আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ও গনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র

সেই স্কুল থেকে শুরু,এরপরে কলেজ আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরেও যেকোনো অনুষ্ঠানে বক্তারা আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,"তোমরা জাতির ভবিষ্যৎ,তোমরাই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে,ইত্যাদি ইত্যাদি। "তাঁরা এই কথা দিয়ে যে শুধু মন্ত্রী-এমপি হওয়া বঝান,তা নয়। তারা বঝান,সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু ছোটবেলায় এই ফ্যান্টাসিতে ছিলাম,যে একদিন প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট হব। আমার বিশ্বাস অনেকেই ছোটবেলায় এমন চিন্তা ভাবনা করত।

কিন্তু বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে শীর্ষপদে আরোহণ বেশীরভাগ সময় যেভাবে হয়,সেটা বিশ্লেষণ করলে একটা কথাই মাথায় আসে,"NO WAY"। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু,রাজশাহীর রাকসু ইত্যাদি দেশকে উপহার দিয়েছে প্রতিভাবান,নিষ্ঠাবান নেতা-নেত্রী। আজকের মাঠ কাপান সুরঞ্জিত,মতিয়া,মেনন,ইনু আরও অনেকেই এইসব ছাত্র-সংগঠন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে হাত পাকিয়েছেন। এমনকি,আমাদের বঙ্গুবন্ধুর আবির্ভাব ছাত্র-রাজনীতির হাত ধরেই। কিন্তু এখনকার অবস্থা কেমন??সেই এরশাদ এর আমলে শেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল,এরপর থেকে তা স্থগিত রয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশ থেকে শুরু করে ছাত্রদের আন্দোলন,কিছুতেই কিছু হয়নি। তাই বলে কি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়েছে???অবসশই না,কিন্তু এখন যা চলছে,তাকে রাজনীতি বললে রাজনীতির সংজ্ঞা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের দেশে এখন রাজনীতি করেন গুটিকয় রাজনীতিক আর কিছু আমলা এবং ব্যবসায়ী। বাকিরা যা করেন তা হচ্ছে মোসাহেবি। সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী,একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রত্যেক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এবং সেখানে নেতৃত্বের পদগুলোর উপর নির্বাচন হওয়ার কথা।

কিন্তু আদৌ কি তা হয়???আর হলেও,সেখানে কি হয়???আমার মনে হয় তা সব নিয়মিত পত্রিকা পাঠকরাই জানেন,তাই আর বলছি না। আমার শিরোনাম ছিল "গনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র" নিয়ে। এখন আমি এই ব্যাপারটার উপর একটু আলোকপাত করতে চাই। আমাদের দেশের রাজনীতি এখন দুইটি পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। গনতান্ত্রিক দেশে এমন হওয়া কি স্বাভাবিক???একটু পিছনে যাই,দেখে আসি এমন কিভাবে হল।

অতীতকে বিশ্লেষণ করেই ভবিষ্যতের আভাস পাওয়া যায়। তাই,কোন ভাবেই অতীতকে ভুলে যাওয়া যাবে না। প্রধান দল আওয়ামী লীগের জন্ম স্বাধীনতার পূর্বে,তারাই নেতৃত্ব দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। স্বাধীনতার পরে ক্ষমতায়ও ছিল তাদেরই অধিষ্ঠান। ৭৫এর কালরাত্রীর পর,দেশের রাজনীতিতে আসে আমূল পরিবর্তন।

কিছুদিনের মধ্যেই জেলে থাকা ৪ নেতার মৃত্যু,আওয়ামী লীগকে ঠেলে দেয় অন্ধকারে। এরপরে অন্তঃকলহ,অবিশ্বাস আর ক্ষমতাসীনদের আওয়ামী লীগকে ভাঙার প্রচেষ্টায় দলটি চরম সঙ্কটে পড়ে। দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী জেনারেল(অবঃ) ওসমানী এবং কামাল হোসেন এর ভরাডুবি ঘটে। দলের এই চরম সঙ্কটের মুহূর্তে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে দলের প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা,সাবেক ইডেন কলেজের ছাত্রী-নেত্রী,শেখ হাসিনাকে নির্বাচন করা হয়। এরপরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা।

তেমনি ভাবে আরেক প্রধান দল বিএনপি'র জন্ম দেশের আরেকটি সঙ্কটের মুহূর্তে। জিয়াউর রহমানের ওইসময়ের ক্ষমতাদখল এবং বিএনপি'র প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে,তাই টা নিয়ে আর কিছু বলতে চাইনা। ৮১তে একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে এই দল চরম সঙ্কটে পড়ে। এরশাদ সরকার এই দলকে ছিন্ন-ভিন্ন করেন। আজকের উচ্চকণ্ঠ নেতা মওদুদ আহমেদ ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

জিয়াউর রাহমান ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে এনেছিলেন,এরশাদ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। বিএনপি'র এই দুর্দশায় গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে দলের প্রধান নির্বাচিত করা হয়। দেখা যাচ্ছে,দুই দলের সঙ্কটের মুহূর্তেই এই দুই নেত্রীর আবির্ভাব। দুইজনই দেরীতে হলেও পোড় খেয়েছেন। দেশের রাজনীতি ও উন্নয়নে দুইজনের অবদানই অনস্বীকার্য।

কিন্তু তাঁরা অমর নন। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে,সেটাই আমার কাছে কৌতূহলের বিষয়। খালেদা জিয়ার মাথায় এই চিন্তা আগেই এসেছিল। তাই তিনি বড়ছেলে তারেককে এনেছিলেন রাজনীতিতে। তিনি কেমন টা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।

শুধু বলতে চাই,দলের প্রাথমিক সদস্য না হয়ে,তিনি প্রথমে দলের যুগ্ম মহাসচিব,পরে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। যা দিয়ে সবাই একটা পরিস্কার বার্তা পায়,জে ভবিষ্যতে কে নেত্রিত্বে আসছে। শেখ হাসিনা সরাসরি এমন পদক্ষেপ নেননি। কিন্তু এখন থেকেই বিভিন্ন ব্যানারে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবির সাথে তাঁর ছেলে জয়ের ছবি। জয় দেশে এসে কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেও দ্বিধা করেননি।

যতদূর মনে পড়ে রংপুরে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই অবশ্য তিনি পরিবারের আরেক সদস্য ফজলে নূর তাপসকে এনেছেন রাজনীতিতে। যিনি ৭৫এর সেই মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবার হারিয়েছিলেন। তাহলে বিষয়টা এমন দাঁড়াচ্ছে যে,দেশের যত শিশুর মনেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ জন্মাক না কেন,রাজনীতিতে এলে তাকে মোসাহেবি করে খুব বেশি হলে মন্ত্রী পদ নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হবে। কারন,তাঁর জন্ম এই দুই রাজপরিবারের একটিতেও নয়।

তবে কি আসলেই আমাদের দেশে গনতন্ত্র চালু আছে???নাকি আছে প্রচ্ছন্ন রাজতন্ত্র। (to be continued) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.