আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত : মুসলমানরা আতঙ্কে, আরাকানে কারফিউ সেনা মোতায়েন, সীমান্তে সতর্কতা

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের মধ্যে শুক্রবার এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। দাঙ্গায় বহু লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলমান ও দুইজন রাখাইনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অসমর্থিত সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গায় শতাধিক মুসলমান নিহত হয়েছে। পাঁচ শতাধিক মসজিদ ও বসতবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ থেকেও অনুরূপ খবর পাওয়া গেছে।

বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গার পর আরাকান প্রদেশে সামরিক আইন ও কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত কয়েক বছরের মধ্যে মিয়ানমারে মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা। রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান আবু তাহা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাখাইনদের একটি দল মসজিদে ইট ছুড়লে দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে।

তাহা জানান, দাঙ্গা বাধলে নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত হয়। তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের দাঙ্গা এখনও শুরু হয়নি। তবে পরিস্থিতি খুবই জটিলতার দিকে যাচ্ছে। ’ মুসলিম সংগঠনের নেতারা মুসলমানদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

রয়টার্স জানায়, পাঁচ দিন আগে রাখাইন প্রদেশের তাংগোকে শহরে বৌদ্ধদের হামলায় ১০ মুসলিম নিহত হয়। তারপর থেকে উত্তেজনা চলছিল। ওই হত্যাকাণ্ডে মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও বিক্ষোভ হয়। বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মংডু জেলায় জুমার নামাজের পর মুসলিমরা মিছিল বের করলে সংঘর্ষ বাধে।

১০ মুসলিম নিহত হওয়ার আগে এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে রাখাইন প্রদেশে। এ ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সবাই রোহিঙ্গা। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়, যা রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের দাঙ্গায় উসকানি হিসেবে কাজ করে বলে স্থানীয়দের অভিমত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্র মিয়ানমারে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। ’৯০-এর দশকের শুরুতেই সেখানে মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হলে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসরতরা বহির্বিশ্বে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত হলেও দেশটির সরকার তাদের আদিবাসী কিংবা রোহিঙ্গা পরিচয় মানতে নারাজ। তাদের দাবি, এরা বাঙালি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভি জানিয়েছে, দাঙ্গার পর মংডু ও গুথিডং জেলায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। তবে কী কারণে দাঙ্গা বেধেছে বা কারা আক্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে টেলিভিশনের খবরে কিছু বলা হয়নি। বিবিসি জানায়, এক সপ্তাহ ধরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর বার্মা কর্তৃপক্ষ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান প্রদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে।

সেখানে এরই মধ্যে সামরিক আইন কার্যকর এবং সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি আনছার হোসেন এবং টেকনাফ প্রতিনিধি মুহাম্মদ তাহের নঈম জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের একদিনের ট্রানজিট পাস বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশের ৬ জন ব্যবসায়ী মিয়ানমারের মংডু গেলেও তাদের ফেরত পাঠিয়েছে তাদের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী। অপরদিকে বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন শুক্রবার বিভিন্ন রাখাইন পল্লী পরিদর্শন করে ‘সম্প্রীতি’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমারের টংগো এলাকায় ‘তাবলিগ জামাতে’র অনুসারী ১০ জন মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যার পর ওই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নড়বড়ে হয়ে ওঠে।

মিয়ানমারের মংডু জেলার এক যুবককে মারধরের ঘটনার পর বাংলাভাষী ‘রোহিঙ্গা’ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ওই উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, শনিবার ইয়াঙ্গুন থেকে মংডু এসেছেন বৌদ্ধ ও মুসলমানদের বেশ ক’জন ধর্মীয় নেতা। তারা সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার তারা মংডুতে বৈঠকে বসেছেন।

মিয়ানমারের মংডু জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুসলমানরা টেকনাফের স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের জানিয়েছেন, রাখাইনদের হামলায় মুসলমান যুবক আহত হওয়ার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিল মিয়ানমার প্রশাসন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ওই ঘটনা সমাধানে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুমার নামাজ শেষে বৈঠকের আগেই মুসলমানদের সঙ্গে রাখাইন সম্প্রদায়ের তর্কাতর্কি হয়ে যায়। ওই তর্কাতর্কি সংঘর্ষে রূপ নেয়। তারা বলেন, ‘আকিয়াব জেলার সিকদার পাড়ার মুসলমান যুবককে মারধরের প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সেখানে মুসলমানরা দোকানপাট বন্ধ রেখে শুক্রবার ধর্মঘট পালন করেন।

’ রোহিঙ্গা মুসলমানদের দাবি, রাখাইনরাই প্রথমে মুসলমানদের ওপর হামলা চালায়। পরে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। ওই সময় নাসাকা সদস্যদের গুলিতে ৩ মুসলমান যুবক মারা যান। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মংডু ও আকিয়াবের বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ওই দাঙ্গাতেই মারা যান আরও ৮ জন।

তাদের দেয়া তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে ১০ জন মুসলমান ও ২ জন রাখাইন। এদের মধ্যে নিহত ৩ জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন ফারুক (২৭), কোরবান আলী (২৫) ও আজিম উল্লাহ (২৪)। অন্যদের পরিচয় তাত্ক্ষণিক জানা যায়নি। মুসলমান-রাখাইন এই দাঙ্গায় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

টেকনাফ থেকে সংবাদ কর্মী নুরুল হক ও হেলাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার জুমার পর টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম ইউনুছ বাঙ্গালী, টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) উপ-পরিদর্শক বখতিয়ার উদ্দিন টেকনাফের রাখাইন পল্লীগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হ্নীলার চৌধুরী পাড়া, হোয়াইক্যং খারাংখালী পাড়া ও টেকনাফ চৌধুরী পাড়া রাখাইন পল্লী পরিদর্শন করেন। টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম ইউনুছ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবর পেয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাখাইন পল্লীগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রাখাইন ও মুসলমানদের আহ্বান জানানো হয়েছে। ’ বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফের ৪২ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. সফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংবাদে সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। রাখাইন পল্লীগুলোতে বিশেষ নজরদারি এবং শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে উস্কানি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ টহল রয়েছে।

’ উল্লেখ্য, গত ৩ জুন মিয়ানমারের টংগোতে রাখাইন সন্ত্রাসীরা তাবলীগ জামায়াতের মো. শরীফ (৫৮), মো. হানিফ (৬৫), শফিউল (৫২), আসলাম (৫০), বেলাল (২৮), শোয়াইব (২১), সেলিম (২৬), লোকমানসহ (৩৩) ১০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনার পর মিয়ানমারের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত ৭ জুন মংডু সিকদার পাড়ার রাখাইন ‘সন্ত্রাসী’রা এক মুসলিম যুবককে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.