আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মেয়ের কলেজ হোস্টেল

বিজ্ঞানী কলিন্স পড়ে চাঁদে যাওয়ার দোয়া। আমি ইমরান মাঝি দেখো ছইয়ের মধ্যে শোয়া মশার পাখার শব্দে নীলার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘর অন্ধকার । জানালা বন্ধ। তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরের ভেতর মনে হল জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে বৃষ্টির মত টুকরো টুকরো কালি।

এখন ভর সন্ধ্যা। শৈশবে এমন সময় শুয়ে থাকাটা আম্মা কিছুতেই বরদাস্থ করতো না। জানালা আছে কিন্তু খোলা যাবে না। এতো মশা চলে আসে। নীলার কানের কাছে অনেক গুলো গুন গুন করছে।

বড় বিরক্তিকর। কিন্তু একটু নড়াচড়া দিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো সে। ’লুনা কই? মেয়েটা রুমে একদম থাকে না । কেন ? নিজের রুম আছে, তবু অন্যের রুমে গিয়ে হেংলার মত আড্ডা দেয়া। সবাই যে তোমার মত হবে তা তো নয়’।

নীলা অনেক সময় দেখেছে লুনা আগ্রহ নিয়ে কোন গল্প করছে। আর মনি আপু কাজ করতে করতে তার সঙ্গে শুধু দু'একটা হু হ্যাঁ শব্দ করছে। কিন্তু বিচ্ছিরি মশা গুলো বড় বিরক্ত করছে। একটা ঝাঁকানি দিয়ে বিছানা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলো নীলা। বাথরুমে গেলো।

চোখে একটু জল দিয়ে ফোরকের নিচের অংশ দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ফিরে এলো । লাইট দিলো। মশাগুলো কিলবিল করে জোনাকির মতো জলে উঠলো। চেয়ার টেনে টেবিলে কাছে বসলো সে। তার মন আবার খারাপ হয়ে আসছে।

বেশ কিছু দিন ধরে জেগে থাকলেই ক্রমান্বয়ে তার মন খারাপ হয়ে যায়। আব্বা কি করছে ? ১৮ তারিখ হয়ে গেলো, টাকা পাঠাচ্ছে না কেন ? তিনি বুঝতে পারছেন না কেন, এখানে তো তার কোন ব্যবসা নেই । মামা কাকা নেই। একটা মেয়ে এতো দুরে একা একা টাকা ছাড়া কি করে থাকতে পারে। ধার করা টাকাও শেষ ।

নতুন করে আর ধার করার লোকও নেই। রাতের বাজার করা হয়নি। সে না হয় পানি খেয়ে শুয়ে থাকবে । কিন্তু লুনা মেয়েটার কাছে আর কত ছোট হওয়া যায়। ওতো কিছুতেই তাকে না খেয়ে ঘুমাতে দেবে না ।

ভর সন্ধ্যা। নীলা বসে আছে। মশা গুলো এখানেও তাকে ঘিরে ফেলেছে। জানালার বাইরে আম গাছটার পাতার নিচে একটা লাইট চকচক করে। এই মেচটার কোন নিরাপত্তা দেয়াল নেই ।

সিকিউরিটি গার্ড নেই। তারা মাত্র পাঁচটা মেয়ে থাকে। উপরে বাড়িওয়ালা আর নিচে জরার্জীন রুম গুলোতে তাদের মেচ। দেয়ালের সঙ্গে পিট দিয়ে বসা যায় না, পিঠে চুনা লেগে যায় । অনেক পুরনো বিল্ডিং, মেচ ভাড়া দেয়ার জন্য নতুন রং দেয়া হয়েছে।

কিন্তু রং গ্রহণ করেনি বৃদ্ধ দেয়াল। নিলা বার কয়েক উপরের দিকে তাকালো। স্থানে স্থানে মাকরশার জালের সঙ্গে মিশেছে ষ্টবের কালি। ফেনের পাতাগুলো কালো হয়ে আছে। বাড়ি যাওয়ার বড় ব্যাগটা চকির নিচে।

সামান্য দু'তিনশ টাকা দামের চকি দিয়েছে বাড়িওয়ালা। লোকটা আর কি করবে। এই সামান্য টাকায় কে আর যুৎসই সুবিধা দিতে পারে। ব্যাগের পকেটে খুচরো পয়সা থাকার কথা। বাইরে থেকে এলে দু'তিন টাকা পায়ই থাকে।

নীলা জমায়। বিপদের সময় কাজে লাগে। সে ব্যাগ টেনে বের করলো। পাঁচ টাকা পাওয়া গেছে। এদিয়ে কি করবে সে।

বড় ঝোর সমনের দোকান থেকে একটা ফোন করা যায়। কিন্তু কাকে ফোন করবে । নীলা হাত টেবিলের উপর দিয়ে মাথা তার উপর সপে দিল। আব্বা কি করে । সে কি তার মেয়ে না ।

পড়তে আসাটা কি তার ভুল। ঠিক মত পাশ করেছে, বড় কলেজে পড়তে চাওয়া কি সাভাবিক নয়। একটা ভালো পাশ দেয়ার পর টাকার সমস্যার কথা কার ভালো লাগে। তারও তো অধিকার আছে অনার্স পড়ার। এতো কঠিন সমস্যা হবে তা কে বুঝতে পেরেছিল।

আর বুঝেই বা কি হতো । টাকার সমস্যার জন্য লেখা পড়া ছেড়ে দেবে। 'আব্বা কি করে ?' তিনি তো সামান্য কটা টাকা দেন। তাও এতো দেরি'। লীনা কি টিউশনি করবে ? তখন তো ভেবেছিল করবে।

কিন্তু টিউশনি পাওয়া তো এতো সহজ নয়। 'সামান্য কটা টাকা না দিতে পারলে এতো ঘটা করে জন্ম দেয়ার কি প্রয়োজন ছিল। মেয়ে হিসেবে এই টুকু সুযোগ কি সে অন্যায় আবদার করেছে। ' 'কিন্তু লোকটা কি করবে। বৃদ্ধ মানুষ ।

যৌবনে যথা সাধ্য চেষ্টা তো সে করেছে। চিটাগাং, ঢাকা কোথায় যায়নি সে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কোন লাভ তো হলোই না, উল্টো অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়ে গেলো। ' এখন বাজারের ঘরের ভাড়া আর সামান্য জমিনই তাদের ভরসা। 'লোকটার আর দোষ কি।

কিন্তু তাদের আবস্থা এমন কেন হল ? জন্মের পর থেকে শুধু অভাব আর অভাব। ' নীলা কখনও একটা ভালো জামা কিনতে পারেনি। বাড়িটা কলেজ থেকে অনেক দুরে হলেও কখনও রিকশা নিতে কেউ দেখেনি তাকে। ভালো কোন জুতা কিংবা কোন পারফিউম কেনেনি। কখনও প্রাইভেট পড়েনি।

পম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ভালো ভাবে এস এস সি পাশ করেছে। 'কিন্ত এমন কেন হলো ? আল্লা তাদের প্রতি একটু দয়া কি চাইলে করতে পারতো না । ' চোখের জলে তার হাত ভিজে গেল। হাতের উল্টো পিট দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো সে। ফেনটা ছেড়ে দিল।

খট কারে একটা শব্দ করে চলতে শুরু করলো তা। স্তব্ধ হয়ে ফেনের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো নীলা। 'কি করা যায়। হাতে মাত্র পাঁচটা টাকা। ' ইতোমধ্যে বাড়ি চারটা চিঠি লিখেছে সে।

আব্বা কি চিঠি পাচ্ছে না। নীলা ফোর্থ ইয়ারে পড়ে। সমাজকল্যাণ। তার পুরো অনার্স লাইফ কেটে গেলো দুঃসহ অর্থাভাবে। সে কিছুই করতে পারেনি।

রেজাল্ট তার ভালোই হবে। কিন্তু এই পরীক্ষার আগ মুহুর্তে, এতো অভাব তার আর সহ্য হয় না। দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে নীলা জামা পরির্বতন করলো। তাকে বের হতে হবে। যেখান থেকে হউক টাকা সংগ্রহ করতে হবে।

আজ কয়েক দিন সে দু'বেলা খাচ্ছে। তাও আলু ভর্তা আর জগন্ন ডাল। নীলা নিজে রান্না করে খায় । আর পার্ট ওয়ান থেকে প্রচার করে দিয়েছে, মাছ মাংশ তার একদম পছন্দ নয়। চলবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.