আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ান সভ্যতার অসভ্য মানুষেরা....(পর্ব-০২)

ভালবাসি ঘুরে- বেড়াতে, তাই বার বার ফিরে যাই প্রকৃতির কাছে... ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হবে এমন কথা প্রায় সবার কানেই পৌছে গেছে। আর এর সাথে সবারই আরেকটি জিনিসের নাম শোনা হয়ে গেছে, সেটি হলো মায়ান ক্যালেন্ডার। মায়ান ক্যালেন্ডার সম্পর্কে কমবেশী ধারনা সবাই পেয়ে থাকলেও এই ক্যালেন্ডারের আবিষ্কারক জাতি বা মায়া জাতি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। মায়া সভ্যতার মানুষগুলো কেমন ছিলো? কেমন ছিলো তাদের বসতি বিন্যাস?? কিভাবে তারা আজও আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠল??? চলুন জানার চেষ্টা করি... পর্ব- ০১ মায়াদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রধানত পলিথেস্টিক ছিল। তাদের দেবতা মূলত প্রকৃতি প্রধান ছিল যেমন: বৃষ্টির দেবতা, শস্য দেবতা প্রভৃতি।

দেবতাদের ক্রমানুসারে বিভক্ত করলে তারা তাদের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রাধান্য দিত যেমন: জাগুয়ারকে তারা রাতের দেবতা ও শয়তানের মত দেখত। পুরোহিতদের পূজা অর্চনার দেবতা 'ইতজামনা' ছিল স্বর্গের দেবতা। মেয়েদের পূজিত 'ইক্স শেল' ছিল রোগমুক্তি ও শিশু মৃত্যুরোধকারী দেবতা। সাধারনের পূজিত 'ইয়াম কাক্স' ছিল ভুট্টা শস্যের দেবতা। মায়ারা তাদের দেবতাদের পূজা অর্চনা করত গান-বাজনা ও একধরনের বল খেলার মাধ্যমে।

মাঝে মাঝে তারা দেবতাদের উদ্দেশ্যে ভুট্টা, ফল, পশু এমনকি কূমারী কন্যাও উৎসর্গ করত। তারা বিশ্বাস করত দেবতারা রক্তের বিনিময়ে দুর্যোগ প্রতিরোধ করে থাকে তাই তারা মানবস্বত্ত্বা উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করত না। তারা ভাবত রক্ত দেবতাদের সতেজ রাখে(!)। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা এই মানব বলি দিয়ে থাকত। রাজা যুদ্ধে যাওয়ার আগে বা যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেও এই নরবলি দেয় হত।

মায়াদের অর্জনগুলো ছিল সত্যিই চমৎকার। তাদের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো: ১. বিজ্ঞান ২. পর্যবেক্ষন টাওয়ার নির্মান, যেখান থেকে তারা আকাশ পর্যবেক্ষন করত। ৩. শস্য চাষাবাদের জন্য ৩৬৫ দিন বিশিষ্ট ক্যালেন্ডার তৈরি এবং ২৬০ দিন বিশিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য আরেকটি ক্যালেন্ডার তৈরি। ৪. (০) শূন্য সহ সংখ্যার উদ্ভাবন ৫. মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি হাইরোগ্লিফিক-এর মতো একটি লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার। ৬. স্বর্নালঙ্কার ও ব্যতিক্রমী গহনা তৈরি।

৭. অসংখ্য মন্দির-পিরামিড বিশিষ্ট স্থাপনা তৈরি। ৮. তাদের স্থাপনাগুলোতে চিত্রকর্ম সাধন। প্রভৃতি। মায়াদের জোতির্বিদ্যা ও ক্যালেন্ডারগুলো এমনই নিখুত ছিল যে এই শতাব্দি পর্যন্ত সেগুলো এই বিশ্বের সবচেয়ে সঠিক বলে বিবেচিত হত। এগুলো সৌর ও চন্দ্র উভয়ই সময়ের ভবিষ্যৎ বাণীও করত।

মায়ন ক্যাণলন্ডারের দুইটি অংশ ছিল। সৌর ক্যলেন্ডারটির টি ছিল ৩৬৫ দিন বিশিষ্ট যাতে ১৮টি মাস ছিল এবং প্রতি মাসে ছিল ২০ দিন। সবশেষে ৫ দিন অতিরিক্ত যোগ করে নেয়া হতো। আরেকটি চান্দ্র দিনপঞ্জী ছিল যা শুক্রগ্রহের গতিবিধি অনুযায়ী তৈরি হয়েছিল। যেখানে ২৬০ দিন ছিল এবং এতে ২০ দিন বিশিষ্ট ১৩টি সপ্তাহ ছিল।

মায়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমাদের বর্তমান পৃথিবী ৩১১৪ খ্রীস্টপূর্বাব্দে তৈরী হয়েছিল এবং এর সমাপ্তি ঘটবে ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২ইং। মায়ারা শুক্র গ্রহের গতিবিধি দেখে সূর্যগ্রহন বা চন্দ্র গ্রহন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করত। তারা বিশ্বাস করত সূর্যের থেকেও শুক্রগ্রহ বেশি গুরুত্বপূর্ন। তারা এর গতিবিধি খুব সতর্কতার সাথে নজর রেখে দেখেছিল যে এটি ৫৮৪ দিনে আবর্তিত হয়। এবং দেখা যায় যে, মায়ারা তাদের কিছু যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিল এই শুক্রগ্রহের গতিবিধি পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে।

মায়াদের লিখন পদ্ধতি ছিল ৮০০টি ভিন্ন চিহ্ন বিশিষ্ট। যেগুলো জোড়ায় জোড়ায় কলাম আকারে একসাথে বাম থেকে ডানে ও উপর থেকে নিচে পড়া হতো। এবং এই লিখন প্দধতিগুলোর ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। মায়াদের হাইরোগ্লিফিক লিখন পদ্ধতি মায়াদের আবিস্কৃত সংখ্যা পদ্ধতি মায়াদের স্থাপনাগুলো ছিলো সত্যি অদ্ভুত। এগুলো মূলত ধাপ বিশিষ্ট হতো যা ছিলো ঠান্ডা, আবহবিকারমুক্ত, সামান্য পরিচর্যায় বহুবছর টিকে থাকার উপযোগী।

তারা নির্মান কাজে নরম চুনাপাথর ব্যবহার করত। যদি এটি না পাওয়া যেত তাহলে তারা গ্রানাইট, স্লেট, এমনকি নদীর পাথরও ব্যবহার করত। পাথর নির্মিত মন্দিরগুলোতে রাজা বা উচ্চপর্যায়ের রাজসভাসদদের সমাধি রাখা হতো। স্থাপনাগুলো একই সাথে বহুকাজে নির্মিত হয়েছিল। উপরের ছবিটি হলো কুকুলকান-এর মন্দির যার চারপাশে ৯১টি ধাপ বিশিষ্ট সিড়ি রয়েছে এবং উপরে একটি মন্দির রয়েছে।

সিড়ির মোট ধাপ ৩৬৪ ও ১টি মন্দির মিলে ৩৬৫ হয় যা এক বছরের মোট দিনসংখ্যাকে নির্দেশ করে। সিড়ির ধাপগুলো... আবার মন্দিরের ভিতর 'চাক মূল' নামের একটি মানব মূর্তি আছে যেটি মাথা উচু করে একদিকে তাকিয়ে আছে এবং পেটের উপর একটি ট্রে ধরে আছে। ''চাক মূল'' কিছু স্থাপনার ছবি দেখে নেয়া যাক... 'জাগুয়ার মন্দির' হাজার সৈন্যের মন্দির মায়াদের খেলার বিষয়টিও ছিল অদ্ভুত...তারা ''পক-এ-টক'' নামের একটি বল খেলা খেলত যাতে একটি শক্ত রাবারের বলকে হাত ও পায়ের ব্যবহার ছাড়া ভূমি থেকে ৩০ ফুট উপরে অবস্থিত একটি পাথরের রিং-এর মধ্য দিয়ে পাস করতে হত। তবে এটি অবাক করার মতো বিষয় যে, এটি কোন খেলা ছিল নাকি কোন শাস্তি ছিল!! মায়াদের বিখ্যাত শহর ''চিচেন ইৎজা''-তে এই বলকোর্ট অবস্থিত। বলকোর্ট সবকিছুর পরও তাদেরকে অসভ্য বলার কারন ব্যাখ্যায় এক কথায় বলা যেতে পারে তাদের নরবলি প্রথার কথা।

যারা নরবলি-র মতো কাজে জড়িত থাকে, তারা যতই উন্নত হোক না কেন তাদেরকে আর যাই হোক সভ্য বলা যেতে পারে না। সবকিছুর পরও মায়া সভ্যতার বিলুপ্তি কিভাবে হয়েছিল তা আজও রহস্যে ঢাকা পড়ে আছে। খাদ্যাভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বিদ্রোহ, দুর্যোগ, বহি:শত্রুর আক্রমন প্রভৃতি নানা রকম মত থাকলেও কেউ আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে বলতে পারে নি যে, ঠিক কি কারনে এত উন্নত হওয়া সত্বেও মায়া সভ্যতা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল এবং পৃথিবী বাসীর জন্য অবাক বিস্ময়ের নিদর্শন হয়ে রইল... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.