আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস।

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী আজ ২৩ জুন। ঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডির ২৫৫তম বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর প্রান্তরে রবার্ট কাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ চক্র একটি কালো দিবসের জন্ম দেয়। সেই ঘৃণিত কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টির নেপথ্যে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রায়দুর্লভ, মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, নন্দকুমার চক্রের ষড়যন্ত্র। এই স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্রীদের প্রথম শিকার হন স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী, মুক্তিসংগ্রামের প্রথম সিপাহসালার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তার বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মদন ও প্রধান অমাত্য মোহনলাল কাশ্মিরি।

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। মুর্শিদাবাদ থেকে ৩০ মাইল দেিণ ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাসহ সমগ্র উপমহাদেশের স্বাধীনতার কবর রচিত হয়েছিল। ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও লর্ড কাইভের মধ্যে যুদ্ধের নাটক সাজানো হয়। যুদ্ধে নবাব বাহিনীর পে সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পে মাত্র তিন হাজার। যুদ্ধের ময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার অনুসারী সৈন্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

ফলে পরাজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের সেবাদাসদের সাহায্যে এভাবেই বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সম হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এরপর দীর্ঘ ১৯০ বছর এ দেশ শাসন শোষণ করে। কোটি কোটি টাকার অর্থসম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে। বাংলাদেশ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ ও পুঁজির সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটায়।

আর এক কালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা শ্মশান হয়ে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে পরিণত হয়। পলাশীর ইতিহাস রক্তাক্ত ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, বেদনাময় এক শোকস্মৃতির ইতিহাস। এই কলঙ্কজনক ঘটনার মাধ্যমে এক দিকে যেমন মুসলিম সালতানাতের মৃত্যু ঘটে, অন্য দিকে কলকাতাকেন্দ্রিক একটি নতুন উঠতি পুঁজিপতি শ্রেণী ও রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে। মুসলমানদের কাছ থেকে রাজনৈতিক মতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ ও তাদের এ দেশীয় দালালগোষ্ঠী দেশবাসীর ওপর একের পর এক জুলুম নিপীড়ন চালাতে থাকে। ফলে দেশীয় কৃষ্টি কালচার ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে।

বিকাশমান ব্যবসায়বাণিজ্য ও চাকরিবাকরির েেত্র তারা মরণকামড় দেয়। তবে পলাশী বিপর্যয়ের পর শোষিত বঞ্চিত শ্রেণী এক দিনের জন্যও তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ রাখেনি। এ জন্যই ব্রিটিশ কর্তৃপ সাধারণ জনগণকেই একমাত্র প্রতিপ মনে করত। দীর্ঘ দুই শ’ বছর ধরে তাদের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ব্রিটিশরা লেজ গুটাতে বাধ্য হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মলাভ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে কিন্তু থেমে নেই সেই ষড়যন্ত্র। এখনো ভিন্ন নামে মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠরা দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায্যপ্রাপ্তি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সময় এখন এসব মীর জাফরদের চিনে রাখার। প্রতিরোধ করার। পলাশীর আম্রকাননে যে সূর্য অস্ত গেছে সে সূর্য ফিরেছে আবার।

কিন্তু গুনতে হয়েছে দু’শটি বছর। এ রকম কোনো দুর্দিন আর না আসুক আমাদের জীবনে। পলাশী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতীয় প্রেস কাব।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।