আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ান সভ্যতার অসভ্য মানুষেরা....(পর্ব-০১)

ভালবাসি ঘুরে- বেড়াতে, তাই বার বার ফিরে যাই প্রকৃতির কাছে... ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হবে এমন কথা প্রায় সবার কানেই পৌছে গেছে। আর এর সাথে সবারই আরেকটি জিনিসের নাম শোনা হয়ে গেছে, সেটি হলো মায়ান ক্যালেন্ডার। মায়ান ক্যালেন্ডার সম্পর্কে কমবেশী ধারনা সবাই পেয়ে থাকলেও এই ক্যালেন্ডারের আবিষ্কারক জাতি বা মায়া জাতি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। মায়া সভ্যতার মানুষগুলো কেমন ছিলো? কেমন ছিলো তাদের বসতি বিন্যাস?? কিভাবে তারা আজও আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠল??? চলুন জানার চেষ্টা করি... মেসোআমেরিকায় গড়ে ওঠা পাচটি সভ্যতার অন্যতম এই মায়া সভ্যতা। বাকি চারটি ছিলো: ওলমেকান, তেউতোহুয়াকান, তোলতেক এবং আজটেক।

মায়া সভ্যতার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ছিলো সেন্ট্রাল আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকার দক্ষিন অংশে। বর্তমান গুয়তেমালা ও মেক্সিকোতে ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। মূলত তাদের গুরুত্বপূর্ণ বড় শহর ''মায়াপান''- এর নামানুসারে এই সভ্যতার নাম মায়া সভ্যতা রাখা হয়। মায়া সভ্যতার সময়কালকে তিনভাগে ভাগ করতে পারি আমরা। প্রথমভাগে ২০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৫০ খ্রীস্টাব্দ সময়কালকে রাখা হয়, দ্বিতীয়ভাগে ২৫০-৯০০ খ্রীস্টাব্দ ও তৃতীয় ভাগে ৯০০-১৫০০ খ্রীস্টাব্দ সময়কালকে ধরে এই বিভাজনের সমাপ্তি করতে পারি।

মায়ারা তাদের সর্বোচ্চ অর্জন করেছিল এই সময় বিভাজনের দ্বিতীয় ভাগেই। এই সময়ে তারা তাদের বিস্তৃতি 'ইউকাতান পেনিনসুলা' পর্যন্ত ঘটিয়েছিল। তাদের প্রায় ৪০ টির মতো শহর ছিলো যেগুলোর প্রত্যেকটিতে প্রায় ৫০০০ থেকে ৫০,০০০ মানুষ বসবাস করত। মায় সভ্যতার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিলো নিচের কয়েকটি বিষয়: ১. সমাজ ব্যবস্থা ২. দুধর্ষ যোদ্ধা ৩. ব্যবসায়ী ৪. জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শিতা ৫. দক্ষ স্থপতি ৬. ওষুধ সম্পর্কে উচ্চ জ্ঞান ৭. খেলাধুলা মায়ারা প্রথম অবস্থায় গোষ্ঠীবদ্ধ কৃষিনির্ভর ছিল। পরবর্তীতে তাদের কৃষি ব্যবস্থা আরো জটিল আকার ধারন করে ও তারা এর উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়।

তারা মাছ ধরা, শিকার, বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী যেমন: ঝুড়ি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি তৈরির কাজেও নিয়েজিত ছিল। এক পর্যায়ে তারা মৃৎপাত্র নির্মান করতে সক্ষম হয়। সমাজ ব্যবস্থা বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে এই মৃৎপাত্রগুলোও বিকশিত হয়। এক পর্যায়ে তারা রঙ্গিন মৃৎপাত্র এবং পরে এ থেকে দেয়াল নির্মানও শুরু করে। তারা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করেছিল।

এর মধ্যে মন্দির, পিরামিড, প্রাসাদ, প্লাজা উত্যাদি ছিল। মায়াদের সমাজ শাসন ব্যবস্থা ছিল চার ধাপে বিভক্ত। সবার উপরে ছিল রাজা যার হাতে সকল ক্সমতা ছিল এবং বিশ্বাস করা হতো যে রাজার সাথে ঈশ্বরের যোগাযোগ আছে। এর পরের ধাপে ছিল পুরোহিত, বণিক এবং আদর্শ যোদ্ধারা। তারাও রাজার সাথে মায়া সমাজের সব ক্ষমতা পোষন করত।

এর পরের ধাপে কৃষকরা থাকত যাদেরকে নিয়মিত কর প্রদান করতে হত। সর্বশেষ ধাপে ছিল ভূমিহীস দাস, যারা কৃষকদের জন্য কাজ করত। মায়াদের কৃষি ব্যবস্থায় আমরা দেখতে পাব তাদেরকে প্রথম অবস্থায় ঘন বন জঙ্গল পরিষ্কার করে ভূমিকে চাষাবাদের উপযোগী করে নিতে হয়েছিল। অর্থাৎ খুব সহজেই তাদেরকে কৃষিকাজের সূচনা করতে দেখা যায় নি। তাদের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি কৃষিকাজ হলেও তারা শুধুমাত্র খাদ্য শস্য উৎপাদনই করত না, তাদেরকে তুলা বা কোকো-র মত অর্থকরী ফসলও উৎপাদন করতে দেখা যেত।

বনের পশু-পাখি একদিকে যেমন তাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতো অর্থাৎ তারা শিকারীও ছিল অপরদিকে তারা গাছপালাকে গৃহনির্মান সামগ্রী হিসেবে কাজে লাগাতে শিখেছিল। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় মূলত লবন, অবসিডিয়ান (এক ধরনের খনিজ), পাখির পালক, কোকো বীজ প্রভৃতি দিয়ে অথবা কোনো কোনো সময় সরাসরি বিনিময় প্রথার মাধ্যমে তাদের লেনদেন করে থাকত। মায়াদের লেনদেন সামগ্রী পর্ব-০২ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.