আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিকো বাবু'র যতো খবর-১ ।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... ১৮ জুন ২০১৩ ছিল আজারের ১১তম জন্ম দিন। আজারের জন্ম দিনে কিকো বাবু'র আগমন। সে এক মজার ঘটনা। মায়া'র বন্ধু করবী। করবী জাগো ফাউন্ডেশানের ফাউন্ডার।

করবী তার ফেউসবুকে একটি স্টাটাস দিল, 'তিনটি পাপিজ বিক্রয় হইবে'। বিজ্ঞাপনটির সঙ্গে একটি মোবাইল নাম্বার জুড়ে দেওয়া। মায়া সেই স্টাটাস দেখা মাত্রই একটি পাপিজ নেওয়ার জন্য ফোন করলো। একটি ছেলে ফোন ধরলো। কিন্তু তার কথা বলায় তেমন আগ্রহ নেই।

মায়া জানতে চাইলো, পাপিজের কোনো ছবি দেখা যাবে কিনা? ছেলেটি বললো, আমরা পরে ছবি আপলোড করবো। মায়া বললো, আমি একটা নিতে চাই। কিভাবে নিতে পারি? ছেলেটি বললো, আপনাকে ধানমন্ডিতে জাগো ফাউন্ডেশানের অফিসে আসতে হবে। মায়া বললো, আমার তো গাড়ি নেই। আপনারা যদি আমাকে একটু কষ্ট করে দেখাতে পারেন, আমি টাকা দিয়ে দিলাম আর পাপিজ রেখে দিলাম।

ছেলেটি বললো, তাদের সেই সময় হবে না। যে আগে আসবে সে পাবে। মায়া একটু বিরক্ত হয়ে বললো, শোনেন, আমি কিন্তু করবী'র ফ্রেন্ড। আর জাগো ফাউন্ডশানের একজন স্পন্সর। আমার জন্য আপনারা এইটুকু করতে পারবেন না? এইবার ছেলেটি একটু ভরকে গেল।

এতোক্ষণ দায়সারা ভাবে কথা বলছিল। এবার একটু জড়তা ভেঙ্গে বললো, কিন্তু আপনাকেই আসতে হবে। মায়া বললো, আমি কিন্তু এখন করবীকে ফোন করবো। আমার একটা চাই। আপনি পারলে একটা ছবি দেখান।

ছেলেটি আচ্ছা দেখি, বলে ফোন রেখে দিল। আমি মায়াকে বললাম, তুমি করবীকে একটা মেসেজ পাঠাও, যে তুমি একটা পাপিজ নিতে চাও। করবী যেনো পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রাত দশটা পর্যন্ত করবী'র মেসেজের কোনো রিপ্লাই নেই। মায়া একটু বিরক্ত হয়েই আমাকে বলতে লাগলো, স্পন্সর নেবার সময় আসায় বা আমার অফিসে আসতে পারে, আর আমি একটা জিনিস চাইলাম, এখন আসতে পারবে না? নিবো না পাপিজ।

এটা ১৭ জুনের ঘটনা। মায়া'র এক ছেলে আজার আর এক মেয়ে জিনা। ওরা ভারতে পড়াশুনা করে। ছুটিতে বাংলাদেশে আসলে আমাদের কাছে অর্ধেক সময় আর তাদের বাবার কাছে অর্ধেক সময় কাটায়। আজার জিনা তখন বাবার বাসায়।

আজারের জন্মদিন বিকাল পর্যন্ত বাবা'র কাছে হবে। আর তারপর মায়ের কাছে আমাদের বাসায় হবে। মায়া আর আমি বিয়ে করেছি ২০১০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। তখন থেকেই এভাবে আজার আর জিনা'র জন্ম দিন পালিত হচ্ছে। আজার জিনা দু'জনেই পোষা বিড়াল কুকুর খুব পছন্দ করে।

মায়া থুব ছোটবেলা থেকেই বিড়াল পুষতো। বসনিয়ায় মায়া'র যে বিড়ালটি ছিল সেটি মায়ার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতো। তার নাম ছিল পেপে। মায়া পেপের সব কথা বুঝতো। আর মায়ার সব কথা পেপে বুঝতো।

বসনিয়া যুদ্ধের সময় পেপেকে ছেড়ে দিয়ে মায়া ও মায়ার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু এখনো মায়া পেপেকো ভুলতে পারেনি। বাংলাদেশে আসার পর মায়া একটা ময়না পাখি পোষা শুরু করলো। কিন্তু দুই তিন বছর পর ময়না মারা যায়। তারপর মায়া একটি বিড়াল নিল।

বিড়ালটির নাম ছিল জ্যাকি। জিনা'র আবার বিড়ালের এলার্জি। ডাক্তার বললো, ঘরে যদি বিড়াল থাকে জিনা'র এলার্জি বন্ধ হবে না। তারপর মায়া মেয়ের কথা চিন্তা করে জ্যাকিকে ছেড়ে দিল। কিন্তু কারো বিড়াল কা কুকুর দেখলেই মায়া ভারী চঞ্চল হয়ে যায়।

জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে মায়াকে। কৈশোরে একটি যুদ্ধ মোকাবেলা করা। তারপর পনের বছরের সংসার ভেঙ্গে যাওয়া। ২০০৯ সালের ২৫ মে মায়া'র বাবা ডাক্তার সুরেন্দ্র লোহানী মারা যান। মায়া'র বাবা নেপালী হিন্দু ব্রাহ্মণ আর মা বসনিয়ান মুসলিম।

মায়া দুটো ধর্মের নিয়ম কানুনই ফলো করে। ১৯৮৭ সালে মায়া'র বাবা ডাক্তার সুরেন্দ্র লোহানী নেপাল চলে আসেন। আর মায়া, মায়া'র বড় ভাই ডেভিড লোহানী আর মা রেফিজা পিরিজ বসনিয়ায় থেকে যায়। মায়া'র বাবা'র পরিবার তাঁর বসনিয়ার বিয়েটা ভালোভাবে মেনে নেয়নি। কারণটা গোড়া ধর্মের ইগো।

তাই তারা ছেলেকে আবার নেপালে বিয়ে করালেন। সেখানে প্রমিলা আ্ন্টি ও তাতা'র দুই ছেলে। ডেনিস লোহানী ও প্রতীক লোহানী। ডেভিড, মায়া, ডেনিস প্রতীক চার ভাইবোন। ওরা বাবাকে ডাকে তাতা।

ডেভিড লোহানী বসনিয়া যুদ্ধের সময় নেদারল্রান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেই সেটেলড। ডেভিড বিয়ে করেছে বসনিয়ায়। বউয়ের নাম মাকসিদা। ডেভিড-মাকসিদার এক মেয়ে লাইলা আর এক মেয়ে আলভিন।

মায়া পড়াশুনা করেছে সাইকোলজিতে। সুইজারল্যান্ডের জোনেভার ওয়েবস্টার ইউনিভার্সিটিতে। ডেনিস চীন থেকে ডাক্তারি পাস করেছে। প্রতীক নেপালে গ্রাজুয়েশান করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়া ফেইসবুকে দেখলো করবী একটা মেসেজ পাঠিয়েছে।

'পাপিজ বিক্রয় হইবে' যে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিল ওটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর করবী লিখেছে পাপিজ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। আর মায়া অবশ্যই একটা পাবে। মায়া চবাবে করবীকে জানালো, আজ আমার ছেলের জন্মদিন। আজ পাপিজটা পেলে আমার ছেলে খুব খুশি হতো।

করবী আজারের জন্য জন্মদিনের কার্ড সহ পাপিজকে পাঠিয়ে দিল সন্ধ্যায়। মায়া বললো, ওর নামে হবে কিকো। সেই থেকেই সে কিকো বাবু। আমাদের বাসার নতুন মহারাজ। কিকো মুরগির মাংশ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে।

তারপর দুধ-রুটি। মাংম দিয়ে ভাতও খায়। কিকো'র জন্য মায়া ডগফুড কিনেছিল। তা খেয়ে তার পেট খারাপ করেছে। ডাক্তারের পরামর্শে ঠাণ্ডা দুধ আর ওই খাবারটি বন্ধ করার পর এখন কিকো সুস্থ।

আশ্চর্যের বিষয় হল, করবী'র কুকুর হল কিকো'র মা। সেখানে তার আরো এক ভাই ও এক বোন আছে। তাদের ছেড়ে আমাদের কাছে এসে সে এখন পর্যন্ত মন খারাপ করেনি। একবারের জন্যও কান্নাকাটি করেনি। আমি বলেছি গুড বয়।

সেই থেকে সে আমার সঙ্গে ভারী খেলাধুলঅ করছে। তার সবচেয়ে পছন্দের বন্ধু হল আজার। আজারের সাথে সে খাওয়া বন্ধ রেখে খেলা করতে পছন্দ করে। তারপর তার পছন্দ মায়া। কিকো বাবুকে নিয়ে ডিওএইচএস এলাকায় নতুন ঝামেলায় পড়েছি।

কিকো বাবুকে নিয়ে রোজ আমি সকাল বিকাল বাইরে যাই এক্সারসাইজ করতে। কিন্তু এখানকার কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট যিনি একজন সাবেক সেনা অফিসার আমাকে ডেকে বললেন, নো, ইয়োর পেট আর নট এলাউড আইটসাইড। আমাকে নির্দেশ দিলেন, গো। আমি জানতে চাইলাম, ওর তো রোজ অনেক এক্সারসাইজ দরকার। ওকে নিয়ে ফুটপথে হাঁটলে সমস্যা কোথায়? তিনি বললেন, ইফ ইউ ডোন্ট ফলো মাই কমান্ড, আই উইল কল দ্য গার্ড অ্যন্ড দে উইল সিস ইউর পাপিজ।

এবার আসুন আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানে কি বলে দেখি- Citation: Cruelty to Animals Act, 1920 (Act No. I of 1920): Summary: ''This Act constitutes Bangladesh's prevention of cruelty to animals act. The act defines "animal" as "any domestic or captured animal." Any person who: overdrives, cruelty or unnecessarily beats, or otherwise ill-treats any animal; binds or carries an animal in a position as to subject the animal to unnecessary pain or suffering; offers or has in his possession an animal that is suffering because of mutilation, thirst, starvation or other ill-treatment shall be punished for every such offense with fine up to one hundred Taka, or imprisonment up to three months, or with both. Overloading an animal is also punishable with a fine or jail term, and animal fighting results in a fine.'' আমাদের কিকো বাবু'র বয়স দুই মাস। কিকো হল আমেরিকান এক্সিমো ডগ। স্ট্যান্ডার্ট সাইজ। বাংলাদেশে পোষা কুকুরের অধিকার নিয়ে এখন আমাকে লিখতে হবে বলে ভাবছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।