আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শনিবারের চোর

আলো অন্ধকারে যাই... গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস মূল গল্প : লাদ্রন দে সাবাদো অনুবাদ : মো. ইমরান হোসেন উ গো নামে এক চোর ছিল। সে শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে (শনিবার ও রবিবার) চুরি করত। একদিন রাতে সে একটি বাড়িতে ঢুকল। এ বাড়িটির গৃহিণীর নাম ছিল আনা। সে ছিল ৩০ বছর বয়সী এক সুন্দরী মহিলা।

সে দিন রাতে তার ঘুম আসছিল না; বিছানার ওপর চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। সে উটকো গন্ধের কারণে উগোর অবস্থান টের পেল। পিস্তলের মুখে ভয়ে আনা চোরকে সব গহনা ও মূল্যবান জিনিসপত্র দিয়ে দিল। সে উগোর কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলল, যেন সে পাওলির কাছে না যায়। পাওলি হলো আনার তিন বছর বয়সী মেয়ে।

তবে বাচ্চাটা উগোকে দেখে ফেলল। উগো খুব চালাক; সে পাওলিকে জাদুকরের মতো কিছু হাত ছাপায়ের মাধ্যমে ঠাণ্ডা করল। উগো ভাবল : 'এখানে বেশ ভালোই তো লাগছে, তাড়াতাড়ি যাওয়ার দরকার কী?' শনি-রবি এ দুটো দিন এখানে থেকে পরিস্থিতিটা উপভোগ করা যেতে পারে। কারণ কিছুদিন ধরে গোপনে অনুসরণ করার ফলে সে জানত আনার স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে গেছে এবং রবিবার রাতের আগে ফিরবে না। চোরটি চিন্তা-ভাবনা করে তেমন একটা সময় নষ্ট করল না; ঝটপট গৃহকর্তার ট্রাউজার পরে ফেলল এবং আনাকে তার জন্য রান্না করতে বলল।

কিছুক্ষণ পর আনাকে ডেকে আবার বলল, 'দয়া করে আলমারি থেকে একটু মদ বের করে দেন। আর... রাতের খাবার সময় ক্যাসেটে ভালো দেখে কিছু গান চালাবেন। গান ছাড়া আমার জীবন একরকম অচল। ' আনা পাওলির জন্য খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। রাতের খাবার তৈরি করার সময় তার মাথায় এ আগন্তুক ব্যাটাকে বাড়ি থেকে বের করার একটা বুদ্ধি এলো।

কিন্তু তেমন কিছু করতে পারল না। কারণ উগো আগেই টেলিফোনের তারটা কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। অন্যদিকে বাড়িটি জনবসতি থেকে বেশ কিছু দূরে। তাই, এখন এই ভরা রাতের বেলা এখানে কেউ আসবে না। আনা উগোর মদের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

উগো একটা চোর হলেও আসলে সে দিনের বেলা একটি ব্যাংকে পাহারার কাজ করে। রাতের খাবারের সময় সে আবিষ্কার করল আনা তার সবচেয়ে প্রিয় রেডিও অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা। উগো প্রতি রাতে এ অনুষ্ঠানটি শোনে; কখনোই এর ব্যতিক্রম হয় না। উগো আনার খুব ভক্ত। ক্যাসেটে গান বেনি্নর গাওয়া ঈড়সড় ভঁব (কেমন ছিল) গানটা শুনতে শুনতে তার সংগীত ও সংগীত শিল্পীদের নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা করল।

একসময় মদের ভেতর ঘুমানোর ওষুধ দেওয়ার জন্য আনা খুব অনুতপ্ত বোধ করল। কারণ উগো তার সঙ্গে খুব ভদ্র ব্যবহার করছিল; কোনো ধরনের ক্ষতি বা অপমান করার অভিপ্রায় তার মধ্যে দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেছে; আর সময় নেই। কারণ এতক্ষণে ঘুমের ওষুধটা মদের গ্লাসে মিশে গেছে। চোরটি গ্লাসের পুরো মদ অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করল।

তবে ভুলবশত ঘুমের ওষুধ দেওয়া মদ যে পান করেছিল সে আর কেউ নয়, স্বয়ং আনা। আর তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল। পরের দিন সকালে আনার ঘুম ভাঙল এবং লক্ষ্য করল সে তার নিজের শোয়ার ঘরে একটি কম্বলের নিচে সম্পূর্ণ আগের দিনের পোশাক-আশাক পরা অবস্থায় শুয়ে আছে। বাড়ির আঙিনার বাগানে উগো ও পাওলি মিলে খেলছে। তারা ইতোমধ্যে সকালের নাশতা সেরে ফেলেছে।

তাদের দুজনের মধ্যে এত ভালো ভাব জমে গেছে দেখে আনার খুব অবাক লাগল। অধিকন্তু এ চোরটার রান্নার ধরন তার খুব ভালো লাগল। সবকিছু মিলিয়ে চোরটাকে আনার মনে ধরল। আনা নিজের ভেতর কেমন যেন একটা অজানা সুখ অনুভব করতে শুরু করল। এমন সময় তার এক বান্ধবী দুপুরে খাবার দাওয়াত দিতে বাসায় এলো।

উগো কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ল। আনা বানিয়ে বলল, তার বাচ্চার অসুখ হয়েছে, তাই সে যেতে পারবে না । সে তার বান্ধবীকে তাড়াতাড়ি বিদায় জানাল। এরপর তারা তিনজনে মিলে ঘরের মধ্যে রবিবারটা উপভোগ করতে থাকল। উগো শিস বাজাতে বাজাতে গত রাতে নষ্ট করে ফেলা জানালা ও টেলিফোনটা ঠিক করল।

আনা বুঝতে পারল যে, উগো খুব ভালো নাচ (কিউবার এক ধরনের আঞ্চলিক নাচ) জানে। আনা এ নাচের খুব ভক্ত। তবে কারও সঙ্গে এটা চর্চা করার সুযোগ তার কখনো হয়ে উঠেনি। উগো তাকে একসঙ্গে নাচার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। আনা না করতে পারল না; তার সঙ্গে জুটি বেঁধে নাচতে শুরু করল।

তাদের জুটিতে এমন তাল মিলে গেল যে তারা একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাচল। পাওলি তাদের দুজনের নাচের তালে তালে হাততালি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ল। তারা উভয়ই এতটা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ল যে, শেষ পর্যন্ত বসার ঘরে একটি চেয়ারের ওপর ঢলে পড়ল। কিন্তু সময় দেবতা বড়ই বেরসিক; ঘড়ির কাঁটা স্মরণ করিয়ে দিল তার স্বামীর আসার সময় হয়ে গেছে। আনার বিরোধিতা সত্ত্বেও উগো তার চুরি করা সব জিনিসপত্র ফেরত দিল।

সে আনাকে বেশকিছু পরামর্শ দিল যাতে করে তার বাড়িতে চোর ঢুকতে না পারে। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। মা-মেয়ে উভয়েই অজানা এক মায়াজালে দুঃখ ভারাক্রান্ত। উগো উভয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল। আনা উগোর হাঁটতে হাঁটতে দূরে চলে যাওয়া দেখছিল।

যখন সে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তখন আনা তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকল। সে ফিরে এলে তার চোখে চোখ রেখে বলল, আগামী শনি-রবিবার তার স্বামী আবার ব্যবসার কাজে বাইরে যাবে। ইতোমধ্যে রাত হতে শুরু করেছে। শনিবারের চোরটি পাড়ার রাস্তা ধরে খুশি মনে নাচতে নাচতে চলে গেল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।