আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত মুহাম্মদ ( সঃ )

নবীজী (স) এবং আসহাবে সুফারা প্রাচুর্যবান ছিলেন না এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা । বস্ত্তগত অর্থে ধরলে মৃত্যুর সময় নবীজী (স) একটি রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন । তার খোলাফায়ে রাশেদীন অর্ধ পৃথিবীর শাসক ছিলেন । তারা কি দরিদ্র ছিলেন ? হজরত ওমরের সময় পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো । নবীজীর সাহাবীরাই এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েছিলেন ।

তারা কেউ কিন্তু গরিব ছিলেন না । তারা সম্পদের অপব্যবহার করেন নি; সাধারণ মানুষদের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন । যারা নবীজী (স) এবং তার সাহাবীদের গরিব বলেন তারা আসলে ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না বা জানলেও ভুল ধারণা পোষণ করেন । অনেকে ভাবেন গরিব বানালে বোধ হয় তাদের মাহাত্ম্য বাড়বে । দুনিয়াতেও তারা গরিব ছিলেন না, আখেরাতেও তারা প্রাচুর্যবান হবেন ।

কেননা তারা তাদের প্রাচুর্যকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন । আখেরাতে ভালো থাকার জন্যে দুনিয়াতে গরিব থাকার কোনো প্রয়োজন নেই- এ সত্যটি মহামানবরা তাদের জীবন দিয়ে দেখিয়ে গেছেন । আপনি যদি নবীজীর অনুসারী হন দুনিয়াতেও আপনাকে প্রাচুর্যবান হতে হবে এবং হওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হবে । কারণ দুনিয়াতে যদি সফল না হন আখেরাতে কতটা সফল হবেন তা তিনিই বলতে পারবেন । তিনি কেবল নবী হওয়ার পরেই নয়, বরং নবী হওয়ার আগে থেকেই তাঁর সমাজে সমাদৃত ছিলেন ! মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন ।

এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের দেখাশোনা করতে থাকেন । মোহাম্মদের বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান । মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান । কে কতো বেশী রাজ্য দখল করেছে, বা কে কতোবড় শাসক ছিলো, তা দিয়েই কাওকে 'শ্রেষ্ঠ' বা 'সেরা' বিবেচনা করাটা ভুল । হ্যা, যে কেউই তার নির্দিষ্ট কোনো পারদর্শিতার জন্যে ঠিক সেই ক্ষেত্রেই 'সেরা' হতে পারেন ।

যেমন রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে 'সেরা' হতে পারেন । কারো কারো কাছে শেখ মুজিব হয়তোবা 'বাংলাদেশের শাসক'দের মাঝে 'সেরা' খেতাব পেতে পারেন । তাই বলে ওভার-অল বিবেচনায় এরা 'সর্বশ্রেষ্ঠ' হবে এমন কোনো কথা নেই ! নবী মুহাম্মদ (সঃ) কেই এই পর্যন্ত সকলেই সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছেন । কেবল মুসলমান গবেষকরাই নয়, পশ্চিমা গবেষক, ইহুদী প্রফেসর, হিন্দু পন্ডিৎসহ বিভিন্ন ধর্মের বড় বড় ব্যক্তিত্বরা একবাক্যে মুহাম্মদ (সঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছে । গান্ধীজীও নবীজী (সঃ) এর শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করেছেন, জর্জ বার্ণার্ড শ’ সহ আরো যারা একইভাবে মুহাম্মদকে (সঃ) সার্বিক বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ।

তিনি যেমন একজন ন্যায় পরায়ন শাসক ছিলেন, তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন, আবার তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত ও তাঁর আদর্শে আদর্শবান হয়েই পরবর্তি পাঁচশত বছর ধরে মুসলমানরা পৃথিবীর অর্ধেকটা শাসন করেছিলো । শুধু শাসনই করে যায়নি, জ্ঞান-বিজ্ঞানেও পৃথিবীকে আরো কয়েকশত বছর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে । তাঁর পারিবারিক জীবনেও তিনি ছিলেন সফল! তাঁর রাষ্ট্রীয় জীবনের সফলতা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে বরং সফলতার স্বর্ণ-শিখরে নিয়ে গেছেন তাঁকে ! নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্হ অবস্হায় একদিন নামাজের পর বললেন, হে লোকেরা, আল্লাহর কসম ! তোমরা আমার উপর কোন দায় চাপাতে পারবে না । কেননা, আমি কেবল ঐ জিনিসকেই হালাল করেছি, যা কুরআন হালাল করেছে এবং কেবল ওই জিনিসকেই হারাম করেছে, যা কুরআন হারাম করেছে। (ইবনে হিশাম) ।

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন । মুহাম্মাদের বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন । প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা । যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন । সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল ।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামী দর্শন অনুযায়ী সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই হতে হবে শ্রমজীবী । আমাদের নবী (সা.) নিজের জামা নিজেই ধুতেন এবং নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন । হজরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করতেন । হজরত ইদরিস (আ.) দর্জির কাজ করতেন । হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন ।

অন্যান্য নবী-রাসূল (আ.)-ও নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন । পরের শ্রমে জীবিকা নির্বাহ করা ইসলামে নিষিদ্ধ । ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মীয় বিশ্বাসমতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী । অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক । বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা ।

মরুভূমি ও ইসলামের মধ্যে বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই । তৎকালীন আরব অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন । নোমেডীয় অঞ্চলের সাথে এখানকার বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল । আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন । মুহাম্মদকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন ।

দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মোহাম্মদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন । একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয় । এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত । এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন । তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন ।

এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন । ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর । এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন । যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন । বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোন পেশা ছিলনা ।

তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন । এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন । মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন । এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী । ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন ।

মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান । মুহাম্মাদ তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন । বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫ । খাদীজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি । খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে ।

মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে । জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারে নবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন । ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর নবী প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন । তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন । এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন ।

অবর্তীর্ণ হয় কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত । প্রথম অবতরণের পর নবী এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাবেন, "আমাকে আবৃত কর"। খাদিজা নবীর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন । নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে ।

ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী । তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য । একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে । এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত । এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ ।

বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে মুহাম্মদ [স.] বললেন ‘এটা আমুকের শাহাদাতের স্থান, এটা অমুকের (কাফেরের) হত্যার স্থান... সাহাবীরা (রা.) বলেন ‘রাসুলুল্লাহ ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিক সেদিক হয়নি । ’ প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন । মুহাম্মাদের আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা । ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধূ আবু বকর । তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন ।

কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায় এবং এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয় । ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান । সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি । ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত । কথিত আছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশ্‌ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন ।

এই যাত্রা ইতিহাসে মি'রাজ নামে পরিচিত । এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি বলে বলা হয় । সবশেষে মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয়নি । মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করতনা যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হতে পারে।

এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে । খন্দকের যুদ্ধের সময় যখন রাসুলুল্লাহ ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল সাহাবীগন ক্ষুধায় অস্থির ও দুর্বল হয়ে পরেছিলেন তখন জাবের (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করলেন আর এক সা পরিমান জবের রুটি তৈরি করলেন আর তা দিয়েই সবাই তৃপ্তিতে খেলেন । সাহাবী জাবের (রাঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেন- ‘সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও চুলায় গোশত ভর্তি ডেকচি ফুটছিল এবং রুটি হচ্ছিল । ’(বুখারী, মুসলিম) রাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন । সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল ।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ (সঃ) দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন। সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ । মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মাদ (সঃ) সর্বপ্রথম কাবাঘরে আগমন করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন । মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবং মুহাম্মাদ (সঃ)এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে । কোরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে ।

বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন । জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল । অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন । অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন । তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন ।

বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে । অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসে তিনি মৃত্যবরণ করেন । এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর । আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান । আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয় ।

নোবেল বিজয়ী চিন্তাবিদ প্রখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ডশ রাখঢাক না করেই বলে গিয়েছেন, বিশ্ববাসী ! যদি তোমরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে চাও এবং সর্বাঙ্গীন সুন্দর জীবন ব্যবস্থা কামনা করো, তবে বিশ্ব-সংসারের নিয়ন্ত্রন ভার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে ছেড়ে দাও । বিশিষ্ট ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন, যাকে না হলে বিশ্ব অসম্পুর্ন থেকে যেতো । তিনি নিজেই নিজের তুলনা । তাঁর কৃতিত্বময় ইতিহাস মানব জাতির ইতিহাসে এক সমুজ্জল অধ্যায় রচনা করেছে । আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদী প্রফেসর জুল ম্যাসারমান বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।

নবীজী ছিলেন দয়ার সাগর এবং উম্মতকেও দয়া ও কোমলতা শিক্ষা দিয়েছেন । তিনি ছিলেন ধৈর্যের প্রতীক । শান্তির পতাকাবাহী, ও মহানায়ক। এক কথায় তিনি ছিলেন আদর্শ বালক , আদর্শ যুবক, আদর্শ সেবক, আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, আদর্শ মহাবিজ্ঞানী, পৃথিবীর যে কোন মানুষের জন্য তিনি ছিলেন আদর্শ শিক্ষক, তিনি ছিলেন সকল বিষয়েরই আদর্শ নমুনা বা মডেল । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ও একজন মানুষই ছিলেন ।

তিনি আর সব মানুষের মতই খাবার খেতেন, হাটে-বাজারে যেতেন । অন্যসব মানুষের মতই তাঁর মধ্যেও সমস্ত মানবিক গুণাবলী যেমন আবেগ-অনুভুতি, দুঃখ-সুখ, আশা-নিরাশা সবই ছিল । ওহীর দুঃসহ ভার সম্বন্ধে বলতে গিয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক বলেন, ‘যদি এই আদেশ পাহাড়ের উপর নাযিল করা হতো তাহলে এর ভারে পাহাড় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যেত । রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে প্রায় দশ বছর সংসার করার পরও হযরত আয়েশা (রাঃ) কোন সন্তানাদি না হওয়ার দ্বারা এটাও প্রতিষ্ঠিত হয় যে দম্পতিদের অধিকার আছে নিজেদের প্রয়োজন মাফিক পরিকল্পনা করে সন্তান নেয়া বা না নেয়ার, তবে এজন্যে তাদেরকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে প্রাকৃতিক ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ' পদ্ধতি । রসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অতিরিক্ত শারীরিক শক্তিমত্তার বিষয়টা বিবেচনা করাই আল্লাহ পাকের জন্য যথেষ্ট হতে পারত কিন্তু সূক্ষ্মদর্শী মহান আল্লাহ তা’য়ালা পর্যাপ্ত কারণ থাকার পরও সে পথে যাননি আর তাই প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স অবধি নবীজীর স্ত্রী ছিলেন মাত্র একজনই ।

এরদ্বারা আল্লাহ পাক বস্তুতঃপক্ষে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন নিজেদের সহজাত রীপুকে নিয়ন্ত্রনে রাখার উপযোগিতা ও কৌশল । তাই রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অতিরিক্ত বিয়েগুলো যে শুধুমাত্র উম্মতের শিক্ষার প্রয়োজনেই হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না । নারীর নিরাপত্তাকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য, তাকে রাখা হয়েছে সর্বদা সুরক্ষিত । একাকী নারী জীবনের তাই দেখা মেলে না ইসলামী বিধানে । হযরত আয়শা (রাঃ)-কে বালিকা বয়সে উম্মুল মু’মিনীন করার পেছনে শুধুমাত্র বালিকাদেরকে বিয়ে করার রীতি প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহ পাকের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না ।

বরং রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পরও নবীজীর ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্ম জীবন সম্বন্ধে দীর্ঘকাল ব্যাপী যাতে কেউ একজন মানুষের অনুসন্ধিৎসার যথাযথ উত্তর দিতে পারে সেজন্যেও সম্ভবতঃ অনন্য মেধার অধিকারী অল্প বয়সী আয়শা (রাঃ)-কে রাখা হয়েছিল নবীজীর সবচেয়ে কাছে । সময়, কাল, অবস্থা এবং মিশনকে আমলে না নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ব্যক্তি জীবন, কর্ম জীবন বা তাঁর তেরো বিয়ে নিয়ে কথা বলা এবং সেই সব খন্ডিত ও অসম্পূর্ণ বিশ্লেষণ সমূহের ভিত্তিতে আজকের সুবিধাজনক সময়ে বসে আল্লাহ পাকের সংশ্লিষ্ট বিধানসমূহের যেনতেন ব্যাখা করার চেষ্টা করাটা হবে ভয়ানক অন্যায় এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ । বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত । এখানে সকল ধর্মের সবাই মিলে-মিশে বসবাস করছে দীর্ঘসময় ধরে । আওয়ামীলীগ ৩০ জুন ২০১১ সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে মুলনীতি থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার পরপরই মুহাম্মদ স. ও ইসলামকে কটাক্ষ করার হিড়িক যেন আগের তুলনায় বাড়ছেই ।

২৬ জুলাই-১১ ধানমন্ডি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. এবং পবিত্র হজ্ব নিয়ে কটুক্তি করেন । সহকর্মী শিক্ষকদের এক সভায় তিনি মন্তব্য করেন” এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে । ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যেই ভারতে মোট ৮৯৪৬টি মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছে এবং ভারতীয় হিসাবেই এতে নিহত হয় ৮৯৬৫ জন এবং আহত হয় ৪৭৩১১ জন মুসলমান । মুহাম্মদ স. এবং ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি কেউ করতে না পারে । কিন্তু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা মোটেই কাম্য নয় ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.