আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোহিঙ্গা হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের অতীত............

// // / / / / / / / / / / শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় তো বটেই, মৃত্যুর পর অনেকেই মুজিব বিরোধী ভূমিকাই পালন করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জাসদের হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। দু'জনেই এখন আওয়ামী মহাজোটের বিরাট নেতা হিসেবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ অলংকৃত করছেন। দু'জনের মধ্যে হাসানুল হক ইনু সম্পর্কে একটি পিলে কাঁপানো তথ্য প্রকাশ করেছে দৈনিক আমাদের সময়। এক রিপোর্টে দৈনিকটি জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর হাসানুল হক ইনু শাহবাগস্থ বেতার ভবনে গিয়ে অভ্যুত্থানের নায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রতি সর্বান্তকরণে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

তিনি অবশ্য একা যাননি, গিয়েছিলেন লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের সঙ্গে। তাহের তখন জাসদের গণবাহিনীর অধিনায়ক, আর ইনু ছিলেন গণবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার। দৈনিক আমাদের সময় লিখেছে, ইনুদের বেতার ভবনে যাওয়াটা কোনো আকস্মিক বিষয় ছিল না। শেখ হাসিনাকে খুশি করার কৌশল হিসেবে ইনুরা এখন যাদের ‘খুনি মেজর' বলছেন, তাদের সঙ্গে কর্নেল তাহের ও ইনুসহ জাসদ নেতাদের আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের আগে মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান লে. কর্নেল (অব.) তাহেরের সঙ্গে তার নারায়ণগঞ্জের অফিসে গিয়ে দেখা করেছিলেন।

কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেনও মেজর ফারুকের দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাপ্তাহিক সময়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (২য় বর্ষ, ২৭ সংখ্যা) তিনি বলেছেন, তাহেরের এক প্রশ্নের উত্তরে মেজর ফারুক বলেছিলেন, অনেকের কাছেই গিয়েছি। কিন্তু সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কেউই অবস্থার পরিবর্তনে উদ্যোগী হবেন না। এজন্যই অভ্যুত্থানকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে কর্নেল তাহেরের কাছে গিয়েছিলেন মেজর ফারুক। তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী তখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল পরিবর্তন করতে তৎপর ছিল।

এর পরের একটি বিশেষ ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা কর্নেল আবদুর রশিদের নির্দেশে টু ফিল্ড আর্টিলারির একজন জুনিয়র অফিসার নারায়ণগঞ্জে গিয়ে কর্নেল তাহেরকে শাহবাগস্থ বেতার ভবনে আসার অনুরোধ জানান। সে অনুযায়ী কর্নেল তাহের বেতার ভবনে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাসানুল হক ইনু। বেতার ভবনে তাহের ও ইনুর সঙ্গে অভ্যুত্থানের সকল নেতার দেখা ও কথা হয়।

বেতার ভবনেরই অন্য একটি কক্ষে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গেও দেখা করে আলোচনা করেছিলেন তাহের ও ইনু। জাসদ ও গণবাহিনীর পক্ষ থেকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তারা। বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করাসহ পাঁচটি রাজনৈতিক প্রস্তাবও পেশ করেছিলেন তাহের ও ইনু। এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোপন দলিলপত্রেও কিছু চমকপ্রদ তথ্য জানা গেছে। এরকম একটি তথ্য হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের নায়করা কর্নেল তাহেরকে বঙ্গভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তাহের তিন-চারদিন বঙ্গভবনে কাটিয়েছেন। পরে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি বঙ্গভবন থেকে চলে এসেছিলেন। এখানে মূল বিষয়টি লক্ষ্য করা দরকার। প্রথমে বেতার ভবনে যাওয়া ও শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডসহ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে সমর্থন জানানো এবং তারপর বঙ্গভবনে গিয়ে অভ্যুত্থানের নায়কদের সঙ্গে তিন-চারদিন বসবাস করার মতো তথ্যগুলো প্রমাণ করে, কর্নেল তাহের ও ইনুসহ জাসদের নেতারা শেখ মুজিবের পতনে উল্লসিত হয়েছিলেন। অভ্যুত্থানের প্রতিও তাদের সর্বান্তকরণে সমর্থন ছিল।

আর ইনু যেহেতু তাহেরের সঙ্গী ছিলেন সেহেতু ধরে নেয়া যায়, তিনিও অভ্যুত্থানের পক্ষেই ছিলেন। ৩ থেকে ৭ নবেম্বর পর্যন্ত শুধু নয়, এর পরের কয়েকদিন পর্যন্তও ইনু-তাহেরদের তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য। মার্কিন দলিলপত্রে জানানো হয়েছে, সিপাহী-জনতার বিপ্লব সফল হওয়ার পর তাহেরকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। ‘অধিকাংশ সময়' তিনি জিয়ার সঙ্গেই থেকেছেন। জিয়ার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বেতারে যে বার্তা পাঠ করা হয়েছিল, সেটাও তাহেরই লিখে দিয়েছিলেন।

সব মিলিয়েই প্রমাণিত হয়েছে, শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডসহ ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের প্রতি কর্নেল তাহের ও ইনুরা সমর্থন জানিয়েছিলেন। ৭ নবেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহেও তাহের ও ইনুরা যুক্ত ছিলেন। তাদের পেছনে ছিল জাসদ। ব্যক্তিগতভাবে যে ক'জন নেতা তাহেরের সঙ্গে থেকেছেন, ইনু ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সে ইনুই এখন ভোল পাল্টে মুজিবভক্ত সাজার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য ইনুর স্বরূপ উন্মোচিত করতে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে ইনু সম্পর্কে আরো অনেক তথ্যই জানা যাবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। আওয়ামী মহাজোটের আরেক বাম নেতা রাশেদ খান মেনন সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। পাকিস্তান আমল থেকেই মেনন আওয়ামী লীগ বিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী।

অওয়ামী লীগ বিরোধী হওয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে মেননকে ধাওয়া খেতে হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশেও মেনন শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী নেতা হিসেবে তৎপরতা চালিয়েছেন। তিনি ছিলেন ভাসানী ন্যাপের প্রচার সম্পাদক। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে তারা ন্যাপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইউনাইটেড পিপ্লস পার্টি (ইউপিপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী ও কাজী জাফর আহমদ এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাশেদ খান মেনন ছিলেন প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের প্রতি মেননদের মনোভাব সম্পর্কে জানার জন্য ওয়ার্কার্স পার্টির একটি বিবৃতির অংশবিশেষ উল্লেখ করা যেতে পারে। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট প্রচারিত এই বিবৃতিতে ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছিল, ‘গত ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গত সাড়ে তিন বছরের ঘৃণ্য ও গণধিকৃত মুজিবী রাজত্বের অবসান হয়েছে। লুট-দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ-অনাহার, চোরাচালান-পারমিটবাজি, স্বৈরাচার-পারিবারিক রাজত্ব কায়েম, জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও অবমাননায় বিক্ষুব্ধ জনগণ প্রতি মুহূর্তে মুজিবের পতন কামনা করেছে। ... বিশেষ করে বিগত নয় মাসের কালোদিনগুলোতে পরম ধৈর্য ও সাহসিকতা নিয়ে সংগঠিত হয়েছে মুজিবী শাসন ব্যবস্থাকে চিরতরে কবর দেয়ার জন্য।

' বিবৃতির পরের অংশে বলা হয়েছে, ‘মুজিবের অপসারণে জনগণ উল্লসিত। তার মৃত্যু কারো মনে সামান্যতম সমবেদনা বা দুঃখ জাগায়নি- জাগাতে পারে না। ইতিহাস নির্ধারিত ফ্যাসিস্ট একনায়কের পরিণতিই তাকে বরণ করতে হয়েছে। ... এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লড়াইয়ের ইতিহাস। শেখ মুজিব ও তার সহচররা জনগণের সেই লড়াইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

গণতন্ত্রকে হত্যা করে কায়েম করেছে স্বৈরাচার ও পারিবারিক শাসন। ... জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে সম্প্রসারণবাদী ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে অধীনতামূলক সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তির শৃংখলে আবদ্ধ হয়েছে। ... মুজিব তার সিংহাসন থেকে হুকুম করেছে নির্বিচারে জনগণ ও গণতান্ত্রিক কর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার, এমনকি সপরিবারে ধ্বংস করার জন্য। ...' রাশেদ খান মেননদের মধ্যে এতটাই চরম মনোভাব ছিল শেখ মুজিব ও তার সরকার সম্পর্কে। ওয়ার্কার্স পার্টির ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আগস্ট অভ্যুত্থান ‘মুজিবী শাসন, অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতার' বিরুদ্ধে ‘জাতীয় ঐক্যবোধ' সৃষ্টি করেছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রাশেদ খান মেনন ইউপিপির একজন প্রধান নেতা হিসেবে তৎপরতা চালিয়েছেন। ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী ও কাজী জাফর জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ায় এবং নিজে মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় মেনন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামে নতুন একটি দল গঠন করেছিলেন। ওয়ার্কার্স পার্টিও সর্বতোভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভূমিকা পালন করে এসেছে। সে মেননও ক্ষমতার লোভে আওয়ামী মহাজোটে যোগ দিয়েছেন। অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলেও এ ধরনের অসংখ্য তথ্য রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে না যে, অন্তত হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন আওয়ামী লীগের মিত্র হতে পারেন।

পর্যবেক্ষকরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মনি সিংহসহ সেকালের ‘মস্কোপন্থীদের' পরামর্শ অনুযায়ী চলতে গিয়েই শেখ মুজিবকে নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হতে হয়েছিল। সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে ইনু-মেননদের পাল্লায় পড়লে শেখ হাসিনার পক্ষেও অশুভ পরিণতি এড়ানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ............নেট থেকে পাওয়া..................... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.