গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্সে এগিয়ে ব্রাজিল। এর সঙ্গে ‘হোম কন্ডিশনের’ সুবিধা তো আছেই। তবে আগামীকালের কনফেডারেশনস কাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ শুধু উরুগুয়ে নয়, অদৃশ্য প্রতিপক্ষ হয়ে আছে ১৯৫০ বিশ্বকাপের ভূতও!
এখন পর্যন্ত একবারই বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে ব্রাজিল। সেটা ১৯৫০ সালে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতে শেষ ম্যাচে ড্র-ই যথেষ্ট ছিল।
মারাকানা স্টেডিয়ামে সেদিন উপড়ে পড়েছিল দুই লাখ মানুষ। উদযাপনের সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছিল। ব্রাজিলীয়দের আত্মবিশ্বাস এতটাই বেশি ছিল যে ফাইনালের দিনই (১৬ জুলাই) ‘ও মুন্ডে’ পত্রিকা ব্রাজিল দলের ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম করে—এই দলটাই চ্যাম্পিয়ন!
ফাইনালের শুরুটা ব্রাজিলীয়দেরই ছিল। প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের খেলার শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই (৪৭ মিনিটে) ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ফ্রেইকা।
উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা গ্যালারি। তবে আনন্দটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৬৬ মিনিটে ম্যাচে সমতা আনেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড হুয়ান আলবার্তো শিয়াফিনো। ড্র হলেও তো সমস্যা নেই। জিতবে ব্রাজিল।
ম্যাচেরও আর মাত্র মিনিট দশেক বাকি।
কিন্তু সে সময়েই ব্রাজিল গোলরক্ষক বারবোসাকে ফাঁকি দিয়ে ঘিগিয়া করে বসলেন গোল! গোটা গ্যালারি শোকস্তব্ধ। ম্যাচ শেষের বাঁশিতে মারাকানা ভেঙে পড়ল কান্নায়। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ব্রাজিলজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
ব্রাজিলের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন উরুগুইয়ান ঘিগিয়া।
১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতিচারণ করে একবার ঘিগিয়া বলেছিলেন, ‘কেবল তিন জন লোক মারাকানার দুই লাখ দর্শককে মুহূর্তের মধ্যে নীরব করে দিয়েছিল। ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা (সঙ্গীতশিল্পী), পোপ দ্বিতীয় জন পল এবং আমি। ’
কাল আরেকটা ব্রাজিল-উরুগুয়ে ম্যাচ। ব্রাজিলের মাটিতেই। বিশ্বকাপের মহড়া টুর্নামেন্টের এই লড়াইয়ের আগে স্বাভাবিকভাবেই ভেসে উঠছে ৬৩ বছর আগের স্মৃতি।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে ব্রাজিলীয় লেখক ও সাংবাদিক নেলসন রদ্রিগেজ লিখেছেন, ‘সেটা ছিল জাতীয় বিপর্যয়, অনেকটা হিরোশিমার মতো। আমাদের বিপর্যয়, আমাদের হিরোশিমা ছিল ১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কাছে হার। ’
নেইমাররা কি পারবেন কাল উরুগুয়েকে বিদায় করে পুরোনো ক্ষতে প্রলেপ দিতে? না কি আরেকবার হতাশায় পুড়বে ব্রাজিল?
কী হবে, না হবে তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। এটুকু অনুমান করা যায়, সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থাতেই থাকবে ব্রাজিল। গোলরক্ষক হুলিও সিজারের কথাতেও সেটা স্পষ্ট, ‘উরুগুয়ের আক্রমণভাগ খুব শক্তিশালী।
আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ছোট একটা ঘটনাও ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে।
১৯৫০ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার প্রলেপ অবশ্য এরই মধ্যে কিছুটা দিয়েছে ব্রাজিল। ১৯৮৯ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উরুগুয়েকে হারিয়ে। মারাকানায় অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন রোমারিও।
তবে ছয় দশক আগের বিশ্বকাপের তিক্ত স্মৃতিটা বোধ হয় কখনোই ভুলবেন না ব্রাজিলীয়রা।
আর এই ব্রাজিলও খেলছে অবিশ্বাস্য। গত ৫০ বছরে নিজেদের মাঠে একটাই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হেরেছে তারা, সেটিও ৩৮ বছর আগে। ফাইনালে যেন একটা পা দিয়েই রেখেছে ব্রাজিল।
ঘিগিয়ার সেই ঐতিহাসিক গোলটি দেখুন।
যে গোলে শোকের বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ব্রাজিল
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।