুব স্পষ্ট করেই। আরেকটি অপেক্ষাকৃত নতুন টিভি চ্যানেল , তরুন একজন রিপোর্টারকে পাঠাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি, এস, সি তে, তরুণদের মত জানার জন্য। ঐ রিপোর্টার শেষে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন হুমায়ুন আহমেদ "ম্যাজিক রিয়েলিজম" এর জাদুর মাধ্যমে পাঠকদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।

বেশ ভারী একটি শব্দ "ম্যাজিক রিয়েলিজম" ব্যবহার করা হল,দারুন একটা জ্ঞানী ভাবও প্রকাশ পেল। ওই রিপোর্টার কোন বিষয়ে পড়েছেন আমার জানা নেই, তবে সাহিত্য যে তার বিষয় নয়, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। না হলে তার জানা থাকার কথা "ম্যাজিক রিয়েলিজম" বা "জাদুবাস্তবতা" দিয়ে জাদুকরী কোন লেখা বুঝায় না, এটা সাহিত্যের আঙ্গিক কাঠামোর একটি অসাধারন তত্ত্ব, একটি "লিটারেরি টার্ম", যা হুমায়ুনের লেখায় কখনো ব্যবহৃত হয় নি। এবং স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ তার লেখালেখিতে এই ধরনের "তত্ত্ব" জাতীয় ব্যাপার এড়িয়েই চলতেন, তার নিজস্ব ভাষাভঙ্গীতেই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন ও বিখ্যাত হয়েছিলেন। আর সর্বশেষ আজকে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে, সম্ভবত দেশ টিভি একজনের কাছে বক্তব্য চাইল।

অত্যন্ত সুন্দরী, সুসজ্জিতা এক মহিলা তার থেকেও সুন্দর উচ্চারণে এক দীর্ঘ বক্তব্য দিলেন। তার পরিচয়টা জিজ্ঞেসিত হয় নি, তবে কথায় কথায় বুঝলাম, তিনি সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার ঐ বক্তব্যের কয়েকটি বাক্য এরকম "হুমায়ুন আহমেদ আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে পড়তে হয়। তার কাছ থেকে আমরা শিখেছি রবিন্দ্রনাথ, বঙ্কিম , শরতচন্দ্র কে কিভাবে পড়তে হবে। বিশ্বসাহিত্য পড়ার প্রেরনা পেয়েছি তার কাছ থেকে পাঠকেরা , এবং পাঠ প্রতিক্রিয়া কি হবে এটাও শিখিয়েছেন তিনি" আমি জানিনা তিনি ঠিক কি বোঝাতে চাইলেন, এবং তার এই কথায় হুমায়ুন আহমেদ কতটুকু সম্মানিত হলেন, তবে তার এই কথাগুলোতে অপমানিত হলেন বাংলাসাহিত্যের কয়েকজন প্রধান লেখক ও সমগ্র বিশ্বসাহিত্য।

একজন পাঠক হিসেবে বুঝতে পারি পাঠকদেরও তীব্র অপমান করা হল ওই কথাগুলোয়! হূমায়ন আহমেদ আমাদের পড়তে শিখিয়েছেন?! তার প্রকাশের আগে কি বাঙ্গালী পাঠক রবীন্দ্রনাথ , বঙ্কিম পড়ে নি? হুমায়ুন আহমেদ যারা পড়ে না তারা কি হেমিংওয়ে , দস্তয়ভস্কি, কাফকা , কামু পড়ে না? বরং এর উল্টোটাই দেখা যায় বেশী, যারা বিশ্বসাহিত্য পড়েন তারা অনেকেই হয়ত হুমায়ুন পড়েন, কিন্তু অনেকেই আছেন যারা শুধু হুমায়ুন পড়েন, বাংলা বা বিশ্বসাহিত্যের অন্য কিছু পড়েন না। হুমায়ুন আহমেদ তো নয়ই , কোন একক লেখকের লেখাই কোন মানুষকে বিশ্বসাহিত্যের পাঠক বানাতে পারে না। আর হুমায়ুন আহমেদ ফিকশন লেখক ছিলেন, তিনি প্রবন্ধ জাতীয় লেখা একেবারেই লেখেননি বলা যায়, ফিকশন বা গল্প পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া শেখার কোন সুজোগ নেই। হুমায়ুন আহমেদ যা, সে তাই। এই অনাবশ্যক প্রপাগোন্ডাকারীগন জীবিত হুমায়ুন আহমেদকে সাহিত্যিক হিসেবে মৃত করে ফেলেছিলেন, এখন মৃত হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে তাদের এই প্রচারনাগুলোর উদ্দেশ্য কি লিংকঃ এখানে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।