আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরাকানে রোহিঙ্গা মুসমানদের বসত বাড়ীতে আগুন: মানবতাবাদীরা আওয়বজ তুলুন

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর রাখাইনদের সহিংসতা পঞ্চম দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। মংডু থানার নাকফুরা শহরে এক রোহিঙ্গাকে হত্যা ও তাদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে রাখাইনরা। মিয়ানমারের আরাকানের রাজধানীর আকিয়াবে (সিটুওয়ে) সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন ছোট বড় শহরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পুরো আরাকান রাজ্যজুড়ে সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন মুসলিম নিধন, লুটপাট, বাসগৃহে অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, মারধরসহ নানা নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলে ওপার থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ১২ জুন দুপুরে মংডু শহরের নিকটবর্তী গ্রামে জাফর আহমদ, রুহুল আমিন, নূর মোহাম্মদসহ চারটি কাঠের দ্বিতল বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। মংডুর পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে আকিয়াবে। রোহিঙ্গা মুসলিমরা বিশেষত যুবকরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আহতরাও চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে না।

তা ছাড়া গত পাঁচ দিনে সব মিলে কয়েক শতাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হলেও তাদের আত্মীয়স্বজন লাশ পায়নি বলে জানা গেছে। নিহত হওয়ার সাথে সাথেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে লাশের পোশাক পাল্টিয়ে মুসলিমরা রাখাইন হত্যা করেছে মর্মে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ দিকে গতকাল বুধবার টেকনাফের ৪২ বিজিবি প্রায় ১০৩ জন রোহিঙ্গার অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে তাদের মিয়ানমারে পুশব্যাক করেছে। সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, গতকাল সকালে সাগর পথে একটি নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকালে ছেঁড়াদ্বীপ নামক এলাকায় নৌকা বিধ্বস্ত হয়ে ৩৯ জন রোহিঙ্গা সেখানে আটকা পড়ে।

শাহপরীরদ্বীপ বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার তোতা মিয়া জানান, গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ২৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে মিয়ানামারে ফেরত পাঠানো হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে আরো ৪০ জন রোহিঙ্গাকে তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানান। তুমব্র“ ১৭ বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মোহাম্মদ আলী জানান, কোনো ধরনের রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে সীমান্ত পয়েন্ট গুলোতে বিজিবির সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ দিকে উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে টহল জোরদার করেছে। টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুরে ঝাউবাগানগুলোতে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে বার্মাইয়া পাড়ায় আশ্রয় নিয়ে আত্মগোপন করেছে বলে গ্রামবাসী জানান। উপকূলের সব নৌকা সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে।

যেহেতু মাছ ধরা টলারের সাথে রোহিঙ্গা ভর্তি নৌকাগুলো যাতে উপকূলে ভিড়তে না পারে সে জন্য জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে উখিয়া- টেকনাফের পুলিশ প্রশাসন গতকাল বোট মালিকদের সতর্ক করে সাগরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শাপলাপুর দাণি ঘাটের মাঝি আমান উল্লাহ (৪৫) ও বহদ্দার আয়ুব আলী (৩৫) জানান, পুলিশ প্রশাসন আগামী তিন দিন সাগরে মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করেছে। টেকনাফ ৪২ বিজিবির ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, গত চার দিনে প্রায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত ৯টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে নির্দেশনা মতে টেকনাফের পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল দুপুরে সীমান্তের তুমব্র“, ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শন করেছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। তিনি ওই সময় সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের মিয়ানমারের রোহিঙ্গা যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১৭ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান পিএসসি বলেন, সীমান্তে আগের চেয়ে বিজিবিকে আরো টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত গত ৩ জুন মিয়ানমারের টংগোপে রাখাইন সন্ত্রাসীদের হাতে ১০ জন মুসলিম তাবলিগ সদস্য খুন হওয়ার ঘটনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হলে আরাকানের রোহিঙ্গারা সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও রাখাইনদের চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কক্সবাজারের ১৭ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান পিএসসি বলেন, সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।

গতকাল সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেনি। নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব বলেন, পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারের ওপারে সীমান্ত থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার ভেতরে নাসাকার পাশাপাশি সেনাসদস্য মোতায়েন করা হলেও সেখানকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় এবং পরিস্থিতি ক্রমশ শান্ত হয়ে উঠছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জহিরুল ইসলাম কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, উখিয়া সীমান্তের যেকোনো পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সব ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের ব্যাপারে এলাকার সর্বত্র খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমাজের সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। পেঠান আলী বাকরুদ্ধ পেঠান আলীর বয়স ৮০-এর ঊর্ধ্ব আরাকানের রাজধানী আকিয়াবের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা। পেশায় কৃষক। ১০ জুন রোববার দুপুরের আহার শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বাড়িতে। চোখে একটু তন্দ্রা ভাব আসতে না আসতেই বাড়ির আশপাশে শোরগোলের শব্দ।

কাঠের দোতলা বাড়ির সদর দরজা খুলতেই দেখেন পাশের পাড়ায় বাড়িঘরে আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তেই দা কিরিচ আর লাঠি হাতে পেঠান আলীর বাড়িতে হানা দেয় একদল যুবক। তারা সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। পেঠান আলীর সামনেই তার চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের চারজনকে খুন করা হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি।

পেঠান আলীর বাড়িটি পেছনে হওয়ায় তখনো তার বাড়িতে আগুন দিতে পারেনি। ততক্ষণে তার বাড়িতে ভিড় করে পুড়ে যাওয়া অপরাপর বাড়ির আহত ও অক্ষত লোকজন। তারা জানালেন, পাশের পাড়ায় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক যুবকেরা। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। চলছে ব্যাপক লুটপাট।

পাড়ার মধ্যে বাড়ির পর বাড়ি পুড়ছে। মঙ্গলবার দুপুরে আরাকানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে বাঁচতে টেকনাফে পালিয়ে গুরুতর আহত পেঠান আলী এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.