আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্থির অবস্থা !!! আমার A লেভেল পড়ুয়া এক্স- ছাত্রী ফোন করেছে

রাত ৮ টা। অন্ধকার রুম। হাত পা ছড়িয়ে ঘুম দিচ্ছি। আমার A লেভেল পড়ুয়া এক্স- ছাত্রী ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ওপা্শ থেকে রাগত স্বরে বলল, ঃ হ্যালো ঃ হুম বল, শুনছি ঃ আপনার সমস্যা কি শুনতে পারি?? ঃ কি সমস্যা? আমার কোন সমস্যা নাই।

ঃ আপনাকে আমি সারাদিন কতবার কল দিয়েছি, বলতে পারবেন?? ঃ হুম, ১৭২ বার। ওয়ান হান্ড্রেড সেভেন্টি টু টাইমস। ঃ কিভাবে জানলেন আমি ১৭২ বার কল দিয়েছি। আমি ছাড়া অন্য কেউ কল দেয়নি?? ঃ না অন্য কেউ কল দেয়নি। যারা ফোন দিতে পারে তাদের সবার নাম্বার ব্লক দিছি।

ঃ তাহলে আমার নাম্বার ব্লক দেননি কেন?? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য?? ঃ না। তোমার টা ব্লক দিতে ভুলে গেছি। ঃ ব্লক দিতে যখন ভুলে গেছেন তখন ফোন রিসিভ করেন নি কেন?? ঃ ফোন সাইলেন্ট ছিল। দেখিনি। ঃ আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে, এইটা আপনি জানেন?? ঃ ভুল বললে!! ঃ কি ভুল বললাম?? আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনার মাথায় সমস্যা নেই?? ঃ আমি বলতে চাচ্ছি, শুধু মাথা না পুরো সিস্টেমে সমস্যা আছে।

ঃ ও মাই গড!! ঃ গড শুধু তোমার একার না। সো লাইন টি হবে, "ও আওয়ার গড"। ঃ আপনি যে একটা আস্ত শয়তান, এইটা জানেন?? ঃ এখন জানলাম। আগে জানতাম, শয়তান একজন। ইবলিশ।

ঃ সারাদিন কোথায় ছিলেন?? ঃ কোথাও না। হোস্টেলে। ঃ বাইরে কোথাও যান নি?? ঃ না। ঃ কি করছেন সারাদিন?? কিছু খাইছেন?? ঃ সারাদিন ঘুমায়ছি। দুপুরে সামনের হোটেল থেকে মার্বেল সাইজের ৪/৫ টুকরা মাংস দিয়া ভাত খাইছি।

ঃ সারা বছর চাঁদ তারা সূর্য দেখেন। আর অকেশন গুলু তে আপনি ঘুমিয়ে কাটান। ঈদের দিন হোস্টেলে থাকেন। বাসায় যান না। বাসায় গেলেও দরজা বন্ধ করে সারাদিন ঘুমান।

ঠিক মত পড়াশুনাও করেন না। আপনার মাথার সমস্যা কবে দূর হবে??? ঃ বললাম তো শুধু মাথায় না পুরো সিস্টেমে সমস্যা। দূর হতে সময় লাগবে। ঃ বুঝেছি। মা আপনাকে কি বলে জানেন??? ঃ কি বলে?? ঃ বলে, আপনি একটা পাগল।

আমারও তাই মনে হয়। শুধু মনে হয় না, আমি সিওর, আপনি একটা পাগল। ঃ ও ঃ আমি আপনাকে পাগল বললাম, আপনার কোন ফিলিংস নাই। আপনি কি মানুষ??? আমি উত্তরে কিছু না বলে চুপ থাকলাম। ।

ঃ শুনুন, আমরা সবাই পিৎজা হাটে যাচ্ছি। মা, আপনাকে আসতে বলেছে। ঃ আমি যেতে পারব না। আমার কাজ আছে!! ঃ সারাদিন ঘুমিয়ে কাটান। আবার এখন বলছেন কাজ আছে।

কি কাজ শুনি?? ঃ আমার পিৎজা খেতে ভাল লাগেনা। ওর চেয়ে লাল শাক দিয়ে ভাত খেতে ভাল লাগে। ঃ আপনাকে পিৎজা খেতে বলিনি। আসতে বলেছি আসবেন। এসে শুধু বসে থাকলে চলবে।

আর শুনুন, আপু ভাইয়া অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। উনারাও আমাদের সাথে যাবেন। কাজেই আপনার গলায় মাফলার/ গামচা, গায়ে চাদর ঝুলানো চলবেনা। দাঁড়ি থাকলে শেভ করে আসবেন। ঃ আমি কি পাত্র?? উনারা কি পাত্র খুজছেন?? ঃ এত কিছু বুঝিনা।

যা বললাম তাই করবেন। ঃ না গেলে হয় না। ঃ আপনাকে থার্টি মিনিট সময় দিলাম। যদি না আসেন, অনলি গড নোজ হোয়াট উইল হ্যাপেন!! আর কোন কথা না বলে সিমরান ফোন কেটে দিল। নরমালি সিমরান খুব শান্ত শিষ্ট একটা মেয়ে।

সহজে রেগে যায়না। কিন্তু একবার রেগে গেলে ওকে থামানো সাধ্য কার। আমি না গেলে সিমরান কি কি করতে পারে চিন্তা করলাম। পিৎজা হাটে আমাকে না দেখে ও বাসায় ফিরে যেতে পারে। তাতে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

আবার ওখানে স্বাভাবিক আচরণ করে বাসায় যেয়ে ওর রুমে ভাংচুর চালাতে পারে। । তারপর আমার কাছে অ্যান্টির ফোন!!! ওহ নো। হাতে আর ফিফটিন মিনিট সময় আছে। আমি পিৎজা হাটের দিকে দৌড় লাগালাম।

জাস্ট টাইমে পৌছালাম। যেয়ে সবার সাথে হাই হ্যালো করলাম। আঙ্কেল কে সালাম দিলাম। উনি ডিআইজি । লম্বা, চউড়া কাধ, মোচ আছে।

গুরুগম্ভীর থাকেন সবসময়। হয়তো পেশার কারণে। উনাকে দেখলে আমার নার্ভাসনেস বেড়ে যায়। সিমরান কে বললাম, ঃ আমি খুব নার্ভাস ফিল করছি। আমরা কি এক টেবিলে না বসে আলাদা টেবিলে বসতে পারি?? ঃ পাগলের আবার নার্ভাস হওয়ার কি আছে।

আপনার পাগলামি দেখান। ঃ রেগে যাচ্ছ কেন?? ঃ আমি রাগছি না। ......। এরপর সিমরান ওয়াশ রুমে গেল। আমি বসে থাকলাম।

ওয়াশ রুম থেকে ফিরে অ্যান্টি কে বলল, ঃ মা, আমরা কি আলাদা টেবিলে বসতে পারি। ঃ কেন, কোন সমস্যা?? ঃ না, তেমন কিছু না। একটু অন্য টেবিলে বসতে চাচ্ছি। ঃ আচ্ছা ওকে। অন্য টেবিলে বসার পর আমি বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে সিমরান কে বললাম, ঃ থ্যাংকূ ঃ কি বলতে চাচ্ছেন, বাংলায় বলুন।

ঃ বলতে চাচ্ছি, শুভ নববর্ষ। ঃ আমার সাথে ফাজলামু করছেন?? সারাদিন ফোন রিসিভ করেননি। এট লাস্ট, যদিও ফোন রিসিভ করছেন, তখন শুভ নববর্ষ জানান নি। আর এখন শুভ নববর্ষ!!! আপনার শুভ নববর্ষ আপনার কাছে রাখুন। ঃ আচ্ছা ঃ আপনি মানুষ না, আপনি একটা ভাঁড়।

শয়তান। মানুষ কে শুধু শুধু কষ্ট দিতে আপনার লজ্জা করেনা?? আমি চুপ ......... ঃ আপনি নিজেকে কি ভাবেন?? পাগল?? পাগল হওয়া এত সহজ না। । আপনি আসলে...............। রেগে যাচ্ছে সিমরান।

নাক ফুলাচ্ছে, চোখের কোণে পানি চলে এসেছে ওর। লাল শাড়ির সাথে স্লিভলেস লাল ব্লাউজে অভিমানী সিমরানকে এখন অপূর্ব সুন্দর লাগছে। কপালে একটা লাল টিপ আর দুহাত ভরে যদি লাল চুড়ি পরত তবে পহেলা বৈশাখের প্রতিচ্ছবি মনে হত ওকে। আমার কাছে পহেলা বৈশাখ মানে কেমন লাল লাল মনে হয়। কৃষ্ণচুড়ার মত লাল।

আমি ইচ্ছে করলে সিমরানকে আরও রাগিয়ে ওর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে পারি। "নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তার অজান্তে। সাজগোজে নয়। " সিমরান শুধু কোল্ড কফি ছাড়া কিছুই খেলনা। আমি কোল্ড ড্রিংকস।

খাওয়া শেষে আঙ্কেল অ্যান্টি অন্য গাড়িতে বাসায় চলে গেল। সিমরান, ভাইয়া আপু নেভাল যাবে। আমাকেও যেতে হবে। তাই ওদের সাথে পাজেরোতে উঠতে হল। ভাইয়া গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশে আপু।

আমি আর সিমরান পিছনে। কিছুদূর যাওয়ার পর আমি সিমরানের হাতের উপর হাত রাখলাম। বরফ ঠাণ্ডা হাত। সিমরান কিছু বলল না। আমি বললাম, ঃ সিমরান,আমি নেমে যাই............ সিমরান ভাবলেশহীন।

আমি আবার বললাম, ঃ সিমরান আমাকে নেমে যেতে হবে। সামনে নামিয়ে দাও। সিমরান টাইগার পাসের কাছে ভাইয়াকে গাড়ি থামাতে বলল। আমি নেমে পড়লাম। নামার সময় সিমরান অন্য দিকে তাকিয়ে আমার হাতে একটা বড়সড় প্যাকেট ধরিয়ে দিল।

রাগে অভিমানে সারা শরীর কাপছে ওর। হাতে শিশির বিন্দুর মত ঘাম। ইচ্ছে হল, হাত টা আরেকবার শক্ত করে ধরি। তারপর, হাত না ছুয়ে প্যাকেট নিলাম। ভাবলাম, আরও অভিমান করুক।

প্রিয় মানুষের উপর অভিমান সবসময় সেই মানুষটির প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। আমার জন্য যদি ওর ভালোবাসা বাড়ে তবে ক্ষতি কি??? প্যাকেটে কি আছে জিজ্ঞেস না করে আমি হাটা ধরলাম। রাতের টাইগার পাস অনেক সুন্দর। আমি বড়সড় প্যাকেট হাতে ল্যাম্প পোস্টের আলো দুপাশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে পথ চলছি । p:s. রাত ১১:১৫/ জি ই সি।

পহেলা বৈশাখ শেষ হতে এখনও ৪৫ মিনিট বাকি। সেন্ট্রাল প্লাজার পশ্চিম গলির মুখে আমরা ছয় গুন্ডা গোল হয়ে বসছি। আমি বাদে বাকিদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্য, রাস্তার টোকাই। ২জন জেগে ছিল। বাকি ৩জনকে আমি ঘুম থেকে তুলছি।

ঘুমন্ত ২জনের মাথায় শুভ নববর্ষ লেখা ব্যানার ছিল, পেটে ক্ষুধা। আমি প্যাকেট খুললাম। বেশ বড় সাইজের পাঁচ টুকরা ইলিশ মাছ ভাজি, ২টা ইলিশ মাছের ডিম, সাথে বেগুন ভাজি, কাচা মরিচ আর পান্তা ভাত। যদিও পান্তা ভাতের পরিমান ছয় জনের জন্য অনেক কম হয়ে যায়, তারপরও ২/১ মুঠো করে সবার হয়ে যাবে। সবার সামনে পলিথিন বিছানো।

পলিথিনের উপর খাবার বেড়ে দিলাম। আমি বাদে সবার পাতে ইলিশ মাছ ভাজি। আমার পাতে একটা ইলিশ মাছের ডিম (আমার প্রিয় খাবার), বাকি টা ওদের ৫জনের মধ্য ভাগ করে দিয়েছি। ৫জনের চোখে মুখে আনন্দ। ক্যান্ডির পাশের দোকান টা খুলা ছিল।

দূর থেকে আমাদের খাওয়া দেখে দোকানদার ৬টা সেভেন আপের কাচের বোতল দিয়ে গেল। আমি দাম দিতে চাইলাম। উনি নিলেন না। তখন মনে হল, আহারে আজ যদি প্রতিটি বয়ফ্রেন্ড তার গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য একশ টা কম খরচ করে অথবা প্রতিটি সুন্দরী মেয়ে যদি বিউটি পার্লারে ২হাজার টাকার জায়গায় আইব্রো না কেটে ১৮৫০ টাকা খরচ করে বাকি ১৫০ টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে একটা পথশিশুকে খাওয়াত, তবে আজ রাতে এই শহরের একটা পথশিশুকেও ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে ঘুমাতে যেতে হত না................................. by-@কানাই কৃষ্ণ/Kanai Krisno……. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।