আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন হোক দা কমন জেন্ডার।

মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। Hermaphrodite বা হিজড়া-দের সামাজিক অবস্থান মানবেতর বা তারা পর্যাপ্ত সহানুভূতি পাচ্ছে না; ঠিকাছে অতীব সত্য। তারা খেতে না পেয়ে মারা যাচ্ছে- মিথ্যা, তাদের একেবারে এক থেকে একশ- সবাই ঘৃণার চোখে দেখে- মিথ্যা।

অবস্থা যতই খারাপ হোক সেটা দিয়ে বর্তমানে এই মানুষ গুলানের একটা বিশাল অংশ যা করে বেড়াচ্ছে তাকে আমরা Justify করতে পারিনা। বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি; আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, সেটি একটি শপিং কমপ্লেক্সের ভেতর। তো, প্রতি মাসের শুরুতেই হিজড়া-দের পাঁচ জনের একটি দল আসে চাঁদা নিতে। এই দৃশ্য গত আড়াই বছর ধরেই দেখছি। প্রথমে ১০০ টাকা নিত, তারপর দুশ হোল, এখন তিনশ করে নিচ্ছে।

ঈদ-পার্বণে তা বেড়ে পাঁচশ- হাজারে ঠেকে। আদালতের রায়ে ঠিক যেমন বলা হয়- এত টাকা অনাদায়ে এত বছর/ মাস জরিমানা, ঠিক তেমনই মাসে দু'বার চলে আসলে, আমরা টাকা দিতে আপত্তি জানালে তারা দিগম্বর হয়ে, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দর্শন তান্ডব নৃত্যের অবতারনা করেন। সাধারণত আমরা সিনেমা দেখার জন্যে টাকা দেই, এই ক্ষেত্রে ওই দৃশ্য না দেখার জন্যে টাকা দিতে হয়। মাশাল্লাহ... আমাদের এক সময়কার ক্যাশিয়ার ছিলেন কামরুল মুনশি নামে এক ভাই, ওই দলের সরদার তার নাম পর্যন্ত মনে রেখেছিলেন। এসেই, বাইরে থেকে "ওই মুনশি, টেয়া দে, নইলে কড় তুলি দির"... বলে স্বীয় বস্ত্র হরণের যে হুমকি দিতেন, তাতেই সবার আত্মা নড়বড়ে অবস্থা হয়ে যেত।

হ্যা, এইবার সাহসি ভাইয়েরা বলতে পারেন, ছিহ ছিহ, আপনারা পুরুষ হয়ে হিজড়া দের সাথে আপোষ...!!!! হ্যা, একবার আমরা ডাণ্ডা নিয়ে বের হয়েছিলাম, এর পর ওনাদের উলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলু ডাক শুনে সে এক ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কোটি, লাখ না হলেও শত শত হিজড়া এসে হাজির হয়ে গিয়েছিল। এর পর যে অসাধারণ মধুমাখা শব্দাবলী মৌমাছির মত উড়ে উড়ে ডাণ্ডা-কেই ঠাণ্ডা করে গিয়েছিল, তা বলা বাহুল্য মাত্র। সেদিন, পুরো কমপ্লেক্সে বিচ্ছিরি অবস্থা। পুলিশ ডাকা হোল।

পুলিশ এসে উল্টো আমাদের দিল বকা। ধীরে ধীরে এই ধরণের মানুষ দের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন, অনেক পুরুষই যোগ দিচ্ছে হিজড়া-দের দলে। সুঠাম, ঋজু শরীর। আমরা অত বোকা নিশ্চয়ই নই, যে অন্তত একজন পুরুষ কে আলাদা করে চিনতে পারবোনা।

কিন্তু, কিচ্ছু করতে পারছিনা। প্রশাসন ভিতু, আমরা সাহসি হয়ে কতটুকু কি করতে পারব। আমার পেশা আলাদা, আমার তাতে সময় দিতে হচ্ছে, কিন্তু পুলিশ বাবাজি তার পেশায় সময় না দিলে কিভাবে কি? অথচ, এই প্রশাসন ঠিক নির্দেশ পেলে বন্ধ করে দিতে পারবে, এদের এই মহামারি আকারে, সুপারবাগ আকারে গজিয়ে ওঠা নতুন চাদাবাজির মহোৎসব। আমাদের পাশের দেশেই হিজড়া দের এখন ক্রমোন্নতি চোখে পড়ার মত, এরা একসময় চাঁদাবাজিই করত, কিন্তু এখন অনেকেই পড়ালেখা করছে, বড় হচ্ছে। এদের বোঝাতে হবে, আমরা মানুষের একজন হয়ে বলছি, সবাই তোমাদের ঘেন্না করেনা।

এ নিছক ভুল বোঝাবোঝি। যে টুকু অসম্মানিত তোমরা হও, তা তৈরি হয়েছে যতটা না শারীরিক প্রতিবন্ধকতায়, তার চেয়ে ঢেঁড় বেশী মানসিক দ্বন্দে, দুরত্বে। এর দায় প্রায় পুরোটাই আমরা যারা নিজেদের স্বাভাবিক দাবী করি, তারা নিচ্ছি। কিন্তু; দায় তোমাদেরও আছে। শুরুটা কঠিন হবে; কিন্তু একাকি শুরু করি।

আমি অন্তত আর দেখলেই তেড়ে ফুড়ে উঠছি না। কিন্তু; চাঁদাবাজি সে হিজড়াই হোক কিংবা কোন মহান বীর বীর্যবান অ্যালেকজান্ডার দা গ্রেট হোক- বিনাযুদ্ধে মানছিনা। পুরুষ-নারী-হিজড়া পরিচয়ের চেয়ে বড় হোক মানুষ। লিঙ্গের চেয়ে বড় হোক জীবন। হ্যা; জীবনই হোক দা কমন জেন্ডার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.