আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্বালানী ঘাটতিতে বৈদিশিক বিনিয়োগ

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... জ্বালানী ঘাটতিতে বৈদিশিক বিনিয়োগ হাসান কামরুল বাংলাদেশের বিদ্যুত ও জ্বালানীখাতে বিনিয়োগে জাপান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে তাদের এ আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেবিআইসি‘র আন্তর্জাতিক চ্যাপ্টারের প্রধান ফুমিতাকা মাকিদা। বিনিয়োগের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তাদের বাংলাদেশ সফরের মুল উদ্দেশ্য ছিল। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বিনিয়োগের উপযোগীতা নিয়ে আলাপ আলোচনায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।

বিনিয়োগের খাতওয়ারি জায়গাগুলো নিয়েই প্রতিনিধিদলের আগ্রহ ছিল চোখ পড়ার মতো। জাপান বাংলাদেশে হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং পার্ক গড়ে তুলতে চায়। এ জন্য তাদের জমি প্রয়োজন। সাইট প্রাকসম্ভবতা যাচাইয়ে প্রতিনিধি দল চট্রগ্রামের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখেছেন। সবকিছুর আগে বিদ্যুতের প্রয়োজন।

প্রয়োজন গ্যাস সরবরাহের। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুতের যে নাকাল অব¯হা তাতে নতুন করে বৃহদাকৃতির শিল্পাঞ্চলের জন্য গ্যাস সাপ্লাই দিতে পারবে কিনা তা সন্দেহাতীত নয়। এ নিয়ে প্রতিনিধিদলের ভিতরও অস্বস্তি বা দ্বিদ্ধা দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ছিল। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে জাপানের প্রথম পছন্দ। সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিও জাপানের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে গিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন নিসংকোচে।

প্রতিনিধিদল গভীর মনোযোগ দিয়ে তাদের ভিজিট সময়কে বিচারিক মানদন্ডে যাচাই বাছাই করেছে। জ্বালানীখাতে জাপানের বিনিয়োগ নিয়ে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং এ সেক্টরে কিভাবে বিনিয়োগ করে যায় তা খুজে দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি‘র সমন্বয়ে উপযোগীতা যাচাই বাছাই করবে জাপান । সেক্ষেত্রে গ্যাসভিত্তিক শিল্পখাতে সরকারকে ছাড় দিতে হবে। তাদের শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুতায়নের জন্য কয়লাভিত্তিক বা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারকে জটিলতা কমিয়ে আনার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পকারখানার পাশ্ববর্তী অঞ্চলেও যাতে তাদের উৎপাদিত বিদ্যুত জনকল্যাণে ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারেও জাপানের প্রতিনিধি দলের মনোভাব পজিটিভ ছিল।

এবং জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য তাদের উৎপাদিত বিদ্যুত উম্মুক্ত করা হবে বলেও প্রতিনিধি দল সংবাদ সম্মেলনে আশস্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রচলিত সার কারখানাগুলোকে সংস্কারে জাপানের সাহায্য চাওয়া হয়। শিল্প ¯হাপনে জাপানের আগ্রহকে ইতিবাচক বলেই দেখছে বর্তমান সরকার। জ্বালানী খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে ৪০০ মিলিয়ন ইউএসডি বিনিয়োগের প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে । প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো ৩০০ মিলিয়ন ইউএসডি বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে জাপানী প্রতিনিধ দল।

বিদ্যুতায়নে ও গ্যাস সঞ্চালনে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ নিয়ে জাপান খুবই শীঘ্রই একটা এমওইউ (মিউচিয়াল আন্ডারস্টেডিং) বা পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে। শিল্প মন্ত্রনালয়ের উদ্ধর্তন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের সময় রাষ্টায়াত্ত সার কারখানা আধুনিকায়ন, জাপানি হাইটেক শিল্পকারখানা বাংলাদেশে ¯হানান্তর, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক জ্বালানী ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিনিয়োগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। প্রতিনিধি দলের প্রধান ফুমিতাকা মাকিদা বলেন‘ বাংলাদেশের শিল্পখাতের উন্নয়নে জেবিআইসি প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহযোগীতা দিতে প্রস্তুত। জ¦ালানীখাতের পাশাপাশি এসএমই খাতে, ব্যাংক ও আর্থিক নীতিমালা সংস্কার, মাইক্রো-ইকোনমিক পলিসি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী জাপান। শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন ও অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি বলেও মত দেয় প্রতিনিধি দল।

কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের এক মুল্যায়ন রিপোর্টে বলা হয়েছে জ¦ালানী ঘাটতির কারনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি এক আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি বলেছেন ‘ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে জ্বালানী ঘাটতি হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এ চিত্র বিশ্বব্যাপী প্রতীয়মান বলেও তিনি মত দেন। বিশ্বব্যাংক বলছে‘ গেল বছর বাংলাদেশে বৈদিশিক বিনিয়োগ ছিল ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা কমে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দাড়িয়েছে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ পরিস্হিতি পর্যবেক্ষন করছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর এলেন গোল্ডস্টেইন বলেন, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, জ্বালানী ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরাম এদেশে বিনিয়োগে মনোযোগ হারাচ্ছে। খুব শীঘ্রই যদি এ অবস্হা কাটিয়ে উঠা না যায় তাহলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সত্যিই মুখ থুবড়ে পড়বে। চিহ্নিত এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে গভীর মনোযোগ দেয়ার পরামর্শও দেয় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি। দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভীতি কাটিয়ে উঠাই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ।

এ কথাও অনস্বীকার্য। সরকারও এ সংকট থেকে পরিত্রানের জন্য অধিক মনোযোগী । কারন দেশিয় উন্নয়নে বিদ্যুত একমাত্র অন্তরায়। বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততার কারনে একাধিক বড় বড় প্রজেক্ট আটকে আছে মন্ত্রনালয়ে। অনেক ক্যাপিটালিস্ট টাকা নিয়ে বসে আছে কিন্তু বিদ্যুত নেই তাই টাকা ইন্ডাস্ট্রি গঠনে ব্যয় হচ্ছেনা।

হাউজিং ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাট নির্মান শেষ করেও বিক্রি করতে পারছেনা কারন বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশিয় বিনিয়োগের পরিধি খুব একটা বিস্তৃত হয়নি গেল কয় বছরে। গড়ে উঠেনি বড়ো মাপের কোন শিল্প কারখানা। বরং অনেক কলকারখানা বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্হায় জ্বালানী ও বিদ্যুতের শর্টেজ দেশের অভ্যন্তরীন খাতগুলোকে অস্হির করে তুলছে।

সবমিলিয়ে বিনিয়োগের স্কেল যেহারে উঠানামা করছে তাতে হয়তো সামনের বছরে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে। যা সমগ্র অর্থনীতিতে একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে বলেই প্রতীয়মান। হাসান কামরুল: লেখক ও ভূতত্ত্ববিদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.