আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরাধীকার

আমার আমিকে জানিনা এখনো তাইতো তোমাকেও হয়নী জানা দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে চিলেকোঠার ছায়ায় বসে আছেন বঙ্গবন্ধু। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে পা তুলে দিয়েছেন। হাতে প্রিয় পাইপ। এরিন মোরের গন্ধে উতলা হয়েছে ছাদের হাওয়া।

এ সময় একটি ছেলে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে ছাদে এলো। তার হাতে ক্যামেরা। সে ক্লিক ক্লিক করে বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলতে লাগল। বঙ্গবন্ধু গম্ভীর মুখে ছেলেটির দিকে তাকালেন। ১৯৭৩ সালের কথা।

বললেন, এই, তুই কে রে? আমার নাম পাভেল, পাভেল রহমান। কী করিস? ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। ছবি তোলা আমার হবি। তুই কি জানিস তুই কার ছবি তুলছিস? জানি। বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলছি।

আমি যে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এটা তুই জানিস? জানি। প্রেসিডেন্টের পারমিশন ছাড়া যে তাঁর ছবি তোলা যায় না, জানিস? পাভেল চুপ করে রইল। বঙ্গবন্ধু সিকিউরিটি ডাকলেন। 'এই ছেলেটাকে দাঁড় করিয়ে রাখ। আমি আসছি।

' সিকিউরিটির লোকজন পাভেলকে দাঁড় করিয়ে রাখল। বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে গেলেন। ভয়ে পাভেলের তখন বুক শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আবার ছাদে এলেন। তাঁর পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি আর বিখ্যাত মুজিব কোট।

হাতে যথারীতি পাইপ। ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি পাভেলকে বললেন, 'এবার আমার ছবি তোল। ' পাভেলের ভয় কেটে গেল। গভীর উৎসাহে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি ছবি তুলল সে। একসময় বঙ্গবন্ধু একজন সিকিউরিটির লোককে দেখিয়ে বললেন, 'ওর হাতে ক্যামেরা দিয়ে তুই আমার পাশে এসে দাঁড়া।

' পাভেল বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু তার কাঁধে হাত রাখলেন। সিকিউরিটির লোককে বললেন, 'ওর সঙ্গে আমার ছবি তুলে দাও। '(সংগৃহীত) এই হলেন বঙ্গবন্ধু! ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর হতে তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার স্বপ্নকে যে মানুষটা বাস্তবে রুপ দিয়েছিল। বাঙালি বাঙালি করে যে মানুষটা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিল তার সারাটা জীবনের আদর্শ তাকে হাজার বছরের শেষ্ট বাঙালি হিসাবে আমাদের মাঝে বাচিয়ে রাখলো।

শুধুমাত্র দেশের প্রতিঅকৃত্রিম ভালবাসার কারনে তিনি হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু বাঙালির বন্ধু। তিনি হয়ে উঠলেন সবার নেতা। আজ অনেক দিন পেরিয়ে গেছে। হাজারো দিন রাত্রি আমরা পার করেছি। অনেক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা আমরা দেখেছি।

বিশ্বাস করেছি তাদের। পরিনামে স্বপ্ন ভাঙ্গার কান্না ছাড়া আর কিছুই জোটেনী আমাদের। শিরোনাম প্রসঙ্গে আসি। উত্তরাধিকার কত ধরনের হয়? বিঙ্গজন হয় তো এ প্রশ্নের উত্তরে বিরাট লেকচার দিয়ে বসবেন। আমি বিঙ্গজন নই।

সাধামাটা যুবাপুরুষ। চিন্তা চেতনাও তাই। উত্তরাধীকার হয়তো দুই ধরনের হয়। ১) রক্তের উত্তরাধীকার ২) আদর্শের উত্তরাধীকার দেশের এই কান্তি কালে যখন আশাবাদী মানুষ গুলো আশা হারাচ্ছেন,যাদের কাছে আমরা উত্তর খুজবো তারা নিজেরাই প্রশ্ন মনে চেপে আছেন। আমরা যাচ্ছি কোথায় ? সমসাময়ীক সময়ে সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাতি গত ভাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের আসলে লক্ষটা কি? এই প্রশ্নের উত্তর পাই বা না পাই একটা প্রশ্নের উত্তর আমি জানি,যে আশা নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মায়ের আচল ছেড়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিল,জীবন দিয়েছিল হাসিমুখে, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন মানুষকে দেখিয়েছিল তা আজও অধরা রয়ে গেছে।

তার রক্তের উত্তরাধীকার আমরা পেলেও আদর্শের উত্তরাধীকার আজও পাইনী। বঙ্গবন্ধুর রত্তের উত্তরাধীকার কথিত গনতন্ত্রের মানস কন্যা আজ আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমরা জানি না। আমরা সত্যি জানি না...................... রেলমন্ত্রী তার পায় পেয়াদা নিয়ে টাকার বস্তাসহ পিলখানা দখল করেছে। তার পরিনতি হিসাবে আমরা কদিন সারকাছ খেলা দেখেছি। লাভ বলতে আমাদের এইটুকুই।

নিজের মন্ত্রীদের কিছু করতে না পারলেও তিনি ঘোসনা দিয়ে বিরোধী দলকে সোজা করতে নেমেছেন। ৩৪জন নেতাকে জেলে ভরে দিয়েছেন। বিরোধী নেতাদের জেলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এমন কোন ঘটনা না। তবে একসাথে এতনেতা এভাবে কোনদিন জেলে যায়নী। গনতন্ত্রের মানস কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শুনেছি এর আগেও নাকি এমন ঘটনা ঘটেছিল আর তা এরশাদ সরকারের সময়ে।

আমি বুছে পাইনা একটি গনতান্ত্রিক সরকার তাদের স্বৈরাচার সরকারের সাথে তুলনা করে কিভাবে। নাকি আমরাই ভুল করছি ? প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের আসলে তার সরকারকে স্বৈরাচার সরকার বলতেই আসলে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন? আল্লাহ মালুম.............. এই ইস্যু যেতে না যেতেই সরকার গনমাধ্যম কর্মীদের কেন যেন সোজা পথে আনার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠল বুঝলাম না। এরা আবার সরকারের কোন বাড়া ভাতে ছাইদিল কে জানে? শেখ হাসিনা আজ দেশের গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেছেন, “মিডিয়া এখন স্বাধীন। প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে অনেকের পেটের ভাত হজম হয় না। ” তাই তিনি ও তার সরকার অনেকের পেটের ভাত লাঠি দিয়ে হজম করার পথ বেছে নিয়েছেন বোধ করি..... কয়েকটি ঘটনা বলি।

২৬ মে শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রীদের বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন দৈনিক প্রথম আলোর তিনজন ফটো সাংবাদিক। প্রকাশ্য রাজপথে ফটো সাংবাদিক সাজিদ হোসেনকে ঘিরে ধরে একদল পুলিশ কিল, ঘুষি, চড় আর লাঠিপেটা করে একসময় লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। এই দৃশ্য দেখে সাজিদের সহকর্মী জাহিদুল করিম এগিয়ে যান। পুলিশ একই কায়দায় তাঁর ওপরও আক্রমণ চালায়। দুই সহকর্মীর এ অবস্থার কথা শুনে ছুটে যান প্রথম আলোর আরেক ফটো সাংবাদিক খালেদ সরকার।

পুলিশ তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নেয়, তাঁকেও কিল-ঘুষি, চড়-লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন পর্দায় এসব সাংবাদিকের অবস্থা দেখে দেশবাসী শিউরে উঠেছে। অথচ ৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সাংবাদিক নেতাদের বৈঠকে বলেছিলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই কি সেই পদক্ষেপ নেওয়ার ফল? পরে আবার তিনি বললেন, 'পুলিশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ' এই কি ভালো হওয়া? এই কি গনমাধ্যমের স্বাধীনতা ? আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

ভাল কতা লিখতে মন চায় কিন্তু উপায় নাই। হতাশার কথা লিখতে মনে যে জোর লাগে তা শেষ হয়ে আসছে আর কত? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু শেষ বেলা একটা কথা বলি। আমরা হয়তো আপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধীকার পেয়েছি কিন্তু আদর্শের উত্তরাধীকার নয়। যে সততা যে দেশ প্রেম একজন নেতাকে অমর করে সে আদর্শ আমরা পাইনাই। আপনি অবিচার করেছেন আপনার পিতার প্রতি।

একজন মহান নেতাকে আপনি দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিজেদের সম্পদে পরিনত করেছে । এই নেতার নামকে ব্যবহার করে বাঙালির মনোনকে প্রভাবিত করছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু তিনি তো শুধুমাত্র আ্ওয়ামীলীগের নেতা নন। একজন সার্বজনীন নেতাকে নিজেদের সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে তার প্রতি পূণূশ্রদ্ধা দেখাননী আপনি। একজন আদর্শকে ঘরে লুকানোর চেষ্টা করছে আপনি ।

কিন্তু আদর্শ কি লুকানোর জিনিস ? এ অন্যায় বন্ধ করুন বাঙালির মুজিবকে বাঙালির কাছে ফিরিয়ে দিন। এসম্পদ আপনার একার নয়। আপনি তার রক্তের উত্তরাধীকার হলেও আদর্শের উত্তরাধীকান নন। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।