আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমুদ্রে ভাসছে রোহিঙ্গারা : নানা প্রশ্নে বিতর্ক বাংলাদেশে

মায়ানমার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ মোকাবেলার প্রশ্নে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি শুক্রবার আবার শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় না দেওয়ার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

গত কয়েকদিনে মায়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ঠেকানো হয়েছে। এদিকে, সরকারের এই অবস্থানের সমালোচনা এসেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি থেকে। ইতোমধ্যেই দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা সরাসরি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সর্বশেষ সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরর রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু শরণার্থীদের সাথে আরও মানবিক আচরণ করা উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ওদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন , তাদের সরকারের এই অবস্থানের কারণে কোন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার দাবি জানিয়ে শুক্রবারও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। দু’একটি ইসলামপন্থী দলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর হেফাজতে ইসলাম নামের একটি দলের নেতা আজিজুল হক বিবিসি বাংলা’কে বলেছেন, শরণার্থীদের এখন আশ্রয় দিয়ে পরে মায়ানমার উপর চাপ সৃষ্টি করে ফেরত পাঠানো যেতে পারে বলে তারা মনে করেন । এছাড়া তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য মায়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের যে সীমান্ত দিয়ে গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে , গত ২৪ ঘন্টায় এমন আর কোন চেষ্টা দেখা যায়নি বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি কর্মকর্তা লে:কর্ণেল জাহিদ হাসান বিবিসি বাংলা’কে জানান, ১০ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৭২০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যারা নৌকায় করে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এর মধ্যে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে দু’ দিন ধরে আটক থাকা ৪৪ জনকে শুক্রবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবশ্য সেন্টমার্টিনে শরণার্থীদের ঐ দলটির একজন মহিলা যে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, সন্তানসহ তাকে আপাতত বাংলাদেশেই রাখা হয়েছে। লে: কর্ণেল জাহিদ হাসান বলেন , শরণার্থী যারাই আসছে, তাদেরকেই যে ফেরত পাঠানো হচ্ছে-এমন খবরে শরণার্থীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমে গেছে বলে তারা মনে করছেন।

এছাড়া মায়ানমার পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলেও তারা খবর পাচ্ছেন। তবে শরণার্থীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বা প্রবণতা কমে গেলেও সীমান্তে সতর্কাবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমান্তে জেলেদের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ স্থল বন্দরের কার্যক্রম। এদিকে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের সহিংসতা থেকে পালানো শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবার আহ্বান জানিয়েছে বেশ কয়েকবার।

জেনিভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে শরণার্থীদের নিয়ে যাওয়া অনেকগুলো নৌকা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংস্থার কাছে নির্ভরযোগ্য খবর আছে। এই নৌকাগুলো এখন মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে অবস্থান করছে। রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা গত সপ্তাহে খুবই গুরুতর হয়ে উঠেছিল, যাতে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কিছু লোক। জাতিসংঘের শরাণার্থী সংস্থা বিশ্বাস করে রাখাইন প্রদেশে চলমান সহিংসতার জেরে হাজার হাজার, এমন কী হয়তো লক্ষাধিক লোককে আশ্রয়চ্যুত হতে হয়েছে। জাতিসংঘের যে দল ওই এলাকায় পরিদর্শন করেছে তারা ওই এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানোর প্রমাণ পেয়েছেন, দেখেছেন গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

বেশ কিছু শরণার্থী সীমান্তের নাফ নদী পেরিয়ে উল্টোদিকে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেখানে যেহেতু তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি তাই অজস্র নারী-শিশু ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে তাদের নৌকাগুলো এখন সমুদ্রে ভাসছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।