আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতাসটা এখোনো পিছু টানে আমাকে

বাতাসটা আমাকে এর আগে কখনই ছেড়ে যায়নি, বারান্দায় দাড়ালেই ঘুড়ে ঘুড়ে এসে ঝাপ্টা দেয়, একই ভাবে যখন ক্লাসে বসে থাকি তখন, আবার বাথরুমে, এমন কি সিগারেটের ধোঁয়ার সাথেও। অনেক বাতাসের মধ্যে আমি ওকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করতে পারি- একটু ঠান্ডা, ভেজা ভেজা, বেশ জোরেই আসে- গলা আর বুকের মাঝামাঝিতে ঝাপ্টা দেয়, আর দিয়েই একটা হাসি। বাতাস হয়ে ওর সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে, কথা বলতে ইচ্ছা হয়। ওইদিন রাতে পুকুরে নেমেছিলাম বৃষ্টিতে, বার বার এসে ঝাপ্টা দিচ্ছিল, এতো বেশি বার যে, ভয়ে উঠে এসেছিলাম পুকুর থেকে। খুব মন খারাপ করেছে ও।

আসে না আর আমার আছে। আসে পাশেই থাকে হইত কিন্তু বুঝব কি ভাবে? শুধু চোখ দিয়ে তো ওকে অনুভব করতে পারি না। পুকুরে নামার কিছুদিন আগের ঘটনা- ঘরে চুপচাপ শুয়ে ছিলাম, বাইরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, তার গন্ধ, শব্দে ইন্দ্রিয় গুলো তৃপ্ত হচ্ছিলো। নিস্তেজ সময়। একটা বোকা চড়ুই পাখি ঘরে ঢুকলো কেউ নাই ভেবে।

ওভাবেই থাকলাম। খুব সুন্দর করে ঘুরে ঘুরে খাবার খুজে খেলো। এলোমেলো ভাবে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। ফ্যানগুলোর উপর গিয়ে বোসলো, ভাজ্ঞিস সেগুলা বন্ধ ছিল। বাতাসটা এসে ওকে ঝাপ্টা দিতেই, চলে গেল পাখিটা।

খুব রাগ হল ওর উপর... আমাকে না স্পর্শ করেই বুঝতে পারল আমি ভাল ভাবে নেই নি এটা। মাঝে মাঝে মৃদু ঝাপ্টা দিয়ে বোঝাতে চাইলো, সে অনুতপ্ত। এখন খুব আফসোস হচ্ছে, ওর সাথে ওমন না করলেও পারতাম... কত বাতাস আসে- হিম শীতল বাতাস,গরম বাতাস, ভেজা বাতাস, বাসি বাতাস, পাগলা বাতাস- কানে, নাকে, চোখে, মুখে ঝাপ্টা দিয়ে যায়। সবগুলোই অসহ্য মনে হয়। রাতে ঘুমানোর সময় চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছিলাম - বাতাস তুমি আসো, তোমার শুন্যতা আমাকে বেঁধে ফেলেছে- তোমার শুন্যতা আমি কখনও অনুভব করবো বলে ভাবি নি সত্যি কিন্তু এখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, বুকের মধ্যে কেমন ধুকধুক করছে- মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবো- তুমি যদি না আসো তাহলে কিন্তু আমি সত্যিই কেঁদে দিব।

আমি জানি তুমি আমার কথা শুনতে পেয়েছ, না হলে তুমি কেমন করে বুঝতা যে আমি বারান্দায় এসেছি। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম জানি না। রাত যত গভীর হতে থাকে, মস্তিস্ক তত দুর্বল হয় আর সাথে সাথে মনটা তার উপর তীব্রভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে- এক সময় মাথাটা শুধু মাত্র টাইপরাইটারের কাজ করে। এই রকম একটা উদ্ভট অবস্থায় আমি বরাবরই খুব অসস্তি অনুভব করতাম কিন্তু আজকের রাতটা তেমন অসস্তিকর মনে হচ্ছে না দুটি কারনে এক. দুঃখিত হবার মত যথেষ্ঠ উপাদান আছে আমার কাছে, দুই. সন্ধ্যাতেই সিগারেটের একটা বড় মজুদ করে রেখেছি। অসংখ্য ভালো রাতের মত আজও বিশটির মত সিগারেট শেষ করে ভোর হওয়ার সাথে সাথে আমিও ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলাম।

এর পরের রাতে ঘুমানোর সময় নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলাম- বাতাসটার জায়গায় আমি থাকলে কিন্তু এতোদিন না এসে পারতাম না। কিভাবে এই রকম করতে পারছে? আমি সত্যিই খুব হতবাক ছিলাম বাতাসটার ব্যবহারে। ভেতর থেকে একটা রাগি রাগি ভাব তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম- ওর দোষ গুলো খুজে খুজে বের করছিলাম- আসলে এগুলো শুধু প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ছিল, যা পরবর্তিতে চরমভাবে ব্যর্থতার মুখ দেখেছিল। টানা পাঁচদিন পরীক্ষা- রাতে ওর কথা ভাবার সময় পাইনি। পরীক্ষার পরেও ওর কথা আর ভাবি না এখন।

ওর চিন্তা না করাটাই এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যেমনটা হয়েছিল ওর আবেগী ঝাপ্টা খাওয়া টা। তবে আমি মনে করি না যে আমার সব অভ্যাসই অনাভ্যাসের কারণে ভুলে যাব। কারণ আজ চার বছর পরে সেই চড়ুই পাখিটাকে আমি সেই রকম ভাবে অনুভব করছি যেটা ওই দিনে করেছিলাম আর ইন্দ্রিয় গুলি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, তার গন্ধ, শব্দে যেমন তৃপ্ত হচ্ছিল ঠিক সেভাবেই হচ্ছে যদিও গত সাত দিনে কোন বৃষ্টি হয়নি আগামি সাত দিনেও কোন সম্ভাবনা নাই। প্রকৃত বিজয়ী সব সময়ই বলবে যে ম্যাচটা খুব টাফ ছিল কিন্তু আর সবাই বলবে দ্যাট ওয়াজ অ্যা ইজি উইনিং। উইনিং কখনও ইজি ছিল না।

সিনেমা দেখার সময় যেমন সবাই নিজেকে নায়ক মনে করে, আমার বেপারটাও ছিল সেরকম হল আর কি। ভিলেন জোর করে কিস করলে হয় নষ্টামি আর নায়ক করলে, প্রেম হয়। ভিলেন হওয়ার দুঃসাহস ছিল না আমার তাই নায়কই হলাম প্রকৃতির আপেক্ষিকতার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, এই ভেবে যে- বাতাসটা আমার যোগ্য ছিল না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।