আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অযৌক্তিক কিকো সঙ্গীত এবং একটি ভুল অপরাহ্ন

ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে কিরিটি ক্ষিপ্র গতিতে ছুটছে। বেলাভূমির বালু তার পায়ের নিচ দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে। তাকে পারতেই হবে। আঁকাবাঁকা পথরেখায় ছুটে চলেছে। তাদের কোমিক্য গোষ্ঠীর দ্রুততম যুবতীদের মাঝে সে অন্যতম।

এমনিতে তার আত্মবিশ্বাস কম না, কিন্তু আজকে কিছু একটা ভুল হয়ে গেল। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি আর নির্ভুল গাণিতিক হিসাবের কারণে এই কমবয়সেই তাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ দেওয়া হয়েছে। গোষ্ঠীর নিরাপত্তার দায়িত্বে গঠিত কমিটির প্রধান সে। তার কাঠিন্য আর আবেগহীনতা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও সে এটাকে তার শক্তি বলেই মনে করে। অযথা আবেগ অনুভূতি তার কাছে ন্যাকামি বলে বোধ হয়।

কিন্তু আজ সে তার চলার পথ থেকে কিভাবে যেন বিচ্যুত হয়েছে। এর জন্যও অপ্রয়জনীয় আবেগই দায়ী। অন্যমনষ্ক হয়ে সে কবি কৃকিহার কথা ভাবছিল তখনই যত বিপত্তি। কৃকিহা আজ তাকে কিছু অসংলগ্ন শব্দগুচ্ছ শুনিয়েছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অবাস্তব তো বটেই, কিন্তু সে অনেক ভেবেও অসংলগ্নতাটা ঠিক কোথায় খুঁজে বের করতে পারছিল না। প্রতিভাধারী বলে খ্যাত যেসব কবিদের সে একদম দেখতে পারে না, সেই তাদের একজনের কথা সে ভাবছিল বলে নিজেকে ধিক্কার দিল।

প্রায় ২৫কিমি দূরের চলমান বস্তু থেকে আগত প্রতিফলিত আলোকরশ্মি তার দুই হাজার তিনশ একানব্বইতম চোখে আপতিত হওয়ার সময় সে সতর্ক হলেও আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণে তখন ঘটনাটিকে বিপজ্জনক মনে হয়নি। এরপর সাময়িকভাবে কোন এক অজানার দেশে হারিয়ে গিয়েছিল। সে একই সময়ে অনেকগুলো সঙ্কেত একত্রে পর্যবেক্ষণ ও সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে ভাবতে পারেলেও আজ যেন তার চিন্তাশক্তি অসার হয়ে গিয়েছিল। তবে না, সৌভাগ্যের ব্যাপার এতে এখন পর্যন্ত কারো ক্ষতি হয়নি। আসন্ন বিপদের আগমনবার্তা সে আগেই সংবাদ প্রেরকদের জানিয়ে দিতে পেরেছে।

ছড়িয়ে গেছে পুরো গোষ্ঠীতে। কিন্তু সবাইকে জানাতে গিয়ে দূরবর্তী স্থান থেকে বেশকিছু অতিকায় প্রাণি তার কাছাকাছি চলে এসেছে। আচ্ছা, কৃকিহা সংবাদটা পেয়েছে তো? নাকি বালুকণায় আলোর নানান রঙ নিয়ে তার উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত কবিতা সংরক্ষণ করে রাখছে? ছিঃ আবার, আবার সে ঐ নির্বোধটার কথা ভাবছে? বালুর উপর তার হাত পায়ের ধারালো অংশ দিয়ে গর্ত খুঁড়বে কিরিটি এখন। সাধারণত প্রায় দুই সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের নিখুঁত বৃত্ত আঁকে সে প্রথমে। বিশ ডিগ্রী কোনে বালি খুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলাটা তার বৈশিষ্ট্য।

কিন্তু গর্তটা আগেই খোঁড়া। ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে সে। কম্পন আরো জোরে অনূভব করতে পারছে, প্রাণিটি খুবই কাছে চলে এসেছে। তার গর্তে হাতড়ানো শুরু করেছে। কিন্তু নাহ, তার আগেই সে নিজেকে বালির মাঝে আবৃত করে ফেলেছে।

নির্বোধ মানবজাতির চিন্তার ক্ষমতা তাদের মত এত দ্রুত না। কৃত্রিম আলোর ঝলকানি ১মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য অনুভব করল। এরপর ব্যর্থ পদচারণার কম্পণ দূরে সরে যেতে লাগল। না, সাথে সাথেই চলে গেলো না, তার আশেপাশেই কিছুক্ষণ রইল। সাথে একটা পরিচিত কম্পন।

এই প্রথমবার ভয় পেল সে, কিন্তু নিজের জন্য নয়। এরপর আস্তে আস্তে ভারী পদধ্বনি দূরে মিলিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তাদের গোষ্ঠী অনেকের আনন্দধ্বনি, বাচ্চাদের হুড়োহুড়িতে মুখর হয়ে উঠল তাদের বাসস্থান। স্বাভাবিক জীবন শুরু হল। আকাশটা কিরিটির গায়ের রঙের মত লাল হয়ে আছে।

সূর্যটা আর কিছুক্ষণের মধ্যে আবছা হয়ে আসবে। হারিয়ে যাবে যেখানে সমুদ্র আর আকাশ মিলেমিশে একাকার। ঢেউ বালুবেলায় আছড়ে পড়ছে। কিরিটি তার সংস্পর্শগ্রাহী কোমল কেশগুচ্ছ দিয়ে পানির ঝাপটা অনুভব করল। মোহনীয় একটা পর্যায়বৃত্ত সুর ভেসে আসছে সাথে অদ্ভুত সুরেলা একটা কবিতা।

নাকি গান? জানে না সে। সংবেদী স্নায়ু মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে রইল। অ্যান্টেনার ঘ্রাণ সংবেদক দিয়ে চেনা একটা গন্ধ সনাক্ত করল। তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছন্নছাড়া উজ্জ্বল চোখের এক কবি। কিরিটি রুক্ষ স্বরে কথা বলতে গিয়েও আবিষ্কার করল পারছে না, কেঁপে যাচ্ছে।

সে বলল, " তুমি এই জগতের সবচেয়ে অকর্মণ্য প্রাণি হয়েও, আমার জন্য আশ্রয় তৈরি করলে কিভাবে? কেন আগে আমাকে নিরাপদে রাখতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিপন্ন করলে? বেকুব ছেলে, তোমার বহিরাংশে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে নির্মম মানব তুমি কি তা টের পাচ্ছনা?" কৃকিহা কিছু না বলে মৃদু হেসে তার দিকে তাকালো। কিন্তু কিরিটি যেন অনেককিছু শুনতে পেল। কৃকিহার সুরের মুর্ছনায় হারিয়ে যেতে লাগল কিরিটি, যে সুর শুধু তার জন্যই সৃষ্ট, শুধুমাত্র তার শুনতে জন্যই এক বিশেষ কম্পাঙ্কে সরব। সময় আর স্রোত বয়ে চলল, কিন্তু তারা দুইজন থমকে রইল তাদের জগতে .... রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধ্বনিত হতে লাগল কিকো সঙ্গীত...................... পরিশিষ্টঃ বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা ভার্সিটি পড়ুয়া মহি অনেক দৌড়েও কাঁকড়া ধরতে পারল না, বন্ধুদের সাথে বাজী ধরেছিল সে। কি সুন্দর লাল কাঁকড়াগুলো, ভেবেছিল ধরে নিয়ে যাবে।

সৈকতে ছিল, কাছে যাওয়ার আগেই গর্তে ঢুকে পড়ে। মহা চালাক! বালি খোঁড়ার পর গর্তের ডিজাইনের ছবি তুলতে পেরেছে কিছু। শুধু একটা কাঁকড়া গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছিল! সেটাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিল, কিন্তু কিভাবে যেন পার পেয়ে গেল। খোলসে আঁচড় কাটতে পেরেছিল শুধু। কিন্তু সে জানতে পারল না, দুই কর্কট সদস্যের মাঝে আসলে এই ছোট ঘটনায় কতটা তোলপাড় হয়ে গেছে।

কিছু তথ্য সংযোজনঃ কাঁকড়ার যৌগিক আঁখি থাকে যাতে কয়েক হাজার optical unit থাকে। এরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ কিমি দূরের কোনকিছুর গতিবিধি সনাক্ত করতে সক্ষম। এদের টাচ রিসেপ্টর থাকে যা দিয়ে সিগ্ন্যাল কন্টাক্ট করে সমুদ্রের স্রোত এবং আর অনেক কিছু বুঝতে পারে। কাঁকড়ার অ্যান্টেনায় 'স্মেল ডিটেক্টর' থাকে। কাঁকড়া বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনতে ও সৃষ্টি করতে পারে।

//লেখাটির ভেতরে সামান্য অংশ এবং শেষের তথ্য পরে সংযোজিত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.