আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুমু চুম্বন

অনেকদিন থেকে ভাবছি চুমু নিয়ে বিশেষ একটা লেখা লিখব । লিখব লিখব করে আর লেখা হয়নি । রবীন্দ্রনাথও বলেছেন গোপনে আমাকে একটা চুম্বন দাও । ভালোবাসা ও আদর প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো চুমু বিনিময় । চুমুর মাধ্যমেই আবেগ ভালোবাসার প্রকাশ পায় ।

চুমুর মাধ্যমেই প্রেম ভালোবাসা ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্কে রুপ নেয় । বিদেশে চুমুর মাধ্যমে কুশল বিনিময় হয় । তবে চুমুর কিছু ভালো আর খারাপ দিক আছে । চুমুর আদান-প্রদানে মুখে লালার প্রবাহ বেড়ে যায় । তাতে, মুখ, মাড়ি এবং দাঁতের স্বাস্থ্য পরোক্ষভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে ।

তবে লক্ষ্য রাখতে হবে চুমুতে অংশ গ্রহনকারী দু'জনের মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকতে হবে । চুমু হতে হবে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থমুখের চুমু । লালাতে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান থাকে যা ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে যদি মুখের স্বাস্থ ভালো থাকে । "মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন !/ যবে তুমি মুক্ত কেশে ফুলরাণী বেশে এসে,/ করেছিলে মোরে প্রিয় স্নেহ-আলিঙ্গন !/ মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন ? এক বন্ধু আমাকে বলেছিলো, চুমু না খেলে নাকি তার ঘুম আসে না । সে খুব চুমু বিশেষজ্ঞ ।

চুমুক দেওয়াটা যেমন অনু-পান তেমনি চুমু খাওয়াতে পেট না ভরলেও মন ভরে । ফেব্রুয়ারী ৫ হচ্ছে আন্তর্জাতিক চুমু দিবস ! ফরাসী স্থপতি অগাস্টি রডিনের একটি বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম – The Kiss । চুম্বন হল দুই ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে কাউকে আদর করা বা স্নেহ প্রকাশ করা । স্নেহ- ভালবাসা প্রকাশার্থে চুম্বন একটি সাধারণ প্রথা । বাৎস্যায়নের কামসূত্রে বিভিন্ন প্রকার চুম্বনের বর্ণনা পাওয়া যায় ।

তবে আধুনিক কাল অবধি তাহিতি এবং আফ্রিকা মহাদেশের কোনো কোনো আদিবাসী সমাজে চুম্বন প্রথা অজ্ঞাতই রয়ে গেছে । সংস্কৃত "চুম্বন" থেকে বাংলায় "চুমা", "চুমু", "চুমো" প্রভৃতি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে । মানব সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান ও উৎসবে চুম্বন প্রথা ব্যবহৃত হয়ে এসেছে । এটি অভিবাদনের সাধারণ একটি রীতি । পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলিতেও চুম্বন বর্ণিত হয়েছে।

হোমারের রচনা থেকে জানা যায় যে প্রাচীন গ্রিসে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পন্থা হিসেবে ওষ্ঠ, হস্ত ও পদ চুম্বনের প্রথা প্রচলিত ছিল । হজ্জ পালন কালে মুসলমানরা ক্বাবার প্রাচীরে স্থাপিত হযরে আসওয়াদ নামক পাথরটিতে চুম্বন করে থাকে । দু-জন মানুষ চুমু খাওয়ার সময় দশ মিলিয়ান থেকে এক বিলিয়ান ব্যাকটিরিয়া আদান-প্রদান করে । বিবর্তনের পথিকৃত চার্লস ডারউইন তার যৌনতার নির্বাচন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খেয়াল করেছিলেন যে, প্রকৃতিতে প্রায় সর্বত্রই মেয়েরা সঙ্গি নির্বাচনের ব্যাপারে খুব বেশি হিসেবী, সাবধানী আর খুঁতখুঁতে হয়ে থাকে । এই ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানে পরিচিত ‘নারী অভিরুচি’ (female choice) হিসেবে।

বিখ্যাত সামাজিক জীববিজ্ঞানী রবার্ট ট্রাইভার্সের ১৯৭২ সালের গবেষণা এ ব্যাপারে একটি মাইলফলক । মাত্র এক মিনিটের চুম্বনে ২৬ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। সুতরাং বেশি খাওয়া দাওয়া হলে পরদিনের লাঞ্চ বা ডিনার স্কিপ না করে বরং গোটা দশেক চুমু খেয়ে নিন-অনেকটাই ক্যালরি ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন । তবে আলগোছে চুমা নয়-গভীর গাঢ় চুম্বন-ই হতে পারে এক্সারসাইজের বিকল্প । চুমু সম্বন্ধে যে বিদ্যা তার নাম Philematology! থাইল্যান্ডের প্রেমিক যুগল ইক্কাছাই ও লাকসানা তিরানারাত অবশেষে ৪৬ ঘণ্টা ২৪ মিনিট নয় সেকেন্ড চুমু খেয়ে ইতিহাসের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়ে নিলেন ।

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এর আগে ৩২ ঘণ্টার সবচেয়ে দীর্ঘ চুমুর রেকর্ড ছিল জার্মানির এক যুগলের দখলে । পুরষ্কার হিসেবে তারা পেয়েছেন ১৬০৬ ডলার মূল্যমানের হীরের আংটি এবং নগদ ৩২১৩ ডলার । বিজয়ী'রা বলেন- আমরা দেখাতে চেয়েছি ভালোবাসা আসলেই শক্তিশালী । দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চুমু দেয়া সহজ কথা নয় । পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল বলেই তারা সফল হতে পেরেছেন ।

' বহুদিন ধরে ‘তাকে’ আপনার ভাল লাগছে আস্তে আস্তে ? বলতে কেমন যেন ইতস্ততঃ বোধ করছেন ? কমন্ ফ্রেন্ডের মাধ্যমে তার সঙ্গে আলাপ বা নিছকই জীবনের পাকদন্ডির ফাঁকে আলাপ হয়ে ভাল লেগে যাওয়া মানুষটির জন্য যদি তিলে তিলে জমিয়ে থাকেন রুপোলি মোড়কে মোড়া মিষ্টি আবেগ...তবে আর দেরি না করে কোমল চুম্বনের স্পর্শে সেই উপচে পড়া আবেগে ভরিয়ে দিন ‘তার’ হৃদয় । চুম্বনের রসায়নে নারী পুরুষে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও একটি বিষয়ে মিল পাওয়া গেছে । চুম্বন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে – নারী পুরুষ উভয়েরই । মনোবিজ্ঞানী উইন্ডি হিল এবং তার ছাত্রী কেরি উইলসনের গবেষণা থেকে জানা গেছে চুম্বনের পরে দেহের কর্টিসল (cortisol) হরমোন, যার পরিমান মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে বৃদ্ধি পায় বলে মনে করা হয়, তার স্তর লক্ষ্যনীয়ভাবে কমে আসে । এর থেকে বোঝা যায় যে, রোমান্টিক চুম্বন আমাদের মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে সহায়তা করে ।

সংখ্যাধিক দুঃখ দরিদ্রতার মধ্যে চুম্বন একটি টনিক বিশেষ । এ কথা ‘পরাগ’-এর । সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র, গল্প ও উপন্যাসে মানুষ চুম্বন চায় । সেকালের মাসিক পরাগ পত্রিকায় আরও লেখা হয়েছে, ‘চাষী লাঙ্গল কাঁদে কাদাজল ঠেলে রৌদ্র বৃষ্টি সমস্ত দিন সহ্য করে সন্ধ্যাবেলায় যখন তার কুঠীরে ফিরে আসে তখন পল্লীবালা চাষীবধুর একটা গাঢ় তপ্ত চুম্বনেতে তার সমস্ত শ্রম বিলুপ্ত হয়ে যায় । তাই বলছিলাম চুম্বনের প্রয়োজন আছে বই কি-পৃথিবীর মরুপথে চলতে তৃষ্ণার্থ মানবের সঙ্গে প্রিয়তমার চুম্বন একটি সুন্দর ঝরণা বিশেষ’ ।

প্রেমিক প্রেমিকাদের মস্তিস্কে এক ধরনের নিউরন থাকে যা তাদেরকে অন্ধকারেও একজন আরেকজনের ঠোঁট খুজে পেতে সাহায্য করে ! আর যদি চুম্বনের পর মনে হয় ‘কোথায় যেন মিলছে না’ তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার সঙ্গির MHC জিনের বিন্যাস আপনার জন্য কম্পিটেবল নয় । একটা কৌতুক, স্বামী-স্ত্রী খোশ মেজাজে গল্প করছে । স্বামীঃ আচ্ছা তুমি কি আমাকে এমন কিছু শোনাতে পারবে যা শুনে আমি একইসাথে আনন্দ আর কষ্ট পাব । স্ত্রীঃ হ্যা পারবো । স্বামীঃ শোনাও তো ।

স্ত্রীঃ তুমি তোমার বন্ধু আরিফের থেকেও অনেক সুন্দর করে চুমু দিতে পার । 'কিস্' শব্দটির ব্যুৎপত্তি পুরনো ইংলিশ শব্দ ‘সিসান’, যার মানে চুম্বন করা ইতিহাসবিদ আরনেস্ট ক্রলি’র মতে কিস্ বা চুম্বনের উৎস হয় বিংশ শতাব্দিতে তাঁর লেখায় জানা যায়, উচ্চতর সভ্যতার সামাজিক জীবনে কিস্, এক আবেগ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি পায় প্রথম| স্নেহের পরশে প্রিয় মানুষটিকে আদর জানানোর কিস্ সবচেয়ে সরল অথচ কোমল মাধ্যম । গোপনে হোক বা শহরের সবচেয়ে জনবহুল চৌরাস্তার মাঝে ট্যাকসির ব্যাক সিটে উচ্চারিত হচ্ছে, কবির সেই আমোঘ কথালিপি । 'তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁলো, যদিও প্রথমবার নয়, এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়' ! অধর মরিতে চায় তোমার অধরে’! সত্যই তো । চুমু বিহীন প্রেম – যেন অনেকটা লবনহীন খিঁচুড়ির মতোই বিস্বাদ ! তাই ভালবাসার কথা বললে অবধারিতভাবেই চুমুর কথা এসে পড়বে ।

ভালবাসা প্রকাশের আদি এবং অকৃত্রিম মাধ্যমটির নাম যে চুম্বন – সেই বিষয়ে সম্ভবতঃ কেউই দ্বিমত করবেন না । সারাবিশ্বে চুম্বন প্রচলিত আছে যুগ যুগ ধরে । মানব সমাজের শতকরা নব্বই ভাগেরও বেশি চুমু খায় । প্রখ্যাত এনথ্রপলজিস্ট ড. হেলেন ফিশার বলেছেন, চুমু দেয়াটা হচ্ছে মানব জাতির একটি শক্তিশালী মেকানিজম । জীবাণুর বংশ ধ্বংস করতে ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে চুম্বন বিনিময় করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।

বকাঝকার বদলে বুঝিয়ে বলে চুম্বন করে তাকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে । অনেক না বলা কথাই ওরা বুঝে যায় চুম্বনের মাধ্যমে । সমাজ জীবনে এই Non sexual kissing-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । পৃথিবীর সবচে' দীর্ঘ চুমুর রেকর্ড হচ্ছে ৩৩ ঘন্টা ১৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড! এটা করা হয়েছিলো ২০১০ সালের ভ্যালেন্টাইন ডে তে। এই যুগলের পরে অক্সিজেন দিয়ে ট্রিটমেন্ট দিতে হয়েছিলো ।

গোলাপবালা কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- "তবে মুখানি তুলিয়া চাও/ সুধীরে মুখানি তুলিয়া চাও !/ নীরবে একটি চুম্বন দাও,/ গোপনে একটি চুম্বন দাও !" বহুবছর আগেই কবি তার প্রেমিকা উদ্দেশে বলেছিলেন, 'গোপনে একটি চুম্বন দাও’ । প্রেমের এই গহন গভীর আর্তি তারাই বুঝবে, যারা প্রেমের গহনে ডুবে আছে এই প্রেম-পক্ষে এই আবেগের আবেদন চিরন্তন । কিস ডে বাংলা করে বলা যেতেই পারে চুম্বন দিবস চুম্বন ! উচ্চারণ করলে বা ঈষৎ কল্পনা করলেই যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগে ! চুম্বন, চুমু, মুআআ..., কিস্...যে নামেই ডাকো না কেন, চুমুর সেই স্বপ্ন-শিহরণ একটুও যেন কমে না...নানা রুপে নানা ভাবে ব্যাপারটা একেবারে রোম্যান্টিকতায় মাখোমাখো প্রেমিক প্রেমিকাদের মনের বাগানে ফুটতে থাকা অগুন্তি গোলাপের আনচান করা সুবাস । এ শহরের যুগলরা ছড়িয়ে দিচ্ছে সেই সুবাস কবির কথায় 'আশ্রয়' । চুমু নিয়ে প্রকাশিত নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট হরমোনের কারণে মানুষ চুমু খায় ।

চুমু খাওয়ার বৈজ্ঞানিক নাম ফিলেমাটোলজি । গবেষকরা এখন কেন মানুষ চুমু খায়, তার কার্যকারণ নিয়ে গবেষণা করছেন । তবে চুমু নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা নয় । অতীতের গবেষণাগুলো থেকে জানা যায়, বিশ্বের সব দেশের সব সংস্কৃতিতে চুমু খাওয়ার রেওয়াজ আছে । দিনের শুরুর চুমুর চুমুকে তাদের আয়ু বেড়ে যায় অন্তত বছর পাঁচেক ।

চুমু খেলেও কিন্তু মুখের পেশির দারুণ ভালো এক্সারসাইজ হয় । হ্যাঁ, গাঢ় গভীর চুম্বনে মুখের চৌত্রিশটি মাসলই নড়াচড়া করে। মুখের দারুণ ভালো এক্সারসাইজ হল চুম্বন । সিনেমাতে সবচে' দীর্ঘ চুমুর রেকর্ড হচ্ছে ৩ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড্ । সিনেমার নাম You're in the Army Now (১৯৪১ সালের) ।

চুম্বনের ব্যাপারটা মানব সমাজেরই কেবল একচেটিয়া নয়, প্রাইমেট এবং নন প্রাইমেট অনেক প্রাণির মধ্যেই চুম্বনের অস্তিত্ব দেখা যায় । মেয়েদের জন্য চুম্বন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠার পেছনে কিছু বিবর্তনীয় কারণ রয়েছে বলে মনে করা হয় । বিবর্তনের পথিকৃত চার্লস ডারউইন তার যৌনতার নির্বাচন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খেয়াল করেছিলেন যে, প্রকৃতিতে প্রায় সর্বত্রই মেয়েরা সঙ্গি নির্বাচনের ব্যাপারে খুব বেশি হিসেবী, সাবধানী আর খুঁতখুঁতে হয়ে থাকে । এই ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানে পরিচিত ‘নারী অভিরুচি’ (female choice) হিসেবে । "যার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার কেউ থাকে না, সে জানে না / বাতাসের দোলায় কেন বিপুল শিহরিত হয় ধানেরশীষ/ যে মেয়েটা এখনো কিশোরী- সে ভালোবাসে চুমুর জন্য/ যে মেয়েটা হয়ে উঠেছে যুবতী- তার ঠোঁটের কাপনও ভালোবাসার জন্য/ আর পরিনত একজন নারী- চুমুহীন কাটাবে না একটি দিনও/ যার ঠোঁটে ঠোঁট রাখার কেউ থাকে না/ সে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসা, মানবিক গুণাবলী আর মধুর কণ্ঠস্বর/ ভালোবাসাহীন, চুমুহীন একটি দিনও যেন কারো না আসে "।

ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার নাইরোপ তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন ফিনিশ একটি গোত্রে একসাথে নগ্ন হয়ে স্নান করার প্রচলন আছে, কিন্তু চুম্বনের নেই । অনেক জায়গায় চুম্বনকে ঘৃনিত প্রথা বলেও মনে করা হয় । কিন্তু এই স্বল্প কয়েকটি সংস্কৃতি বাদ দিলে মানব সমাজের মোটামুটি সবাই চুম্বন ব্যাপারটার সাথে পরিচিত . ধর্মে অভিভাবকদের ছেলে-মেয়ের পছন্দের ভিত্তিতেই বিয়ে দেওয়া কথা বলা হয়েছে, অমতে নয় । তবে সেই পছন্দ বা ভালোবাসার পন্থা হিসেবে ইসলামের বিধানই শাশ্বত । তবে সমাজে প্রচলিত তথাকথিত ভালোবাসা বা প্রেম ইসলামে হারাম ।

বাংলাদেশে কোনো যুগলের প্রকাশ্যে চুমু বিনিময় অনুচিত হবে । তবে বাংলাদেশে মাঝেমধ্যে সন্তানকে প্রকাশ্যে চুমু দিতে দেখা যায় পিতা-মাতাকে । চুমু হতে পারে ওই পিতা-মাতাদের চুমুর মতো স্নেহের প্রতীক । চুমু হতে পারে প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রীর ঠোঁটে চুমু খাওয়া রোমান্স ও আবেগের প্রতীক । সাধারণত কামজ চুমু বলতে বোঝায় পারস্পরিক ঠোঁটে চুমু ।

এটা স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে । স্থায়িত্ব যাই হোক না কেন, চুমুর স্বাদ নর-নারীর ক্ষেত্রে অনেক রকমের হতে পারে । পুরুষের কাছে পৃথিবীর সবচে' আকর্ষনীয় ঠোট? জরীপ অনুযায়ী এনজেলিনা জোলী ! ইউরোপ-আমেরিকায় পার্কে বা রাস্তাঘাটে চুম্বনের সময় মেয়েরা সাধারণত এক পায়ের গোড়ালি উঁচু করে, আরেক পা পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এর একটা কারণ হতে পারে, যেহেতু মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের চেয়ে খাটো, তাই হিল একটু উঁচু করতে হয়, আর তখন ভারসাম্য রক্ষার জন্য আরেক পা পেছনে ঠেলে দেয় । কিন্তু অনেক ছেলেও তো খাটো ।

ওরা যখন লম্বা মেয়েদের চুমু খায়, তখন কিন্তু পেছনে পা ঠেলে দেয় না । একজন প্রেম বিশেষজ্ঞ বলেন, মেয়েরা পেছনে পা ঠেলে দিয়ে ঘোষণা করে, সবাই দেখো, এই যুবক এখন শুধুই আমার ! যুক্তিটা ফেলে দেওয়ার মতো না । আমরা দেখি, রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় কোনো দম্পতি হাত ধরাধরি করে হাঁটে । মানে, দেখো, আমরা একে অপরের । কিন্তু বাসায় সেটা প্রকাশের দরকার হয় না বলে কেউ ঘরের ভেতর হাত ধরাধরি করে হাঁটে না ।

প্রকাশ্যে চুম্বনের সময়ও ও রকম ঘোষণার একটা ব্যাপার থাকে । এক টাকায় ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে । পাঁচ টাকায় একটা লাল গোলাপের মাধ্যমে । দশ টাকায় একটা ফুলের মালার মাধ্যমে । পনেরো টাকায় একটা গৃটিংস কার্ডের মাধ্যমে ।

আর একেবারেই বিনা দামে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় চুমুর মাধ্যমে। প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রী সেদিন আবেগভরা চুমু খেতে পারেন । তারা সেদিন দীর্ঘস্থায়ী চুমু ট্রাই করতে পারেন । চুমু খেতে ভয় পান? তবে আপনার Philematophobia হয়েছে ! সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা থেকে চুমুর উৎপত্তি। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, আগেকার দিনে যখন কৌটাভর্তি শিশুখাদ্য ছিল না কিংবা খাবার শিশুদের উপযোগী করার কৌশল মানুষ জানতো না ।

তখন মা খাবার চিবিয়ে শিশুর উপযোগী করে সেটি চুমুর মাধ্যমে নিজের মুখ থেকে সরাসরি শিশুর মুখে দিয়ে দিতেন । সেখান থেকেই মানুষ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে থাকে আর এখন প্রিয় মানুষের মুখে মুখ লাগিয়ে চুমু খায় । সর্বকালের সেরা চুমুর তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ভি-জে ডেতে টাইমস স্কয়ারে আমেরিকার একজন নাবিক ও তরুণী নার্সের চুমুর মুহূর্তটি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির সংবাদে ওই নাবিক আর নার্স আনন্দে একে অপরের অধরে অধর মিলিয়েছিলেন; যা আশা, ভালোবাসা আর নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় মূর্ত হয়ে আছে । এর পরেই স্থান পেয়েছে ভ্যাংকুভারে ভিন্ন দুই দেশের প্রেমিকযুগল স্কট জোনস আর অ্যালেক্স থমাসের চুম্বনের দৃশ্যটি ।

দাঙ্গার মধ্যে আতংকিত প্রেমিকাকে অভয় দিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে এই জুটি যেন প্রমাণ করেছে, হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতিতে বিশ্বভ্রমাণ্ডের আর সব কিছুই তুচ্ছ । ভালোবাসার কারণ যদি এই হয় যে মেয়েটি খুব সুন্দর তাহলে সেটাকে বলা হয় মোহ । ভালোবাসার কারণ যদি এই হয় যে মেয়েটিকে আপনি কিস করেছেন তাহলে সেটাকে বলা হয় হীনমোন্যতাবোধ । মেয়েদের কাছে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, অধিকাংশ মেয়েরা চুম্বন ছাড়া এমনকি সঙ্গির সাথে যৌনসম্ভোগে অস্বীকৃতও হয় । কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এতখানি প্রকট নয় ।

ছেলেদের কাছে একটা সময় পর চুমু খাওয়া না খাওয়া তেমন বড় হয়ে উঠে না – চুমু টুমু না খেয়ে হলেও কোন ‘আকর্ষনীয়’ মেয়ের সাথে যৌনসম্ভোগ করতে পারলে – ছেলেদের জন্য তাতেই সই! সমীক্ষায় দেখা গেছে কেউ ‘গুড কিসার’ না হওয়া সত্ত্বেও মেয়েদের চেয়ে অধিক সংখ্যক ছেলেরা তার সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয় । যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা । পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেছিলেন আমাদেরই এক পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারী । গভীর আশ্লেষে তারা পরসপরের মুখ চুম্বন করছিলেন । ভালোবাসার মানুষকে আদর করে চুমু খাওয়ার সেই সূত্রপাত-ইতিহাস সে কথাই বলছে ।

সময় বয়ে চলেছে আপন গতিতে । বিগত সাড়ে তিন হাজার বছরে সূর্যের এই সবুজ গ্রহের অনেক কিছুই আমূল বদলে গেছে । চুম্বনের মাধ্যমে নরনারীর সম্পর্ক উত্তরণের যে ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে, তাকেই সাদরে গ্রহণ করে নিল পৃথিবীর সব দেশের মানুষ । তবে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে উৎসাহী হয়েছিল রোমানরা । দেশে দেশে এই রোমান চুম্বনের নানা রীতি আজও চলছে ।

চুম্বনের সময় আমাদের মস্তিষেক অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় । ফলে একটা ভালোলাগার অনুভূতিতে ভরে ওঠে শরীর মনে । সারাদিনই মনটা থাকে ফুরফুরে । কিন্তু উপর্যুপরি চুমুর জন্য ঠোঁট ব্যাকুল থাকে । এর পেছনেও আছে নানা নিউরো হরমোনের খেলা ।

চুম্বনের সময় আমাদের মুখের ভেতরে এবং ঠোঁটের চারপাশে এমন কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যে একটি চুমুতে মন ভরে না । সুতরাং জীবনের পজিটিভ অ্যান্টিটিউড বাড়াতে ভালোবেসে চুমু খান, তবে অবশ্যই মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রেখে । মানব মানবীর যে কোনো একজন সাময়িকভাবে ইমোশনাল আশ্বস্ততার প্রয়োজনবোধ করলে বা পারিপার্শ্বিক কারণে মানসিক চাপে পড়লে, ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির চুম্বন তাকে চাপমুক্ত করে । তবে এ কথা ভুললে চলবে না, দুজন সমবয়সী মানব-মানবীর চুম্বন তাদের মানসিক সম্পর্ক থেকে দৈহিক সম্পর্ক তৈরির উত্তরণের প্রথম ধাপ । আমাদে দেশে হাজার পন্ডিত, মতেরও আর অন্ত নেই ।

তাদের মতে, চুম্বন চার প্রকার । সম, বক্র, উদভ্রান্ত আর অবপীড়িতক । ফ্রান্স , জার্মানী এবং নেদারল্যন্ডসের পুরুষ এবং নারী যৌনকর্মীদের উপর আমরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখতে পাই যে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাদের দেয়া সাধারণ সেবায় চুমো দেয়াটা অন্তর্ভুক্ত নয় । অর্থাৎ, সেখানে কোন রোমান্টিসিজম নেই । আমার জানামতে এখনো পর্যন্ত সর্বাধিক চুম্বনের ছবি ডন জুয়ান ।

ছবিটি নির্মিত হয় ১৯২৬ সনে । পরিচালক এলান ক্রসল্যান্ড । জন ব্যারিমোর ছবিতে একই সাথে পিতা-পুত্র যথা ডন জো এবং ডন জুয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । ডন জুয়ান তার পিতাসূত্রে জেনেছিলেন, নারী তিনটি জিনিশ দিতে পারে: জীবন, মোহমুক্তি এবং মৃত্যু । ছবিটি দেখলে পরিণতি জানতে পারবেন ।

ছবিতে জন ব্যারিমোর মেরি অ্যাস্টর এবং এস্টেল টেইলরকে সর্বসাকুল্যে ১২৭টি চুম্বন করেছিলেন । শুধু মানুষই নয়, অনেকে জেনে হয়তো অবাক হবেন, চুমুর অস্তিত্ব রয়েছে এমনকি অন্যান্য অনেক প্রানীর মধ্যেই । কেউ কি কবুতরের চুমু খাওয়া দেখেছেন? ওরা ঘরের চালে একেবারে উপরে দাঁড়িয়ে ঠুটে ঠুট আংটার মত করে আটকিয়ে দেয়। তারপরে বিশেষ ছন্দে উটা নামা করে মিনিট খানেক। এর নাম “নালি ভাংগা”।

তাই, বেশি করে চুমু খান, আর ভাতের উপর চাপ কমান ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।