আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্যোৎস্নার চাঁদ

আমি তালীম ইনামুর রহমান নিজের ভালোলাগা থেকে লেখালেখি করি; আমার কোন লেখা আপনাদের সামান্য ভালো লাগার কারণ হলেই আমি ধন্য। একাদশীর চাঁদের আলোতে বাইরে জ্যোৎস্নার বন্যা বইছে। আলোর প্লাবন আজ যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব কিছু। ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে অবিরাম। দখিনের জানালা দিয়ে হঠাৎ এলোমেলো কিছু বাতাস এসে উড়িয়ে দিয়ে যায় জ্যোৎস্নার শাড়ীর আঁচল।

জ্যোৎস্না খাট থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে বসে। রাত দু’টার কম হবে না। তবু তার চোখে এক ফোটাও ঘুম নেই। উদাস মনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। একটি বাদুড় অদ্ভুত শব্দ করে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় কোন এক অজানা গন্তব্যে।

অন্য সময় হলে ভয়ে চিৎকার দিয়ে সারা বাড়ির মানুষ এক করত সে। কিন্তু আজ তার কাছে তেমন কিছুই মনে হয়না। জ্যোৎস্না অনেকক্ষণ ধরে জ্যোৎস্না দেখে, তাকিয়ে থাকে আকাশের চাঁদের দিকে। তার কাছে আজ চাঁদটাকে বড় বেশি দুঃখী মনে হয়। কি নিঃসঙ্গ চাঁদটা! সারা রাত একা একা আকাশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াবে; কখনো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলবে; কখনো হারিয়ে যাবে আবার কখনো বেরিয়ে আসবে।

ইস! চাঁদটার সাথে যদি জ্যোৎস্না থাকতে পারতো। তারা দু’জনে একসাথে হাত ধরে হাঁটত, গল্প করত, একজন মেঘের আড়ালে লুকালে আরেক জন খুঁজে বের করত, এর পর একজনের বুকে মাথা রেখে আরেক জন ঘুমিয়ে পড়ত। ইস! কি যে মজা হত। তার খুব রাগ হয় সৃষ্টিকর্তার প্রতি তিনি কি চাঁদ আর জ্যোৎস্নার কষ্ট বুঝেননা? না, তিনি সবি বুঝেন। তিনি হয়ত চাঁদ আর জ্যোৎস্নার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন।

এসব ভাবতে ভাবতে জ্যোৎস্না এসে আবার ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়। আকাশের চাঁদটা আস্তে আস্তে করে নেমে আসছে। নেমে আসতে আসতে অনেক কাছে এসে গেছে; এই যে এখন বাঁশ ঝাড়ের বড় বাঁশটির মাথার উপর । এইতো একেবারে মাটিতে। চাঁদের হাত পাগুলো কি সুন্দর! আকাশে থাকলে শুধু ওর মুখটাই দেখা যায়।

জ্যোৎস্না ঘরের দরজা খুলে দেয়, চাঁদ এসে তার পাশে বসে। “জ্যোৎস্না, আমাকে চিনতে পারছ; দেখ, আমি তোমার চাঁদ। তুমি না কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে হাঁটতে চেয়েছিলে। তুমিতো আকাশে যেতে পারবেনা তাই আমিই মাটিতে নেমে এসেছি। শুধু তোমার জন্য, এখন থেকে আমি শুধু তোমার কাছেই থাকব।

” জ্যোৎস্নার দু’চোখ জলে ভরে ওঠে। সে আর কান্না চাপিয়ে রাখতে পারেনা - ঝাঁপিয়ে পড়ে চাঁদের বুকে; “আরো আগে কেন আসনি... তুমি আরো আগে কেন আসনি... কথা দাও আমায় ছেড়ে যাবেনা কখনো” চিৎকার দিয়ে ওঠে জ্যোৎস্না। এরই সাথে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়; হাওয়ায় মিলিয়ে যায় চাঁদ; কেঁদে ওঠে জ্যোৎস্না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে আকাশের চাঁদ আকাশেই আছে। মাটির পৃথিবীতে নেমে আসার মতো ভুল সে কখনোই করনি।

বিছানায় পড়ে থাকা মোবাইল ফোনটি হাতে নেয় সে, তাকিয়ে দেখে রাত ৩.৩০। চাঁদের সাথে কথা বলতে তার খুবই ইচ্ছে হয়। শহিদুল ইসলাম চাঁদ, তার স্বামী, থাকে সুদূর দুবাইয়ে। ফোনের ব্যালেন্স দেখে সে, যে টাকা আছে তাতে বড়জোর দু’ মিনিট কথা বলা যেতে পারে; এতে বরং তার কষ্ট বাড়বে, কমবেনা। কথা বলতে গেলে সে হয়ত বলেই ফেলবে “তুমি চলে আস চাঁদ।

আমার টাকা-পয়সা লাগবেনা, সোনা-গহনা লাগবেনা, আমার বাড়ি-গাড়ি কিছুই চাইনা; চাঁদ, শুধু তুমিই আস; আমার শুধু তোমাকে চাই। ” কথাগুলো একেবারে নতুন নয়; সে আগেও ফোনে কথাগুলো বলেছিল চাঁদকে। বাড়ির লোক-জন শুনে খুব হাসা হেসেছিল। তার এক চাচী শাশুড়িকে সে বলতে শুনেছিল “কেমুন বেশরম বউ, বলে কিনা ‘আমার শুধু তোমাকে চাই’ স্বামীরে কয় তুমি; আমরাতো সারা জীবনে স্বামীর নাম পর্যন্ত মুখে আনি নাই”। “আর দেখেন কেমুন অলক্ষ্মী কয় কিনা “আমার সোনা-গহনার দরকার নাই”।

পাশ থেকে আরেক জন ফোড়ন কাটে। সে দিন সে অনেকক্ষণ একা একা কেঁদেছিল। তার স্বামীকে সে কাছে পেতে চাইবে এটা কি তার অপরাধ? সে বুঝতে পারেনা সে তার গলার দিকে তাকায়, চাঁদ তার জন্য খাঁটি সোনার চেইন পাঠিয়েছিল। এটা নিয়েও তাকে কম কথা শুনতে হয়নি। তার শাশুড়ি সুযোগ পেলেই খোঁটা দিত।

“কি বউ, চেইনের ভারেই-ত নড়তে পারনা, কাম করবা কেমনে?” চেইনটি এখনো তার গলায়। সে চেইনটি স্পর্শ করে, এর মাঝে চাঁদের ছোঁয়া খুঁজে কিন্তু সে পায় শুধু চেইন। এটি সত্যি সত্যিই আজ তার কাছে অনেক বেশি ভারি মনে হচ্ছে, তার ইচ্ছে হয় এটা সে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, দুরে, অনেক দুরে। তার এসব কিছুই চাইনা শুধু চাঁদকে চাই। তার চোখের কোনের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে কানের পাশ দিয়ে।

ভেজা চোখ নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে জ্যোৎস্না। ****** “শোন বাবা, নিজের শরীলের দিকে খেয়াল রাখবা...ঠিক ঠাক মত খাওয়া দাওয়া করবা। ... হ ...আমরা হগলে বালা আছি... আমাগো লাইগা কোনু চিন্তা পেরেশানি করবানা কেমুন... ধর, তোমার ছোড ভাইর লগে কতা কও”। “হেলু ভাইজান, আমার লাইগা বালা দেইখা একটা লেপটুপ পাডাইবা... নানা তাড়াতাড়ি পাডাইবা কইলাম.. হ.. হ.. লেহা পড়াতো করিই... নাও ছোড কাকার লগে কতা কও। ” “শুনছি আরবের খাজুর খুউব বালা; তয় তুমি আমাগো লাইগা খাজুর পাডাইবা... আর হুন, তোমার চাচাত ভাই কালামরে দুবাই নেওনের কতা কইছিলাম, তার কি ব্যবস্থা করছ... না না তাড়াতাড়ি কর; ওয় ত বাড়ি থাইক্যা নষ্ট হইয়া যাইতাছে... না বাবা তুমি যেমনে পার ব্যবস্থা কর”।

দুর হতে কথাগুলো শুনতে পায় জ্যোৎস্না। সে বুঝতে পারে চাঁদ ফোন করেছে। সে কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে জানে প্রতি বারের মত এবারো তার হাতে আসতে আসতে ৩০ মিনিট পার হয়ে যাবে । কিন্তু তার আগেই এবার ফোন তার হাতে আসে ।

চাচা বলে ‘ধর বৌমা কতা কও’। জ্যোৎস্না ফোনটি নিয়ে সোজা তার রুমে চলে যায়। সে জানে এটাতে তার অনেক সমালোচনা হবে। হয়ত ছোট চাচী বলেই বসবে “কেমুন আক্কেল বউডা। পোলাডা কতদিন পর ফোন করছে একটু কতা কমু; আর সে কিনা....” যার যা ইচ্ছে হয় বলুক; জ্যোৎস্না এবার কারো কথায় কান দেবেনা।

“কেমন আছ জ্যোৎস্না” ও প্রান্ত থেকে চাঁদ বলে। কথা বলেনা জ্যোৎস্না চুপ করে থাকে। ফোন করার আগে মনে হয় কত কথা বলবে কিন্তু ফোন করার পর আর কিছুই মনে থাকেনা। এ সমস্যা প্রতিবারই তার হয়। সেওবা কি করবে তার বলার চাইতে শুনতেই যে বেশি ভাল লাগে।

“কিছু বলছ না যে” ও প্রান্ত থেকে প্রশ্ন আসে। “কবে আসছ?” খুব নিচু স্বরে জানতে চায় জ্যোৎস্না। কারণ এ এক প্রশ্ন সে যে কত বার চাঁদকে করেছে তার কোন হিসেব নেই। “-এই...মাত্র ছ’ মাস। ” –“তুমি দু’বছর ধরেতো এ কথাই বলে আসছো।

সত্যি করে বলতো কবে আসছো?” – “তোমার জন্য কি আনব?” কথা ঘুরাতে চায় চাঁদ। জ্যোৎস্না জানে তার স্বামীর আয়। সামান্য হোটেলের চাকরী। থাকা, খাওয়া, ইকামা ফি, অন্যান্য ব্যয় সব মিলিয়ে খুব কম টাকাই হাতে থাকে । তার উপর সবার আবদার পূরণ, ঋণ পরিশোধ সব কিছুই বুঝতে পারে জ্যোৎস্না ।

“আমার জন্য চাঁদ, একটা চাঁদ এনো” অস্পষ্ট স্বরে বলে সে। এবার সত্যি সত্যিই চাঁদ দেশে আসবে। আগামী শুক্রবার ফ্লাইট। আজ রবিবার। সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি।

জ্যোৎস্না হিসেব করে এখনো পাঁচ দিন । তার আর এক মুহূর্তও কাটতে চাইছেনা । সে ভাবতেই পারেনা কি করে এতটা সময় কাটাবে। প্রতিটা ঘণ্টাকে মনে হয় একেকটা বছর। বার বার ঘড়ি দেখে।

চরম অস্থির লাগে। সে চিন্তাই করতে পারেনা কি করে বিগত পাঁচটি বছর একাকী কাটিয়ে দিল। তার মনে পড়ে বিয়ের আগের দিনগুলোর কথা। সে সুন্দরী তাই অপেক্ষায় ছিল একজন অসুন্দর বরের। কারণ গ্রামে একটি প্রবাদ আছে, “পাগলের জালে শৈল মাছ”।

সে ধরেই নিয়েছিল তার বর হবে মোটা, কাল, টেকো-মাথা, গোঁফওয়ালা ৪০-৫০ বছরের একজন ‘সুপুরুষ’। যে তাকে হয়ত অনেক সোনা-গহনা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে। হাতে বালা, কানে দুল, নাকে ফুল, মাথায় টিকলি কোমরে বিছা, পায়ে নুপুর, আরো কত কি? তার এই ধারণাটি মোটেও অমুলক ছিলনা কারণ তার বান্ধবীদের প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছিল। তার মনে পড়ে যায় বান্ধবী লিজার কথা। যে ছিল তার বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী, মেধাবী হাসি-খুশি আর উচ্ছল।

ওর বিয়ে হয়েছিল এইচ এস সি তে পড়ার সময়। জ্যোৎস্না ও গিয়েছিল তার বিয়েতে। কিন্তু বরকে দেখে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। সে অবশ্য বড়দের মুখে শুনেছিল বরের বয়স একটু বেশিই এবং এও জেনেছিল “ছেলে মানুষের আবার বয়স কি?”। কিন্তু একটুর অর্থ যে কত তা টের পেল দেখার পর।

কম করে হলেও লিজার বাবার চেয়ে দশ বছরের বড়। যেমনি টেকো মাথা তেমনি বিশাল ভূড়ি; মাথার চুলও পেকেছে দুএকটা। লেখা-পড়া খুব একটা করেনি। তবে ব্যবসা করে, গাড়ি-বাড়ি আছে। নারীও আগে একটা ছিল।

অভ্যাস ভালো না তাই বিদায় করে দিয়েছে। আহা এমন ‘হীরের টুকরো ছেলে’ কপাল গুণে মেলে। জ্যোৎস্না সেখানে আর থাকতে পারেনি; অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে এসেছিল। বাড়িতে এসে অনেক কেঁদেছিল। আর নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেছিল একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য।

ঠিক এমনি একদিন শুনল তাকে ছেলে দেখতে যেতে হবে। বাবা এসে বলল “মা, তোর জন্য আমার কাছে একটা প্রস্তাব এসেছে, ছেলে আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। তুই দেখে তোর মত আমাকে জানা” বাবার কথা শুনে সে তার নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। বাবা ঠিক আছেতো। একটা মেয়ে দেখবে ছেলেকে! “আব্বা আপনার পছন্দই আমার পছন্দ, আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন, আমার কিছু বলার নেই” অন্য দশজন মেয়ের মতই বলেছিল সে।

“কিছু বললে তোকেই বলতে হবে, সারা জীবনতো তোকেই তার সাথে থাকতে হবে। আমি তো তোকে বিয়ে দিয়েই খালাস, তুই দেখে পছন্দ করলেই তারা তোকে দেখতে আসবে আর আমার কাছে তোর পছন্দটাই আসল। ” পরে বাবার চাপে পড়েই সে চাঁদের সাথে দেখা করেছিল কলেজ ক্যম্পাসে। ওর মনে পড়ে মুহূর্তগুলোর কথা। চাঁদের সামনে আসতে তার সে কি লজ্জা! লজ্জায় লাল হয়ে কোন রকমে বলেছিল- “স্লামালাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন? “জী ভাল আপনি কেমন?” চাঁদ জবাব দিল।

আপনি সম্বোধনে সে আরো বেশি লজ্জা পেল। “ভাইয়া আমি তাহলে আসি” এই বলে পালিয়ে বাঁচল। চাঁদকে দেখে যেন সে সত্যিই চাঁদ দেখেছিল। গ্রামের কলেজ থেকে বি. কম. করে এম কম করেছিল শহর থেকে। পাঁচ ফুট সাড়ে ছ’ ইঞ্চি লম্বা, নির্মেদ শরীর, উজ্জ্বল ফর্সা রং।

দেখে মনে হয় ‘চির সবুজ’। সে মনে মনে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করেছিল চাঁদ যেন তাকে পছন্দ করে। চাঁদও তাকে শুধু পছন্দই করেনি বিয়েও ঠিক করে ফেলেছিল। কিন্তু বিয়ের আগের দিনই তার আব্বা হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান। ফলে বিয়ে পিছিয়ে যায় তিন মাস।

এর ভেতরে অনেকে রটিয়েছিল জ্যোৎস্নার বিয়ে ভেঙে গেছে। গ্রামে কোন মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার মত কলঙ্ক আর দ্বিতীয়টি নেই, তা সে যে কারনেই হোক না কেন। অনেকে চাঁদকে বুঝিয়েছিল-“বাপ মারা মাইয়া, বড় অলক্ষী”। জবাবে চাঁদ বলত-“ একদিন আপনি আমি সবাই মরব”। কিছু লোক থাকে যাদের কাজই প্যাঁচ লাগানো।

এরা অন্যের ক্ষতি করে বড় আনন্দ পায়। আর বিয়ে ভাঙা হলেতো কথাই নেই। জ্যোৎস্নার আরো মনে পড়ে বাসর রাতের কথা। বাসর ঘরে চাঁদ জ্যোৎস্নাকে বলেছিল-“আমি জানি তুমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাওনি। তোমার বাবা অনেকটা জোর করেই আমার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছে।

তাই হয়ত তুমি আমাকে এখনো মনে প্রাণে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারনি। তবে মনে রেখ আমার জীবনের মতোই তোমাকে আমি ভালবাসি” কথাগুলো তার কাছে যে কত ভাল লেগেছিল, সে তা বুঝাতে পারবেনা। সে নিজেও বুঝতে পারেনি যে একজন পুরুষের কথা এত ভাল লাগতে পারে। তার মনটা ভরে গিয়েছিল স্বর্গীয় সুখে। সে নিজের মাথাটি চাঁদের বুকে লুকিয়ে বলেছিল-“তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য, ধন্য আমার জীবন।

সারা জীবন আমাকে ঠিক এভাবে ভালবাসায় তোমার বুকে আগলে রাখবে, কথা দাও। ” জ্যোৎস্নার কানের কাছে মুখ নিয়ে চাঁদ বলেছিল “আগামী কাল আমার ফ্লাইট, দুবাই যাচ্ছি, ফিরব ক’ বছর পর। কি যাবার অনুমতি দেবেনা আমায়?” হাতের পাখি আকাশে উড়ে গেলে যেমন লাগে ঠিক তেমনটা জ্যোৎস্নার কাছে লেগেছিল কিনা সে তা বলতে পারবেনা; তবে সে কোন কথা বলতে পারেনি। পারলে হয়ত বলত “কি লাভ বিদেশে গিয়ে, যে টাকা খরচ করে বিদেশে যাবে সে টাকা দিয়ে না হয় দেশেই কিছু একটা কর”। কিন্তু সে কি শুনতো, হয়ত শুনতা না ।

তাই হয়তবা সে বলতে পারেনি। আজ বৃহস্পতিবার। আগামীকাল চাঁদ দেশে আসছে। বাড়িতে আত্মীয় স্বজনে ভরপুর। সন্ধ্যায় সবাই মিলে টিভি দেখছে।

সেখানে আছে জ্যোৎস্নাও। টিভি পর্দায় লেখা আসল “নাটকের বাকী অংশ দেখবেন খবরের পরে” । খবর চলছে। সংবাদের এক পর্যায়ে সংবাদ পাঠক পাঠ করলেন “গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক হোটেলে অগ্নিকান্ডে পনের জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিন জন বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন বলে জানা গেছে ।

নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক শহিদুল ইসলাম চাঁদের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। .....” হঠাৎ একটি বিকট চিৎকার শোনা গেল। তার পর চারদিক কান্নার রোল। আর এটিই ছিল জ্যোৎস্নার জীবনের শেষ চিৎকার। পূর্ণিমা রাত।

আজও চাঁদের আলোতে বাইরে জ্যোৎস্নার বন্যা । ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে অবিরাম চাঁদ ও জ্যোৎস্না মাটির সবুজ বিছানায় ঘুমিয়ে আছে পাশাপশি; থাকবে অনন্তকাল ধরে। কেউ তাদের আলাদা করতে পারবেনা। আকাশের চাঁদ তাকিয়ে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।