আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়া...

আমার 'কলম' আজো আছে আমার সাথে, আমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে,আমার সুখের ভাগ নিয়ে দেনা-পাওনা চুকিয়ে,এক চিলতে হাসি হয়ে... অসম্ভব রকমের মন খারাপ নিয়েই আজ অফিসে যাচ্ছে মায়া। অনেক কান্না পাচ্ছে ওর। অফিসে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই,কিন্তু তবুও যাচ্ছে,হয়তো একটা সময় ব্যাস্ত থাকতে থাকতে মনটা ভালো হয়ে যাবে। অনেকক্ষন থেকেই রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে ও কিন্তু রিকশা পাচ্ছে না। কেন যে এই সময়টাতে রিকশা পাওয়া যায় না?!অথচ এমনি সময় রিকশার ছড়াছড়ি.... অবশেষে একটা রিকশা পেল।

মেইন রোডে উঠতে না উঠতেই জ্যামে দাঁড়িয়ে পড়ল রিকশা টা!রাগে দুঃখে এবার খুব কান্না পেল মায়ার,ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানিও পড়তে লাগল। একটা সময় চোখে ঝাপসা দেখে মায়া... মায়া। খুব সাধারন একটা মেয়ে,দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মায়া মেঝ। চাকুরীজিবী বাবার সংসারে অনেক সুখেই দিন কাটছিল মায়ার। বাবার স্বপ্ন ছিল মায়া ডাক্তার হবে,আর মা চাইতেন ল'ইয়ার।

কিন্তু দু'জনের কারো ইচ্ছাই ঠিক হয়নি। আর তাই মায়া এখন ব্যাঙ্কার হয়েছে। রিকশাওয়ালার ডাকে সম্মতি ফিরে পায় মায়া। ভাড়া চুকিয়ে দ্রুত অফিসে ঢুকে পরে। 'এই শুনছো,মিতা ভাবি কাল রাতে আবারো ফোন করেছিল'নাজমা বেগমের কথা শুনে পেপার থেকে মুখ তুললেন জামান সাহেব।

তাকে তাকাতে দেখে নাজমা বেগম বললেন, 'আমার মনে হয়,আমাদের মায়াকে চাপ দেয়া উচিত,এভাবে আর কত?এমন ছেলে কি সব সময় পাওয়া যায়?তুমিই বল.। ' কি বলবেন বুঝতে পারলেন না জামান সাহেব। আসলে সবই ভাগ্য,তা না হলে এমন হবে কেন?কতইনা স্বপ্ন ছিল তার....। ছেলে-মেয়েরা একদিন বড় হবে,তিনি চাকরী থেকে অবসর নিবেন,মেয়ের বিয়ে দিবেন। মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন তো এমনই হয়,সম্পদ বলতে ছেলে-মেয়েরাই সব।

কিন্তু হলো না। অসময়ে সব শেষ হয়ে গেল। জামান সাহেবের নীরবতার মানে নাজমা বেগম বুঝেন,তাই তিনিও চুপ করে থাকলেন। কিছুক্ষন পর উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন। সকালে যাওয়ার সময় অযথাই মেয়েটার সাথে রাগা-রাগী করেছেন,মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল,কিন্তু কি করবেন...মা এর মনতো মানতে চায়না।

সব মা ই তো চায়,তার মেয়েটার ভালো একটা ছেলের সাথে বিয়ে হোক,সুখের সংসার হোক। কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে মায়া। উফ...কত কাজরে!পিয়নকে চা য়ের জন্য বলেছে সেই কখন কিন্তু কোন খবর নেই!ধুর!বিরক্ত হয় মায়া। ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে-মুখে পানি ছিটায় কতক্ষন। আয়নার দিকে তাকাতেই কিছুটা থমকে দাড়ায়।

নাজিম প্রায়ই বলতো,তুমি একটা মেয়েও বটে!আল্লাহ যেমনে বানাইছে ওমনেই থাকো!কেন?একটু চেঞ্জ হওয়া যায় না?''গাধাটার কথা শুনে হাসতো মায়া। ওর হাসি দেখে নাজিম আর কিছু বলতে পারতো না,কারন নাজিমের কাছে দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর কিছু হলো মায়ার হাসি। সব কিছুর পরেও মায়ার হাসি নাজিমের জন্য অনেক কিছু। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মায়ার বুক থেকে। ডেস্কে এসে দেখে কাজ অনেক কমে এসেছে,আস্তে আস্তে কাজ করতে থাকে।

মানুষের জীবন এত অদ্ভুদ কিভাবে হয় ভেবে পায় না। চিন্তার বাইরে কিছু ঘটতে পারে এটা সে বিশ্বাস করে কিন্তু তাই বলে এতটা...!! দুই বছর আগেও মায়া স্বপ্ন দেখতো পড়া শুনা শেষ করেই বিয়ে করবে,তারপর সংসার চাকরী। কতশত স্বপ্ন ই না দেখতো সে আর নাজিম। কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল...আজো বুঝতে পারে না মায়া। এক বিকেলে নাজিম এসে বলল,'মায়া আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না,আমাকে ভুলে যাও।

"মায়া কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে ছিল,আসলে সে বুঝার চেষ্টা করছিল,নাজিমের কথার সত্যতা। কিছুক্ষন পর বুঝলো নাজিম সিরিয়াসলি বলছে...মায়া কাঁদতেও ভুলে যায়!বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মায়ার,মেনে নিতে কষ্ট হয় মায়ার। কিন্তু মায়া কিছুই করতে পারে না,নাজিম চলে যায়। এমন একটা মেরুদন্ডহীন ছেলেকে নিয়ে সে স্বপ্ন দেখেছিল এটা ভাবতেই নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় মায়ার,যার সাহস নেই বড় বোনের পছন্দ কে না বলার সেরকম একটা স্বার্থপর মানুষকে মায়া কিভাবে বিশ্বাস করেছিল তা আজো জানেনা। আস্তে আস্তে সব ভুলে স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিল মায়া।

সব কিছু আবার নতুন করে সাজাচ্ছিল। কিন্তু আরেকটা বড় ঝড় একেবারেই তছনছ করে দিল সব কিছু! রোড একসিডেন্টে চলে গেল বড় ভাইয়া। তরতাজা প্রাণের ছেলেটার অসময়ে এভাবে চলে যাওয়া সইতে পারলেন না বাবা। একেবারেই ভেঙ্গে পড়লেন। বাবা-মা,ছোট ভাই,সংসারের হাল ধরল মায়া।

মায়া জানে,বাবা-মা খুব চান ও বিয়ে করুক,সুখের সংসার হোক ওর। কিন্তু মায়া স্বার্থপর হতে পারে না। সব থেকে বড় কথা হলো মায়া এখনো নাজিমকে ভুলতে পারে না,ভুলতে পারেনা ওর ভালোবাসা কে। তারপরেও মায়া জীবনকে নিয়ে আরেকবার ভাবার চেষ্টা করতো কিন্তু এখন আর তা করে না। ও চলে গেলে এ সংসারের করুন অবস্থা হয়ে যাবে।

যতই বলুক না কেন সবাই বিয়ের পরেও চাকরী করা যায়,কিন্তু মায়া জানে বাস্তবতা অনেক কঠিন। যে সংসারে যাবে তারও একটা দাবী আছে ওর কাছে। তা কিভাবে অস্বীকার করবে ও। ছোট ভাইটার এখনো স্কুল শেষ করেনি,ওর প্রতি নিষ্ঠুর হতে ইচ্ছে করে না মায়ার। মাঝে মাঝে নাজিমকে ধন্যাবাদ দেয় মায়া।

ভাগ্যিস ও চলে গিয়েছিল তা না হলে আজ এত কিছু ও কিভাবে সামলাতো! মাঝে মাঝে এ ও মনে হয়,আসলে যা হয় ভালোর জন্যই হয়। বুদ্ধিমানের কাজ হলো নিজেকে সেই হওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। বিকেলে অফিসের গাড়ীর জন্য ওয়েট না করে বেরিয়ে পড়ে মায়া। কিছু ফল কিনে বাবার জন্য। রিকশা খুজতে খুজতে হঠাৎ প্রচন্ড ভাবে থমকে দাঁড়ায় মায়া!! ওর শক খাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে নাজিম।

ধরা গলায় বলে, ''কেমন আছ মায়া?'' প্রশ্নটা শুনে মায়া বুঝতে পারে ও আসলে স্বপ্ন দেখছে না,সত্যিই নাজিম ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে সামলে নেয় মায়া। তারপর নাজিমকে পাশ কাটিয়ে সামনে যেয়ে দ্রুত একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে,একবারো আর পেছনে ফিরে তাকায় না। মায়ার মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর। নাজিম মায়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক।

অনেকটা আপন মনেই বলে,''মায়া,আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো,আর তাই আমি পারিনি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে,সব কিছু গুছিয়ে নিতে নিতে দেরী হয়ে গেল। গত দুই বছর অনেক চেষ্টা করেও তোমার সামনে দাড়াতে পারিনি,মনে হয়েছে তুমি আমাকে মাফ করবে না তবে আজ মনে হচ্ছে পারব তোমার সামনে দাড়াতে। আমি আসছি মায়া...আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ব করতে,আমার ভালোবাসা কে আবারো আপন করতে। ''  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।