আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সুইডেনে জামায়াতপন্থিদের পাঁয়তারা

অবিলম্বে আমাদের দেশের সংসদ কে ১৮+ ঘোষণা করা হোক ;) একজন প্রবাসীর লেখা থেকে সংগৃহীত - একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ঘাতকদের রক্ষায় সেমিনার করেছে সুইডেন জামায়াত ও এরই মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামারুজ্জামানের স্বজনেরা। এ জন্য মঙ্গলবার বিকেলে সুইডিশ পার্লামেন্ট ভবনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির স্পন্সর করে সুইডিশ গ্রিন পার্টির পার্লামেন্ট মেম্বর মেহমেত কাপলান। কাপলান সুইডেনের মুসলিম কাউন্সিল ও যুব মুসলিমের ফর্মার স্পোকসম্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ব্রিটিশ রাজনীতিক আজমল মাসুর, ব্যারিস্টার জন স্টেফান ক্যামেখ এবং ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্যা।

‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ শিরোনামে সেমিনারের বিষয় ও আয়োজকদের পরিচয় জেনে অনেকটা শেষ মুহূর্তে আমরা কয়েকজন এখানে অংশ নিই। আমাদের আমন্ত্রণ জানান সুইডিশ এমপি কাপলান। শুরুতেই আমরা বুঝতে পারি যে, জামায়াতের এই ধূর্ত চক্র ‘মানবাধিকার’ শব্দটি ব্যবহার করে এখন সুইডিশদের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্বল্পসময়ে আমাদের প্রস্তুতি হলো, ‘মানবতা’ শব্দটি ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, ধর্ষক যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে অপব্যবহার করে ওয়েস্টার্ন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার এ ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। যথাসময়ে হাজির হলাম।

অন্ধকারে জামায়াতীদের জন্য কাজ করে যাওয়া বেশ কয়েকটি মুখ দিনের আলোয় স্পষ্টভাবে দেখার সুযোগ হলো। এদের পরিবারের কয়েকজন হিজাব পরিহিত নারীও অংশ নিয়েছেন দেখলাম। এদের কারোরই মুখে নৈতিক দৃঢ়তা নেই। বরং তারা সবাই বসলেন গুটিসুটি মেরে। ব্রিটিশ ধূর্ত পলিটিশিয়ান সিলেট বংশোদ্ভুত আজমাল মাসুর তার বক্তব্য শুরু করেন ‘ডিফেন্সিভ’ পদ্ধতিতে।

তখনও তার ধারণা হয়নি যে, এখানে বসে আছেন মুক্তিযুদ্ধের কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। স্থূল এবং খুব হাল্কা যুক্তিকে সম্বল করে তিনি অত্যন্ত ধূর্ত কৌশলে তার বক্তব্য শুরু করেন। মাসুরের সমস্ত বক্তব্য জুড়ে স্থান পায় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর কথা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধীদের মামলা ‘ভুয়া মামলা’ এবং একটি মামলাতেও কোনো প্রমাণ নেই, যা দিয়ে প্রমাণিত হবে যে, এরা যুদ্ধাপরাধী। যে সব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কারো কাছ থেকে শুনে এ সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে মাসুর উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করাই তাদের একমাত্র ভূমিকা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল একটি প্রহসন। হাসিনা সরকার একটি ‘শাহবাগী প্রডাক্ট। ” মাসুর একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়াকে ‘টোটাল জোক’ উল্লেখ করে বলেন, “খুব জোর ৬০ হাজারের মতো মানুষ এখানে নিহত হতে পারেন।

” দর্শক-শ্রোতার সারিতে তখন অনেকের হাত উঠেছে। এই প্রথম মাসুর বুঝতে সক্ষম হন যে, দর্শক সারি তার জন্য খোলা মাঠ নয়। কাপলান সবাইকে প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। এরপর একে একে সব বক্তাই একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে গেলেন। আর ব্রিটিশ ব্যারিস্টার জন স্টেফানের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে নাজুক এবং হাস্যকর।

তিনি মিন মিন করে শেখানো যে বুলি দিলেন, তা তিনি ছাড়া আর কারোরই বোধগম্য হওয়া সম্ভব ছিল না। এ জন্য তিনি হোমওয়ার্ক তিনি করেছেন। কিন্তু, ভাসমান জ্ঞানে যা বললেন, তা হয়ে উঠলো মেনু বিড়ালের মতোই। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নিজের সাফাই গাওয়াই তার সেমিনারের একমাত্র ভূমিকা হয়ে উঠলো। বিনে পয়সায় সুইডেন ভ্রমণ, কিছু সম্মানীর বিনিময়ে ব্রিটিশ হলেও ইসলামের বাণী আওড়ে গেলেন তিনি।

বাংলাদেশ বিশারদ হওয়ার ভান করলেন কিছুক্ষণ। তার বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানালেন, যাতে করে আমরা আর পেছনের দিকে না তাকাই। ১৯৭১ সাল অতীতের একটা ঘটনা মাত্র। আমাদের উচিত, এতদিন আগের ঘটনা উন্মোচন না করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। দেশের কত উন্নয়ন বিষয়ক কাজ রয়েছে, সেদিকে নজর দেওয়া।

ক্ষমা মহান ধর্ম। এত হাল্কা ও স্থূলজ্ঞান অবলম্বন করে তারা সস্তা কথার একটি প্রচেষ্টা নিলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষ উপস্থিত থেকে এই উপস্থাপনাকে সম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রশ্ন করে দুর্বল করে দেয়। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন এই সেমিনারের আয়োজক কাপলানকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আজকের এই সেমিনার নামক প্রোপাগান্ডা আয়োজন মিথ্যা ও অপপ্রচার। সর্বোপরি, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বাঁচানোর অপপ্রয়াসের জন্য আয়োজককেই দায়ী থাকতে হবে। এ সময় সেমিনারের আয়োজক কাপলান তার অবস্থান স্পষ্ট করেন এবং ভবিষ্যতে সব চিন্তা এবং মতাবলম্বীদের জন্য সেমিনারের সুযোগ করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এদিকে, সেমিনারের নিন্দা জানান ব্লগার নাদের আহমেদ, আরিফ মাহবুব, আমি শেখ তাসলিমা মুন এবং ড. ফরহাদ আলী খান। ড. ফরহাদ সেমিনারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “এটি কোনো অবস্থাতেই সেমিনার বলে গণ্য হতে পারেনা। মূলত, ‘মানবতা’র নামে এখানে একটি বিশেষ মৌলাবাদী গোষ্ঠী, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, ১৯৭১ সালে সংঘটিত ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নারী মা-বোনের ধর্ষণকারী নিকৃষ্ট মানবতা লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের তাদের প্রাপ্য শাস্তি থেকে বাঁচানোর একটি প্রচার অনুষ্ঠান হিসেবেই এটাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ” তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের পরিবর্তে ‘৬০ হাজার মানুষ’ নিহত হয়েছেন বলে যে উল্লেখ করা হয়েছে, তার জন্য মাসুরের তীব্র সমালোচনা করেন। শেষে বক্তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে এই নিন্দনীয় সেমিনার শেষ হয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.