আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৌদ্ধ ধর্ম নাস্তিকতার ধর্ম নয় বরং আস্তিকতাই সেখানে বিদ্যমান ।

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
মহান আল্লাহপাক যুগে যুগে তার সৃষ্ট মানুষের হেদায়াতের জন্য অনেক নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন । মানুষ শয়তানের ধোকায় পড়ে স্রষ্টার দেয়া প্রকৃত দ্বীন থেকে বার বার সরে গিয়েছে এবং নিজস্ব মনগড়া অনেক কিছূ চালু করেছে । মানুষ স্রষ্টার পাঠানো আসমানী কিতাব এবং সহীফা গুলোকে বিকৃত করে নিজস্ব মনগড়া বিষয় প্রবেশ করিয়েছে তার স্বার্থ হাসিল করার জন্য । মানুষের শয়তানী কর্মকান্ডের ফলে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম অব্যবস্হার সৃষ্টি হয়েছে এবং স্রষ্টা সে অনুসারে সে অব্যবস্হা দূর করার জন্য সেরকম পথ প্রদর্শক পাঠিয়েছেন । সকল পথ প্রদর্শক বা নবীর জ্ঞান এবং মিশন এক রকম ছিল না ।

এটা স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন কাকে কতটুকু ঐশী জ্ঞান দিবেন এবং তার দায়িত্ব-কর্তব্য কতটুকু । যেমন- ঈসা (আঃ) একজন নবী ও রাসূল ছিলেন । তিনি শুধুমাত্র ইহুদীদের উপর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন । তিনি ইহুদীদের মধ্যে যে অব্যবস্হা চালূ হয়েছিল, তারা মূসা (আঃ) শরীয়ত থেকে যে দূরে সরে গিয়েছিল , তা দূর করতে-ই এসেছিলেন । তদ্রুপ , গৈাতম বুদ্ধ সনাতন ধর্মের মধ্যে যে অব্যবস্হা চালু হয়েছিল, তা দূর করতে-ই এসেছিলেন ।

তিনি সনাতন ধর্ম বাতিল করে নতুন কোন ধর্ম চালু করতে আসেন নি । তিনি ঈশ্বর কে নিয়ে নতুন কিছু বলতে আসেন নি । কারণ, তা প্রকৃত সনাতন ধর্মের একেশ্বরাদের রয়েছে । বরং তিনি ধর্মের নামে যেসব অধর্ম চালু হয়েছিল , যেমন- জাত-পাত ইত্যাদি দূর করতে-ই এসেছিলেন । যেমন তিনি বলেছেন- "জন্মসুত্রে কেউ ব্রাক্ষণ হয় না ।

যিনি অহিংস, আসক্তিরহিত, পাপমুক্ত, ভীতিশূন্য, কপটতা বর্জিত , কাম-ক্রোধমুক্ত, বিশুদ্ধচিত্ত, ক্ষমাশীল, প্রজ্ঞাবাণ, সত্য ও ধর্মানুরাগী, সদালাপী ও সদাচারী , তিনিই ব্রাক্ষণ অভিধাযোগ্য । " [ব্রাক্ষণবগগোঃ ৩৯৬-৪০৮] তিনি ঈশ্বরের কথা অস্বীকার করেন নি আবার বেশী করে বলেন নি । তবে প্রচ্ছন্নভাবে উল্লেখ করেছেন , যা অনেকে ধরতে পারেন নি বা অনুধাবন করতে পারেন নি । তবে তিনি মানুষের অহিংস জীবন-যাপনের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন । স্রষ্টা উনাকে যতটুকু দান করেছেন, ততটুকু-ই তিনি মানুষকে প্রদান করেছেন ।

উনার কর্তব্য ও কর্ম স্রষ্টা কর্তক নির্ধারিত ছিল , অন্যন্য সকল পয়গম্বরদের মতই । নিম্নে তার কিছু বাণী নিয়ে আলোচনা করছি, যেগুলো থেকে বুঝা যাবে তিনি ঈশ্বর এবং পরকালে বিশ্বাস রাখতেন । ১. মিথ্যাবাদী, ধর্মলংঘনকারী ও পরলোকে অবিশ্বাসী ব্যাক্তি যে কোন পাপ কাজ করতে পারে । [লোকবগগোঃ ১৭৬] ২. আলস্যকে প্রশ্রয় দিওনা । ধর্মকে অনুসরণ কর ।

ইহলোক ও পরলোক - দুই লোকেই সূখে থাকবে । [লোকবগগোঃ ১৬৮] ৩. পাপী ইহলোক ও পরলোক - উভয়লোকে মনস্তাপে দগ্ধ হয় । অপরদিকে পূণ্যবান উভয়লোকেই পরমমানন্দ লাভ করেন । ৪. মূর্খরা 'আমার পুত্র, আমার অর্থ, আমার ধন' এই চিন্তা করে যন্ত্রণা ভোগ করে । যখন সে নিজেই নিজের না তখন পৃত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ? [বালবগগোঃ ৬২] উপরোক্ত বাণীসমূহের বোল্ড করা অংশগুলো খেয়াল করুন ।

প্রথম তিনটিতে তিনি স্পষ্টতঃই ইহকাল অর্থাৎ এই দুনিয়ার জীবন আর পরকাল বা মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন । সুতরাং এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে , তিনি পরকাল বিশ্বাস করতেন । পরকাল মানেই হল - মৃত্যুর পর এর জীবন । মানুষ মৃত্যুর সাথে সাথেই নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে না করং এই দুনিয়ার মানুষের কর্মফলের উপর নির্ভর করে স্রষ্টা তার পরবর্তী জীবনের অবস্হা নির্ধারণ করবেন । যা সনাতন, খ্রীষ্টান, জুডাইজম , প্রাচীন জুরথুষ্ট্রবাদ এবং ইসলাম ধর্মে বিশদভাবে বলা আছে ।

চতুর্থ নং বাণীতে তিনি স্রষ্টার কথা ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন । আমরা জানি , স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করেছেন । আমাদের নিজেদের বলতে কিছুই নেই । আমরা তার দেয়া নেয়ামত অল্প কিছুদিন ভোগ করে আবার তার কাছেই ফিরে যাব । এই কথাটাই উক্ত বাণীতে ফুটে ওঠেছে ।

যেখানে তিনি স্রষ্টার কথা প্রচ্ছন্নভাবে বলেছেন । এই বাণীটা কিন্তু খূব মূল্যবান - "যখন সে নিজেই নিজের না তখন পৃত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ?" সর্বশেষে একটি বিষয় উল্লেখ করে এ সর্ম্পকিত আলোচনার ইতি টানছি । মহামতি বুদ্ধ মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন । যা তার স্রষ্টার একজন পয়গম্বর হওয়ার সুষ্পষ্ট প্রমাণ এবং স্রষ্টার অস্তিত্বের বিশ্বাসী বলে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় । কারণ, কোন নাস্তিকের পক্ষে এরকম ভবিষ্যদ্বানী এবং অন্যান্যদের বুদ্ধ হওয়া সম্পর্কে বলা সম্ভব নয় ।

স্রষ্টার পক্ষেই ভবিষ্যত জানা সম্ভব এবং উনার কাছ থেকে জেনেই নবী-রাসূলগণ সাধারণতঃ ভবিষ্যদ্বাণী করতেন । গৌতম বুদ্ধ মৃত্যুর সময় তাহার প্রিয় শিষ্য নন্দাকে 'অন্তিম বুদ্ধ' সম্পর্কে এক ভবিষ্যদ্বাণী শ্রবণ করান - 'নন্দা' এই পৃথিবীতে আমি প্রথম বুদ্ধ নই এবং অন্তিম (সর্বশেষ) বুদ্ধও নই । এই পৃথিবীতে সত্য এবং পরোপকার শিক্ষা দান করার জন্য সময় মত এক 'বুদ্ধ' আর্বিভূত হইবেন । তিনি পূতঃ-পবিত্র অন্তঃকরণের অধিকারী হইবেন । তাহার হৃদয় পরিশুদ্ধ হইবে; তিনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞাবান হইবেন ।

তিনি সকল লোকের নায়ক ও পথ প্রদর্শক হইবেন । যদ্রূপ আমি পৃথিবীতে সত্যের শিক্ষা দিয়াছি , তিনিও তদ্রূপ পৃথিবীতে সত্যের শিক্ষা প্রদান করিবেন । তিনি পৃথিবীতে এমন এক জীবন-দর্শন প্রদর্শন করিবেন, যাহা একাধারে পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ হইবে । নন্দ, তাহার নাম "মৈত্রেয়" হইবে । [Gospel of Buddha - by carus, P-217] [প্রখ্যাত দার্শনিক এস রাধাকৃষ্ঞন -এর ইংরেজী অনুবাদ The Dhammapada থেকে বৌদ্ধের বাণীগুলো সংগৃহীত ]
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.