আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস এবং মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম নির্যাতনের অজানা কাহিনী (৩)

মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলিম শহীদ ২০ ট্রলার বোঝাই রোহিঙ্গা মুসলিম ৫ দিন যাবৎ সাগরে ভাসছে ০ সারাদিন প্রবল বর্ষণে উদ্বাস্তুরা কাকভেজা ভিজছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ০ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে নিশ্চুপ সুচি, নোবেল আনতে ইউরোপ গেলো ০ টেকনাফে রোহিঙ্গাদের খোঁজে বিজিবির তল্লাশি০ ০ গ্রামের পর গ্রামে আগুন এখনও জ্বলছে দাউ দাউ জ্বলে আরাকান ঘরে ঘরে কান্নার রোল চলছে গণহত্যা-লুন্ঠন আর সম্ভ্রমহরণ নাফ নদে নৌকার সারিতে রোহিঙ্গাদের হাহাকার এপাড়-ওপাড় দুপাড়েই ঠাঁইহীন বুভুক্ষু মুসলিমের আর্তনাদ অফুরন্ত অন্তর্দাহন বিজিবি কোস্টগার্ডের হৃদয়ের সীমানায় তবুও নিরুপায় ‘পুশব্যাক’ সীমান্তে 'সীল মোহর' মিয়ানমারের এ কোন বর্বরতা? মিয়ানমারের আরাকানে গণহত্যা আর সীমান্তের নাফ নদীতে ভাসমান শরণার্থীর এমন আহাজারি সপ্তাহকালেও থামেনি। মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বলছে। গত ক’দিনে হাজার হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছেন। ২০ ট্রলার বোঝাই দুই সহগ্রাধিক মুসলমান ৫ দিন যাবৎ সাগরে ভাসছে। সারাদিন প্রবল বর্ষণে কাকভেজা হয়ে ভিজে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এদের মানবিক বিপর্যয়ে দুই দেশের কেউ এগিয়ে আসছে না। এদিকে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের হামলায় বিপর্যস্ত মুসলমানরা সে দেশের গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে পরিচিত অং সান সুচির কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেও সুচি এ পর্যন্ত কোন কথা বলেনি। তদুপরি দেশের এই সহিংস অবস্থায়ও সে নোবেল পুরস্কার আনতে ইউরোপ গেছে। মিয়ানমারের আরাকানে আগুনের লেলিহানে জ্বলছে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম। ক'দিনের হামলায় শুধু মংডুতেই শহীদ হয়েছেন শত শত মুসলমান।

মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর লুণ্ঠনসহ সামরিক সেনাদের হামলা-গুম, নির্যাতনের শিকার ২ সহগ্রাধিক মুসলমান ২০টি ট্রলারযোগে উভয় দেশের নৌ সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্টে ৫ দিন যাবৎ ভাসমান অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উভয় দেশের কেউই এদের মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসছে না। চলতি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে ১০ জনসহ ১২ মুসলমানকে মগ সন্ত্রাসীরা হত্যা করার পর থেকে ওই দেশের মুসলিম প্রধান প্রায় নাসাকা-লুণ্ঠন ও সামরিক বাহিনীর হামলা তীব্রাকারে বৃদ্ধি পায়। এ থেকে এ পর্যন্ত হত্যা-গুম, নির্যাতন, সম্ভ্রমহরণ, অগ্নিসংযোগসহ দিন দিন লোমহর্ষক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আরাকানের সব পর্যায়ের মুসলমান। সামরিক জান্তার সহায়তায় নাসাকার তীব্র নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারী ও শিশুরা। আরাকানে হাজার হাজার বাড়িঘর আগুনে জ্বলছে। রচিং-এর সামরিক জান্তার কার্যালয় ৮ গ্রামের মগ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সরদার ও মাতবরকে শান্তি আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে মগনেতাদের ছেড়ে দিয়ে আটকিয়ে রাখে মুসলিম নেতাদের। ধারণা করা হচ্ছে এদের খুন ও গুম করা হয়েছে।

এদের কয়েকশ’ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে আহাজারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই এলাকার জেলখানা থেকে কয়েদী দেখে স্ব স্ব বাড়ি ফেরার পথে মহিলারা ইসংসন নাসাকা প্রধানের হাতে সম্ভ্রমহরণের শিকার হয়। এদিকে নির্যাতনের শিকার কয়েক হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু বিগত ৫ দিন যাবৎ সাগরে ২০টি বোটে করে ভাসছে। গত বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে ওই ক্ষুধার্ত মানুষগুলো মুষলধারে বৃষ্টিতে কাকভেজা ভিজেছে। এখানে অনেকেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বলে জানান শাহপরীর দ্বীপের প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

মিয়ানমারে সীমান্তবর্তী নাফ নদীর উপকূলের ছোট্ট শহর টেকনাফ থেকে বৃহস্পতিবার এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ব্যাপারে কথা বলতে এবং সাহায্যের আবেদন জানতে সুচিকে আহবান জানায়। এ বিষয়ে টেকনাফের নয়াপড়া শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মিয়ানমার সরকার এবং বিশেষ করে সুচির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সুচি এখনো আমাদের জন্য কোন কিছু করেনি এবং কিছু বলেনি। অথচ ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা এমনকি আমার বাবা মা তার পক্ষে নির্বাচনী অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তবু অন্য সব বার্মিজ বৌদ্ধদের মতো সেও রোহিঙ্গাদের অধিকার সম্পর্কে নিশ্চুপ রয়েছে।

ইসলাম আরো বলেন, সূচি মিয়ানমারের শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে খ্রিস্টান কারেনদের ব্যাপারেই কথা বলে। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে একটিও আশার বাণী শোনায় না। আমরা শুনেছি বর্তমানে মিয়ানমার সরকার ও সুচি দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে সহিংসতার সুযোগ রাখাইন বৌদ্ধ এবং নিরাপত্তা বাহিনী মুংডু শহরের ময়দাপাড়া গ্রামের সকল মসজিদ দখল করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া সেখানে বহু রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও ইসলাম জানান। এই সব কর্মকান্ড নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাখাইনরা আরাকান দখলের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে করছে বলে মনে করেন তিনি। টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের ২৫ নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গারা টেকনাফের কোথাও অবস্থান নিয়েছে কি-না তা অনুসন্ধানে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। বিজিবি ৪২ ব্যাটালিনের অপারেশন অফিসার ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান বলেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে শাহ পরীর দ্বীপ জেটি ঘাট দিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।

বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে ‘পুশব্যাক' করে। ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান, রোহিঙ্গারা যাতে টেকনাফের কোথাও ‘আত্মীয়' পরিচয়ে অবস্থান করতে না পারে সে জন্য গত বুধবার রাতে মিস্ত্রীপাড়া ও জেলেপাড়ার বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে এ সময় কাউকে আটক করা হয়নি। গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ, বদর মোকাম ও সেন্টমার্টিন এলাকা থেকে ১১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বিজিবি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিঅর এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তবে দুই দশক ধরে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশের পর তাদের নিয়ে সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশ এই আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ঠেকাতে কাজ করছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিজিবি স্থল সীমান্তে পাহারা জোরদারের পাশাপাশি নাফ নদীতেও স্পিডবোট নিয়ে টহল দিচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। (একটি জাতীয় দৈনিক) (ইনশাআল্লাহ চলবে) ১ম পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন ২য় পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.