আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম পালন নাকি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি???

"মুসলমানে মসজিদ দিলে হিদুঁ দিবো মন্দির। " সাম্যবাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানিক এভাবেই তার পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছিলেন । তার আশংকা ছিল ধর্ম হয়তো ভয়ংকর কিছু। কিন্তু আজ থেকে বহু বহু বছর আগে সৃষ্টিকর্তা মানুষের কল্যানের জন্য তার মনোনীত পুরুষদের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন ধর্মের শাশ্বত বানী। যার মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল শান্তির প্রতিষ্ঠা।

সব ধর্মই সবসময় সত্য,সুন্দর আর ন্যায়ের কথা বলে এসেছে। আর তাই এই দ্বাবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা ধর্মের অস্তিত্ব স্বীকার করি। ধর্ম পালন করি। ধমের্র মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে খুজিঁ। মানুষের কল্যান করি।

কিন্তু আমরা অথবা আমাদের দেশ বর্তমানে যে সংকটাপন্ন রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে আছি এই দ্বন্দ্বের মূল বিষয় কিন্তু আস্তিক,নাস্তিক বিতর্ক নয়। হেফাজতে ইসলামের মতো তথাকথিত সংগঠনগুলো নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নাস্তিক নাস্তিক বলে যে রাজপথ চৌচির করছেন তারচেয়ে যদি তারা ইসলামের মহত্‍ ও মানবিক আর সহনশীল ব্যাপারগুলোর প্রচার ও চর্চা করে যেতেন তবেই ধর্মের মঙ্গল হতো। একথা র্নিদ্ধিধায় বলা যায়,নাস্তিকদের ধর্ম পালন বিষয়ক বেশ কিছু প্রশ্ন আছে। তবে সেটা কিন্তু নির্দিষ্ট কোন ধর্মের প্রতি নয় বরং সকল ধর্মের প্রতিই তাদের আন্তরিক অবিশ্বাস। যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস আছে তাদের মাঝে স্রষ্টার বিষয়ে পক্ষপাতিত্বও আছে।

একেক ধর্মের মানুষ একেক নামে তাদের স্রষ্টাকে ডেকে থাকে কিংবা তাদের ধর্ম পালন করে এবং তাদের ধর্মকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। পৃথিবীর বড় বড় ধর্মযুদ্ধগুলোর কোনটাই কিন্তু আস্তিক বনাম নাস্তিকের মধ্যে হয় নি। বরং দুটি ভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের মধ্যেই হয়েছে। নাস্তিকরা নিজেরা ধর্ম পালন করে না কিন্তু অন্যকে ধর্ম পালন করতে বাধাঁও দেয় না। এখন পর্যন্ত এমন কোন নজীর নেই যে কোন নাস্তিক কোন মুসলমানকে মসজিদে যেতে বাধাঁ দিয়েছে কিংবা মন্দির ভেঙ্গে দিয়েছে।

বরং ঘোর আস্তিকরা যারা নিজেদের ধার্মিক বলে দাবি করে তারাই নোয়াখালীসহ দেশের আরো কিছু জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ভেঙ্গে দিয়েছে। সাধারন মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রবল আঘাত হেনেছে। একটা সভ্য সমাজে যেটা কখনোই কাম্য নয়। ধর্ম বিষয়ে নাস্তিক্যবাদীদের সংশয় ও সমালোচনা দুটোই আছে । কিন্তু তারাতো কখনো ওদের মতো শক্তি প্রয়োগ করে কারো ধর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নি।

তাই আমাদের মনে এই প্রশ্নের উদয় হওয়া অতি স্বাভাবিক যে এরা আসলেই ধার্মিক কিনা! আমাদের সংবিধানে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা আছে তার সাথে এই গোষ্ঠি কি সাংঘর্ষিক নয়??আবার এই গোষ্ঠীই কিন্তু আমাদের পতাকা পুড়িয়েছিল কিংবা শহিদ মিনার উড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ধর্ম রক্ষার নামে তথাকথিত এই গোষ্ঠী এদেশে রাজনীতি কিংবা বসবাসের অধিকার কতোখানি রাখে সে প্রশ্নই আজ বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত্‍। হেফাজতে ইসলাম নামে সদ্য গজানো এই সংগঠন এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে এদেশকে একটি তালেবানী অপরাষ্ট্র হিশেবে গড়ে তুলতে চাইছে। কিন্তু একথা কেউ বলতে পারবে না যে বর্তমানে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানরা হুমকির মুখে আছে। প্রকৃতপক্ষে কেবল ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ থেকে যতগুলো রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে তার কোনটাই সুফল বয়ে আনে নি।

বরং তা সবসময়ই বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকির কারন হয়েছে। পাকিস্থান, ইসরাইল কিংবা ফিলিস্তিনি সবগুলোই একেকটা অস্থিতিশীল অপরাষ্ট্র হিশেবেই চিনিয়েছে। ধর্মের মূল উদ্দশ্য হল শান্তি। সহনশীলতা অর্জন। অপরকে সম্মান করতে শেখা।

কোন ধর্মই কখনোই উগ্রবাদের শিক্ষা দেয় না । তাই আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে ধর্ম পালন নাকি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি??? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.