আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঠের গুঁড়া থেকে জ্বালানী তেল !!!

বায়োফুয়েল : জ্বালানি খাতে নতুন সম্ভাবনা বায়োফুয়েল বা জৈব জ্বালানি এমন এক জ্বালানি যার শক্তি জৈবিক কার্বন স্থায়ীকরন থেকে উদ্ভূত । দিনে দিনে জৈববস্তু রুপান্তরের মাধ্যমে উদ্ভূত এই জ্বালানির দিকে সাধারন মানুষ ও বিজ্ঞানিদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে । ক্রমাগত তেলের মুল্যবৃদ্ধি , জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ও গ্রীনহাউস গ্যাস যা খনিজ তেল থেকে নির্গত হয় তা সম্পর্কে উদ্বেগ এই মনোযোগ বৃদ্ধির কারন । তাত্বিকভাবে জৈব জ্বালানি যেকোন জৈবিক কার্বন উৎস হতে তৈরী করা যায়। তবে এখনও পর্যন্ত মূলত গাছপালা বা এ থেকে উদ্ভূত পদার্থ থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদন করা হয় আর এর উৎপাদনের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হল পাইরোলাইসিস ।

পাইরোলাইসিস একটি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া , যা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় কঠিন জৈববস্তুকে তরলে পরিনত করে । অনেকক্ষেত্রে পাইরোলাইসিস বর্জ্য নিষ্কাশনের সহজ উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং যার মাধ্যমে জৈব জ্বালানি শক্তি পাওয়া যায় । আমাদের চারপাশে ফেলে দেয়া বর্জ্য থেকে খুব সহজেই জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব । আহছানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্ররা ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে সর্বোচ্চ পরিমানের জ্বালানীযোগ্য তেল ও গ্যাস উৎপাদন করার চেষ্টা করছে । যেখানে ফেলে দেয়া কাঠের গুঁড়া বা কুঁচি বর্জ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

পরীক্ষাগারে বায়ুশূন্য চুল্লীতে ২৭০º -৩০০º সে. তাপমাত্রায় বর্জ্য উপাদান যেমন কাঠের গুঁড়া বা কুচিকে অবিরত তাপ প্রদান করলে জৈব তেল এবং জৈব গ্যাস উৎপন্ন হয়। এজন্য চুল্লীতে ক্রমাগত ১৫º সে./মিনিট হারে তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয় । স্থানীয়ভাবে তৈরী করা স্টীলের বায়ুশূন্য চুল্লীটি লম্বায় ১২” ও চওড়ায় ৯” । চুল্লীটির সাথে কনডেনসার বা শীতলীকারক ব্যবহার করলে জৈব তেলের তুলনায় বেশি পরিমানে জৈব গ্যাস পাওয়া যায় । যদি চুল্লিতে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি করা যায় তবে প্রাপ্ত তরলের পরিমান আরও বৃদ্ধি পাবে ।

আমরা প্রাপ্ত জৈব তেলকে পাতন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাস্পশূ্ন্য করে ২য় স্তরের তেল পাই যা যেকোন যান্ত্রিক যান বা যন্ত্রকে চালু রাখতে সক্ষম । পাশাপাশি প্রাপ্ত জৈব গ্যাসকে সরাসরি জ্বালানী গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যদিও ধীরগতির এই প্রক্রিয়ায় ৬০০º সে. এর বেশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না এবং এটি একটি উচ্চ বিনিয়োগের পদ্ধতি । তবুও তুলনামূলক সহজ এই পদ্ধতিতে ভালমানের জৈব জ্বালানী পাওয়া সম্ভব যা প্রকৃতিবান্ধব । বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশাল পরিমানের জৈববস্তু বর্জ্যে পরিনত হয়।

এর কারন শুধুমাত্র সাধারন মানুষের অসচেতনটা এবং এই জৈববস্তুর সঠিক ব্যবহারের জায়গার অভাব। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়। এই ধানের কুঁড়া থেকে পাইরোলাইসিসের মাধ্যমে ভোজ্যতেল উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে “ সফলা রাইস বার্ন অয়েল ” নামে বাজারেপ্রাপ্ত তেলটি এই পদ্ধতিতেই উৎপাদিত। সারাদেশে অসংখ্য কাঠের কলগুলোতে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া কাঠের গুঁড়া থেকে জ্বালানীযোগ্য তেল ও গ্যাস পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় পাওয়া সম্ভব।

যা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। এভাবে বাণিজ্যিকভাবে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করতে পারলে আমাদের দেশের জ্বালানী খাতের সংকট অনেকাংশে কমে যেত। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যখন আমরা পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখব। পাইরোলাইসিসের সম্পূর্ণ ডায়াগ্রাম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।