আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ষড়যন্ত্র নয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দগ্ধ বিএনপি...

না, বিএনপির ভেতর নিজেরাই ভাঙনের সুর তুলছে। অন্তত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকায় তাই বলছে। দলের ভেতর থেকে বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দলটির নেতারা। বলা হচ্ছে, সরকারের বৈরি আচরণ থেকে নিজেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা অনেক সুবিধাভোগী নেতা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে মূল নেতৃত্বের বিরোধী হয়ে ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিত এবং বিশেষ সময়ের অপেক্ষায় থাকা নেতারাও জড়িত বলে অনেকে অভিযোগ করছেন।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সরকারকে দেওয়া বিএনপি জোটের ৯০ দিনের আল্টিমেটাম শেষে গত ১২ জুনের আলোচিত গণসমাবেশে স্বয়ং খালেদা জিয়া দল ভাঙার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি নামও উল্লেখ করে বলেন, যারা দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে, তারা কোনোদিনই সফল হবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা চলে গেলে কর্মীরা নেতা হবে, সমর্থকরা কর্মী হবে। বিএনপি বিএনপিই থাকবে। বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রের কথা প্রথম প্রকাশ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলাম।

তিনি ১২ জুনের গণসমাবেশের আগে যশোরে বিএনপির বিশেষ প্রতিনিধি সভায় সদ্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নাম উল্লেখসহ কয়েক নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘নাজমুল হুদাসহ বিএনপির মধ্যে কিছু সুবিধাবাদী নেতা রয়েছেন, যারা দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন। শুধু হুদাই নন, দলের মধ্যে আরও কয়েকজন আছেন, যারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু, তাদের ষড়যন্ত্র কোনোদিনই সফল হবে না। কারণ, জনগণের কাছে এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

এরা একদিন আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। ওই সময় তরিকুল ইসলাম হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আটক হয়ে কারাগারে গেলে তার অবর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখভাল করছিলেন। তরিকুল বিএনপির রাজনীতিতে কট্টর জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত। জানা গেছে, তরিকুল ইসলামের মতো বর্ষিয়ান নেতার বিএনপি ভাঙার এ অভিযোগ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিশ্বাস করেন। তৃণমূল নেতারা ক্ষোভের সঙ্গে এজন্য বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সুযোগে যারা বিএনপি ও বিএনপির হাইকমাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও বর্তমানে দলে পূনর্বাসিত হয়েছেন তাদেরকে দায়ী করার পাশাপাশি হাইকমান্ডও এজন্য দায়ী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তাদের অভিযোগ, ওয়ান-ইলেভেনের সেনাশাসিত সরকারের ছত্রছায়ায় সংস্কারের ধোঁয়া তুলে যেসব নেতা সরাসরি দল ও দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া, ভবিষৎ নেতৃত্ব তারেক রহমান সর্বোপরি জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের কোনো শাস্তি তো হয়নি বরং অনেককে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে ‘সংস্কারপন্থী’ অনেক নেতাকে আগের চেয়ে বড় পদে পুরস্কৃত করা হয়েছে। যতদিন গেছে এসব নেতা বিএনপিকে তাদের কুক্ষিগত করেছেন। এখন আবারও বিশেষ সময়ের সুযোগে তারা বিএনপিকে সঠিক প্রতিদান দেবে, এটাই তো প্রকৃতির বিচার। একই অভিযোগ করেন, সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি একই মামলায় কারামুক্ত অন্য নেতাদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে। তবে, ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারবে না। দল ও জোট আরও শক্তিশালী হবে। দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দীর্ঘকাল আগে থেকেই তার নানা রকম বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে দলের ভেতর ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন। ব্যারিস্টার হুদা দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

পরবর্তীতে তার বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি একাধিকবার দল থেকে বহিস্কারও হয়েছেন। আবার দলে ফিরেও এসেছেন। সম্প্রতি নাজমুল হুদা গত ২৪ মে তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিজ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন ঘোষণা করেন, আগামী ৫ জুনের মধ্যে তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পরবর্তী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার জন্য যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান না জানান, তাহলে তিনি ৬ জুন নিজ দল বিএনপি থেকে পদত্যাগ করবেন। ব্যারিস্টার হুদার এই ঘোষণাকে বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী হুদার এই ঘোষণার পেছনে নির্দিষ্ট কার্যকারণ রয়েছে বলে ধারণা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ও এই অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত কয়েক নেতা বর্তমানে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ইতিমধ্যে কয়েক নেতা নিয়মিত বৈঠকও করেছেন। বিএনপিতে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘যে পরিস্থিতি ও কারণে আমরা দলে সংস্কার চেয়েছিলাম, দীর্ঘদিন পার হলেও বিএনপিতে একই পরিস্থিতি ও কারণ এখনও বিদ্যমান। আমরা বিএনপিতে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা চর্চার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেতৃত্ব সৃষ্টির পক্ষে ছিলাম।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তবে, একদিন না একদিন প্রমাণ হবে আমরা সঠিক ছিলাম। জেনে রাখা ভালো, আমাদের সঙ্গে বিএনপির অনেক নেতার এখনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এক জিজ্ঞাসার জবাবে এই নেতা বলেন, নাজমুল হুদার সঙ্গে ফর্মালি কোনো বৈঠক আমাদের হয়নি। তবে যোগাযোগ তো আছেই।

আর মনে রাখতে হবে, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোনো কথা নেই। ’ জানা গেছে, ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠা দেশের রাজনীতি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব কমানোর জন্য দেশি-বিদেশি প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক সংলাপের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ব্রিটেনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্টসহ বিদেশি কূটনীতিক, দাতা সংস্থা ও দেশের সুশীল সমাজও সংলাপের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের অগ্রাহ্যে রাজনীতির পরিমণ্ডলকে দিন দিন করে তুলছে উত্তপ্ত। একই সঙ্গে বিএনপির একটি অংশের জামায়াত বিরোধীতায় দলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, দলে সংস্কারপন্থী অংশের প্রভাব বেড়ে যাওয়া বিএনপি রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে বলে রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা।

বিএনপির অনেক নেতাই এই মেরুকরণের সঙ্গে গোপনে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে। যাদের ওপর থাকবে এদেশের সুশীল সমাজ ও বিদেশি শক্তির প্রচ্ছন্ন সমর্থন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিএনপি ঘরানার নতুন রাজনৈতিক দল গঠন রাজনীতিতে অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ। উদ্দেশ্য, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সরকার যাতে দেখাতে পারে বিএনপির বিপুল অংশ নির্বাচনে আছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দলের পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বা সাহচর্য পেয়ে যেসব লোক তার নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, বর্তমানে দলে আগের মত দাপট না দেখাতে পেরেও তারা নানা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

এদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে, যেকোনোভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ বিশ্বস্ত নেতাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা। নিজেদের স্বার্থ হাছিলে তারা নেপথ্যে থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছে, যা দলের বিরুদ্ধে যায়। জানা যায়, বিএনপির সাবেকমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও গত কয়েক মাস যাবত জাতীয়তাবাদী ঘরানার লোকদের নিয়ে আলাদা একটি ফ্রন্ট করতে যাচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের থেকে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার হুদা তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে দিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন করেছেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে জিয়াউর রহমান বিএনএফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সূত্র জানায়, নাজমূল হুদা তার ঘোষিত ৫ জুনের আল্টিমেটাম শেষে ৬ জুন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে পুরোদমে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি নেতাকে যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম তা তিনি না মানায় আমি পদত্যাগ করেছি। ’ নতুন দল করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা নামে একটি সংস্থা আছে। আমি ইচ্ছে করলে এ সংস্থার মাধ্যমে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করার আগে বিএনএফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সব পথের নেতাকর্মীদের একটি প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য।

বিএনপিতে যারা টিকতে পারেননি, সেসব অভিমানি, বঞ্চিত ও কোনঠাসা নেতাকর্মীদের আমি একত্রিত করব। বিএনপিকে আমি জিয়ার দলে ফিরিয়ে আনব। এছাড়া একটি ফ্রন্ট করেছি তরুণদেরকে একত্রিত করার জন্য। তবে সেটা রাজনৈতিক ফ্রন্ট হবে কি না এ বিষয়ে বলেন, সময়ই বলে দিবে কখন কি করব। ’ জানা গেছে, ব্যারিস্টার হুদার এ ফ্রন্টে বিএনপির সংস্কারপন্থী সাবেক এক সেনাকর্মকর্তা ও খুলনা অঞ্চলের সাবেক এক হুইপসহ প্রায় ২৫ জন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন জানা গেছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও দৈনিক আমাদের সময়  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.