আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ধান্ধাবাজি! পড়ুন, নিজেও সাবধান হোন।

আহা আহা সখি, তুমি যাহা কর, মোর মনে লয় তাই... তোমার ফুলের পরাণে কেবল দিয়ে যায় বেদনাই। ব্র্যাক ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড পাসপোর্টে এন্ডোর্স করে নিয়ে গিয়েছিলাম নেপাল। সাথে ক্যাশ ডলারও নিয়েছিলাম। ভ্রমন শেষে ক্যাশ ডলার বেঁচেও গেল। ভাবলাম শুধু শুধু ক্রেডিট কার্ডটা নিয়ে এতো ঝামেলা করলাম কিন্তু ইউজ করলামনা, এটা ঠিক না।

তখন ফেরার সময় কাঠমন্ডুর এয়ারপোর্টের ডিউটি-ফ্রী শপ থেকে ১০ ডলারের চা পাতা কিনলাম ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে। দেশে ফিরেই ওদের কল সেন্টারে ফোন দিয়ে জানালাম যে আমার ভ্রমন শেষ, এখন ঐ এন্ডোর্স করা ডলার আর প্রয়োজন নেই; সেটা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করে আমার সাধারন ক্রেডিট লিমিটে যোগ করে দিতে অনুরোধ করলাম। এর আগে আমার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ক্রেডিট কার্ড দেশের বাইরে ইউজ করেছি। ওদের কোন ঝামেলা নেই। পাসপোর্টে শুধু সিল মেরে দেবে, এরপরেই ওটা দেশের বাইরে ইউজ করা যায়, দেশের ভেতরেও ইউজ করা যায়।

আসলে সব হিসাব বাংলাদেশি টাকাতেই থাকে। যত ডলারই ইউজ করা হোক, তার সমমানের বাংলাদেশি টাকা ক্রেডিট কার্ডে চার্জ করা হয়, যা দেশের ভেতরে পার্চেজের মতোই ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনে টাকা জমা করে দিলেই হয়। ব্রাঞ্চে যাওয়া লাগেনা। ব্র্যাক ব্যাংকের সিস্টেম জানলাম তা না, এন্ডোর্স করা মানেই আপনার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট থেকে ঐ ডলার সমমানের টাকা সরিয়ে ফেলা হবে, ওটা চলে যাবে ডলারের হিসাবে। বিদেশে গিয়ে ঐ ডলার খরচ করলে দেশে ফিরে অবশ্যই ওদের ডলার লেনদেন হয় এমন কোন ব্রাঞ্চে গিয়ে ঐ দিনের ডলারের দাম অনুযায়ি সমমানের টাকা জমা করতে হবে।

এটা এটিএম বুথের ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনে জমা করলে হবেনা, অবশ্যই ব্রাঞ্চে গিয়ে কাজটা করতে হবে। বিরাট ঝামেলা। সে যাই হোক, মাস শেষে স্টেটমেন্ট আসলে দেখলাম ১০.০৫ ডলার পেমেন্ট ডিউ আছে। কস্ট করে ব্রাঞ্চে গেলাম টাকা জমা দিতে। কর্তব্যরত অফিসার বললো ১১ ডলার সমপরিমান টাকা জমা দেন।

ভালো কথা, তাও দিলাম। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো। এবার এই মাসের স্টেটমেন্ট আসলে দেখা গেলো আবার ১০.৫৯ ডলারের বিল! Excess limit fee দেখাচ্ছে ১০ ডলার! ভাবলাম এ আবার কি! ওদের হেল্প লাইনে ফোন দিলাম। ঘটনা যা বুঝলাম তা হলো আমার এন্ডোর্স করা ডলারের পরিমান ছিলো ৩০০। আমি ঢাকায় ফিরে ওদের যখন ফোনে বললাম আমার ডলারের কাজ শেষ, ঐ টাকা আমার সাধারন ক্রেডিট লিমিটে ফেরত দেবার জন্য, ওরা ১০ ডলার রেখে বাকি টাকাটা বিডিটিতে কনভার্ট করে আমার বিডিটির লিমিটে যোগ করে দিয়েছে।

আমার আগের স্টেটমেন্টে বিল ছিলো ১০.০৫ ডলার, এখন লিমিট ১০ ডলার, তার মানে ০.০৫ ডলার আমার লিমিট ক্রস করেছে! এখন এই ০.০৫ ডলারের জন্য আমাকে আবার ১০.৫৯ ডলার গুনতে হবে! তাও আবার আমি যেখানে অলরেডি ১০.০৫ ডলারের জায়গায় ১১ ডলার পরিশোধ করেছি! এ যেন ক্রিকেট খেলায় মাঠের বাউন্ডারির দড়ি ভেতরের দিকে টেনে এনে বল মাঠের বাইরে দেখিয়ে ছক্কা মারা। প্রথম কথা, ওদের কল সেন্টার থেকে আমাকে একবারও বলেনি ডলারটা পরিশোধ করার পর ডলার এন্ডোর্স বাতিল করতে হয়। আমি সেটা জানিও না, তখনো স্টেসমেন্টও আসেনি। দ্বিতীয় কথা, যেখানে আমি খরচ করেছি ১০.০৫ ডলার, সেখানে কার্ডে কিভাবে ১০ ডলার নতুন লিমিট সেট করা হলো? হয় ১০.০৫ লিমিট সেট করতো, না হয় লিমিট চেন্জ না করে আমাকে বলতে পারতো আগে বকেয়া ডলারটা পরিশোধ করতে। ওদের ফোনের হেল্পলাইনে এ ব্যাপারে জানালে প্রথমে একদিনের সময় নিলো, বললো পরদিন জানানো হবে।

কিছুই জানালোনা। এরপর আবার ফোন দিলে, সরাসরি বললো এটা এখানে হবেনা, ব্রাঞ্চে গিয়ে কথা বলুন। আমি জানি ব্রাঞ্চে গেলে কি হবে। তখন বলা হবে এই ব্যাপারে এই ব্রাঞ্চে কথা বলা যাবেনা, ঐ ব্রাঞ্চে যান। সেই ব্রাঞ্চে গেলে বলা হবে এটা এখানে হবেনা, হেড অফিসে যান।

সেখানে গেলেও কাজ হবেনা, এর কাছে যান, তার কাছে যান, আজ হবেনা আরেকদিন আসেন, এরকম চলবে। এরপর একদিন বলবে এটাই আমাদের এখানে নিয়ম কিছু করার নেই, আপনাকে পে করতে হবে। এখন ১০ ডলারের জন্য কে এতো ঝামেলা করতে যাবে? কেউই না। ব্যাংক এই সুযোগটাই নেবে। মানুষের সিস্টেমের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে টু-পাইস কামানরো ধান্ধা আর কি।

জানে যে কেউ কিছুই বলবেনা, ঠিকই টাকা দিয়ে দেবে, তাহলে এই সুযোগগুলো না নেই কেন? তবে আমিও টাকা দেব ঠিকই, কিন্তু ব্লগে লিখে সবাইকে তাদের ধান্ধাবাজি সম্পর্কে জানাইনা কেন? ----------------------------------------------------------- আপডেট: এই ১০ ডলার দিয়েই রেহাই পাইনি, ৩ মাসে টোটাল ৩০ ডলার গুনতে হয়েছে আমাকে। প্রতি স্টেটমেন্টে আবার ১০ ডলার এক্সেস লিমিট ফির কারনে সাথে ০.৫ ডলার যোগ হয়ে আবারও ১০ ডলার করে এক্সেস লিমিট ফী যোগ হয়েছে। সমাধান যেটা পেলাম সেটা হলো একবারে ২৪ ডলার জমা দিয়ে দেয়া, তাহলে আর এক্সেস লিমিট ফী যোগ হবেনা। এটাও আমাকে আগে কেউ বলেনি, এতোবার ব্রাঞ্চে গেলাম আর কল সেন্টারে ফোন দিলাম, কেউই না। সব মিলিয়ে ৩৫ ডলার ধরা খেলাম, আর রোদের মধ্যে অফিস রেখে কয়েকবার ব্রাঞ্চে গেলাম।

কাওরান বাজার ব্রাঞ্চে আবার ডলারের কাজ হয়না, যেতে হয়েছে আসাদ গেট ব্রাঞ্চে। কাওরান বাজার এসএমই ব্রাঞ্চে গেলে বলেছিলো এই কাজটা নাকি গুলশানের ব্রাঞ্চ ছাড়া হয়না। অথচ মগবাজার, আসাদগেট ব্রাঞ্চেও হয়। এদের কি জন্যে যে বেতন দিয়ে রেখেছে এই ব্যাংক, বুঝিনা। --------------------------------------------------------- আসাদগেট ব্রাঞ্চে লাস্ট ২৪ ডলার জমা দিতে গিয়ে আবার আরেক কাহিনী হলো।

টাকা জমা দিলাম ডলার জমা দেয়ার স্লিপে, পরে দেখি ওটা আমার ক্রেডিট কার্ডের বিডিটি পার্টে জমা করে দিয়েছে। ভাগ্যিস লাস্ট ডেটের ২ দিন আগে জমা দিয়েছিলাম, আদারওয়াইজ সময় মতো ডলার না জমা দেবার কারনে আবারো ১০ ডলার ফাইন করা হতো আমাকে, সেটাও আবার আমাকে দিতে হতো। ফোন দিলাম কল সেন্টারে, বলে: "স্যার, ওটাতো বিডিটি হিসেবে জমা হয়ে গিয়েছে, কিছু করার নেই, আপনি ব্রাঞ্চে গিয়ে কথা বলেন, এটা এখানে কিছু করা যাবেনা। " মনে মনে বললাম "... মারানী" তাহলে কল সেন্টার খুলেছিস কি জন্য? যাই হোক, ব্রাঞ্চে ফোন দিলাম, মামা বাড়ির আবদারের সুরে এক লোক বলে: "স্যার ওটাতো ভুলে জমা হয়ে গিয়েছে, এখনতো কিছু করার নেই"। এরপর জমা দেয়ার রিসিট স্ক্যান করে ইমেইল করলাম ওদের এনকোয়ারি এড্রেসে, এরপর কাজ হলো, পরদিন দেখলাম ওটা ডলার হিসেবে জমা করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.