আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সিনেমা পাশ্চাত্য মিডিয়া ও আমার কিছু কথা।।

নিজের ছাঁয়ার কাছ থেকে পালিয়ে থাকার প্রানান্তকর প্রচেষ্টায় আছি। সেদিন Savior নামের ইংরেজী মুভিটাতে দেখলাম, এক আমেরিকান সৈন্য/সামরীক ব্যাক্তির পরিবার একটি বারে বোমা বিস্ফোরনের ফলে মারা যায়। । সৈন্যটি তখন সোজা সুজি একটি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজরত অবস্থায় ৭/৮ জন মুসলমানকে গুলি করে হত্যা করলো । ।

পরবর্তীতে সে আমেরীকা থেকে পরিত্যাক্ত হয় । । বসনিয়া দখল করা সার্ব সৈনদের কাছ থেকে নতুন পরিচয় নিয়ে,সার্ব সৈনদের সাথে যুক্ত হয়ে নিরীহ বসনিয়ান মুসলমানদের হত্যা করা শুরু করে। । শেষ পর্জন্ত ঘটনার পরিক্রমায় সে একজন মুসলিম বসনিয়ান মেয়ের জারজ সন্তানকে রক্ষা করতে জীবন বাজী রাখে ।

। অতোপর... ... ... সিনেমা শেষে সেই হয়ে যায় আসল হিরো । । মসজিদে ঢুকে ৭/৮ জন মুসল্লিকে হত্যা করাটা তখন দর্শক নিমেষেই ভুলে যায় !!! আহা নায়কটি কতো ভালো !!! একজন বসনিয়ান মুসলিমের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করছে !!! শুধু Savior না এমন নাম জানা না জানা আরো শতো শতো চলচিত্রে একই ভাবে মার্কিন সেনাদের মহৎ হিসাবে উপোস্থাপন করা হয়েছে,যদিও আমরা জানি আফগান যুদ্ধে,ইরাক যুদ্ধে তারা মুসলীম নারী শিশুদের উপোর কিরকম অকথ্য নির্যাতন করেছিলো !!! মিডিয়া এইভাবে আমাদের মনকে ম্যানিপুলেট করতে করতে এমন অবস্থায় এনে দিয়েছে যে এখন কোনো আরব যুবককে সন্ত্রাসী বলে বিনা বিচারে হত্যা করলে আমাদের কাছে মনে হয় এইটাই ঠিক । ।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকথেকেই জিয়নিস্টদের একটি মাস্টার প্লান ছিলো কি করে মুসলমানদের খোড়া কর দেওয়া যায় !!! কিন্তু সরাসরী যুদ্ধে গেলে, তাদের সামর্থকেরাই তাদের বিপক্ষে চলে যাবে তাই তারা আশ্রয় নিলো মিডিয়ার । । চলচিত্র জামানার শুরু থেকেই তারা আরব মুসলিম যুবকদের খারাপ ভাবে উপোস্থাপন করে আসছে। । শিশুদের জন্য কার্টুন গুলোতেও (এমনকি সেই ১৯৩০ সালের দিকের গুলোতেও) একই ভাবে আরবদের কে নেগেটিভ ভাবে উপোস্থাপনের মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকে (আলীবাবা ৪০ চোর কার্টুনে ডাকাতদের সবার পোষাক মুসলিম আরবদের মতো কিন্তু আলীবাবার পোষাক তাদের থেকে ভিন্ন)।

। এরই মাঝে দুই দুইটি জেনারেশন (আমাদের বর্তমান,এবং আমাদের বাবাদের) পার হয়ে গেছে,যারা জন্মের পরথেকেই মুসলমানদের হেয় করা/এবং হেয় হওয়া দেখে আসছে,তাই আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে !!! আরব শিশুর নাম শুনলেই আমাদের এখন মনে হয় এক বাবা মা হারা রক্তাক্ত শিশু যে হাতে পাথর নিয়ে প্রতিপক্ষ সৈনদের দিকে তা ছুড়ে মারছে,তার ক্ষুধার্ত মুখ দেখে আমাদের আর খারাপ লাগেনা,মনেহয় এইটাই তো ঠিক!!! আরব যুবক মানেই মুখোশ পড়া অস্ত্র ধারী টেরোরিস্ট অথবা আরবীয় পোশাক পড়া নারী আসক্ত প্লেবয় (বলিউদের হিন্দী গান গুলোর বদৌলতে) । । আরব মহিলা মানেই বোরখার আড়ালে নির্যাতীতো এক রমনী,যাদের উদ্ধার করার দায়ীত্ব ঐ মার্কিনীদের !!! টেরোরিস্টের কথা যখন উঠেই গেলো তখন বলি, আচ্ছা বলুনতো আমেরীকাতে প্রতিবছরে গড়ে কতো জন সন্ত্রাসী হামলায় মারা যায় ? আপনারা কি জানেন যতোজন সন্ত্রাসী হামলাতে মারা যায় তার থেকে কয়েকগুন বেশী মারা যায় তাদের তথাকথিতো স্ট্রীট গ্যাং ফাইটারদের হাতে !! ২০০১ এর ১১ই সেপ্টেম্বরের পরে ২০০৪ এই সর্বোচ্চ সংখ্যক আমেরীকান সন্ত্রাসী হামলাতে মারা যায় আর তার সংখ্যাটা হচ্ছে ৬৮ জন । ।

ধরে নিলাম ২০০১ এর পর থেকে গড়ে এই ৬৮ জন করেই মারা গেলো প্রতি বছরে। । ২০০৭ এ আমেরীকার বার্ষীক বাজেটে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের জন্য বরাদ্দ ছিলো ১৬১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার !!! তার মানে কি !!! বছরে ৬৮ জন মানুষের জীবন বাচাতে তারা খরচ করছে ১৬৮.৮ বিলিয়ন ডলার !!! আপনি জেনে অবাক হবেন আমেরীকাতে প্রতি বছরে চীনাবাদামের এলার্জীর কারনেও এর থেকে প্রায় দ্বিগুন মানুষ মারা যায় !!! তার চেয়েও অবাক হবার মতো কথা হচ্ছে আমেরীকাতে এই পর্জন্ত মোট যতজন নাগরীক সন্ত্রাসী হামলার কারনে মারা গেছে তার থেকে বেশী আমেরীকান সৈন্য মারা গেছে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে !!! এর ফলে কিন্তু সন্ত্রাসীরা কমেনি বরং বেড়েছে, বাড়াতাই কি স্বাভাবীক নয় ??? আমেরীকাতে সবথেকে বেশী মানুষ মারাযায় Coronary Heart Disease এ । । সঙ্খ্যাটা কতো জানেন? ৪৫০,০০০ জন !!! আর এই রোগটির নিরাময়ের জন্য গবেষনা কাজে ২০০৭ সালের বাজেটে বরাদ্দ ছিলো ২.৮ বিলিয়ন ডলার মাত্র !!! তার মানে হিসাব করলে দাঁড়ায়,তারা সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের বরাদ্দের থেকে ৫৪ গুণ কম খরচ করছে এমন ক্ষেত্রে যেখানে সন্ত্রাসী হামলায় মৃতদের সঙ্খ্যার থেকে প্রায় ৬৬০০ গুণ বেশী লোক মারা যাচ্ছে ।

। আরেকটি কথা । । আফগানিস্তানকে আমরা বিশ্বের সব চেয়ে বেশি আফিম উতপাদনকারী দেশ হিসাবে চিনি। ।

কিন্তু, ১৯৮০ সালের আগে তারা বিশ্ব আফিমের ০% (শুন্য) উৎপাদন করতো !!! আফগান সোভিয়েত যুদ্ধে মার্কিন মদদপুষ্ট “মুজাহিদীন” জয় লাভ করার পর ১৯৮৬ সালেই গোটা পৃথিবীর ৪০ শতাংশ আফিম আফগানিস্তানে উৎপাদন হতো,তা ১৯৯৯ এ এসে ৮০% এ দাঁড়ায়। । তারপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দেয় “তালেবান”, তারা ক্ষমতাতে আসার পরেই ২০০০ সালে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৩০০০++ টন থেকে নেমে দাঁড়ায় মাত্র ১৮৫ টন,যা কিনা পূর্বের থেকে ৯৪% কম। । তারপরে সেই বিক্ষাতো ৯/১১ এবং আফগান যুদ্ধ।

। এখন বর্তমানে আফগানিস্তানের আফিম উতপাদনের পরিমান কতো জানেন??? বর্তমান পৃথিবীর ৯০% আফিম এখন আফগানিস্তানে উৎপন্ন হচ্ছে এবং প্রতিবছরেই উতপাদনের রেকর্ড ভঙ্গ করছে !!! কখনো কি ভেবে দেখেছেন? কলম্বিয়া,ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকো এর মাদক উৎপাদন সম্পর্কে আমরা এতো খবর পাই,তাদের মাদক সম্রাটদের ধরতে পুলিশ/সেনা এতো অভিজান চালায়, এতো এতো গ্যাঙ্গস্টার মারাযায়, কিন্তু এই রকম কোনো খবর আফগানিস্তানের মাদক সম্পর্কে পাইনা কেনো, কোনো মুভিতেও দেখিনা এই নিয়ে কিছু দেখাচ্ছে !!! গোটা পৃথিবীর ৯০% আফিম তাহলে কোথায় যাচ্ছে !!! প্রশ্নো আপনাদের কাছে। । মিডিয়া পারেনা এমন কিছু নাই !!! তারা তিলকে তাল বানাতে পারে আবার তালকেও তিল করে দিতে পারে। ।

লিখতে বসেছিলাম সামান্য একটা মুভি দেখার পর খারাপ লাগা থেকে !!! আনেক কিছু এক সাথে এনে জগাখিচুরি করে ফেলেছি। । সময় নিয়ে প্রলম্বিতো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ । । যেসকল বানান ভূল হয়েছে সেগুলোর জন্য দুক্ষিতো ।

। তথ্যসূত্রঃ Zeitgeist Addendum (ডকুমেন্টরী + কিছু সমসাময়ীক সংবাদ মাধ্যম । । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.